রাজা ধৃতরাষ্ট্রের রথের সারথি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সঞ্জয় (সংস্কৃত: सञ्जय, অর্থ "বিজয়") অথবা সঞ্জয় গাবল্গন হলেন প্রাচীন হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতে বর্ণিত একজন উপদেষ্টা এবং সারথি।[১]
সঞ্জয় | |
---|---|
লিঙ্গ | পুরুষ |
পেশা | উপদেষ্টা সারথি |
উদ্ভব | হস্তিনাপুর |
মহাভারতে উল্লেখিত হয়েছে পাণ্ডব এবং কৌরবদের মধ্যে একটি মহাসমর সংগঠিত হয় যেখানে অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্র হলেন কৌরবদের পিতা। সঞ্জয় হলেন হস্তিনাপুরের রাজার সারথি গবল্গনের পুত্র এবং রাজা ধৃতরাষ্ট্রের সারথি। তিনি মহর্ষি বেদব্যাসের শিষ্য এবং মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রের একান্ত অনুগত সহচর। সঞ্জয়, মহর্ষি বেদব্যাসের কৃপায় দিব্যদৃষ্টি বা দূরদৃষ্টি লাভ করেন, সঞ্জয় দিব্যদৃষ্টির কারণে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে সংঘটিত ঘটনাবলি অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্রের নিকট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করেন। দিব্যদৃষ্টি প্রভাবে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রাক্কালে অর্জুন এবং শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে কথোপকথনরূপ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শুনতে এবং দেখতে পান এবং তাও ধৃতরাষ্ট্রের নিকট বর্ণনা করেন।[২]
কুরুক্ষেত্র মহাযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে, সঞ্জয় কৌরবদের দূত হিসেবে যুধিষ্ঠির কাছে গমন করেন। কৌরবদের পক্ষের হয়ে আলোচনা করেন।[৩]
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বে ধৃতরাষ্ট্র শোকার্ত হয়ে নির্জন স্থানে পুত্রদের (দুর্যোধনাদি কৌরবদের) দুর্নীতির বিষয় ভাবছিলেন এমন সময় প্রত্যক্ষদর্শী ত্রিকালজ্ঞ ভগবান ব্যাস তাঁর কাছে এসে বললেন যে, রাজা! তোমার পুত্রদের এবং অন্য রাজাদের মৃত্যুকাল আসন্ন হয়েছে। তাঁরা যুদ্ধে পরস্পরকে বিনষ্ট করবেন। কালবশেই এমন হবে - এই জেনে তুমি শোক দূর কর। পুত্র! যদি (তুমি) সংগ্রাম দেখতে ইচ্ছা কর তবে আমি তোমাকে দিব্যদৃষ্টি দেব। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, ব্রহ্মর্ষিশ্রেষ্ঠ জ্ঞাতিবধ দেখতে আমার রুচি নেই, কিন্তু আপনার প্রসাদে এই যুদ্ধের সম্পূর্ণ বিবরণ শুনতে ইচ্ছা করি। ব্যাস বললেন, গবল্গনপুত্র এই সঞ্জয় আমার বরে দিব্যচক্ষু লাভ করবেন। যুদ্ধের সমস্ত ঘটনা এঁর প্রত্যক্ষ হবে, ইনি সর্বজ্ঞ হয়ে তোমাকে যুদ্ধের বিবরণ বলবেন। ((টীকা: সঞ্জয় বক্তা এবং ধৃতরাষ্ট্র শ্রোতা — এই ভাবে কুরুক্ষেত্রযুদ্ধের সমগ্র ঘটনা মহাভারতে বিবৃত হয়েছে।)) ইনি অস্ত্রে আহত হবেন না, শ্রমে ক্লান্ত হবেন না, জীবিত থেকেই এই যুদ্ধ হতে নিষ্কৃতি পাবেন। এভাবে, ব্যাসদেবের কৃপায় দিব্যদৃষ্টি লাভ করেন। [৪]
সঞ্জয় যখন হস্তিনাপুরে অবস্থান করেন, তখন কুরুক্ষত্র প্রাঙ্গনে ঘটে যাওয়া মহাযুদ্ধের সমস্ত ঘটনা তিনি খুব স্পষ্ট প্রত্যক্ষ করেন এবং মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র বর্ণনা করতে লাগলেন। তিনি এমনভাবে প্রত্যক্ষ করলেন যেন তিনি সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে আছেন। মহাভারত যুদ্ধের প্রাক্কালে, গীতার কথা বলা হলো, "আমরা গীতার প্রথম শ্লোকে দেখতে পাই, রাজা ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়ের কাছ থেকে যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে চাইলেন যিনি ঐশ্বরিক দৃষ্টির বরপ্রাপ্ত হয়েছেন।"[৫] ধৃতরাষ্ট্রের সারথি তথা উপদেষ্টা, পরামর্শদাতা, শুভচিন্তক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন সঞ্জয়। এর উদাহরণস্বরূপ: " সঞ্জয় যুদ্ধের বিভিন্ন সময়ে ভীমের হাতে ধৃতরাষ্ট্রের দুর্যোধনাদি শত পুত্রের মৃত্যুর খবর জানালে রাজা ধৃতরাষ্ট্র পুত্রের মৃত্যুশোকে কাতর হন, তখন দুঃখী রাজাকে সঞ্জয় সান্ত্বনা প্রদানও করেন।"
সঞ্জয় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রতিটি ঘটনা বর্ণনা ছাড়াও আরো বিভিন্ন বিষয় বর্ণনা করেছেন:
পৃথিবী, অন্যান্য গ্রহ এবং ভারতীয় উপমহাদেশের ভৌগোলিক বিবরণ, (প্রাচীন) ভারতীয় উপমহাদেশ তথা ভারত বর্ষের শত শত রাজ্য, জাতি, প্রদেশ, শহর, নগর, গ্রাম, নদী, পর্বত এবং বনের বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন।
তিনি উভয় পক্ষের রথী, মহারথী, প্রতিদিন উভয় পক্ষ কর্তৃক নির্মিত ব্যুহ বা সৈন্যসমাবেশ, প্রতি বীরের বীরত্ব, মৃত্যু প্রভৃতি বিষয় ধৃতরাষ্ট্রের নিকট বিবৃত করেন। তিনি নিরপেক্ষ এবং স্পষ্টভাবে যুদ্ধের ঘটনা বর্ণনা করেন এবং শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের হাতে দুর্যোধন তথা কৌরবদের পরাজয়ের পূর্বাভাস করেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.