Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কিটির শূকর-নাসা বাদুড় (বৈজ্ঞানিক নাম: Craseonycteris thonglongyai, অন্য নাম বাম্বলবি বাদুড়) একটি বিপন্নপ্রায় বাদুড় প্রজাতি। এরা ক্রাসিওনিকটেরিডি গোত্রের একমাত্র জীবিত সদস্য। এরা থাইল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চল ও মিয়ানমারের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদীতীরবর্তী চুনাপাথরের গুহায় বসবাস করে।
কিটির শূকর-নাসা বাদুড় সময়গত পরিসীমা: সাম্প্রতিক | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ/রাজ্য: | অ্যানিম্যালিয়া (Animalia) |
পর্ব: | কর্ডাটা (Chordata) |
শ্রেণি: | স্তন্যপায়ী (ম্যামেলিয়া) |
বর্গ: | কাইরপ্টারা |
মহাপরিবার: | Rhinolophoidea হিল, ১৯৭৪ |
পরিবার: | Craseonycteridae হিল, ১৯৭৪ |
গণ: | Craseonycteris হিল, ১৯৭৪ |
প্রজাতি: | C. thonglongyai |
দ্বিপদী নাম | |
Craseonycteris thonglongyai হিল, ১৯৭৪ | |
কিটির শূকর-নাসা বাদুড়ের পরিব্যাপ্তি |
কিটির শূকর-নাসা বাদুড় পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম বাদুড় প্রজাতি। সেই সাথে করোটি ও দেহের আকৃতি অনুযায়ী এটি পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম স্তন্যপায়ী প্রাণি। এর সারা দেহ লালচে-বাদামি অথবা ধূসর বর্ণের লোমে আবৃত। এর তুণ্ড অনেকটা শূকরের মতো বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এরা বিশাল আয়তনের গুহায় গড়ে ১০০টি বাদুড়ের কলোনি আকারে বাস করে। এরা সাধারণত সন্ধ্যা ও ভোরে খুব স্বল্প সময়ের জন্য খাদ্যের সন্ধানে গুহা ছেড়ে বের হয়। এই সময়ের মধ্যে এরা আশেপাশের জঙ্গলে উড়ে বেড়ায় ও পোকা-মাকড় ধরে খায়। স্ত্রী বাদুড়েরা প্রতি বছর একটিমাত্র শাবকের জন্ম দেয়।
মিয়ানমারে কিটির শূকর-নাসা বাদুড়ের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট জানা যায় না। তবে থাইল্যান্ডে এই প্রজাতির জনসংখ্যা একটিমাত্র প্রদেশে সীমাবদ্ধ এবং সম্ভবত বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। এর প্রধানতম কারণ মানবসৃষ্ট, যার মধ্যে বাসস্থান ও বিশ্রামস্থানের সংকট অন্তর্ভুক্ত।[1]
কিটির শূকর-নাসা বাদুড়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৯ থেকে ৩৩ মিমি (১.১ থেকে ১.৩ ইঞ্চি) এবং ওজন প্রায় ২ গ্রাম (০.০৭১ আউন্স)।[2][3] এই প্রজাতি "বাম্বলবি বাদুড়" নামেও পরিচিত। এটি ক্ষুদ্রতম বাদুড় প্রজাতি, এবং দেহের দৈর্ঘ্যের দিক থেকে ক্ষুদ্রতম স্তন্যপায়ী। ক্ষুদ্রতম স্তন্যপায়ীর অন্যতম দাবিদার বামন চিকা ওজনের দিক থেকে বাম্বলবি বাদুড়ের চেয়ে হালকা (১.২ থেকে ২.৭ গ্রাম (০.০৪২ থেকে ০.০৯৫ আউন্স)) হলেও এর মাথা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৩৬ থেকে ৫৩ মিমি (১.৪ থেকে ২.১ ইঞ্চি)।[4]
কিটির শূকর-নাসা বাদুড়দের শূকরের মতো একটি বৈশিষ্ট্যসূচক, পাতলা উল্লম্ব নাসারন্ধ্রবিশিষ্ট ও স্ফীত তুণ্ড রয়েছে।[3][5] এদের কান দুইটি তুলনামূলক বৃহৎ। কিন্তু চোখ ক্ষুদ্র এবং লোম দ্বারা প্রায় ঢাকা।[6] অন্যান্য পতঙ্গভুক বাদুড়দের মতো এদের দাঁতের গঠন।[6] এদের উপরের চোয়ালের দন্ত সংকেত ১:১:১:৩ এবং নিচের চোয়ালের দন্ত সংকেত ২:১:২:৩।[5] উপরের পাটির ছেদন দাঁত অপেক্ষাকৃত বড়।[6]
