Loading AI tools
ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কাশ্মীর সমস্যা (হিন্দি: कश्मीर विवाद — Kaśmīr Vivād, উর্দু: مسئلۂ کشمیر — Masʾala-ē Kašmīr) হলো কাশ্মীর অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত সরকার, কাশ্মীরি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি এবং পাকিস্তান সরকারের মধ্যে প্রধান আঞ্চলিক বিরোধ। যদিও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে ১৯৪৭-এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় থেকেই আন্তঃরাজ্য বিরোধ রয়েছে,[2] এছাড়াও কাশ্মীরি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি্র সাথেও - কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি বা সম্পূর্ণ স্বাধীন ঘোষণা করার জন্য অভ্যন্তরীণ বিরোধ রয়েছে । [3]
কাশ্মীর সমস্যা | ||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ভারত ১৯৪৭ সালে সাক্ষরিত সংযুক্তিকরণ চুক্তির ভিত্তিতে পূর্বতন জম্মু ও কাশ্মীর করদ রাজ্যকে সম্পূর্ণভাবে দাবি করে। তার অধিকাংশ মুসলিম জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীর দাবি করে, অপর পক্ষে চীন শাকসাম উপত্যকা ও আকসাই চীন নিজেদের দাবি করে। | ||||||||
| ||||||||
বিবাদমান পক্ষ | ||||||||
পাকিস্তান |
ভারত |
জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | ||||||||
জেনারেল রাহিল শরিফ |
জেনারেল দলবীর সিং সুহাগ |
আমনুল্লাহ খান |
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে ১৯৪৭, ১৯৬৫ এবং ১৯৯৯-এ অন্ততঃ তিনটি যুদ্ধ হয়েছে। এছাড়াও,১৯৮৪ সালের পর থেকে সিয়াচেন হিমবাহ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই দুই দেশ বেশ কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধে জড়িত হয়েছিল। ভারত সমগ্র জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যটি তাদের বলে দাবি করে এবং যার মধ্যে ২০১০ সালের হিসাবে, জম্মু বেশিরভাগ অংশ, কাশ্মীর উপত্যকা, লাডাখ এবং সিয়াচেন হিমবাহ নিয়ে প্রায় ৪৩% অঞ্চল শাসন করছে। পাকিস্তান এই দাবির বিরোধিতা করে, যারা প্রায় কাশ্মীরের ৩৭% নিয়ন্ত্রণ করে- এর মধ্যে আছে আজাদ কাশ্মীর এবং গিলগিট বাল্টিস্থানের উত্তরাঞ্চল।
কাশ্মীরি বিদ্রোহীরা এবং ভারত সরকারের মধ্যে বিরোধের মূল বিষয়টি হল স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন। কাশ্মীরের গণতান্ত্রিক উন্নয়ন ১৯৭০-এর শেষভাগ পর্যন্ত ছিল সীমিত এবং ১৯৮৮ সালের মধ্যে ভারত সরকার কত্তৃক প্রদত্ত বহু গণতান্ত্রিক সংস্কার বাতিল হয়ে গিয়েছিল । অহিংস পথে অসন্তোষ জ্ঞাপন করার আর কোনো রাস্তাই খোলা ছিল না তাই ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য বিদ্রোহীদের হিংসাত্মক আন্দোলনের সমর্থন নাটকীয়ভাবে বাড়তে থাকে। ১৯৮৭ সালে বিতর্কিত বিধানসভা নির্বাচন রাজ্যের বিধানসভার কিছু সদস্যদের সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী গঠনে অনুঘটকের কাজ করেছিল। ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল, ধর্মঘট এবং আক্রমণের মাধ্যমে শুরু হয় কাশ্মীরের অস্থিরতা।
