Loading AI tools
একটি উপাধি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
খান বা খাঁ একটি উপাধি যা বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। উৎপত্তিগত ভাবে মঙ্গোলীয় ও তুর্কি ভাষায় এর অর্থ সেনানায়ক, নেতা বা শাসক। খান বলতে গোত্রপতিও বোঝায়। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ায় খানেরা টিকে আছে। খাতান এবং খানম হলো এর স্ত্রী বাচক রূপ। বেশিরভাগ আফগানের (হাজারা ও পশতুন) নামের সাথে খান বিদ্যমান। মোঙ্গলরা “খান” নামটি আফগানিস্তানে নিয়ে এসেছিল, যা বর্তমানে ঐ অঞ্চলের সাধারণ লোকেরা ব্যবহার করছেন।[1] এবং মধ্যযুগ মোঘল শাসন আমলে সম্রাটদের প্রতি আনুগত্য, বিশ্বস্তা ও দায়িত্ত্বে সফলতার জন্য অনেকেই ব্যাপকভাবে মুঘল বাদশাহদের কাছ থেকে খাঁন উপাধি গ্রহণ করেন।
একজন খান একটি খানাত নিয়ন্ত্রণ করে। সাম্রাজ্যের শাসকদের সমতুল্য হলেও অনেক সময় অযথার্থভাবে খানকে রাজা হিসাবে অনুবাদ করা হয়।
উৎপত্তিগত দিক হতে খানেরা তুলনামূলক ক্ষুদ্র গোত্রপতি, যারা প্রধানত ইউরেশিয়ো উপত্যকা ও এর নিকটবর্তী বিস্তৃত শুষ্ক অঞ্চলসমূহে বাস করতো। এই যাযাবর গোত্রগুলোর অন্তহীন সামরিক অভিযাত্রা তাদের প্রতিবেশী আসনারূঢ় অঞ্চলগুলোতে, প্রধানত ইউরোপ ও দূরপ্রাচ্যে, দীর্ঘকাল বিরামহীন ভাবে চলে।
খানেরা কিছু ছোট রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর তা স্বল্পকাল স্থায়ী হলেও, তাদের সামরিক শক্তি চীন, রোম ও বাইজেন্টিয়াম সাম্রাজ্যের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সম্ভবত পূর্ববর্তী বুলগেরীয় শাসকরাও উপাধি হিসাবে খান ব্যবহার করতেন, কিন্ত কোন নথিতে সরাসরি এর উল্লেখ নেই - এখন পর্যন্ত পাওয়া একমাত্র এইরকম উপাধি, কানাসুবিগি, শুধুমাত্র তিনজন বুলগেরিয় শাসক ব্যবহার করেছেন, যথাক্রমে ক্রুম, অমুরতাগ এবং মালামির, তারা ছিলেন পরস্পর যথাক্রমে পিতামহ, পুত্র এবং পৌত্র। তাদের পরে এই উপাধি আর কেউ ব্যবহার করেন নাই। কাভখান (উপখান), তারখান এবং বরিতারখান, এজাতীয় যৌগিক অরাজকীয় শব্দদ্বারা শুরু হওয়া উপাধিগুলো বুলগেরিয় অভিজাত শ্রেণীতে প্রচলিত ছিল। যার কারণে পন্ডিতেরা ধারণা করেন (যদি উপখান (কাভখান) থাকে তবে সেখানে খান-ও থাকবে) যে খান হলো পূর্বতন বুলগেরিয় প্রধানের উপাধি। বাস্তবিকপক্ষে, প্রাচীন পুথিগুলোতে আরচন্তেস (গ্রিকে কমান্ডার বা ম্যাজিস্ট্রেট) এবং কন্যায (স্লাভিকে ডিউক বা যুবরাজ) এর উল্লেখ আছে। “দুলো” ছিল সর্ববৃহৎ বুলগেরিয় গোত্র। ইউরোপে আসার পর, ৪র্থ ও ৫ম শতাব্দিতে বুলগেরিয় খানেরা প্রধান্য অর্জন করেন। এদের মধ্যে প্রসিদ্ধ বুলগেরিয় খানগণ হলেন: খান কুব্রাত, মহান বুলগেরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা; খান