এই প্রজাতির বাদুড়দের ঊর্ধ্বাংশ লালচে-বাদামি বা ধূসর, কিন্তু নিম্নাংশ সাধারণত কিছুটা বিবর্ণ।[6] ডানা দুইটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং রং কিছুটা গাঢ়। ডানার লম্বা ডগা এদের উড্ডয়নে সহায়তা করে।[3] মেরুদণ্ডে পুচ্ছদেশীয় কশেরুকা থাকলেও কিটির শূকর-নাসা বাদুড়দের দৃশ্যত কোনো লেজ থাকে না।[6] পেছনের পায়ে বৃহৎ চামড়ার জালক (ইউরোপ্যাটাজিয়াম) থাকে, যা উড়তে ও পোকা-মাকড় ধরতে সাহায্য করে, যদিও উড্ডয়নে সাহায্য করার জন্য পুচ্ছদেশীয় কোনো হাড় বা ক্যালসার থাকে না।[3][6][7]
কিটির শূকর-নাসা বাদুড় শুষ্ক চিরহরিৎ বা পর্ণমোচী বনাঞ্চলের মাঝে নদীতীরবর্তী চুনাপাথরের গুহায় বাস করে।[3] থাইল্যান্ডে এদের জনসংখ্যা কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের সাই ইয়ক জেলার খোয়ে নোই নদীর মোহনায় অবস্থিত টেনাসেরিম পাহাড়ের ক্ষুদ্র অঞ্চলে সীমাবদ্ধ।[3][8] বাদুড়দের ভৌগোলিক বিস্তৃতির একটি বড় অংশ দোনা পাহাড়ের সাই ইয়ক জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত। আবার এই জনসংখ্যার কিছু অংশ জাতীয় উদ্যানের বাইরে বিচরণ করার দরুণ কিছুটা অরক্ষিত।[3]
মিয়ানমারে ২০০১ সালে প্রজাতির প্রথম সদস্য শনাক্ত হওয়ার পর কায়িন ও মন প্রদেশের সালউইন, আতারান, গিয়াইং নদীর আশেপাশে দোনা ও কারেন চুনাপাথরের পাহাড়ের অন্তত নয়টি ভিন্ন জায়গায় এদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।[8] থাই ও মিয়ানমারের বাদুড় প্রজাতি শারীরতাত্ত্বিকভাবে অভিন্ন হলেও প্রতিধ্বনিভিত্তিক ডাক ভিন্ন।[8] এই দুই আঞ্চলিক গোষ্ঠী কখন জননগভাবে পৃথক হয়, তা জানা যায় না।[8]
কিটির শূকর-নাসা বাদুড় চুনাপাথরের গুহায় প্রবেশপথ থেকে বেশ ভেতরে বিশ্রাম করে। কিছু কিছু গুহায় ১০ থেকে ১৫টি বাদুড় থাকলেও প্রতিটি গুহায় গড়ে ১০০টি বাদুড় থাকে, কখনো কখনো ৫০০ পর্যন্ত হতে পারে। এরা একে অপরের থেকে বেশ তফাত থেকে গুহার দেয়াল ও ছাদে বিশ্রাম করে।[9] এদের মধ্যে ঋতুভিত্তিক গুহা পরিবর্তনের প্রবণতা দেখা যায়।
কিটির শূকর-নাসা বাদুড়েরা খুবই অল্প সময়ের জন্য সক্রিয় থাকে। এরা সন্ধ্যায় মাত্র ৩০ মিনিট ও ভোরে মাত্র ২০ মিনিটের জন্য বিশ্রামস্থল থেকে বের হয়। সক্রিয়তার এই স্বল্প সময় ভারী বৃষ্টিপাত ও ঠান্ডা আবহাওয়ায় সহজেই বিঘ্নিত হয়।[9] এই সময়ের মধ্যে বাদুড়েরা এদের বাসস্থানের এক কিলোমিটারের মধ্যে কাসাভা ও শিমুল বা বাঁশঝাড় ও সেগুন গাছের ওপরে উড়ে উড়ে খাদ্যের সন্ধান করে।[3][9] এদের ডানা বাতাসে ভেসে থাকার জন্য বিশেষ সহায়ক বলে মনে হয়। এরা সম্ভবত তৃণভোজী পোকা-মাকড় খেয়ে থাকে। তবুও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরা উড়ে উড়ে শিকার ধরে।[9] এদের খাদ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও প্রধান হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাছি (ক্লোরোপিডি, অ্যাগ্রোমাইজিডি ও অ্যান্থোমাইয়িডি), হাইমেনোপটেরীয়, সোকোপটেরীয় পতঙ্গ।[9]
