এক প্রকার ব্রত উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উপবাস হল নির্দিষ্ট বা সকল ধরনের খাদ্য বা পানীয় কিংবা উভয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা। উপবাস শব্দটির সমার্থক হিসেবে অনেক সময় উপোস, অনশন, অনাহার, ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়।
ডাক্তারি শল্যচিকিৎসায় অস্ত্রপাচারের পূর্বে অবশ করার সুবিধার্থে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে না খেয়ে থাকতে বলা হয়, যাতে অচেতন করার পর পাকস্থলি থেকে গ্যাস ফুসফুসে যেতে না পারে (যাকে ফুসফুসীয় শ্বাসগ্রহণ বা পালমোনারি এসপিরেশন বলা হয়)। ফুসফুসীয় শ্বাসগ্রহণের ফলে বমি, এবং জীবনের হুমকিস্বরূপ শ্বাসগ্রহণমূলক নিউমোনিয়া হতে পারে।[১][২][৩] পাশাপাশি, কিছু ডাক্তারি পরীক্ষার ক্ষেত্রে, যেমন কোলেস্টেরল বা লিপিড প্যানেল পরীক্ষা এবং রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষার ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা ধরে উপবাস থাকতে বলা হয় যাতে পরীক্ষার ফলাফলটি অধিক নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যায়। কোলেস্টেরল পরীক্ষার ক্ষেত্রে রোগী যদি ১২ ঘণ্টা ব্যাপী না খেয়ে থাকতে অসমর্থ হয়ে পড়ে তবে তা নিশ্চিত করে যে তাঁর শরীরে উচ্চমাত্রার ট্রাইগ্লিসারাইড রয়েছে।[৪]
ক্যান্সার প্রতিরোধে বা চিকিৎসায় উপবাস কোন ধরনের সাহায্য করে না।[৫]
মার্কিন কর্কটরোগ সমিতি (আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি) প্রস্তাব করে, কর্কটরোগের রাসায়নিক চিকিৎসা (কেমোথেরাপি) গ্রহণকারী রোগীরা যাতে প্রোটিন এবং ক্যালরি গ্রহণ বাড়িয়ে দেন; খাদ্যতালিকার নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল এক্ষেত্রে কোন মন্তব্য দেয় না - একটি দুর্বল সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে যে, কম সময়ের উপবাস চিকিৎসায় উপকারিতা দিতে পারে।[৬]
উপবাস বিষণ্নতার কিছু লক্ষণ উপশম করতে পারে।[৭] কিন্তু এর ফলে উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্নতার মত মানসিক প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হতে পারে।[৮]
কিছু গবেষক বলেন, উপবাসের সময় শ্বেত রক্তসকণিকা ভেঙ্গে যায়, এর ফলে উপবাস ভাঙ্গার পর নতুন শ্বেত রক্তকণিকা তৈরির প্রয়োজন পড়ে, এবং পুরনো ক্ষতিগ্রস্ত শ্বেত রক্তকণিকা পরিবর্তিত হয়ে যায়।[৯]
যদিও উপবাসের ফলে ওজন কমে,[৮][১০] ওজন কমানোর জন্য উপবাসকে অপ্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করা হয়।[৮][১১]
উপবাসকে প্রায়শই রাজনৈতিক বিবৃতি প্রদান, কিংবা আন্দোলন ও প্রতিবাদ প্রদর্শন কিংবা কোন বিষয়ে জনসচেতনতা আনয়নের লক্ষ্যে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে "অনশন" পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়। অনশন ধর্মঘট হল শান্তিপূর্ণভাবে অহিংস প্রতিরোধ গড়ে তোলার একটি প্রথা যেখানে এর অংশগ্রহণকারীরা রাজনৈতিক প্রতিবাদ হিসেবে অথবা অপরাধবোধের উপলব্ধিকে জাগিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে অথবা শাসন প্রণালী পরিবর্তনের ন্যায় লক্ষ্য অর্জনের জন্য উপবাস পালন করে। অপরদিকে আধ্যাত্মিক উপবাস বা উপবাস কোন ব্যক্তিকে সামাজিক অনাহার বা অনাচারের বিষয়ে ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক মতাদর্শকে প্রকাশের উদ্দেশ্যে নিজস্ব আধ্যাত্মিক বিশ্বাসকে আত্মোপলব্ধি করতে সহায়তা করে।[১২]
হিন্দুধর্মে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের উপবাস করার কথা বলা হয়েছে। উপবাস মূলত তিন প্রকারঃ স্বল্পানশন, অর্ধানশন ও পূর্ণানশন।পূর্ণানশন বলতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সকল ধরনের খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকা বোঝায়। এছাড়া অন্যান্য ধরনের উপবাসে উপবাসকালীন সময়ে নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়া যায়।[১৩] ইসলাম ধর্মে উপবাস হল এর পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে একটি যাকে সাওম নামে অভিহিত করা হয়। ইসলামী বর্ষের রমজান নামক একটি নির্দিষ্ট মাসের ত্রিশ দিন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য সাওম পালন করা বাধ্যতামূলক।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.