চোল সাম্রাজ্য
দক্ষিণ ভারতের একটি তামিল রাজবংশ / From Wikipedia, the free encyclopedia
চোল রাজবংশ (তামিল: சோழர் குலம்; আ-ধ্ব-ব: [ˈt͡ʃoːɻə]) ছিল একটি তামিল রাজবংশ। দক্ষিণ ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে এই সাম্রাজ্যই ছিল সর্বাপেক্ষা দীর্ঘকালীন সাম্রাজ্য। চোল রাজবংশের প্রথম নথিভুক্ত উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে লিখিত সম্রাট অশোকের শিলালিপিতে। বিভিন্ন অঞ্চলে এই রাজবংশের শাসন খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।
চোল সাম্রাজ্য சோழ நாடு | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ–১২৭৯ | |||||||||
পতাকা | |||||||||
চোল সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ বিস্তার ও প্রভাব (খ্রিষ্টীয় ১০৫০ অব্দ) | |||||||||
রাজধানী | আদি চোল: পুমপুহার, উরাইয়ার, মধ্যযুগীয় চোল: পাঝাইয়ারাই, তাঞ্জাবুর গঙ্গইকোণ্ড চোলপুরম | ||||||||
সরকারি ভাষা | তামিল | ||||||||
প্রচলিত ভাষা |
| ||||||||
ধর্ম | হিন্দুধর্ম | ||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||
রাজা | |||||||||
• ৮৪৮-৮৭১ | বিজয়ালয় চোল | ||||||||
• ১২৪৬-১২৭৯ | তৃতীয় রাজেন্দ্র চোল | ||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | মধ্যযুগ | ||||||||
• প্রতিষ্ঠা | ৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ | ||||||||
• মধ্যযুগীয় চোলদের উত্থান | ৮৪৮ | ||||||||
• বিলুপ্ত | ১২৭৯ | ||||||||
আয়তন | |||||||||
১০৫০ আনুমানিক | ৩৬,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (১৪,০০,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||
| |||||||||
বর্তমানে যার অংশ | ভারত শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশ বার্মা থাইল্যান্ড মালয়েশিয়া কম্বোডিয়া ইন্দোনেশিয়া ভিয়েতনাম সিঙ্গাপুর মালদ্বীপ |
চোল রাজ্যের মূল কেন্দ্র ছিল কাবেরী নদীর উর্বর উপত্যকা। কিন্তু খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত স্থায়ী চোল সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগে এই সাম্রাজ্য আরও বড়ো অঞ্চলে প্রসারিত হয়েছিল।[1] দুই শতাব্দীরও অধিক সময় তুঙ্গভদ্রা নদীর দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত দাক্ষিণাত্যের সকল অঞ্চল এই সাম্রাজ্যের অধীনে এসে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।[2] সম্রাট প্রথম রাজেন্দ্র চোল গঙ্গাতীরবর্তী অঞ্চলগুলি অধিকার করার উদ্দেশ্যে সৈন্য অভিযান প্রেরণ করলে, পূর্বভারতের কিয়দংশ চোল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এছাড়াও রাজেন্দ্র চোল এক প্রবল নৌযুদ্ধের পর শ্রীবিজয়ের সামুদ্রিক সাম্রাজ্য উৎখাত সাধন করেন এবং একাধিকবার চীনা আক্রমণ প্রতিহত করেন।[3] ১০১০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে দক্ষিণে মালদ্বীপ থেকে উত্তরে বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের গোদাবরী নদী অববাহিকা পর্যন্ত চোল সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল।[4] রাজরাজ চোল উপদ্বীপীয় দক্ষিণ ভারত জয় করেন, বর্তমান শ্রীলঙ্কা ভূখণ্ডের কিছু অংশ অধিকার করেন এবং মালদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জ নিজ অধিকারে আনেন।[5] এছাড়া মালয় দ্বীপপুঞ্জের রাজ্যগুলির বিরুদ্ধেও তিনি সফলভাবে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।[6][7] ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে পাণ্ড্য রাজ্যের উত্থান ঘটলে চোল সাম্রাজ্য পতনের পথে অগ্রসর হতে থাকে। পাণ্ড্য রাজ্যই চোলদের পতনের প্রধান কারণ হয়।[8][9][10]
চোল সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার ছিল সুদূরপ্রসারী। তাঁরা তামিল সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তামিল সাহিত্য ও স্থাপত্যের কিছু মহান নিদর্শন তাঁদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় সৃজিত হয়েছে।[5] চোল রাজারা একাধিক মন্দির ও স্থাপনা নির্মাণ করেন। এই মন্দিরগুলি কেবলমাত্র ধর্মোপাসনার স্থানই ছিল না, বরং এক একটি প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠেছিল।[11][12] ১০১০ খ্রিস্টাব্দে রাজারাজা চোল কর্তৃক প্রবর্তিত থাঞ্জাভুরের বৃহদীশ্বর মন্দিরটি চোলার স্থাপত্যের একটি প্রধান উদাহরণ, যা বর্তমানে একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। তারা শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার জন্যও সুপরিচিত ছিল। 'চোলা ব্রোঞ্জে' ব্যবহৃত নির্দিষ্ট ভাস্কর্যের কৌশলের বিকাশ, হিন্দু দেবদেবীর চমৎকার ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যগুলি হারিয়ে যাওয়া মোমের প্রক্রিয়ায় নির্মিত হয়েছিল তাদের সময়ে। শিল্পের চোল ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়ে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থাপত্য ও শিল্পকে প্রভাবিত করে।[13] [14] এছাড়া চোলেরা ছিলেন একটি কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থার পথপ্রদর্শক এবং একটি নিয়মতান্ত্রিক আমলাতন্ত্রের উদ্ভাবক।