![cover image](https://wikiwandv2-19431.kxcdn.com/_next/image?url=https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/6/6e/Kalava_Mauli_Wikipedia.jpg/640px-Kalava_Mauli_Wikipedia.jpg&w=640&q=50)
কৌতুকা
From Wikipedia, the free encyclopedia
কৌতুকা হল একটি লাল-হলুদ রঙের সুতো, আচার অনুযায়ী এটি সুরক্ষা প্রদান করে, এতে কখনও কখনও গিঁট থাকে। এটি ভারতীয় উপমহাদেশে পাওয়া যায়। একে নানা নামে ডাকা হয়, যেমন কলভ, মৌলি, মৌই, রাক্ষসসূত্র,[1] প্রতিসার (উত্তর ভারতে), কাপু, কায়রু, চরাণ্ডু বা রক্ষধারা (দক্ষিণ ভারতে)।[2][3][4] ভারতবিদ জান গোণ্ডা বলেন, কৌতুকা হল একটি বোনা সুতো, দড়ি বা ফিতা, একে ঐতিহ্যগতভাবে প্রতিরক্ষামূলক বা অ্যাপোট্রোপিক (যা অশুভকে সরিয়ে দেয়) বলে মনে করা হয়।[3] বৈদিক পাঠ অথর্ববেদ সংহিতা ২.১১ ধারায় প্রতিসার এবং কৌতুকার উল্লেখ একটি আচারমূলক সুতো হিসেবে পাওয়া যায়।[3] একটি আরও আগের উল্লেখ অনুযায়ী এর দ্বৈত কাজ রয়েছে, "লাল এবং কালো" রঙিন সুতোর একটি "দুরাত্মাদের" দূরে সরিয়ে দেয় এবং অন্যটি "বন্ধন তৈরি" করে, গোণ্ডা বলেছেন ঋগ্বেদের স্তোত্র ১০.৮৫.২৮ এ পাওয়া গেছে এটি বর এবং কনের হাতে আত্মীয়রা বেঁধে দেয়।[3][5]
![Thumb image](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/8/80/Hindu_Bride%2C_Ahmedabad%2C_Gujarat.jpg/640px-Hindu_Bride%2C_Ahmedabad%2C_Gujarat.jpg)
![Thumb image](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/6/6e/Kalava_Mauli_Wikipedia.jpg/640px-Kalava_Mauli_Wikipedia.jpg)
![Thumb image](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/0/03/Mauli_or_Kalava.jpg/640px-Mauli_or_Kalava.jpg)
একটি প্রতিসার বা কৌতুকা হিন্দুধর্মে একটি আচার-অনুষ্ঠানের ভূমিকা পালন করে এবং পুরোহিত বা পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক সদস্য একজন ভক্ত, পৃষ্ঠপোষক, প্রিয়জনের কব্জিতে এটি বেঁধে দেয়। এছাড়াও তার আশেপাশে আচার-অনুষ্ঠানের জন্য রাখা কলস বা লোটার (পাত্র) মতো জিনিসপত্রেও যজ্ঞের আচার হিসেবে এটি বাঁধা হয়।[2][6] এটি পুজোর থালায় রাখা একটি বুনন করা সুতো। এটি মূলত লাল রঙের হয়, কখনও কখনও এটি কমলা, জাফরান, হলুদ বা এইসব রঙের মিশ্রণে হতে পারে।[1][3][7] বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এটি সাদা রঙেরও হতে পারে, অথবা গাঁথা মালা বা ঘাসও হতে পারে এবং অনুরূপ অ্যাপোট্রোপিক মান প্রদান করে বলে বিশ্বাস করা হয়।[3] এটি সাধারণত হাতে কব্জির সাথে বাঁধা হয় বা গলায় হারের মতো পরা হয়, তবে মাঝে মাঝে এটি একটি হেডব্যাণ্ড বা পাগড়ির মতো পোশাকের সাথে একত্রে পরা যেতে পারে।[3] হিন্দু পূজা অনুষ্ঠানের সময় বিভিন্ন জিনিস এবং কলসের কানায় একই ধরনের সুতো বাঁধা হয়।[8]
