কারামেহের যুদ্ধ
১৯৬৮ সালে ইসরায়েল, জর্দান ও পিএলও'র যুদ্ধ / From Wikipedia, the free encyclopedia
কারামেহের যুদ্ধ (আরবি: معركة الكرامة) ছিল ১৯৬৮ সালের ২১শে মার্চে ক্ষয়কারক যুদ্ধ চলাকালে জর্দানের কারামেহ শহরে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এবং ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা (পিএলও) ও জর্দানি সশস্ত্র বাহিনীর (জেএএফ) যৌথবাহিনীর মধ্যে সংঘটিত ১৫ ঘণ্টার একটি সামরিক যুদ্ধ।[4] এটি পিএলও শিবিরে দুটি সমকালীন অভিযানের একটি হিসেবে ইসরায়েল দ্বারা পরিকল্পিত হয়েছিল। দুটি অভিযানের একটি কারামেহ্তে এবং অন্যটি দূরবর্তী সাফি গ্রামে পরিচালিত হয়েছিল, যাদের সাংকেতিক নাম যথাক্রমে অপারেশন ইনফার্নো (হিব্রু ভাষায়: מבצע תופת) এবং অপারেশন আসুতা (מבצע אסותא), তবে প্রথম অভিযানটি একটি পুরোদস্তর যুদ্ধে পরিণত হয়।[15]
কারামেহের যুদ্ধ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: ক্ষয়কারক যুদ্ধ | |||||||
একটি ইসরায়েলি ট্যাংক দমন করার পর রাজা হুসেইন | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
ইসরায়েল (আইডিএফ) |
| ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
লেভি এশকোল উজি নারকিস মোশে ডায়ান |
রাজা হুসেইন আমের খাম্মাশ মশুর হাদিথা আসাদ ঘানমা ইয়াসির আরাফাত আবু ইয়াদ আবু জিহাদ আবু আলি ইয়াদ | ||||||
শক্তি | |||||||
প্রায় ১৫০০০[4] ১টি পদাতিক ব্রিগ্রেড ১টি প্যারাট্রুপ ব্যাটেলিয়ন ১টি প্রকোশলী ব্যাটেলিয়ন ৫টি আর্টিলারি ব্যাটেলিয়ন) |
২য় সাঁজোয়া বিভাগ[6] | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
ইসরায়েল: ২৮[9]– ৩৩ জনের মৃত্যু[10]৬৯[9] – ১৬১ জন আহত হয়[10] ২৭টি ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ৪টি ট্যাংক ফেলে আসা হয়[10] ২টি এপিসি (সাঁজোয়াযুক্ত সৈন্যবাহক)[5] ২টি যানবাহন<[5] ১টি বিমান[10] |
জর্দান:
৪০[11]- ৮৪ জনের মৃত্যু[10] ১৫৬ জনের মৃত্যু[10] ~১০০ জন আহত হয় ১৪১ জন বন্দি হয়[10] | ||||||
১৭৫টি ভবন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়[10] |
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের পর, পিএলও তাদের ঘাঁটি জর্দানে সরিয়ে নেয় এবং সীমান্তবর্তী কারামেহ শহরে সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণের পদক্ষেপ নেয়।[4] আইডিএফ দাবি করে যে, তাদের আক্রমণের কারণ ছিল কারামেহের সংগ্রামী পিএলও শিবির ধ্বংস করা এবং ইয়াসির আরাফাতকে প্রতিশোধ হিসেবে বন্দি করা। যদিও ধারণা করা হয়ে থাকে, আইডিএফ ফিলিস্তিনি ফেদাইনদের (ফেদাইন, যার অর্থ আত্মত্যাগী) প্রতি জর্দানের সমর্থনের জন্য জর্দানকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিল।[16] ইসরায়েল ধারণা করেছিল জর্দান সেনাবাহিনী যুদ্ধে যোগদান থেকে বিরত থাকবে, কিন্তু জর্দানি সেনারা তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত করে ভারী কামান মোতায়ন করে।[17] ইসরায়েলিরা এক দিনব্যাপী যুদ্ধের পর কারামেহ শিবিরের অধিকাংশ ধ্বংস করে এবং ১৪০ জন পিএলওর সদস্যকে বন্দি করার পর সৈন্যদের প্রত্যাহার করে।[3] এ যুদ্ধের ফলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রেজ্যুলেশন ২৪৮ গৃহীত হয়, যা সর্বসম্মতিক্রমে ইসরায়েলকে অস্ত্র বিরতি লঙ্ঘ্ন ও সামরিক শক্তির অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহারের জন্য দায়ি করে।[18]
উভয়পক্ষ বিজয় ঘোষণা করে। কৌশলগত দিক দিয়ে যুদ্ধটি ইসরায়েলের অনুকূলে যায়[13] এবং তাদের কারামেহ শিবির ধ্বংসের অভিপ্রায় সফল হয়।[9] অপরদিকে, অপেক্ষাকৃতভাবে অধিক ক্ষয়ক্ষতি ইসরায়েলিদের নিকট একটি অপ্রত্যাশিত ও বিবেচনাযোগ্য় বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়।[4] ইসরায়েল তিনজন মৃত সৈন্যকে এবং কিছু সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাংক উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়, যেগুলো পরবর্তীতে আম্মানে জর্দানিদের দ্বারা কুচকাওয়াজে সাড়ম্বরে প্রদর্শন করা হয়।[19] যুদ্ধটিতে প্রথমবারের মত ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের দ্বারা আত্মঘাতী বোমাহামলাকারীদের নিয়োজন চিহ্নিত করা হয়।[20] যদিও ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলিদের ক্ষতিসাধনে সীমিত সাফল্য লাভ করে, রাজা হুসেইন তাদের কৃতিত্ব নিতে অনুমতি দেন।[21]
যুদ্ধের পরে হুসেইন ঘোষণা করেন, "আমি মনে করি আমরা এমন একটি অবস্থানে পোঁছাতে পারি যেখানে আমরা সকলেই ফেদায়িন।" ফিলিস্তিনিরা আরব বিশ্বে যুদ্ধটির ব্যাপক প্রশংসা ও স্বীকৃতিকে নিজেদের জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যবহার করে। পরবর্তী সময়ে জর্দানের ফেদায়িনদের প্রতি আরব দেশসমূহের সমর্থনের জোয়ার আসে।[22] পরিণামে পিএলওর শক্তি বৃদ্ধি পেতে শুরু করলে, ফেদায়িনরা খোলাখুলিভাবে হাশেমী রাজতন্ত্র উৎখাত করার ঘোষণা দেয়। অবশেষে ১৯৭০ সালে কালো সেপ্টেম্বরের ঘটনাপ্রবাহের সময় আসন্ন উত্তেজনা ফেদায়িনদের জর্দান থেকে লেবাননে বিতাড়িত হতে তরান্বিত করে।[17]