আজাদ হিন্দ ফৌজ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অক্ষ শক্তির সহযোগিতায় যুদ্ধরত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী / From Wikipedia, the free encyclopedia
আজাদ হিন্দ ফৌজ বা ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী (হিন্দি: आजाद हिन्द फौज; উচ্চারণ: আজ়াদ্ হিন্দ্ ফ়উজ্ , ইংরেজি:Indian National Army বা INA) ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা গঠিত একটি সশস্ত্র সেনাবাহিনী। ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই বাহিনী গঠিত হয়। রাসবিহারী বসুর তৎপরতায় জাপানি কর্তৃপক্ষ ভারতের জাতীয়তাবাদীদের পাশে দাঁড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সমর্থন যোগায়। ১৯৪২ সালের ২৮-২৯ মার্চ টোকিওতে তার ডাকে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। তখন ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে রাসবিহারী সেই সম্মেলনে একটি সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব দেন। ১৯৪২ সালের ২২ জুন ব্যাংককে তিনি লিগের দ্বিতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। সেই সম্মেলনে লিগে যোগদান ও রাসবিহারীর সভাপতিত্বে দায়িত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়। যেসব ভারতীয় সেনা মালয় ও বার্মা ফ্রন্টে জাপানিদের হাতে আটক হয়েছিল তাদের ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগ ও লিগের সশস্ত্র শাখা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগদানে উৎসাহিত করা হয়।
আজাদ হিন্দ ফৌজ | |
---|---|
সক্রিয় | আগস্ট ১৯৪২ - সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ |
দেশ | ব্রিটিশ ভারত |
আনুগত্য | আজাদ হিন্দ |
শাখা | পদাতিক |
ভূমিকা | গেরিলা পদাতিক, বিশেষ বাহিনী |
আকার | ৪৩,০০০ (আনুমানিক) |
নীতিবাক্য | ইত্তেফাক, ইতমাদ অউর কুরবানি (একতা, বিশ্বাস এবং আত্মত্যাগ) (হিন্দুস্তানি) |
কুচকাত্তয়াজ | দ্রুত - কদম কদম বড়ায়ে জা |
যুদ্ধসমূহ | প্রথম আরাকান অভিযান সিনজেওয়ার যুদ্ধ , ইমফলের যুদ্ধ, কোহিমার যুদ্ধ, বার্মা অভিযান, পোকোকুর যুদ্ধ, মেইক্তিলা ও ম্যানডালের যুদ্ধ |
কমান্ডার | |
আনুষ্ঠানিক প্রধান | সুভাষচন্দ্র বসু |
উল্লেখযোগ্য কমান্ডার | মেজর জেনারেল মুহাম্মদ জামান কিয়ানি মেজর জেনারেল শাহ নওয়াজ খান কর্নেল প্রেম সেহ্গাল কর্নেল শওকত মালিক |
এই সেনাবাহিনীর লক্ষ্য ছিল জাপানের সহায়তায় ভারত থেকে ব্রিটিশ রাজের উচ্ছেদ সাধন করে দেশকে ঔপনিবেশিক শাসনজাল থেকে মুক্ত করা। এই বাহিনী মূলত গঠিত হয় জাপানের হাতে ধরা পড়া ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে। এঁরা মালয় অভিযান ও সিঙ্গাপুরের যুদ্ধের সময় জাপানের হাতে ধরা পড়েছিলেন। এছাড়াও মালয় ও ব্রহ্মদেশের ভারতীয় প্রবাসীদের একটি বিরাট অংশ এই বাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবকরূপে যোগ দেন।
১৯৪২ সালে রাসবিহারী বসু নেতৃত্বে সিঙ্গাপুরের পতনের অব্যবহিত পরেই প্রথম আইএনএ গঠিত হয়। রাসবিহারী বসু নেতাজির হাতে তুলে দেন ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর ভার৷ এরপর ১৯৪৩ সালে সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে পুনর্গঠিত হয়ে এই বাহিনী সুভাষচন্দ্রের আর্জি হুকুমত-এ-আজাদ হিন্দ (স্বাধীন ভারতের অস্থায়ী সরকার)-এর সেনাবাহিনী ঘোষিত হয়। ব্রহ্মদেশ, ইম্ফল ও কোহিমায় সাম্রাজ্যবাদী জাপানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এই দ্বিতীয় আইএনএ ব্রিটিশ ও কমনওয়েলথ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান চালায়। পরে ব্রিটিশ মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্রহ্মদেশ অভিযান চালিয়ে তারা ব্যর্থ হন। যুদ্ধের শেষে বাহিনীর একটি বৃহত্তর অংশকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তাদের কারোর কারোর বিচারও হয়। এই ঘটনা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা।
স্বাধীনতা লাভের পর কয়েকটি ব্যতিক্রম বাদে আইএনএ-র প্রাক্তন সদস্যরা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। যদিও বিশিষ্ট সদস্যদের একটি বিরাট অংশ ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাধারণ জীবনই অতিবাহিত করেন।
ব্রহ্মদেশ, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অংশে জাপানের দখলদারি, নাৎসি জার্মানি ও ফ্যাসিবাদী ইতালির সঙ্গে জাপানের মিত্রতা এবং আইএনএ-র বিরুদ্ধে আনীত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের কারণে সাম্রাজ্যবাদী জাপানের সঙ্গে কারণে আজাদ হিন্দ ফৌজের সংযোগ একটি বিতর্কিত বিষয়।[1][2][3][4]