আস্পারুখ, দানুবিয় বুলগেরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা (বর্তমান বুলগেরিয়া); খান তেরভেল, “ইউরোপের ত্রাণকর্ত্বা”; খান ক্রুম, “দ্য টেরিবল”। কনিয়ায বরিস (১ম তসার বরিস নামেও পরিচিত) ৮৬৪ খ্রীষ্টাব্দে পূর্বাঞ্চলীয় অর্থোডক্স খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করার পূর্ব পর্যন্ত “খান” এই শাসকদের সরকারি উপাধি ছিল।
খান উপাধি নজিরবিহীনভাবে বিশিষ্টতা অর্জন করে, যখন মোঙ্গল গোত্রের তেমুজিন মোঙ্গল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এক অনন্য সামরিক প্রতিভার পরিচয় দেন, যা ছিল পৃথিবীর দেখা সর্ববৃহৎ ভূ-সাম্রাজ্য এবং জেঙ্গিস খান নাম ধারণ করে তিনি তা শাসন করেন। তার উপাধি ছিল খাগান “খানদের খান”, কিন্তু প্রায়ই ‘সংক্ষেপে’ খান (অনেকটা পার্সী শাহানশাহ্ এর মত - এর অর্থও ‘রাজাদের রাজা’- যা সাধারণত শাহ্ হিসাবে প্রচলিত) বা ‘মহান খান’ হিসাবে বর্নণা করা হয় (অটমান বাদশাহ-এর মত যাদেরকে ‘মহান সুলতান’ বলে ডাকা হতো)।
চেঙ্গিসের মৃত্যুর পর ধীর গতিতে সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়ে যায়। শীঘ্রই পতিত অঞ্চলগুলো ছাড়া, যেমন এর বহিস্থ মোঙ্গলিয়া (এমনকি চীনের ‘অন্তস্থ মোঙ্গলিয়া’), সকল স্থানের মোঙ্গল চিহ্ন বিবর্ণ হয়ে পরতে থাকে। আসনারূঢ় মানুষ - প্রধানত তুর্কী, নমাডিক গোত্রসমূহ দ্বারা, যারা মোঙ্গলদের মতোই ঘোড়ায় চড়ে বিজয় অর্জন করতে থাকে, যাদের কেউ কেউ হয় স্থায়ী বসতি গড়ে তোলেন বা ক্রমাগত বিজয়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পরতে থাকেন। তারপরেও চেঙ্গিসের মর্যাদা এতই বেশি ছিল যে, তার বংশধর দাবির গৌরব পশ্চিমে সিজারের বংশধর দাবির সমতুল্য।
জুরচেন্সের শাসকের উপাধিও ছিল খান, যিনি পরে মাঞ্চুস হিসাবে পরিচিত হন এবং কিং রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। কিং সম্রাটদের মোঙ্গলিয় উপাধি, বগদিখান, শপ্তদশ শতকের শেষ দিকে রাশিয়ায় নিত হয়। (হসু, ১৯৯০, রাইজ অব মডার্ন চায়না, ৪র্থ সংস্করণ)
মধ্য এশিয়া ও এর আশেপাশের উপত্যকাগুলোতে বহু খানাটের অস্তিত্ব ছিলো যা প্রশাসনিক কাঠামো হতে গোষ্ঠিবদ্ধ গোত্রগোলোকে বোঝাতো; যেমন:
যদিও বেশির ভাগ আফগান রাজ্যগুলো আমিরাত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত, তবে বাদাখশানে একটি উজবেক খানাট ১৬৯৭ সাল হতে প্রতিষ্ঠিত ছিল।
ইরানের সাথে পরর্বতীতে সংযুক্ত বেশ কিছু রাজ্যের শাসকদের উপাধি ছিল খান। যেমন-
১৭৪৭-১৮০৮: আরদাবিল খানাট (ইরানের উত্তর-পশ্চিমআঞ্চলে, সারাবের পূর্বে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম কাসপিয়ান সাগরের পশ্চিমে অবস্থিত),
