তড়িৎবিশ্লেষ্য
পোলার দ্রাবকে দ্রবীভূত করলে যা তড়িৎ পরিবাহী দ্রবণ তৈরি করে / From Wikipedia, the free encyclopedia
তড়িৎ বিশ্লেষ্য হচ্ছে এমন একটি পদার্থ যা কোন পোলার দ্রাবকে (যেমন- পানি) দ্রবীভূত করলে তড়িৎ-পরিবাহী দ্রবণ তৈরি করে। দ্রবীভূত তড়িৎ বিশ্লেষ্য বিশ্লিষ্ট হয়ে ক্যাটায়ন (ধনাত্মক আয়ন) ও অ্যানায়নে (ঋণাত্মক আয়ন) বিভক্ত হয়, যা দ্রবণে সুষমভাবে বিন্যস্ত থাকে। তাড়িতিকভাবে, এমন দ্রবণ নিরপেক্ষ। এমন দ্রবণে তড়িৎ বিভব প্রয়োগ করা হলে, দ্রবণের ক্যাটায়নগুলো ঐ তড়িৎদ্বারের দিকে যায়, যার ইলেকট্রন প্রাচুর্য আছে; অন্যদিকে অ্যানায়নগুলো সেই তড়িতদ্বারের দিকে যায়, যার ইলেকট্রন ঘাটতি আছে। দ্রবণের মধ্যে অ্যানায়ন ও ক্যাটায়নের এমন বিপরীতমুখী গতি তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি করে। অধিকাংশ দ্রবণীয় লবণ, অম্ল ও ক্ষারক এর অন্তর্ভুক্ত। কিছু কিছু গ্যাস, যেমন- হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl), উচ্চ তাপমাত্রা অথবা নিম্ন চাপে তড়িৎ বিশ্লেষ্য হিসেবে কাজ করতে পারে। কিছু কিছু জৈবিক (যেমন- ডি.এন.এ, পলিপেপটাইড) এবং কৃত্রিম পলিমার (যেমন- পলিস্টাইরিন সালফোনেট) এর বিশ্লেষণ থেকেও তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণ পাওয়া যেতে পারে, যাদেরকে "বহু-আণবিক তড়িৎবিশ্লেষ্য" (poly-electrolytes) বলা হয়, এবং এদের আধানযুক্ত কার্যকরী মূলক থাকে। কোন পদার্থ যা দ্রবণে দ্রবীভূত হয়ে আয়নে বিশ্লিষ্ট হয়, তাদের তড়িৎ পরিবহনের ক্ষমতা থাকে। সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ফসফেট এমন তড়িৎ বিশ্লেষ্যের উদাহরণ।
চিকিৎসাক্ষেত্রে, কোন ব্যক্তির দীর্ঘায়িত বমি বা ডায়রিয়া হলে, এবং শ্রমসাধ্য ক্রীড়া বিষয়ক ক্রিয়াকলাপের প্রতিক্রিয়া হলে, তড়িৎ বিশ্লেষ্য পুনঃস্থাপন করা প্রয়োজন হয়। বাণিজ্যিক তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণ পাওয়া যায়, বিশেষ করে অসুস্থ শিশুদের (যেমন- মৌখিক পুনরুদন (re-hydration) দ্রবণ, সুয়েরো ওরাল, বা পিডিয়ালাইট) এবং ক্রীড়াবিদদের জন্য (ক্রীড়া পানীয়সমূহ)। ক্ষুধামান্দ্য (anorexia) ও অতিভোজন (bulimia) রোগের চিকিৎসায় তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মাত্রা পর্যবেক্ষণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পাই, সিলভার কপার অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতু গ্রাফাইট ও গ্যাস কার্বনের মতো অধাতু সালফিউরিক অ্যাসিড নাইট্রিক এসিড প্রভৃতি এসিড কস্টিক সোডা কস্টিক পটাস প্রভৃতি ক্ষার ও সোডিয়াম ক্লোরাইড ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন। এগুলিকে তড়িৎ পরিবাহী বলা হয়। এদের মধ্যে ধাতু ও গ্রাফাইট এর মত অধাতুগুলি মুক্ত ইলেকট্রনের সাহায্যে তড়িৎ পরিবহন করে এগুলিকে ইলেকট্রণীয় পরিবাহী বলা হয়। অ্যাসিড ক্ষার ও লবণ বিগলিত অবস্থায় বা জলীয় দ্রবণে বিপরীত তড়িৎযুক্ত আয়নে নিয়োজিত হয় এবং এই আয়ন গুলির সাহায্যে তড়িৎ পরিবহন করে এগুলিকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ বলা হয়।
কাজ রবার বাতাস প্রভৃতি পদার্থ সাধারণ অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে না। এইগুলিকে তড়িৎ অপরিবাহী পদার্থ বলা হয় আবার ইথান নল বেনজিন চিনির জলীয় দ্রবণ ও তড়িৎ পরিবহন করে না এইসব যৌগকে তড়িৎ ও বিশ্লেষ্য পদার্থ বলা হয়।
8.3.2
তীব্র ও মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য:
যেসব যৌগিক পদার্থ বিগলিত অবস্থায় অথবা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিপরীত আনন্দযুক্ত আয়নে নিয়োজিত হয় বিয়োজিত অয়নের সাহায্যে তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের সময় নির্দিষ্ট তড়িৎদ্বারে রাসায়নিকভাবে উৎপন্ন করে তাদের তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ বলা হয়। উদাহরণ:- ১)অ্যাসিড:HCL,H2SO4.
২) ক্ষার:NaOH,Ca(OH)2 ৩) লবণ:NaCL,KCL