Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আজান ফকির(ইংরেজি: Ajan fakir;অসমীয়া: আজান ফকীর) একজন ইসলাম ধর্ম প্রচারক, জিকির গীত রচয়িতা ও কবি ছিলেন। তার প্রকৃত নাম ছিল শাহ মীরান। তিনি আজান পীর, হজরত শাহ মিরান ও শাহ মিলান নামেও বিখ্যাত ছিলেন। ১৬১০ সনে ইরাকের রাজধানী বাগবাদে আজান ফকিরের জন্ম হয়েছিল। তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচার করার জন্য অসমে এসেছিলেন।
আজান ফকির রংপুরের (বর্তমান শিবসাগর) স্থায়ী বাসিন্দা সৈয়দ ওসমান গণি খোন্দাকারের কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন। তিনি দুটি পুত্র সন্তানের পিতা ছিলেন। তিনি বৈবাহিক জীবন সফলভাবে পালন করতেন ও ধর্ম প্রচার করার উদ্যেশে তিনি বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতেন।
ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে বহুসংখ্যক মুসলমান ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম প্রবর্তন করার জন্য নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পরেছিলেন। তারা আল্লাহর নামে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শাহ মীরান তার ভাতৃ নবি ইরাক থেকে আফগানিস্তান পৌঁছেছিলেন তারপর আফগানিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশ করেন। তারপর তারা আজমির, দিল্লী ও বঙ্গদেশ হয়ে অসমে প্রবেশ করেন। আজান ফকির ও ভাতৃ নবি অসমে এসে কিছুদিন হাজোর হজরত গিয়াছ-উদ্দিন আউলিয়ার দরগাহে বাস করেছিলেন। সেই সময়ে অসমে আজান ফকির ও ভাতৃ নবিরের নিজের বলে কেউ ছিলনা। কালক্রমে তারা অসমীয়া কন্যা বিবাহ করেন ও নিজের ধর্ম বজায় রেখে অসমীয়া লোক-সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণ রুপে মিশে যান। হাজোতে থাকা অবস্থায় তিনি অসমীয়া ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন। তিনি ভাষার সঙ্গে অসমীয়া লোক-সংস্কৃতির অঙ্গ ওজাপালী,নৃত্যগীত, দেহবিচারগীত ও লোকগীতের ছন্দে মনোনিবেশ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি অসমীয়া লোক-সংস্কৃতির প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে জিকির রচনা করেছিলেন। জিকিরের ছন্দ অসমীয়া লোকগীত থেকে নেওয়া কিন্তু জিকির আরবী ও ফার্সি ভাষায় লেখা হয়েছিল।
হাজোতে কয়েকদিন থাকার পর দুই ভাতৃ শিবসাগরের দিকে রওনা হন ও নিকটবর্তী চুনপুরা নামক স্থানে উপস্থিত হয়ে বসবাস করা আরম্ভ করেন।[1] আজান ফকির আসার আগে চুনপুরা গ্রামে মসজিদ ছিলনা তিনি প্রথম এই অঞ্চলে মসজিদ স্থাপন করেছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্মালম্বী লোকদেরকে দিনে পাঁচবার নামায পড়ার জন্য অণুরোধ করলেন ও মসজিদ থেকে নিয়মীত ভাবে আযানের ব্যবস্থা করলেন। তিনি জিকির গেয়ে সবার মন আকর্ষণ করেছিলেন। আজান ফকিরের মধুর কন্ঠে জিকির শুনে সকল মুসলমান লোক আল্লাহর মহত্বের কথা উপলদ্ধি করেন ও নিয়মিত নামায পড়া আরম্ভ করেন। এইভাবে অসমে এক নতুন সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়। তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেন ও তার নাম শাহ মীরান থেকে আজন ফকিরে পরিবর্তন হয়ে যায়।
‘’’জিকির’’’ হচ্ছে অসমে প্রচলিত ধর্মীয় গান। এই গানের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মীয় লোকেরা আল্লাহকে স্মরণ করেন। জিকির শব্দটি আরবি ভাষার “ জিকিঅর” থেকে হয়েছে যার অর্থ | আল্লাহ'র নাম স্মরণ করা'। জিকির ইসলাম ধর্মের পবিত্র কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। আজান ফকির অসমীয়া ভাষায় জিকির রচনা করেছিলেন। আজান ফকির আগমনের সময় অসমের মুসলমানেরা 'রোযা, নামায, যাকাত' ইত্যাদি রীতি-নীতি ও অনুষ্ঠান নিয়মিত ভাবে পালন করতেন না। ফলে আজান ফকির অসমের মুসলমানদেরকে ধর্মীয় দিকে আকর্ষণ করার জন্য জিকির রচনা করেছিলেন। জিকিরের ভাষা, ছন্দ ও সুর অসমীয়া ভাষায় রচিত কিন্তু এই গানে ফার্সি ও আরবি ভাষার সামান্য ব্যবহার দেখা যায় । জিকির সমবেত ভাবে গাওয়া হয় ও লোকগীতের মত এর ভঙ্গি সহজ ও সরল। জিকির গীত পরিবেশনে স্থানীয় বাদ্যযন্ত্র দোতারা, বাঁশী, টোকা ইত্যাদির ব্যবহার করা হয়। অসমে প্রচলিত বেশিরভাগ জিকির আজান ফকীর রচনা করেছিলেন যদিও মুনিয়া দেওয়ান, বান্দর ফকীর, সৈয়দ মুরতাজা, গোলাম হুসেইন, হরিদাস কুমার ও বেথাই গুয়াল ইত্যাদি শিল্পীরাও জিকির রচনা করেছিলেন।
ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনের কারবালাতে ঘটিত বেদনাদায়ক কাহিনীকে কেন্দ্র করে রচনা করা শোকগাথা গীতকে জারিগীত বলা হয়। ইসলাম ধর্মীয় লোকের অতি জনপ্রিয় এই গীতটিতে হজরত আলী' ও ফাতিমা বিবির নাম সন্নিবিষ্ট করা হয়। অসমে প্রচলিত জারি গীত জিকির থেকেও অধিক প্রাচীন। এই গীতটিকে মর্সিয়া গীত বলেও বলা হয়। জারি গীতের বিষয়বস্তু - ইসলামি ধর্মীয় চেতনায় সত্যের বিজয়প্রার্থী ইমাম হোসাইনের সেই সময়কার চিত্র। গীতটিতে বর্নিত কারবালার বেদনাদায়ক করুন কাহিনী সবার অন্তর স্পর্শ করে যায়।
“ জীবর সারথী নাম গোঁ আল্লাহ ” হচ্ছে আজান পীরের একটি জনপ্রিয় জারি গান ।
প্রায় ১২০ বৎসর বয়সে আজান ফকিরের মৃত্যু হয়েছিল বলে অনুমান করা হয় । শরাগুরি সাপরি মসজিদের পাশে আজান ফকিরকে কবর দেওয়া হয়েছে । এখানেই আজান পীরের রওজা (সমাধি) ।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.