Loading AI tools
পাঞ্জাবী সামরিক শিল্পী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
গুরু হরগোবিন্দ [ɡʊru həɾɡobɪnd]এছাড়াও সাচ্চা বাদশা ("প্রকৃত সম্রাট"),নামে পরিচিত (১৯ জুন ১৫৯৫ – ৩ মার্চ ১৬৪৪)[1][2] ছিলেন ষষ্ঠ শিখ গুরু। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর দ্বারা তার বাবা, গুরু অর্জনের মৃত্যুদন্ড হবার পর, ৩০ মে ১৬০৬ সালে, এগারো বছর বয়সে,তিনি গুরুর পদ লাভ করেন।[3] তিনি শিখ ধর্মের মধ্যে ইসলামী নিপীড়ন প্রতিহত করতে এবং ধর্মের স্বাধীনতা রক্ষা করতে একটি সামরিক ঐতিহ্যেের সূচনা করাার জন্য স্মরণীয়। [3][4] ৩৭ বছর, ৯মাস, ৩দিন এই দীর্ঘতম মেয়াদেে, তিনি গুরু পদে আসীন ছিলেন।
গুরু হরগোবিন্দ ਗੁਰੂ ਹਰਿਗੋਬਿੰਦ ਜੀ | |
---|---|
জন্ম | ১৯ জুন ১৫৯৫ |
মৃত্যু | ৩ মার্চ ১৬৪৪[1] কিরাটপুর সাহিব, ভারত |
অন্যান্য নাম | ষষ্ঠ গুরু সাচ্চা বাদশাহ |
পরিচিতির কারণ | তালিকা
|
পূর্বসূরী | গুরু অর্জন |
উত্তরসূরী | গুরু হর রাই |
দাম্পত্য সঙ্গী | মাতা দামোদরী, মাতা নানকি and মাতা মহা দেবী |
সন্তান | বাবা গুরদিতা,বাবা সূর্য মল, বাবা অনি রাই,বাবা অটল রাই, গুরু তেগ বাহাদুর,এবং বিবি বিরো |
পিতা-মাতা | গুরু অর্জন এবং মাতা গঙ্গা |
গুরু হরগোবিন্দ ১৫৯৫ সালে অমৃতসরের ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে ভাদালি নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[1][5] তার বাবা, গুরু অর্জন শিখ ধর্মের, পঞ্চম গুরু, যিনি মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নির্দেশে , গ্রেফতার, নির্যাতিত ও নিধন হন।[4][6] ২৫ মে ১৬০৬ সালে, গুরু অর্জন হরগোবিন্দকে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন। এবং ৩০ মে তার মৃত্যুদন্ডেের পরে, ২৪ জুন ১৬০৬ সালে উত্তরাধিকার অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।[3][5] গুরু হরগোবিন্দেের পিতার পরামর্শ অনুসারে শিখ, মানুষদের সুরক্ষার জন্য একটি সামরিক ঐতিহ্য শুরু করেন। [4] এবং তার গুরুর পদে উত্তরণেের সময়, তিনি দুইটি তরোয়াল রাখেন: একটি তার আধ্যাত্মিক কর্তৃত্ব (পিরি) , এবং অন্যটি পার্থিব কর্তৃত্ব (মিরি) নির্দেশিত করে।[3][7] এভাবে তিনি শিখ ধর্মে সামরিক ঐতিহ্য।[3][4] প্রতিষ্ঠিত করেন। গুরু হরগোবিন্দেের তিন স্ত্রী: মাতা দামোদরী, মাতা নানকী এবং মাতা মহা দেবী ছিলেন।.[1][8]
গুরু হরগোবিন্দ রাষ্ট্র বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন এবং তার দরবার (আদালত) জাঁকজমকের জন্য লক্ষনীয় ছিল। তার কিছু অনুগত অনুসারীদের অস্ত্রশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু করেন, গুরু সাত শত ঘোড়া অধিকারী হন, এবং তার সেনাবাহিনী, তিন শত অশ্বারোহী এবং ষাটটি বন্দুকধারী নিয়ে গড়ে ওঠে। পাঞ্জাবের মাঝা পদাতিক বাহিনী গড়ে ওঠে। গুরু হরগোবিন্দ অমৃতসরে লোহগড় "লোহার দুর্গ " নামক একটি দুর্গ নির্মিত করেন। তার নিজস্ব পতাকা এবং যুদ্ধ-দামামা ছিল যেটি দিনে দুইবার বাজান হত।