যদিও জম্মু ও কাশ্মীরের অশান্তির ফলে হাজারো মানুষ মারা গেছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেখা গেছে যে সংঘাতে প্রাণহানীর পরিমাণ অনেকটাই কম। প্রতিবাদী আন্দোলন ভারত সরকারের কাছে কাশ্মীরের সমস্যা ও ক্ষোভ জানানোর শক্তি যুগিয়েছে, বিশেষ করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে, যারা ১৯৮৯ সালে থেকে ভারত শাসিত কাশ্মীরে সক্রিয় রয়েছে । যদিও বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০৮ সালের নির্বাচন বয়কটের ডাক দেয় তবুও বহু সংখ্যক ভোটার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার এই নির্বাচনকে সাধারণভাবে নিরপেক্ষ হিসাবে গণ্য করে। এই নির্বাচনে জয়লাভ করে ভারতপন্থী জম্মু ও কাশ্মীর ন্যাশানাল কনফারেন্স রাজ্যে সরকার গঠন করে। ভয়েস অফ আমেরিকা অনুযায়ী, বহু বিশ্লেষকের মতে এই নির্বাচনে উচ্চ সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি - কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের ভারতের শাসনকে সমর্থন করার ইঙ্গিত দেয়। কাশ্মীরের একজন বিশিষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সাজ্জাদ লোন যদিও দাবি করেন "উচ্চ সংখ্যক ভোটদানের হার"-কে কখনই কাশ্মীরিরা যে আর স্বাধীনতা চান না তার একটি ইঙ্গিত হিসাবে গ্রহণ না করা হয়। ২০০৯ ও ২০১০ সালে আবার অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
লোককথা অনুযায়ী, "কাশ্মীর" মানে হল "শুষ্ক ভূমি"(সংস্কৃতেঃ কা = জল এবং শীমিরা = শুষ্ক)। দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে কলহন-এর লেখা কাশ্মীরের ইতিহাস "রাজতরঙ্গিণী" থেকে জানা যায় যে কাশ্মীর উপত্যকা পূর্বে একটি হ্রদ ছিলো। হিন্দু পুরাণে বর্ণনা করা আছে সৃষ্টির দেবতা ব্রহ্মার পৌত্র মহাঋষি কশ্যপ বারামূলা(বরাহমূল) পাহাড়ের একাংশ কেটে হ্রদের জল নিষ্কাশন করেন। কাশ্মীর সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার পর কশ্যপ ব্রাহ্মণদের সেখনে বসতি স্থাপন করা্র জন্য আমন্ত্রণ করেন। এই কাহিনী স্থানীয় ঐতিহ্যে আজও রয়ে গেছে, এবং এই অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থাও অনেকটাই সমর্থন করে । কশ্যপের সাথে হ্রদ নিষ্কাশণের যোগাযোগ ঐতিহ্যগত ইতিহাসেও পাওয়া যায়,যা বোঝা যায় উপত্যকায় বসবাসকারীদের প্রধান শহরের নাম "কশ্যপ-পুরা" থেকে, যার উল্লেখ আছে হেকাটেউস লেখায় কাস্পাপাইরস বা হেরোডোটাসের লেখায় কাস্পাটাইরস নামে। টলেমি তার লেখা কাশ্মীরকে "কাস্পেইরিয়া" নামে নির্দেশ করেছেন।
ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভারতে আসা চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর লেখা জানতে পারা "কাশ-মি-লো" রাজ্যের কথা যার অস্তিত্ব ছিল প্রথম শতাদ্বী থেকে ।
১৮১৯ খ্রীষ্টাব্দে শিখ মহারাজা রণজিৎ সিংহ-এর কাশ্মীর বিজয়ের পূর্বে এখানে রাজত্ব ছিল পাশতুন উপজাতীয় দুরানী রাজবংশের। প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধের পর লাহোর চুক্তি অনুসারে কাশ্মীর ইষ্টইণ্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীনে আসে, যারা কিছুদিন পরেই অমৃতসর চুক্তির মাধ্যমে জম্মুর রাজা গুলাব সিং-কে বিক্রি করে দেয়, এর ফলে তিনি জম্মু ও কাশ্মীরে মহারাজা উপাধি লাভ করেন। এইসময় থেকে ১৯৪৭-এ দেশভাগের আগে পর্য্যন্ত হিন্দু মহারাজাদের অধীনে কাশ্মীর শাসিত হয় যদিও জম্মু ও লাডাখ অঞ্চল ছাড়া সমগ্র রাজ্যে মুসলমান জনসংখ্যার আধিক্য ছিল বেশি। যদিও ভারতের জনসংখ্যা পাকিস্তানের ছয় গুণ বেশি তবে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় সমান।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.