Loading AI tools
হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতের অন্যতম প্রধান চরিত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
গান্ধারী (দেবনাগরী: गान्धारी, আক্ষরিক অর্থে: গান্ধার দেশের মেয়ে) হলেন হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতের অন্যতম প্রধান চরিত্র। তিনি গান্ধার রাজ্যের রাজকুমারী এবং হস্তিনাপুরের অন্ধরাজা ধৃতরাষ্ট্রের পত্নী এবং দুর্যোধন প্রভৃতি শতভাই ও এককন্যা দুঃশলার মাতা। তিনি বিবাহের পর তার স্বামীর ধৃতরাষ্ট্রের মতো জীবনযাপনের জন্য চোখ বেঁধে রাখতেন। গান্ধারী, এছাড়াও, হস্তিনাপুরের পূর্ববর্তী রাজা পাণ্ডুর জ্যেষ্ঠা ভ্রাতৃবধূ তথা তাঁর স্ত্রী কুন্তী ও মাদ্রীর ভ্রাতৃশ্বশুরপত্নী ।[1] সিন্ধুনদের পশ্চিম তীর হতে আফগানিস্তানের অধিকাংশ স্থানকে পুরাকালে গান্ধারদেশ বলা হতো। বর্তমান কান্দাহার প্রাচীন গান্ধার নগরী।[2]শকুনি তাঁর জ্যেষ্ঠভ্রাতা।
বিদুরের সাথে পরামর্শ করে ভীষ্ম গান্ধাররাজ সুবলের কন্যা গান্ধারীর সাথে কুরুবংশের জ্যেষ্ঠপুত্র ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহ দেন। গান্ধারী সুন্দরী ও শিক্ষিতা হলেও মাতা পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপত্তি না করে জন্মান্ধ স্বামীর হাতে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি তাঁর অন্ধস্বামীকে অতিক্রম করবেন না এই সংকল্প করে বস্ত্র খণ্ড দিয়ে নিজের দুই চোখ বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।[3] তিনি ব্যাসদেবের সেবা করায় তিনি বর দিয়েছিলেন গান্ধারী শতপুত্রের জননী হবেন। যথাকালে গান্ধারী গর্ভবতী হলেন কিন্তু কুড়ি মাস চলে গেলেও তাঁর প্রসব হল না।[4] এদিকে কুন্তীর পুত্রলাভের খবর পেয়ে গান্ধারী অত্যন্ত ঈর্ষাপরবশ হয়ে ধৃতরাষ্ট্রকে না জানিয়েই লোহার মুগুর দিয়ে নিজের গর্ভপাত করেন। এর ফলে তাঁর গর্ভ হতে এক লৌহকঠিন মাংসপিণ্ড নির্গত হল। গান্ধারী দাসীদের তা নষ্ট করার আদেশ দিতে যাচ্ছিলেন এমন সময় ব্যাসদেব এসে তাঁকে নিষেধ করলেন। তিনি ভ্রুণকে শীতল জলে ভিজিয়ে শত ভাগে ভাগ করেন এবং তা ঘৃতপূর্ণ কলসে রাখেন। একবছর পর দুর্যোধন এবং একবছর এক মাসের মধ্যে দুঃশাসন, দুঃসহ, বিকর্ণ প্রভৃতি শতপুত্র ও দুঃশলা নামে একটি কন্যার জন্ম হয়। জন্মমাত্রই দুর্যোধন গাধার ন্যায় চিৎকার করেছিলেন এবং নানা অমঙ্গলের চিহ্ন দেখা গিয়েছিল। বিদুর ও ব্রাহ্মণগণ তখন দুর্যোধনকে ত্যাগ করতে বলেছিলেন। কিন্তু পুত্রস্নেহের জন্য ধৃতরাষ্ট্র তা করতে পারেন নি।
কপট কৌশলে পাশা খেলায় যুধিষ্ঠিরকে পরাজিত ও দ্রৌপদীকে ভরা রাজসভায় অপমানিত করার পর গান্ধারী একাধিকবার অন্ধরাজ ধৃতরাষ্ট্রের কাছে দুর্যোধনকে পরিত্যাগের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু পুত্রস্নেহে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের কাছে সে অনুরোধের কোন ফল হয় না। নিজ পুত্রের অন্যায় আচরণের জন্য তিনি কখনও মার্জনা করতে পারেন নি। একমাত্র দুর্যোধন হতেই যে কুরুকুল ধ্বংস হবে তা তিনি পূর্বেই জ্ঞাত হন। পণ মুক্ত পাণ্ডবদের অর্ধরাজ্য দিতে গান্ধারী যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলেন। বারো বছর বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাতবাসের পর যখন পাণ্ডবরা কৃষ্ণকে হস্তিনাপুরে দূত হিসেবে