প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমের শেষ দিকে (এপ্রিলের দিকে) স্ত্রী বাদুড় একটি মাত্র শাবকের জন্ম দেয়। খাবার গ্রহণের সময় শাবকেরা গুহায় অবস্থান করে অথবা মায়ের নিষ্ক্রিয় কটিদেশীয় বোঁটায় ঝুলে থাকে।[6][9]
কিটির শূকর-নাসা বাদুড়েরা ক্রাসিওনিকটেরিডি গোত্রের একমাত্র জীবিত সদস্য। আণবিক পরীক্ষায় এদের আবার রাইনোলোফোইডি অধিগোত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরূপ শ্রেণীকরণের ভিত্তিতে হিপ্পোসিডিরিডি ও রাইনোপমাটিডি গোত্রভুক্ত প্রজাতিসমূহ হলো কিটির শূকর-নাসা বাদুড়দের সবচেয়ে নিকটসম্পর্কিত প্রজাতি।[5]
১৯৭৪ সালের পূর্বে কিটির শূকর-নাসা বাদুড় পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে অপরিচিত ছিল। থাই জীববিজ্ঞানী কিটি থংলঙ্গ্যা এই প্রজাতিদের বাদুড়দের আবিষ্কার করেন বলে তাঁর নামানুসারে এদের "কিটির শূকর-নাসা বাদুড়" নামেও অভিহিত করা হয়। থংলঙ্গ্যা থাইল্যান্ডে এই বাদুড়দের শ্রেণিবিন্যাসকরণে ব্রিটিশ সহযোগী জন অ্যাডওয়ার্ড হিলের সাথে কাজ করছিলেন। থংলঙ্গ্যার আকস্মিক মৃত্যুর পর ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হিল আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রজাতির বর্ণনা দেন এবং তাঁর প্রয়াত সহকর্মী থংলঙ্গ্যার নামে এর দ্বিপদ নামকরণ করেন Craseonycteris thonglongyai।[10][11]
সবচেয়ে সাম্প্রতিক (২০১৯) পর্যালোচনা অনুসারে, কিটির শূকর-নাসা বাদুড়দের জনসংখ্যার নিম্নমুখী ধারার কারণে আইইউসিএন এদের প্রায় বিপন্ন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত করেছে।[1]
১৯৭০ এর দশকে আবিষ্কারের পর থেকেই এদের বাসস্থানে পর্যটন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও নমুনা সংগ্রহ এমনকি ব্যক্তিগত সংগ্রহ ও বিক্রির জন্যও মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। তবুও অধিকাংশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বসতি দুর্গম স্থানে হওয়ায় পুরো প্রজাতির ওপর তেমন একটা প্রভাব পড়ে নি, কেবল কয়েকটি প্রধান বসতির ওপরই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়ে। কিটির শূকর-নাসা বাদুড়দের জন্য আরেকটি সম্ভাব্য ঝুঁকি হলো স্থানীয় সন্ন্যাসীরা যারা ধ্যানের জন্য এইসব গুহায় প্রবেশ করে।[9]
বর্তমানে থাইল্যান্ডের বাদুড়দের জন্য একটি প্রধান ও দীর্ঘস্থায়ী হুমকি হলো বার্ষিক বনভূমি পোড়ানো, যা সাধারণত বাদুড়দের প্রজননের সম্ভাব্য সময়ে হয়ে থাকে। সেই সাথে সাম্প্রতিককালের মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডে নতুন পাইপলাইন স্থাপনের কাজও এদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।[9] মিয়ানমারে এই বাদুড়দের প্রকৃত সংখ্যা ও ঝুঁকি সম্পর্কে তেমন কোনো নথি পাওয়া যায় না।[3]
২০০৭ সালে কিটির শূকর-নাসা বাদুড় বিবর্তনমূলক স্বতন্ত্র ও বৈশ্বিক বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে শনাক্ত করে শীর্ষ দশটি "কেন্দ্রীয় প্রজাতি"র অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[12]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.