গুরু ছিলেন যুদ্ধনিপুন (শস্ত্রবিদ্যা)[9] এবং তুখোড় শিকারী[10] । গুরু হরগোবিন্দ মানুষকে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে এবং তাদের শরীরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখতে উৎসাহিত করতেন।
একটি পুরানো পাঞ্জাবি পাণ্ডুলিপি, পাঞ্জা সাখিয়ানেের উপর ভিত্তি করে শিখ ঐতিহ্য অনুযায়ী, গাড়োয়াল পাহাড়ে শ্রীনগরে, সমর্থ রামদাস, গুরু হরগোবিন্দেের (১৫৯৫-১৬৪৪) সঙ্গে দেখা করেন। ১৭৯৩ সালে হনুমন্ত স্বামীর লেখা, রামদাস স্বামীর বাখার এর মারাঠি সূত্র অনুযায়ী, ১৬৩০এর প্রথম দিকের সময়েে সমর্থ রামদাস উত্তর দিশায় তীর্থযাত্রাকালে এবং গুরু হরগোবিন্দের, পূর্বে নানকমাতা যাত্রার সময় দুজনের দেখা হয়। এটা বলা হয় যে, তারা যখন সাক্ষাত করেন গুরু হরগোবিন্দ একটি শিকার থেকে ফিরছিলেন। তিনি ঘোড়ায় চড়ে, সম্পূর্ণরূপে সশস্ত্র অবস্থায় ছিলেন।
স্বামী রামদাস বলেন, "আমি শুনেছি যে, আপনি গুরু নানকের স্থলাভিষিক্ত"।
"গুরু নানক একজন ত্যাগী সাধু ছিলেন -একজন সাাধু যিনি জগত পরিত্যাগ করেছিলেন। আপনি ঘোড়া ও সৈন্যসামন্ত রেখেছেন, অস্ত্র ধারণ করেছেন। আপনি নিজেকে সাচ্চা বাদশা, প্রকৃত রাজা বলে সম্বোধিত হতে চান। কি ধরনের সাধু আপনি?" মারাাঠা সাধু জিজ্জাসা করেছিলেন।
গুরু উত্তর করলেন, "অন্তরে তপস্বী, ও বাইরে একজন রাজকুমার। অস্ত্র গরীবদের রক্ষা এবং অত্যাচারীর বিনাশের জন্য। বাবা নানক, জগত পরিত্যাগ করেন নি, তিনি মায়া (আমিত্ব এবং অহং) পরিত্যাগ করেছিলেন। "
"বাতন ফকিরি, জাহির আমীরি, শাস্তর গরীব কি রক্ষা, জারোয়ান কি ভাখিয়া, বাবা নানক সংসার নেহি ত্যগা, মায়া ত্যাগী থি।"
পোথি পঙ্কাজ সাখিয়ানেে যেরকম উদ্ধৃত আছে যে গুরুর হরগোবিন্দের এই কথাগুলো সমর্থ স্বামী রামদাসেের হৃদয়ে, একটি তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করল, সঙ্গে সঙ্গে তিনি বললেন, "এই কথাগুলি আমার ঠিক লেগেছে- ইয়ে হমারে মন ভাতি হ্যায়" [11] [12]
গুরুর হরগোবিন্দের সশস্ত্র অনুসারীদের সংখ্যা অনেক ছিল। বাহ্যিকভাবে এবং অভ্যন্তরীনভাবে, অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছিল। নতুন পরিবেশ অনুযায়ী, গুরু তার নীতি সমন্বয় করছিলেন। আকবরের সহনশীল দিনগুলোতে শিখধর্মের প্রতিষ্ঠা বেড়ে ছিল। আকবর কখনো, শিখধর্মেের বিস্তারে হস্তক্ষেপ করেন নি। তিনি গুরুদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছিলেন। জাহাঙ্গীরের আদেশে, গুরু অর্জনের