কিয়েভ
ইউক্রেনের রাজধানী / From Wikipedia, the free encyclopedia
কিয়েভ (ইউক্রেনীয়: Київ, প্রতিবর্ণীকৃত: Kyiv; রুশ: Киев, প্রতিবর্ণীকৃত: Kiyev) পূর্ব ইউরোপের রাষ্ট্র ইউক্রেনের রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী। নগরীটি ইউক্রেনের উত্তর-মধ্যভাগে, কিয়েভ ওবলাস্তে (প্রশাসনিক বিভাগ) দনিপার নদীর তীরে অবস্থিত। এটি ইউক্রেন এবং পূর্ব ইউরোপের অন্যতম প্রধান শিল্প, পরিবহন, বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। নগরীটি একটি খাদ্যশস্য, ফল, মিষ্টি বিট ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদনকারী কৃষি অঞ্চলের বাজার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। ২০১৫ সালে এখানে প্রায় ২৯ লক্ষ অধিবাসী বাস করত, যার কারণে জনসংখ্যার বিচারে এটি ইউরোপ মহাদেশের সপ্তম বৃহত্তম নগরী।
এই নিবন্ধের সঙ্গে ইউক্রেনের শহর নিবন্ধটি একীভূত করার প্রস্তাব করা হলো। (আলোচনা করুন) প্রস্তাবের তারিখ: ফেব্রুয়ারি ২০২৪। |
কিয়েভ Київ (ইউক্রেনীয়) | |
---|---|
রাজধানী ও বিশেষ মর্যাদাবাহী শহর | |
Kyiv | |
ইউক্রেনে কিয়েভ | |
স্থানাঙ্ক: ৫০°২৭′০০″ উত্তর ৩০°৩১′২৪″ পূর্ব | |
দেশ | ইউক্রেন |
পৌরসভা | কিয়েভ সিটি পৌরসভা |
Founded | 482 A.D. (officially)[1] |
নগর পরিষদ | কিয়েভ নগর পরিষদ |
Raions | তালিকা 10
|
সরকার | |
• Mayor and Head of City State Administration | Vitali Klitschko[2][3] |
আয়তন | |
• রাজধানী ও বিশেষ মর্যাদাবাহী শহর | ৮৩৯ বর্গকিমি (৩২৪ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ১৭৯ মিটার (৫৮৭ ফুট) |
জনসংখ্যা (1 November 2015) | |
• রাজধানী ও বিশেষ মর্যাদাবাহী শহর | ২৯,০০,৯২০[4] |
• জনঘনত্ব | ৩,২৯৯/বর্গকিমি (৮,৫৪০/বর্গমাইল) |
• মহানগর | ৩৩,৭৫,০০০[5] of the Kiev metropolitan area |
বিশেষণ | Kievan,[6] Kyivan[7] |
GDP (2016)[8] | |
• Total | US$20 billion |
• Per capita | US$7,000 |
সময় অঞ্চল | EET (ইউটিসি+2) |
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | EEST (ইউটিসি+3) |
Postal code | 01xxx–04xxx |
এলাকা কোড | +380 44 |
FIPS code | UP12 |
License plate | AA (before 2004: КА, КВ, КЕ, КН, КІ, KT) |
ওয়েবসাইট | Official Kiev tourism portal Kiev City State Administration Kiev City Council |
কিয়েভ একটি দৃষ্টিনন্দন নগরী যেখানে বহু উদ্যান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। নগরীটির সিংহভাগই দনিপার নদীর পাশে অবস্থিত কিছু পাহাড়ের উপরে গড়ে তোলা হয়েছে। নগরীর পুরাতন অংশটি নদীর ডান তীরে অবস্থিত। এখানে পাহাড়গুলির শীর্ষে গির্জা ছাড়াও অনেক প্রাচীন দুর্গ ও প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। নদীর বাম তীরে অপেক্ষাকৃত নতুন এলাকাটি অবস্থিত, যার সিংহভাগই ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পরে গড়ে তোলা হয়। নগরীতে একটি উন্নত পাতালরেল ব্যবস্থা আছে।
