Loading AI tools
ভারতীয় হিন্দু সধবা মহিলাদের দ্বারা উদযাপিত উৎসব উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
করবা চৌথ হলো আশ্বিন মাসে পূর্ণিমার পরে চতুর্থ দিনে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের হিন্দু মহিলাদের দ্বারা পালিত একটি উৎসব। অনেক হিন্দু উৎসবের মতো করবা চৌথ চন্দ্র-সৌর পঞ্জিকার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় যা সমস্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানের অবস্থান। বিশেষ করে চাঁদের অবস্থান যা গুরুত্বপূর্ণ তারিখ গণনা করার জন্য চিহ্নিতকারী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। উৎসবটি পূর্ণিমার পর চতুর্থ দিনে করা হয়।
করবা চৌথের দিনে বিবাহিত মহিলা এবং অবিবাহিত মহিলারা বিশেষ করে তাদের স্বামীর নিরাপত্তা এবং দীর্ঘায়ু জন্য সূর্যোদয় থেকে চন্দ্রোদয় পর্যন্ত উপবাস পালন করে।[2][3][4] করবা চৌথ উপবাস ঐতিহ্যগতভাবে দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান, পাঞ্জাব, জম্মু, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশে পালিত হয়।[2][5][6][7][8] এটি অন্ধ্র প্রদেশে আটলা টাড্ডে হিসাবে পালিত হয়।
‘করবা’ শব্দের অর্থ কড়াই এবং ‘চৌথ’ মানে চতুর্থী তিথি। এই দুয়ে মিলে ব্রতের নামকরণ। এই ব্রতে কড়াইয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা ব্রত রাখেন, তাঁরা নতুন কড়াই কেনেন। সেখানে রাখেন নতুন কাপড়, কাচের চুড়ি এবং বাড়িতে তৈরি মুখরোচক খাবার ও মিষ্টি। একে অন্যের সঙ্গে সেই কড়াই আদানপ্রদানও করেন তাঁরা।
সন্তান এবং স্ত্রীকে রেখে স্বামী যেতেন দূর দেশে, যুদ্ধক্ষেত্রে। পেশায় সৈন্য স্বামীর জন্য উদ্বেগের প্রহর গুনতেন স্ত্রী। তাঁর মঙ্গল কামনায় বিশেষ উপবাস ব্রত করতেন কার্তিক মাসের প্রথম পূর্ণিমার পরে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিতে। বলিউডের কল্যাণে সেই ব্রত ‘করবা চৌথ’ আজ বহুল প্রচলিত।
নিম্নলিখিত তারিখগুলি হিন্দু পঞ্জিকার উপর ভিত্তি করে।
সাল | করবা চৌথের তারিখ |
---|---|
২০০৮ | ১৭ অক্টোবর[9] |
২০০৯ | ৭ অক্টোবর[10] |
২০১০ | ২৬ অক্টোবর[11] |
২০১১ | ১৫ অক্টোবর[12] |
২০১২ | ২ নভেম্বর[13] |
২০১৩ | ২২ অক্টোবর[14] |
২০১৪ | ১১ অক্টোবর[15] |
২০১৫ | ৩০ অক্টোবর[16] |
২০১৬ | ১৯ অক্টোবর[17][18] |
২০১৭ | ৮ অক্টোবর[19] |
২০১৮ | ২৭ অক্টোবর[20] |
২০১৯ | ১৭ অক্টোবর[21] |
২০২০ | ৪ নভেম্বর[22] |
২০২১ | ২৪ অক্টোবর[23] |
২০২২ | ১৩ অক্টোবর[24] |
‘করবা চৌথ’ মূলত উত্তর ও উত্তর পশ্চিম ভারতে পালনীয় ব্রত। রীতি হল, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত ব্রতীরা কিছু খাবেন না। এমনকি, জলপানও নিষিদ্ধ। তাই অনেক প্রদেশেই সূর্যোদয়ের আগে বিবাহিতারা খেয়ে নেন। সাধারণত সেই খাবার তাঁকে বানিয়ে দেন তাঁর শাশুড়ি। সন্ধ্যায় শুরু হয় আসল উৎসব। গয়না আর নতুন পোশাকে সেজে, মেহেন্দিতে হাত রাঙিয়ে, এক জায়গায় জড়ো হন সবাই, যাঁরা ব্রত রেখেছেন। ‘করবা চৌথ’-এর পোশাক সাধারণত লাল, হলুদ বা সোনালি রঙের হয়। গান গাওয়া হয় একসঙ্গে। কোনও প্রবীণা বা কোনও পুরোহিত ব্রতকথা পাঠ করেন। আকাশে চতুর্থীর চাঁদ দেখা গেলে তা চালুনির মধ্যে দিয়ে দেখতে হয়। সঙ্গে থাকে প্রদীপ। চন্দ্রদেবতার কাছে স্বামীর মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করেন স্ত্রী। তারপর সেই প্রদীপের আলোয় দেখতে হয় স্বামীর মুখ। বরণডালা থেকে জলের পাত্র নিয়ে স্ত্রীর মুখে ধরেন স্বামী। সেই জল পান করেই ভঙ্গ হয় উপবাস।
