আইয়ুব খান
পাকিস্তানের ২য় রাষ্ট্রপতি / From Wikipedia, the free encyclopedia
মোহাম্মাদ আইয়ুব খান (১৪ই মে ১৯০৭ - ১৯শে এপ্রিল ১৯৭৪) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন অধিকারিক ছিলেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেওয়ার পর থেকে আইয়ুব প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বৈরীপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জা সমগ্র পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি করেন এবং সেনাবাহিনীর তৎকালীন সর্বাধিনায়ক জেনারেল আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদে নিযুক্ত করেন তিনি; ২৭শে অক্টোবর ইস্কান্দার মির্জাকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে নিজে রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হন। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গণঅভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব তার ১১ বছরের রাষ্ট্রপতিত্বের অবসান ঘটান পদটি থেকে পদত্যাগ করে।[1]
আইয়ুব খান | |
---|---|
ایوب خان | |
পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ২৭ অক্টোবর ১৯৫৮ – ২৫ মার্চ ১৯৬৯ | |
পূর্বসূরী | ইস্কান্দার মির্জা |
উত্তরসূরী | ইয়াহিয়া খান |
প্রতিরক্ষামন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২৮ অক্টোবর ১৯৫৮ – ২১ অক্টোবর ১৯৬৬ | |
ডেপুটি | প্রতিরক্ষা সচিব See list
|
পূর্বসূরী | আইয়ুব খুহরু |
উত্তরসূরী | ভাইস এ্যাডমিরাল আফজাল রহমান খান |
কাজের মেয়াদ ২৪ অক্টোবর ১৯৫৪ – ১১ আগস্ট ১৯৫৫ | |
প্রধানমন্ত্রী | মোহাম্মদ আলী বগুড়া |
ডেপুটি | আকতার হোসেন (প্রতিরক্ষা সচিব) |
পূর্বসূরী | মোহাম্মদ আলী বগুড়া |
উত্তরসূরী | চৌধুরী মহাম্মাদ আলী |
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২৩ মার্চ ১৯৬৫ – ১৭ আগস্ট ১৯৬৫ | |
ডেপুটি | প্রতিরক্ষা সচিব |
পূর্বসূরী | খান হাবিবুল্লাহ খান |
উত্তরসূরী | চৌধুরী আলী আকবর খান |
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক | |
কাজের মেয়াদ ২৩ জানুয়ারি ১৯৫১ – ২৬ অক্টোবর ১৯৫৮ | |
ডেপুটি | জেনারেল স্টাফ প্রধান See list
|
পূর্বসূরী | জেনারেল ডগলাস গ্রেসি |
উত্তরসূরী | জেনারেল মুহাম্মদ মুসা খান |
প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক | |
কাজের মেয়াদ ৭ অক্টোবর ১৯৫৮ – ২৭ অক্টোবর ১৯৫৮ | |
রাষ্ট্রপতি | ইস্কান্দার মির্জা |
পূর্বসূরী | নতুন পদ |
উত্তরসূরী | ইয়াহিয়া খান |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | মহাম্মাদ আইয়ুব খান (১৯০৭-০৫-১৪)১৪ মে ১৯০৭ রেহানা গ্রাম, হরিপুর জেলা, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ১৯ এপ্রিল ১৯৭৪(1974-04-19) (বয়স ৬৬) ইসলামাবাদ |
মৃত্যুর কারণ | হৃদরোগ |
সমাধিস্থল | রেহানা, হরিপুর |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৪৭-৭৪) |
পুরস্কার | নিশান-ই-পাকিস্তান হিলাল-ই-পাকিস্তান অর্ডার অব দ্যা ক্রাউন |
সামরিক পরিষেবা | |
শাখা | ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী (১৯২৮-৪৭) পাকিস্তান সেনাবাহিনী (১৯৪৭-৫৮) |
কাজের মেয়াদ | ১৯২৮-৫৮ |
পদ | জেনারেল |
ইউনিট | পাঞ্জাব রেজিমেন্ট |
যুদ্ধ | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ |
আইয়ুব খানের জন্ম হয়েছিলো ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের হরিপুর জেলায়। ১৯২৬ সালে তরুণ আইয়ুব ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা গড়ার কারিগর 'রয়েল মিলিটারি কলেজ' তে অধ্যায়ন করার সুযোগ পেয়ে যান যেটি ইংল্যান্ডের বার্কশায়ারের স্যান্ডহার্স্টে অবস্থিত ছিলো। ১৯২৮ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে আইয়ুব দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হয়েছিলেন; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আইয়ুব কর্নেল ছিলেন, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলে আইয়ুব নবগঠিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার হিসেবে, তার সার্ভিস নম্বর ছিলো পিএ-১০। স্বাধীন পাকিস্তানে আইয়ুব প্রথমে পূর্ব পাকিস্তানে নিয়োগ পেয়েছিলেন ১৪তম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক হিসেবে, এরপর খুব দ্রুত উপরে ওঠেন তিনি; ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়কের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন আইয়ুব।[2] ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন; আইয়ুব এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ইস্কান্দার মির্জার জারি করা সামরিক আইনের পক্ষে ছিলেন।[3] ইস্কান্দার মির্জাই মূলত আইয়ুব খানের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রপতিত্ব নিশ্চিত করেছিলেন।[3][4][5]
আইয়ুব দেশের সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়কের পদে জেনারেল মুহাম্মদ মুসা খানকে নিযুক্ত করেছিলেন। আইয়ুব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদার করা সহ প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে মনোযোগ দিয়েছিলেন। আইয়ুব তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি পেশোয়ারে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় একটি বিমান ঘাঁটি গড়ে তুলেছিলেন যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর বৈমানিকেরা বিমান চালাতো এবং পাকিস্তান বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে তারা অনেক সাহায্য করেছিলো।[6] চীনের সঙ্গেও আইয়ুব সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন, ১৯৬২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক চরম বৈরিতার দিকে যায় যে বছরে ভারত চীনের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলো। ১৯৬৫ সালে আইয়ুব সরকার ভারতের সঙ্গে একটি বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পরিকল্পনা করেছিলো যেটি ঐতিহাসিকভাবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫ নামে পরিচিতি পেয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতির একজন গোঁড়া সমর্থক আইয়ুব পাকিস্তানেও যুক্তরাষ্ট্রর মত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করার প্রয়াস চালিয়েছিলেন।
১৯৬৫ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আইয়ুবের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ফাতেমা জিন্নাহ দাঁড়িয়েছিলেন, যদিও আইয়ুব খান পুনরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমানে শুধু পাকিস্তান) জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বে এবং পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে অনেক বিক্ষোভ এবং মিছিল হয় এবং ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানে এক বড় ধরনের আন্দোলন হয়েছিলো। তার নির্দেশে বহু মানুষকে গ্রেফতারও করা হয়েছিলো। ১৯৭৪ সালে আইয়ুব দীর্ঘ রোগ ভোগের পর মৃত্যুবরণ করেন।
ঐতিহাসিকভাবে আইয়ুব খানের শাসনামল অখণ্ড পাকিস্তানের শেষ এবং সবচেয়ে সফল দশক হিসেবে পরিগণিত হয়; তার শাসনামলে পাকিস্তানে নতুন শিল্প কল-কারখানা নির্মাণ, নতুন সড়ক তৈরি, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ, বিদেশি যানবাহন ক্রয় সহ অনেক প্রাথমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছিলো। পূর্ব পাকিস্তানের আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে আইয়ুব সরকার ইস্ট পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনোলজি-এ নতুন নামকরণ করে যেটি পরে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনোলজি বা সংক্ষেপে বুয়েট নামে পরিবর্তিত হয়।[7][8]