Loading AI tools
জার্মান দার্শনিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আর্থার শোপনহাউয়ার (/ˈʃoʊpənhaʊ.ər/;[4] জার্মান: [ˈaʁtʊʁ ˈʃoːpn̩haʊ̯ɐ] (; ২২ ফেব্রুয়ারি ১৭৮৮ - ২১ সেপ্টেম্বর ১৮৬০) একজন জার্মান দার্শনিক ছিলেন। তিনি ১৮১৮ সালের দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাজ উইল অ্যান্ড রিপ্রেজেন্টেশন (১৮৪৪ সালে সম্প্রসারিত) বইটির জন্য সর্বাধিক পরিচিত। )[5][6] ইমানুয়েল কান্টের সীমাতিক্রমী আদর্শবাদের উপর ভিত্তি করে শোপনহাউয়ার নাস্তিত্যবাদী অধিবিদ্যা ও নৈতিক পদ্ধতির বিকাশ ঘটান যা জার্মান আদর্শবাদের সমকালীন ধারণাগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে।[7][8] তিনি পশ্চিমা দর্শনের প্রথম দার্শনিকদের একজন যিনি সন্ন্যাসব্রত, আত্ম-অস্বীকৃতি, ও মায়ার ধারণাসহ ভারতীয় দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ মতবাদগুলো স্বীকার করেন।[9][10] তার সৃষ্টিকর্মসমূহকে দার্শনিক নৈরাশ্যবাদের দৃষ্টান্তমূলক প্রকাশ বলে অভিহিত করা হয়।[11][12][13]
আর্থার শোপনহাউয়ার | |
---|---|
জার্মান: Arthur Schopenhauer | |
জন্ম | ডানৎসিশ (গ্দাইস্ক), পোলীয়–লিথুয়ানীয় কমনওয়েলথ | ২২ ফেব্রুয়ারি ১৭৮৮
মৃত্যু | ২১ সেপ্টেম্বর ১৮৬০ ৭২) ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মান কনফেডারেশন | (বয়স
জাতীয়তা | জার্মান |
শিক্ষা |
|
যুগ | ১৯শ শতাব্দীর দর্শন |
অঞ্চল | পশ্চিমা দর্শন |
ধারা |
|
প্রতিষ্ঠান | বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় |
প্রধান আগ্রহ | অধিবিদ্যা, নন্দনতত্ত্ব, নীতিশাস্ত্র, নৈতিকতা, মনোবিজ্ঞান |
স্বাক্ষর | |
শোপনহাউয়ার ১৭৮৮ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি ডানৎসিশে (তৎকালীন পোলীয়-লিথুয়ানীয় কমনওয়েলথের অংশ, বর্তমান গ্দাইস্ক, পোল্যান্ড) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাইনরিখ ফ্লোরিস শোপনহাউয়ার এবং মাতা ইয়োহান শোপনহাউয়ার (বিবাহপূর্ব ট্রসিনের)।[14] তারা দুজনেই ধনাঢ্য জার্মান-ওলন্দার পরিবারের বংশধর ছিলেন। তাদের কেউই খুব ধার্মিক ছিলেন না,[15] এবং দুজনেই ফরাসি বিপ্লবকে সমর্থন দেন।[16] তারা রিপাবলিকান, কসমোপলিটান ও অ্যাংলোফিলিস ছিলেন।[17] ১৭৯৩ সালে ডানৎসিশ প্রুসিয়ার অংশ হলে হাইনরিখ প্রুসীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ব্রিটেন ও হল্যান্ড কর্তৃক সুরক্ষিত মুক্ত শহর হামবুর্গে চলে যান। তবে ডানৎসিশে তার বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলতে থাকে এবং তার যৌথ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য সেখানেই থেকে যায়। ১৭৯৭ সালের ১২ই জুলাই আর্থার একমাত্র বোন আডেল শোপনহাউয়ার জন্মগ্রহণ করেন।
১৭৯৭ সালে আর্থারকে তার পিতার ব্যবসার সহযোগী গ্রেগোয়ার দ্য ব্লেইমেরের পরিবারের সাথে বসবাস করতে দুই বছরের জন্য ল্য আভ্রতে পাঠানো হয়। তিনি সেখানে আনন্দে দিনাতিপাত করেন, অনর্গল ফরাসি ভাষা বলতে শিখেন এবং জঁ অঁতিম গ্রেগোয়ার দ্য ব্লেজিমেরের সাথে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।[18] ১৭৯৯ সালের শুরুতে আর্টুর বাঁশি বাজানো শুরু করেন।