মধ্যযুগে কিয়েভ ইউরোপের অন্যতম অগ্রগণ্য ধর্মকেন্দ্র ছিল। সেই পর্বের বহু উল্লেখযোগ্য গির্জা ভবন আজও কিয়েভে দাঁড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাতটি হল সন্তু সোফিয়ার মহাগির্জা বা ক্যাথেড্রাল। এটি কিয়েভের হাগিয়া সোফিয়া নামেও পরিচিত। এই গির্জাটি ১১শ শতকের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ১৭শ-১৮শ শতকে এটির বেশির ভাগই পুনর্নির্মাণ করা হয়। এটি ইউক্রেনের প্রাচীনতম গির্জা যা প্রাচীরচিত্র (ফ্রেস্কো) ও চিত্রোপল (মোজাইক) শিল্পকর্মের জন্য সুবিদিত। পের্চের্স্কি বা গুহা মঠটি ১১শ শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়; ভূগর্ভস্থ সমাধিক্ষেত্রের জন্য পরিচিত এই ভবনটি ইউক্রেনের প্রথানুবর্তী মণ্ডলীর সবচেয়ে পবিত্র স্থাপনাগুলির একটি। অন্যান্য চোখে পড়ার মতো ধর্মীয় স্থাপনাগুলির মধ্যে বারোক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ১৮শ শতকের সাধু আন্দ্রেই গির্জা এবং ১৯শ শতকের শেষভাগে নির্মিত সাধু ভ্লাদিমিরের মহাগির্জা উল্লেখ্য। নগরীর একদা প্রবেশপথ ১১শ শতকে নির্মিত সোনালী প্রবেশদ্বারের ধ্বংসাবশেষগুলিও আগ্রহজনক।
কিয়েভে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যার মধ্যে ১৮৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কিয়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সর্বাগ্রে গণনীয়। এছাড়াও এখানে ইউক্রেনে জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি ও ইউক্রেনের বৃহত্তম গ্রন্থাগার জাতীয় গ্রন্থাগার অবস্থিত। শিল্পকলার ক্ষেত্রে ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউক্রেনের জাতীয় শিল্পকলা জাদুঘর, ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত মহান দেশপ্রেম যুদ্ধ জাদুঘর এবং ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পশ্চিমা ও প্রাচ্য শিল্পকলা জাদুঘর পরিদর্শনযোগ্য। এছাড়া এখানে একটি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়, একটি গীতিনাট্যশালা ও একটি বৃহৎ ক্রীড়াক্ষেত্র বা স্টেডিয়াম রয়েছে।
কিয়েভে প্রাগৈতিহাসিক যুগেই বসতি ছিল। ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতকে এসে এখানে পূর্বী স্লাভ জাতির একটি লোকালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শীঘ্রই এটি স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও কোনস্তান্তিনোপল (ইস্তাম্বুল)-এর মধ্যবর্তী একটি প্রধান বাণিজ্যপথের উপরে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়। ৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারাঙ্গীয় তথা ভাইকিং জাতির লোকেরা শহরটি বিজয় করে। তারা শহরটিকে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তাৎপর্যপূর্ণ একটি পূর্বী স্লাভীয় রাজ্যের কেন্দ্র বানায়, যে রাজ্যের নাম ছিল "কিয়েভান রুস"। ৯৮৮ সালে ১ম ভলোদিমির বা ভ্লাদিমিরের শাসনামলে কিয়েভের বাসিন্দারা গ্রিক প্রথানুবর্তী মণ্ডলীর খ্রিস্টান ধর্মমতে বিশ্বাস আনে, এবং নগরীটি কুয়েভান রুসের একটি প্রধান ধর্মকেন্দ্রে পরিণত হয়।