প্রেরণ করেন তখন গান্ধারী রাজসভায় এসে দুর্যোধনকে সন্ধির উপদেশ দিয়ে তিরস্কার করে বলেন যে, ধর্মহীন ঐশ্বর্য প্রাপ্তির চেষ্টা পরিণামে মৃত্যু আনে। দুর্যোধন মাতৃবাক্য অবজ্ঞা করে সভা ত্যাগ করেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পূর্বকালে দুর্যোধন যখন তার মায়ের আশীর্বাদ ভিক্ষা করতে আসেন তখন গান্ধারী শুধু এই বাক্য বলেন বলেন যতো ধর্মস্ততো জয়ঃ অর্থাৎ ধর্ম যেখানে, জয় সেখানে। আঠারো দিন যুদ্ধের প্রত্যেক দিনই তিনি দুর্যোধনের আশীর্বাদ প্রার্থনার উত্তরে এই বাক্য বলতেন। আঠারো দিন পর গদাযুদ্ধে দুর্যোধনের মৃত্যু হলে ক্রুদ্ধ গান্ধারীকে কৃষ্ণ সান্ত্বনা দেয়ার সময় বলেন তার আশীর্বাদ সফল হয়েছে। এতে সাময়িকভাবে তিনি শান্ত হন।
কৃষ্ণের বাক্যে কিয়ৎকাল প্রকৃতিস্থ থাকার পর গান্ধারী তার সম্মুখেই নিজ বস্ত্রে মুখ আবৃত করে বিলাপ করতে থাকেন। শতপুত্রহারা গান্ধারী তার স্বামী, কুন্তী ও পুত্রবধূদের সাথে রণভূমিতে আসেন এবং দিব্যচক্ষে রণভূমির ধ্বংসলীলা দেখে পাণ্ডবদের শাপ দিতে চান। এসময় ব্যাসদেব তাকে শান্ত করেন এবং ভীম তার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেন। এরপর গান্ধারী সক্রোধে যুধিষ্ঠিরের দর্শনাভিলাষী হন। কম্পিত কলেবরে যুধিষ্ঠির এসে কৃতাঞ্জলিপুটে গান্ধারীর শাপ নিতে প্রস্তুত হন ও বলেন তিনিই তার পুত্রহন্তা এবং তার অভিশাপের যোগ্য। এই বলে যুধিষ্ঠির গান্ধারীর পাদস্পর্শ করতে অবনত হলে গান্ধারী তার চক্ষু আবরণের অন্তরাল থেকে যুধিষ্ঠিরের আঙ্গুলের অগ্রভাগ দেখতে পান। যুধিষ্ঠিরের নখ গান্ধারীর ক্রোধে কুৎসিত হয়ে যায়। শক্তি থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধ নিবারণ না করায় গান্ধারী কৃষ্ণকে এই বলে অভিশাপ দেন পতিসেবা ফলে অর্জিত পূণ্যের বলে আমি তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি যে আজ থেকে ছত্রিশ বছর পর তুমিও পুত্র, বন্ধু ও স্বজন হারিয়ে বনমধ্যে অতি অপকৃষ্ট উপায়ে নিহত হবে এবং যাদবনারীগণও কুরু ও পাণ্ডব পক্ষীয় নারীদের মত ক্রন্দন করবে কৃষ্ণ হাসি মুখে এই অভিশাপ গ্রহণ করেন এবং তা যথাকালে কার্যকর হয়।
পাণ্ডবদের রাজ্যলাভের পর ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী পনের বছর পাণ্ডবদের আশ্রয়ে থাকেন। পাণ্ডবরা তাদের যথেষ্ট সম্মান করলেও ভীম গোপনে ধৃতরাষ্ট্রের অপ্রিয় কাজ করতেন কারণ তিনি ধৃতরাষ্ট্রের অন্যায় আচরণ ভুলতে পারেন নি। অবশেষে ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী বাণপ্রস্থ অবলম্বন করে গঙ্গাতীরে রাজর্ষি শতযুপের আশ্রমে উপস্থিত হন। কুন্তী, বিদুর ও সঞ্জয় তাদের সাথে বনে গমন করেন। এখানে তারা আশ্রম তৈরি করে বাস করতে থাকেন। ব্যাসদেব একদিন তাদের দেখতে এলে গান্ধারীর অনুরোধে ধৃতরাষ্ট্রের শোক লাঘবের জন্য অলৌকিক তপস্যা বলে যুদ্ধে নিহত স্বজনদের পুনর্জীবিত করে দেখান। বনবাসকালে গান্ধারী কেবল জল পান করে তপস্যা করতেন। অবশেষে তৃতীয় বছরে তারা অরণ্যে প্রবেশ করেন। একদিন হঠাৎ সেখানে দাবানল সৃষ্টি হয়। ধৃতরাষ্ট্র বন প্রবেশের পূর্বে যে যজ্ঞ করেছিলেন যাজকগণ সেই আগুন নির্জন বনে নিক্ষেপ করেছিলেন তা থেকেই দাবানল সৃষ্টি হয়। সেই আগুনে গান্ধারী, কুন্তী ও ধৃতরাষ্ট্র পুর্বাস্য হয়ে বসে জীবন ত্যাগ করেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.