:৩০ ১৮০৩ সালে তিনি হল্যান্ড, ব্রিটেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, প্রুসিয়ায় দীর্ঘ সফর শেষ করে তার পিতামাতার নিকট ফিরে আসেন। হাইনরিখ তার কয়েকজন ব্যবসা সহযোগীর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলেও এটি মূলত প্রমোদ ভ্রমণ ছিল। হাইনরিখ তাকে বাড়িতে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেওয়া কিংবা তাদের সাথে ব্যবসা সফরে গিয়ে ব্যবসায়ের বিদ্যা রপ্ত করা এই দুটি থেকে একটি বাছাই করার সুযোগ দেন। আর্টুর পরবর্তীকালে তার পছন্দ নিয়ে অনুতাপ করেন কারণ বাণিজ্যের প্রশিক্ষণ তার কাছে ক্লান্তিকর মনে হয়েছিল। তিনি উইম্বলডনের একটি বিদ্যালয়ে ১২ সপ্তাহ পড়াশোনা করেন, সেখানে তিনি কঠোর কিন্তু বুদ্ধিভিত্তিতে অগভীর অ্যাংলিক্যান ধর্মের কারণে মর্মাহত হন। একারণেই তিনি পরবর্তী জীবনে সাধারণ ইংরেজপ্রেমী হওয়া স্বত্বেও ইংরেজ সরকারি প্রটেস্ট্যান্ট গির্জার সমালোচনা করতেন।[19] তার পিতার দিক থেকেও তার প্রতি চাপ আসছিল এবং তার পিতা তার ফলাফল নিয়ে বেশ সমালোচনা করতেন। হাইনরিখ এতটাই তিড়বিড়ে হয়ে যান যে তার স্ত্রী তার মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়েন।[20]
১৮০৫ সালে হাইনরিখ হামবুর্গে তাদের বাড়ির পাশের খালের পানিতে ডুবে মারা যান। যদিও ধারণা করা হয় দুর্ঘটনাবশতঃ তার মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু তার স্ত্রী ও সন্তান মনে করেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন কারণ তার জীবনের শেষের কয়েক মাস তার আচরণ বন্ধুভাবাপন্ন ছিল না এবং তিনি উদ্বিগ্ন ও হতাশায় ভুগছিলেন।[21][22] আর্টুরে্র মধ্যেও কিশোর বয়স থেকে এই ধরনের ভাব দেখা যেত এবং প্রায়ই উল্লেখ করা হয় এটি তিনি তার পিতার থেকে পেয়েছেন। তাছাড়া তার পিতার পরিবারের দিক থেকে মারাত্মক মানসিক ব্যাধির কয়েকটি ঘটনা রয়েছে।[23] তার মাতা ইয়োহানাকে সাধারণত প্রাণোচ্ছল ও বন্ধুভাবাপন্ন বলে বর্ণনা করা হয়।[17] হাইনরিখ শোপনহাউয়ার তার পরিবারের জন্য বিপুল সম্পদ রেখে যান, যা ইয়োহানা ও দুই সন্তানের মধ্যে তিনভাগে ভাগ করা হয়। আর্টুর প্রাপ্তবয়স্ক হলে তার ভাগ নিয়ন্ত্রণের অধিকার পান। তিনি সরকারি বন্ডে তার অর্থ বিনিয়োগ করেন এবং বার্ষিক যে মুনাফা পান তা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বেতনের দ্বিগুণের অধিক ছিল।[24]
তিনি ১৮০৯ সালে ভাইমার ছেড়ে গটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য পাড়ি জমান। শোপনহাউয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও বিখ্যাত জেনা বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিয়ে কেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তার কারণ জানা যায়নি। কিন্তু গটিঙেন ধর্মতত্ত্বে কম গুরুত্ব দিলেও অধিক আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত হিসেবে খ্যাত ছিল।[25] শোপনহাউয়ারের মত সামাজিক অবস্থাসম্পন্ন তরুণদের নিকট আইন বা চিকিৎসাশাস্ত্র অধিক পছন্দনীয় ছিল, যারা তা কর্মজীবন ও আয়ের উৎস হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে। বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হওয়ায় শোপনহাউয়ার চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য অধ্যাপক ছিলেন বের্নহার্ড ফ্রিডরিশ তিবো, আর্নল্ড হেরমান লুডভিগ হিরেন, ইয়োহান ফ্রিডরিশ ব্লুমেনবাখ, ফ্রিডরিশ স্ট্রমেয়ার, হাইনরিশ আডলফ শ্রেডার, ইয়োহান টোবিয়াস মেয়ার, ও কনরাড ইয়োহান মার্টিন লাঙ্গেনবেক।