আধুনিক উত্তর ভারত এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের সমাজে করবা চৌথ একটি রোমান্টিক উৎসব হিসাবে বিবেচিত হয় যা স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে প্রেমের প্রতীক।[25] এটি দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে-এর মতো বলিউডের সিনেমাগুলিতে পালিত হয়েছে যেখানে একজন অবিবাহিত মহিলা একজন পুরুষের জন্য তার ভালবাসার ইঙ্গিত দেয় তার জন্য উপবাস রেখে এবং সে সহানুভূতির অঙ্গভঙ্গি হিসাবে গোপনে উপবাস করে তার প্রতিদান দেয়। পাশাপাশি তার জন্য তার উদ্বেগ প্রদর্শন করে। দিনের বেলায় এবং চন্দ্রোদয়ের সময় তাকে খাওয়ানোর মাধ্যমে তার উপবাস ভঙ্গ করা এবং ভগবান চলচ্চিত্র যেখানে একজন ব্যক্তি তার বৃদ্ধ রোজাদার স্ত্রীকে টেলিফোনে তার উপবাস ভঙ্গ করতে রাজি করান কারণ তারা তাদের যত্নহীন সন্তানদের দ্বারা আলাদা হয়ে গেছে।[26][27][28] সেলিব্রিটিদের সংবাদ কভারেজ কখনও কখনও অবিবাহিত পাবলিক ব্যক্তিত্ব দ্বারা উপবাস পালনকে হাইলাইট করে কারণ এটি একটি শক্তিশালী এবং সম্ভবত স্থায়ী রোমান্টিক সংযুক্তির ইঙ্গিত দেয়।[29] ভালোবাসা দিবসের মতোই একজন রোমান্টিক সঙ্গীর অভাব অনড় মহিলারা তীব্রভাবে অনুভব করতে পারে।[30] উৎসবটি এই অঞ্চলে বিজ্ঞাপন প্রচারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ একটি চেভ্রোলেট টিভি স্পটে যেখানে একজন পুরুষ একটি সানরুফ সহ একটি গাড়ি কিনে তার স্ত্রীর জন্য তার যত্নশীলতা প্রদর্শন করে যাতে সে তাকে দেখতে না পাওয়া পর্যন্ত করবা চৌথের চাঁদ রাতে তাকে নিয়ে ঘুরতে পারে।[31]
বলিউডকে ধন্যবাদ। করবা চৌথ এখন আর উত্তর ভারতীয় উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এখন ভারতে চটকদার এবং ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় উৎসব।[32] কৃষি সভ্যতার সঙ্গেও এই ব্রত জড়িয়ে। এই সময়েই রবি শস্যের চাষ শুরু হয়। বপন করা হয় গমের দানা। যে বড় পাত্রে গমের দানা রাখা হয়, তাকেও ‘করবা’ বলা হয়।
‘করবা চৌথ’ ব্রতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু পৌরাণিক আখ্যান। কথিত, রানি বীরবতী তাঁর পিতৃগৃহে এই ব্রত পালন করছিলেন। কিন্তু উপবাসরত বোনের কষ্ট হচ্ছে ভেবে তাঁর সাত দাদা অশ্বত্থ গাছে আয়না রেখে দিলেন। যাতে মনে হয়, আকাশে চাঁদ উঠেছে। আয়নাকে চাঁদ ভেবে ভুল করে উপবাস ভঙ্গ করেন বীরবতী। তার পরেই স্বামীর মৃত্যুর খবর পান। শোকে মুহ্যমান হলেও বীরবতী আবার ‘করবা চৌথ’ পালন করে তাঁর স্বামীর প্রাণভিক্ষা করেন। প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে যমরাজ ফিরিয়ে দেন তাঁর স্বামীর প্রাণ। আবার কোনও লোককথা বলে, ‘করবা’ নামের এক পতিব্রতা নারী ছিলেন। তিনি যমরাজের মুখোমুখি হয়ে কুমিরের গ্রাস থেকে উদ্ধার করেছিলেন স্বামীকে। তাঁর নামেই নাকি এই ব্রতের নামকরণ।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.