নিধন এবং হরগোবিন্দের কারাদণ্ড বুঝিয়ে দিয়েছিল, আগামী দিন আরও কঠিন হবে। নিছক শান্তিপূর্ণ সংগঠনের নীতি আর যথেষ্ট ছিল না। গুরু অর্জন এবং গুরু হরগোবিন্দ উভয়েই তাদের দূরদর্শিতায়, বুঝতে পেরেছিলেন,অস্ত্রের সাহায্য ছাড়া শিখ সম্প্রদায়কে টিকিয়ে রাখা যাবে না। [7] জাহাঙ্গীরের হাতে তার পিতার মৃত্যু হরগোবিন্দকে, শিখ সম্প্রদায়ের সামরিক মাত্রা, যোগ করায় বাধ্য করেছিল। তিনি প্রতীকী দুটি তলোয়ার রাখতেন, মিরি এবং পিরি যেদুটি পার্থিব শক্তি এবং আধ্যাত্মিক কর্তৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করত। তিনি রামদাসপুরে সুরক্ষার জন্য একটি দুর্গ এবং একটি আনুষ্ঠানিক আদালত, অকাল তখত তৈরী করেন।[13]
এই আক্রমণাত্মক কার্যকলাপেে, জাহাঙ্গীর হরগোোবিন্দকে গোয়ালিয়র কেল্লায় কারাদন্ডে দণ্ডিত করেন। এটা স্পষ্ট নয় তিনি বন্দী হিসাবে কত দিন জেলে ছিলেন। তবে ১৬১১ অথবা ১৬১২ নাগাদ ওনাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ততদিনে, জাহাঙ্গীরেের, আকবরের সহনশীল নীতির পক্ষে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে ও মুঘল দরবারে রক্ষনশীল নীতির প্রতি পক্ষপাত কমে গেছে। হরগোবিন্দকে নিরীহ ও নির্দোষ বোঝার পর তাকে মুক্ত করার আদেশ দেন।[13][14][15] শিখ পরম্পরা অনুসারে, যে ৫২ জন রাজা মুঘল সাম্রাজ্যের বিরোধিতা করার জন্য বন্দী ছিলেন, তারা তাদের আধ্যাত্মিক গুরুর সাহচর্য্য হারাবার ভয় পেলেন। গুরু হরগোবিন্দ তখন নিজের সঙ্গে, রাজাদের মুক্তির আবেদন জানান ও মোগল সাম্রাজ্যের প্রতি তাদের আনুগত্য রাখবার জামিন হন। জাহাঙ্গীর তখন ৫২ জন রাজাকেও মুক্ত করার আদেশ দেন। হরগোবিন্দের নিকট একটি বিশেষ পোশাক ছিল, যাতে ৫২টি সেলাই ছিল। যখন হরগোবিন্দ দুর্গ ছেড়ে বেরোন, বন্দী রাজারা সেই সেলাইগুলি ধরে তার সঙ্গে দুর্গ ছেড়ে বেরোন।[16] জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে তিনি রোহিলাতে মুগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন, এই যুদ্ধ শিখ সামরিকীকরণের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ হয়েছিল। যুদ্ধে, গভর্নর আবদুল খানের নেতৃত্বে মোগলরা শিখদের কাছে পরাজিত হয়.[17]
মুক্তি পাওয়ার পর জাহাঙ্গীর সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশিরভাগ বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল এবং তিনি তার শাসনকালে প্রশাসনের একটি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি কাশ্মীর ও রাজপুতানায় জাহাঙ্গীরের অনুষঙ্গী ছিলেন এবং নলগ্রহেের তারা চাঁদ, যিনি বহু বছর ধরে বিদ্রোহী ছিলেন,যাকে কোনভাবেই শায়েস্তা করা যায় নি, তাকে দমন করেন। . [18][19][20]