১৭৪৭-১৮১৩: খয় খানাট (ইরানের উত্তর-পশ্চিমআঞ্চলে, উরমিয়া লেকের উত্তরে, লেক ভান ও তাবরিজের মধ্যবর্তী অঞ্চল),
১৭৪৭-১৮২৯: মাকু খানাট (ইরানের সর্বোচ্চ উত্তর-পশ্চিমআঞ্চলে, খয়ের উত্তর-পশ্চিমে, এবং আরমেনিয়ার ইয়েরেভান হতে ৬০ মাইল দক্ষিণে)
১৭৪৭-১৭৯০দশক: সারাব খানাট (ইরানের উত্তর-পশ্চিমআঞ্চলে, তাব্রিযললের পূর্বে),
১৭৪৭-১৮০০শতক: তাবরিজ খানাট (ইরানি আযারবাইজানের রাজধানী)।
ট্রান্সককেশিয়া ও এর আশেপাশে বেশ কিছু ছোট খানাট ছিল। বর্তমান আরমেনিয়ায় ছিল এরিভান খানাট (১৮০৭-১৮২৭ পর্যন্ত একমাত্র পদাধিকারী হুসেইন কুলি খান কাজার)। আজারবাইজানে অনেকগুলো খানাটের অস্তত্ব ছিলো; যেমন- বাকু (বর্তমান রাজধানী), গাঞ্জা, জাওয়াদ, কুবা, সাল্যান, শাক্কি (শেকি, ১৭৪৩ হতে “বাশ্চি”) এবং শিরভান = শামাখা (১৭৪৮-১৭৮৬ সাময়িকভাবে খজা শামাখা ও ইয়েনি শামাখায় বিভক্ত) তালিশ (১৭৪৭-১৮১৪); নাখিচেভান এবং (নাগরন) কারাবাখ।
তাতার জনগোষ্ঠির (আধুনিক ভলগা তাতারদের সঙ্গে এদের সম্পর্ক নেই) ভেতর -সাধারণত মুসলিমদের মধ্যে- খান একটি প্রচলিত উপাধি, যারা মোঙ্গল গোল্ডেন হোর্ডের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল এবং তা হতে উদ্ভূত রাজ্য সমূহে বাস করতো, যেগুলো একসময় মস্কোভিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসে এবং রুশ সাম্রাজ্যে পরিনত হয়। এদের মধ্য উল্লেখযোগ্য হলো:
নতজানু তাতারিয় খানাট রাজবংশগুলো মস্কোভি/রাশিয়া-র জায়গিরদারে পরিনত হয়, যেমন-
আরও পূর্বে, রাজকীয় চীনের পশ্চিম তুর্কিস্থান অঞ্চল:
শপ্তদশ শতকে বড় খানাটগুলো ছোট ছোট খানাটে বিভক্ত হয়ে পরে যাদের তেমন কোন গুরুত্ব ছিল না। যেখানে আসল ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল খ্বাজা, আরবীয় ইসলাম ধর্মীয় নেতাদের হাতে। ১৮৭৩ সালে এদের উপাধি বদলে গিয়ে হয়, আমির খান। ১৮৭৭ সালে চীন এ অঞ্চলকে অধিকার করে নেয়।
সর্বোচ্চ, আরও যথাযথোভাবে রাজকীয় উপাধি খাগান (“খানদের খান”) খান হিসাবে পরিচিত সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত শাসকগণের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত : জেংগিস খান (তার নাম ছিল তেমুজিন, জেংগিস খান হলো এক অনন্য উপাধি যার অর্থ পুরোপুরি জানা যায় না) যিনি মোঙ্গল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করেন, এবং তার উত্তরাধিকারীগণ, প্রধানত পৌত্র কুবলাই খান, যিনি চীনের ইয়ুয়ান রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। জেঙ্গিস খানের বংশের প্রধান শাখাটির শাসক বংশধরগণ মহান খান হিসাবে উল্লিখিত হন।