[26] তিনি এনেসিডেমুস-এর রচয়িতা গটলব এর্নস্ট শুলৎজের অধীনে অধিবিদ্যা, মনোবিজ্ঞান ও যুক্তিবিদ্যা অধ্যয়ন করেন। শুলৎজ তাকে প্লেটো ও ইমানুয়েল কান্টের রচনার উপর মনোযোগ দেওয়ার উপদেশ দেন।[27] ১৮১০-১১ সালের দিকে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিবর্তে দর্শন নিয়ে অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং গটিঙেন ত্যাগ করেন। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো দর্শন বিষয়ক পাঠ্যক্রম ছিল না এবং শুলৎজ ছাড়া আর একজন মাত্র দর্শনের অধ্যাপক ছিলেন ফ্রিডরিশ বুটারভেক, যাকে শোপনহাউয়ার পছন্দ করতেন না।[28] তিনি চিকিৎসা ও বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়ে দুঃখবোধ করতেন না। তিনি দাবী করেন একজন দার্শনিকের জন্য বিজ্ঞান জানা প্রয়োজনীয়। এমনকি বার্লিনে তিনি দর্শনের চেয়ে বিজ্ঞানের অধিক লেকচারে অংশগ্রহণ করেন।[29] গটিঙেনে তিনি অনেক সময় পড়াশোনা করতেন, কিন্তু তার বাঁশি বাজানো ও সামাজিক জীবনও সমান্তরালে চালিয়ে যান। তার বন্ধুদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ফ্রিডরিশ গটহিলফ ওসান, কার্ল ভিটা, ক্রিস্টিয়ান চার্লস জোসিয়াস ফন বুনসেন, ও উইলিয়াম বাকহাউজ অ্যাস্টর সিনিয়র।[30]
১৮১১-১২ সালের শীতকালীন সেমিস্টারে তিনি নব্য প্রতিষ্ঠিত বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একই সময়ে তার মাতা সাহিত্য জীবন শুরু করেন। তিনি ১৮১০ সালে তার প্রথম বই প্রকাশ করেন। এটি ছিল তার বন্ধু কার্ল লুডভিগ ফের্নোর জীবনী, যা সমালোচনামূলক সাফল্য অর্জন করে। আর্টুর প্রসিদ্ধ কান্ট-উত্তর দার্শনিক ইয়োহান গটলিব ফিকটের লেকচারে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই তিনি তার ভিসেনশাফটস্লের-এর অনেকগুলো বিষয়ের সাথে অসম্মত হন এবং তার বক্তৃতাগুলো তার কাছে বিরক্তিকর ও অবোধ্য মনে হয়।[31] তিনি পরবর্তীকালে ফিকটেকে কেবল সমালোচনামূলক ও নেতিবাচক বিষয়ে উল্লেখ করেছেন।[31] তিনি মনে করেন তার দর্শন কান্টের দর্শনের নিম্নমানের সংস্করণ।[32] এছাড়া তিনি প্রসিদ্ধ প্রটেস্ট্যান্ট ধর্মতত্ত্ববিদ ফ্রিডরিশ শ্লেইয়ারমেখারের বক্তৃতাতেও অংশগ্রহণ করেন। তাকেও তিনি খুব দ্রুত অপছন্দ করতে শুরু করেন।[33] শ্লেইয়ারমেখারের বক্তৃতার উপর তার টীকা ও মন্তব্যগুলোতে দেখা যায় শোপনহাউয়ার ধর্মের বিষয়ে খুবই সমালোচনামূলক হয়ে ওঠেন এবং নাস্তিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন।[34] তিনি নিজে নিজেই পড়ে শিখতে শুরু করেন। প্লেটো, কান্ট ও ফিকটের পাশাপাশি তিনি শেলিং, ফ্রিস, জ্যাকবি, বেকন, লক ও অন্যান্য সমকালীন বৈজ্ঞানিক সাহিত্য পড়তে শুরু করেন।[29] তিনি আউগুস্ট বুখ ও ফ্রিডরিশ আউগুস্ট উলফের ভাষাতত্ত্বের পাঠ্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন এবং মার্টিন হাইনরিশ ক্লাপরট, পল এরমান, ইয়োহান এলার্ট বোড, এর্নস্ট গটফ্রিড ফিশার, ইয়োহান হর্কেল, ফ্রিডরিশ ক্রিস্টিয়ান রোসেনস্টাল ও হিনরিখ লিশটেনস্টাইনের পাঠ্যক্রমগুলোর উপরও তার সহজাত আগ্রহ ছিল।[35]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.