আচারের সুতোটি ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষেরা ডান হাতের কব্জি বা বাহুতে এবং মহিলারা বাম হাতে পরিধান করে। এই সুতোটি কিছু পারিবারিক এবং বৈবাহিক অনুষ্ঠানেও পরা হয়। উদাহরণস্বরূপ, রাখী বন্ধনে বোন তার ভাইকে একটি লাল বা সোনালী বা অনুরূপ রঙের সুতো বেঁধে দেয়। ভারতবিদ জ্যাক গুডি বলেন, এই সুতোটি একযোগে "ভাইয়ের জন্য দুর্ভাগ্যের বিরুদ্ধে সুরক্ষা, বোন এবং ভাইয়ের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতার প্রতীক এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার চিহ্ন"।[9] প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে, একটি হিন্দু বিবাহ অনুষ্ঠানের এই সুতোটিকে কৌতুকা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।[3] এটি বর এবং কনে উভয়ের হাতেই বাঁধা হয়, সেইসাথে গৃহস্থালীর জিনিসপত্র যেমন শিল নোড়া, মাটির পাত্র এবং উর্বরতার প্রতীকচিহ্নগুলির সাথেও বাঁধা হয়।[2] দক্ষিণ ভারতে, পুরোহিতই বরের কব্জিতে কাপু (কৌতুকা) বাঁধেন এবং বর বিয়ের আচারের অংশ হিসাবে কনের কব্জিতে এই সুতো বেঁধে দেয়।[4]
যেখানে হিন্দুধর্মের আঞ্চলিক বৈষ্ণবধর্মীয় ঐতিহ্য দেখতে পাওয়া যায়, যেমন মহারাষ্ট্রে, লাল রঙের সুতো পুরুষদের জন্য বিষ্ণু এবং মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর প্রতীক, এটি বলেছেন ভারতবিদ গুদ্রুন বুহেনম্যান। সুতোটিতে সাধারণত কোন গিঁট থাকেনা বা চৌদ্দটি গিঁট থাকে এবং এটি উপাসকের কব্জিতে বাঁধা হয় বা গলায় মালার মতো পরানো হয়। স্ত্রী পরিধান করলে, এটি গিঁটবিহীন এবং লক্ষ্মী-দোরাকা বা অনন্তী দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। স্বামীর জন্য, সুতার গিঁট থাকে এবং এটি অনন্ত (বিষ্ণু)-র প্রতীক।[10]
হিন্দুধর্মের শৈবধর্মীয় ঐতিহ্য একইভাবে পূজা এবং পবিত্রতার আচারে শুভ কৌতুকা ( প্রতিসার ) সুতো স্থাপন করে। উদাহরণস্বরূপ, মন্দির নির্মাণ এবং পূজার আচার-অনুষ্ঠানের সময়, শিল্প সংস্কৃত গ্রন্থগুলি সুপারিশ করে যে প্রথম ইঁট এবং শিব লিঙ্গগুলিকে লাল-, সোনালি-, জাফরান- বা অনুরূপ রঙের সুতো দিয়ে আবদ্ধ করা হবে।[11] শৈব মন্দির স্থাপত্য গ্রন্থগুলি সাধারণত এই শুভ সুতোর জন্য কৌতুকা শব্দটি ব্যবহার করে, যখন বৈষ্ণব গ্রন্থগুলি এটিকে প্রতিসার হিসাবে উল্লেখ করে।[11]
এছাড়াও রাক্ষসসূত্র (কৌতুকা, প্রতিসার ) উৎসব অনুষ্ঠান এবং শোভাযাত্রার একটি অংশ, যেখানে উৎসবের মূর্তি এবং মানব অংশগ্রহণকারীদের কব্জিতে সুরক্ষামূলক সুতো বাঁধা হয়। ভারতবিদ রিচার্ড ডেভিস বলেছেন, অজিতাগামার ২৭.২০৬-২০৭ শ্লোকে এর উল্লেখ করা হয়েছে।[1] কিছু হিন্দু গ্রন্থে এই সুতোগুলিকে মন্দিরের শোভাযাত্রা এবং উৎসব উদযাপনের জন্য রাখিবন্ধন অনুষ্ঠানের একটি অংশ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সুপারিশ করা হয়েছে সোনা, রূপা বা সুতো দিয়ে বোনা কৌতুকার। কিছু গ্রন্থে কৌতুকা-র সুতার সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে।[1]
ভারতবিদ এম. হুইটনি কেল্টিংয়ের মতে জৈন ধর্মে, তাবিজ সহ প্রতিরক্ষামূলক সুতোকে বলা হয় রক্ষাপোটলি। এটি সাধারণত লাল হয় এবং কব্জিতে পরা হয়। এটি কখনও কখনও একজন জৈন পুরুষের মন্ত্র ব্যবহার করে আশীর্বাদ করা একটি পাকানো লাল কাপড় হতে পারে।[12] কেল্টিং বলেন, গলায় পরা হলে, জৈন ঐতিহ্য অনুযায়ী এই প্রতিরক্ষামূলক তাবিজের নাম দেওয়া হয় জৈন দেবতার নামে, যাঁর আশীর্বাদ গিঁটে বাঁধা বলে বিশ্বাস করা হয়। বোন এবং ভাইদের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষামূলক সুতো বাঁধার আচার এবং জৈন বিবাহের সময় সুতো বাঁধার তাৎপর্য হিন্দু ধর্মের মতোই।[12]