খানদের খান উপাধিটি অন্যান্য উপাধির সাথে উসমানীয় সুলতানগণ এবং গোল্ডেন হোর্ড ও তা হতে উদ্ভূত রাজ্যগুলোর শাসকেরা ব্যবহার করতেন। খান সেলজুক তুর্কী রাজবংশও ব্যবহার করতো একাধিক ট্রাইব, ক্ল্যান বা জাতির প্রধানের পদবি হিসাবে, যিনি পদমর্যাদায় আতাবেগের নিম্নপর্যায়ের। জুরচেন এবং মাঞ্চু শাসকেরাও খান (মাঞ্চুতে হান) ব্যবহার করতেন, যেমন- নুরচেন, গেংগিয়েন হান নামে পরিচিত ছিলেন। গক্তুর্ক, আভার এবং খাযারের শাসকগণ স্বতন্ত্র জাতিদের শাসক হিসাবে আরও উচ্চ পদবি কাঘান ব্যবহার করতেন।
খানজাদা (ফার্সি: خانزادہ) (ফার্সি প্রত্যয় -যাদা মানে পুত্র বা আরও সাধারণভাবে পুরুষ বংশধর; (খান্নাযাদ: নারী হারেম অনুচরের সাথে সম্পর্ক নাই) কিছু করদরাজ্যের রাজপুত্রদের উপাধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যেমন-
খাতুন, বা খাতান (পার্সী: خاتون) মঙ্গোলীয় ও তুর্কীতে রাজার রানী সমপর্যায়ের শব্দ। খান এবং খাতুন হিসাবে ঘোষণার পরে এই উপাধি দ্বারা একজন খান’এর রাজরানী (স্ত্রী) খানের সমপর্যায়ের সম্মান পাওয়ার যোগ্য হন। অনেক সময় খাতুনের পরিবর্তে হাজারি ব্যবহৃত হয়। বিখ্যাত খাতুনদের মধ্যে আছেন:
খানম (পার্সী: خانم) খান হতে উদ্ভূত আরেকটি শব্দ, লক্ষনীয়ভাবে তুর্কী ভাষায়, খান’এর রাজরানীর জন্য, বা অন্য সংস্কৃতিতে অন্যান্য (নিচু) উপাধিধারী ব্যক্তিবর্গের স্ত্রীদের ক্ষেত্রে আভিজাত্যসূচক পদবি (লর্ডকে বিয়ে না করলেও যেমন কোন মহিলাকে লেডি বলা হয় অনেকটা সেরকম) হিসাবে ব্যবহৃত; যেমন, আফগানিস্তানে কোন অবিবাহিত নারীকে খানম বলে সম্বোধন করা, অনেকটা ইংরেজি ‘মিস’ এর মত। গালিন খানম (শাব্দিকঅর্থে, সম্মানিত নববধূ) ছিল একজন কাজারের প্রধান স্ত্রীর উপাধি।
বি.দ্র: আধুনিক কাযাখ ভাষায় খাতুন নারীদের জন্য একটি অবমাননাকর অশোভন শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু খানম সম্মানজনক অর্থে ব্যবহৃত হয়।
কিছু সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তার পদবি হিসাবেও খান ব্যবহৃত হতো, বিশেষত চেঙ্গিস খানের বিজিত হোর্ড সমূহের (প্রকৃতপক্ষে কঠিনতম শৃংখলার অধিভুক্ত) দশমিক সাংগঠনিক কাঠামো (আচেমেনিদ পারস্য প্রথম ব্যবহৃত) অনুসারী বাহিনীগুলোতে। মধ্য এশিয়াতে মোঘল শাসন আমলে খান' উপাধিটি ব্যাপক ভাবে বিস্তৃতি লাভ করে। এবং এটি মোঘল সেনাবাহিনীর পদমর্যাদা এবং মোঘল বাদশাহদের প্রতি আনুগত্যসরুপ এই উপাধিটি দেওয়া হতো।
পারস্য সাম্রাজ্যে, খান (স্ত্রীবাচক খানম) ছিল অভিজাত ব্যক্তির পদবি যা বেগ এর সমপর্যায়ের এবং নামের শেষে সাধারণত ব্যবহৃত হতো। কাযার কোর্টে, যারা রাজবংশের সদস্য নয় তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কয়েক শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছিল, প্রত্যেক শ্রেণীকে একটি সম্মানিক পদমর্যাদার খেতাব দেওয়া হয়েছিল। খান ছিল এদের মধ্যে চতুর্থ। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যে খানের সমার্থক আমির সামরিক বাহিনীর কমান্ডার ও প্রাদেশিক গোত্রপতিদের খেতাব হিসেবে প্রদান করা হয়েছিল। নিম্নক্রমানুসারে, খান ছিল নওয়াব (রাজন্য), শাখস-ই-আওয়াল এবং জানাব (দুজনেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা), কিন্তু ‘আলি জাহ মুকাররাব, ‘আলি জাহ, ‘আলি শা’আন (এই তিনটি নিম্নপদস্থ সামরিক ও প্রসাশনিক কর্মকর্তা) এবং আলি কাদির (সমবায় সঙ্ঘের প্রধান, ইত্যাদি) হতে উচ্চপদস্থ।
সামন্ততান্ত্রিক ভারতে মুঘলরা (যাদের আনুষ্ঠানিকতাগুলো ব্যপকভাবে পারস্য দ্বারা অনুপ্রানিত) মুসলিম ও পার্সীদেরকে খান (সচরাচর প্রদেয় সর্বনিম্ন উপাধি) এবং খান বাহাদুর (বাহাদুর এসেছে মঙ্গোলীয় ‘সাহসী, বীর’ হতে; কিন্তু ভারতে শুধু ‘এক শ্রেণী উপরে’ বুঝায়) উপাধি প্রদান করতো এবং যা পরবর্তীতে ব্রিটিশ রাজ আভিজাত্য ও রাজার প্রতি বিশ্বস্ততার জন্য প্রদান অব্যাহত রাখে। খান সাহিব ছিল আরেকটি সম্মানজনক উপাধি, খান হতে একধাপ উপরে, যা মুসলিম ও পার্সীদের প্রদান করা হতো; খান বাহাদুরের ন্যায় এটিও ব্রিটিশ শাসনামলে সমারহে প্রদান করা হতো।
উল্লেখযোগ্য ভারতীয় মুসলিম রাজ্য হায়দ্রাবাদে, খান ছিল সর্বনিম্ন অভিজাত খেতাব যা নিজাম, মুসলিম আমাত্যদের প্রদান করতেন। খান ছিল খান বাহাদুর, নওয়াব (সর্বোচ্চ মুসলিম শাসকের উপাধির সমনামিক), জং, দাউলা, মুল্ক, উমারা এবং জাহ-এর নিচে। দরবারের হিন্দু আমাত্যদের সমমর্যাদার উপাধি ছিল রায়।
সোয়াত-এ, বর্তমানে একটি পাকিস্তানি সীমান্ত প্রদেশ, খান ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক অভিজাত খেতাব, যারা মোল্লাদের (মুসলিম যাজক) সহায়তায়, ১৯১৪ সালে নতুন আমির-ই-শারিয়াত নির্বাচিত করেন।
এটি বেশ অসচ্ছ যে বাংলা সালতানাতে যে সকল উপাধির ধারা পরিচিত, যেমন- খান, খান উল মুয়াযযাম, খান-উল-আযাম, খান-উল-আযাম-উল-মুয়াযযাম ইত্যাদি এবং খাকান, খাকান-উল-মুয়াযযাম, খাকান-উল-আযাম, খাকান-উল-আযাম-উল-মুয়াযযাম ইত্যাদি, সেগুলো হয় সম্মানসূচক অথবা সামরিক পদের সাথে সংস্লিষ্ট।
অন্যান্য উপাধির মতোই, এর অর্থও ধীরে ধীরে নিম্নগামী হয়েছে যা পারস্য ও আফগানিস্থানে যেকোন মুসলিম ভদ্রলোকের নামের শেষের শব্দে এসে ঠেকেছে, যেমন- ওস্মানলিতে এফফেন্দি এবং ইংরেজিতে এসকুইরে। আবার খান পদবিটি পশ্চিমবঙ্গে কিছু কিছু হিন্দু নামের সঙ্গেও যোগ হতে দেখা যায়।
খানজাদা হলো অবধের মাহমুদাবাদ তালুকের মুসলিম শাইক সাইদি তালুগদারদের (তারা বিভিন্ন উপাধি ব্যবহার করতো, ব্যবহৃত শেষ রুপটি হলো নওয়াব রাজা) উপনাম, উপাধি নয় (পদাধিকারীদের পুত্রদের বর্তমানে রাজকুমার বলা হয়)।