দক্ষিণ সীমান্তের দিকে অরক্ষিত ছিল বলে কিয়েভ অনবরত আক্রমণের শিকার হত। ১২৪০ সালে মঙ্গোল নেতা বান্টু খানের নেতৃত্বে মঙ্গোল সেনাবাহিনী শহরটিতে লুটতরাজ চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। ১৩৬০-এর দশক পর্যন্ত শহরটি মঙ্গোল আধিপত্যের অধীনে ছিল। এর পরে এটি লিথুয়ানীয় শাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ১৪৮২ সালে ক্রিমেয়ার তাতার জাতির লোকেরা কিয়েভ আক্রমণ করে। ১৫৬৯ সালে এটি পোল্যান্ডের সাথে অঙ্গীভূত হয়ে যায়। এরপর ১৬৮৬ সালে রুশ সাম্রাজ্য কিয়েভকে নিজের সাথে যুক্ত করে নেয়। নগরীটি লিথুয়ানীয়, পোলীয় ও রুশ সাম্রাজ্যের প্রান্তিক একটি নগরী হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
১৮শ শতকে কিয়েভ নগরীর প্রতিরক্ষা জোরদার করা হয়। ১৯শ শতকে রুশ সাম্রাজ্যে শিল্প বিপ্লব ঘটলে এটি একটি বাণিজ্য ও শিল্পকেন্দ্র হিসেবে পুনরুত্থান লাভ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৯১৮) জার্মান সেনারা কিয়েভকে দখল করে রাখে। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের পরে এখানে বহু লড়াই সংঘটিত হয়। ঐ বছর ইউক্রেন রুশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু ১৯২১ সাল নাগাদ রুশ সাম্যবাদীদের লাল সেনারা কিয়েভ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ১৯৩৪ সালে কিয়েভ নগরীটি ইউক্রেনের রাজধানী হিসেবে খার্কিভকে প্রতিস্থাপন করে। এসময় ইউক্রেন সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রসমূহের ঐক্য তথা সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাৎসি সেনারা ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত কিয়েভ দখল করে রাখে এবং এসময় নগরীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঐ যুদ্ধে কিয়েভের প্রায় ২ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। বিশ্বযুদ্ধের পরে নগরীটিকে পুনরায় নির্মাণ করা হয় এবং সোভিয়েত আমলের একটি প্রধান অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে নগরীটি আবার তার হৃতস্থান ফেরত পায়। এসময় এটি মস্কো ও সাংত পিতেরবুর্গের পরে সোভিয়েত দেশগুলির মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম নগরীর মর্যাদা লাভ করে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে কিয়েভ স্বাধীন রাষ্ট্র ইউক্রেনের রাজধানীতে পরিণত হয়। এসময় ইউক্রেনের অন্যান্য অংশ থেকে অধিবাসীরা ধীরে ধীরে কিয়েভে বসতি স্থাপন করে। দেশের অর্থনীতি এবং নির্বাচনী গণতন্ত্রে রূপান্তরের মাধ্যমে কিয়েভ ইউক্রেনের বৃহত্তম এবং ধনী শহরে পরিণত হয়। সোভিয়েত পতনের পর কিয়েভের অস্ত্রশস্ত্রনির্ভর শিল্পের উৎপাদন কমে যায় যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলে। কিন্তু অর্থনীতির নতুন অনেক খাত যেমন সেবাখাত এবং অর্থায়ন খাতে কিয়েভের বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি, সেইসাথে গৃহায়ন এবং পৌর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ক্রমাগত অর্থায়ন প্রদান করার মাধ্যমে কিয়েভ অল্প সময়ের মধ্যেই অভাবনীয় উন্নতি করে। কিয়েভ ইউক্রেনের সবচেয়ে পাশ্চাত্যমুখী অঞ্চল হিসাবে পরিচিত যেখানে প্রতি নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ হবার ব্যাপারে সমর্থন জ্ঞাপন করেছে।[9][10][11][12]