শাহজাহানের শাসনকালে সম্পর্ক আবার তিক্ততায় পৌছয়। শাহজাহান অসহিষ্ণু ছিলেন। তিনি লাহোরের শিখ বাওলি ধ্বংস করেন।[21] প্রথমদিকে মুঘলদের সঙ্গে শিখেদের বাজ ও ঘোড়া নিয়ে ঝগড়া হত,পরে তা বড় আকার নেয় এবং উভয় পক্ষের হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।[7] অমৃতসর, কার্তারপুর এবং অন্যান্য স্থানে যুদ্ধগুলি হয়। ১৬৩৪ সালে গুরু হরগোবিন্দ অমৃতসরের কাছে মুঘল দলকে পরাজিত করেন। গুরু আবার মোগলদের একটি আঞ্চলিক অনাসক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন, কিন্তু তারা হামলাকারীদের এবং তাদের নেতাদের নাস্তানাবুদ করে মেরে ফেলেছিলেন।[22] গুরু হরগোবিন্দ তার সৈন্যদের ও একটি তলোয়ার নিয়ে মুঘল সম্রাটের সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন অথবা তার অনুগামীদের, আঞ্চলিক মুসলিম শাসনকর্তাদের বা ব্যক্তিগত শত্রুদের নির্ভয়ে বিরোধিতা করতে এবং তাদের পরাস্ত করতে নেতৃত্বে দেন[23]
গুরু হরগোবিন্দের শৈশবের এক বন্ধু পাইন্দে খান তার শত্রু হয়ে যান, যার মা গুরুর নার্স ছিলেন। গুরুর একটি দামী বাজ, খানেরা নিয়ে যান। ফেরতের কথায় ক্ষুব্ধ হন। আবার কেউ বলেন শত্রুতার কারণ খানের অহংকার। উভয়ের শত্রুতার এই সুযোগ নিয়ে মুঘলেরা, খানকে আঞ্চলিক শাসনকর্তা বানিয়ে দেয়, যাদের কাছে গুরু সর্বদা এক বিপদের ন্যায় ছিলেন। গুরু হরগোবিন্দ আক্রান্ত হন এবং যুদ্ধের মত অবস্থায় নিজের বন্ধুকে স্বহস্তে হত্যা করে বিজয় প্রাপ্ত করেন।[22] গুরু হরগোবিন্দ কার্তারপুরের যুদ্ধেও লড়াই করেন। তিনি ১৯ মার্চ,১৬৪৪ সালে রূপনগরের কিরাটপুরে মারা যান।
গুরুর হরগোবিন্দের সময়ে শিখেের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ইতিমধ্যে গুরু অর্জনের রাজস্ব নীতি ও গুরু হরগোবিন্দেের সশস্ত্র পদ্ধতি, শিখ ধর্মালম্বীদের মুঘল সাম্রাজ্যেের মধ্যে একটা পৃথক সত্তা দিয়েছিল। গুরু তার প্রচ্ছন্ন প্রভাব সম্পর্কেও অজ্ঞাত ছিলেন না, কিন্তু তার ব্যক্তিগত জীবনে, তার প্রকৃত চরিত্র কখনো ভুলে যান নি, এবং সবসময় নিজেকে নানকের অনুগামী রেখেছিলেন এবং তার প্রত্যেক অনুগামীর মধ্যে তাদের মহান শিক্ষক জীবিত ছিলেন।[24]
গুরু হরগোবিন্দ মূর্তি পূজায় বিশ্বাসী ছিলেন না।কিন্তু কারো বিশ্বাসকে অসম্মান করতেন না। একবার তার এক অনুগামী একটি প্রতিমার নাক কেটে ফেলেছিল বিভিন্ন প্রতিবেশী প্রধানদের থেকে অভিযোগ পাওয়ায়, তিনি সেই শিখকে তলব করেন। কিন্তু সে অভিযোগ অস্বীকার করে, বলে সে দোষ স্বীকার করবে যদি মূর্তি সাক্ষী দেয়। তখন সেই প্রধান তাকে বলেন, "ওরে বোকা! মূর্ত্তি কি করে কথা বলবে?" শিখ তখন বলল,"যদি নিজের মাথাই না বাচাতে পারে, তাহলে আপনার কি কাজে আসবে?"[24]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.