খান ও তার স্ত্রীরূপ অনেক ব্যক্তিনামের অংশে পরিনত হয়েছে, যার সংগে আভিজাত্যের কোন সম্পর্ক নাই (যদিও এখনো এটি অভিজাত নামের সাধারণ অংশ হিসাবে বর্তমান)। উল্লেখযোগ্য ভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে এটি মুসলিম নামের অংশে পরিনত হয়েছে, বিষেশত যখন পাঠান বংশোদভূত দাবি করা হয়, এইভাবেই খান ইউসাফযাই, উসমানযাই এবং জাহাঙ্গিরিদের পদবি (কুলনাম) হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। পাঠান সম্পৃক্ততায় খান শব্দটিকে বিবেচনা করা হলে, এটি বেশ জটিল হয়ে পরে। তারা এই শব্দটি আভিজাত্যসূচক পদবি হিসাবে ব্যবহার করে যেকোন গ্রাম্য অভিজাত জমিদার, বা গোত্র ও গ্রামের মাতুব্বরদের ক্ষেত্রে। এখানে এটি একটি আনুষ্ঠানিক সামাজিক পরিভাষাও বটে, যার দ্বারা ঐ শ্রেণী নিজেদেরকে স্মরনাতীতকাল হতে কেতাদুরস্ত করেছে। অধিকন্তু, সকল শ্রেণীর প্রায় ৮০% পাঠানের ক্ষেত্রে এটি নামের একটি প্রত্যয়ে পরিনত হয়েছে, এবং যদিও কুলনাম হিসাবে প্রকৃতপক্ষে একে আর সংগায়িত করা যায় না, তবুও অনেকেই একে বর্তমানে কুলনাম হিসাবে ব্যবহার করছে।
অনুমান করা হয় যে এ শব্দটি এই অঞ্চলে এসেছে আনুমানিক ৪৫০-৫৫০অব্দের মধ্যে এপ্থালিট হানদের দ্বারা উত্তর পারস্য, আফগানিস্তান এবং উত্তর ভারতের গান্ধারা আক্রমণের পরে। এপ্থালিটগণ পাঠান এলাকায় সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করে, যার ঘাঁটি ছিল গান্ধারার উর্বরভূমি। মনে করা হয় যে অন্যান্য হানিস ও কাজার গোত্রসমুহের মতই এই শব্দটি এপ্থালিট রাজপুরুষদের উপাধি ছিল; এবং অনেকে বিশ্বাস করেন যে "খান!" হলো "হান!" শব্দের পার্শ্বী অপভ্রংশ। উত্তরপশ্চিম ভারত ও পারস্য হতে পরে এই নামটি অবশিষ্ট ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পরে মুসলিম শাসকদের দ্বারা, যার প্রায় সকলেই মধ্য এশিয়া হতে এসেছিলেন এবং প্রায় হাজার বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করেন। পাঠান সংস্কৃতিতে "খান" শব্দের হানিস উৎপত্তির আরও প্রমাণ হলো যে অনেক পাঠান "খান পরিবারের" শারীরিক গঠন কাঠামো ইউরোপিয়, যা হানিস প্রভাব সমর্থন করে। (যদিও আঞ্চলিক উপকথা অনুয়ায়ী আলেকজেন্ডার কর্তৃক অঞ্চল অধিকারের পরে গ্রিক প্রভাবে কথা বলা হয় যা খুবই অসম্ভব ঘটনা বলে মনে হয়। এই বিষয়ে স্যার অলাফ চারয়ের "The Pathans" বইটির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।)
১৯১৭র বলশেভিক বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে সংঘটিত রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ চলাকালে, সাদা জেনারেল রোমান আনজার ভন স্টার্নবার্গ, যিনি সর্বজনস্বীকৃতভাবে জেঙ্গিস খানের সাম্রাজ্য পূর্নগঠনের চেষ্টা করেছিলেন, ১৯১৯ হতে ১৯২১এ তার মৃত্যু পর্যন্ত প্রায়ই “আনজার খান” হিসাবে বর্নিত হতেন।