অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম
বাহ্যিক উদ্দীপনার অনুপস্থিতিতে বাস্তব প্রত্যক্ষণের মতো বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রত্যক্ষণ / From Wikipedia, the free encyclopedia
অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম হল বাইরের কোনো উদ্দীপনা ছাড়াই মস্তিস্কে বাস্তবের মত অনুভূতি প্রত্যক্ষণের প্রক্রিয়া। অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম খুবই স্পষ্ট ও বাস্তবসদৃশ স্থায়ী হয়ে থাকে। তাছাড়া অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম বাস্তব জগতের স্থানও দখল করে। তবে অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমকে বাস্তব জীবনে আমাদের পরিচিত ঘটনাগুলো থেকে আলাদা করা হয়ে থাকে। যেমন, ঘুম আর অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম এক নয়। কারণ ঘুমের সাথে জেগে থাকার সম্পর্ক নেই। আবার ছদ্ম-অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম আর এই নিবন্ধে আলোচ্য অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমও এক নয়। কেননা, ছদ্ম-অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম বাস্তব অনুভূতির হুবুহু প্রতিচ্ছবি তৈরি করে না এবং এটি অবাস্তব কল্পনা হিসেবে গৃহীত হয়। অনুরূপ, বিভ্রম ও অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমও এক নয়। যেহেতু বিভ্রমের ক্ষেত্রে বাস্তব জগত অনেকটা বিকৃত দেখা যায়। মানসচিত্রও অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম থেকে আলাদা। কারণ মানসচিত্রও বাস্তব অনুভূতির হুবুহু অনুকরণ করে না এবং এটি ব্যক্তির ইচ্ছাধীন হয়।[1] তাছাড়া অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম মতিবিভ্রম (Delusion) থেকেও ভিন্ন। মতিবিভ্রমে বাস্তব জগতের উদ্দীপক থাকে এবং অনুভূতিও একদম বাস্তব হয়। বাস্তব উদ্দীপক ও এর থেকে প্রাপ্ত অনুভূতি থেকেই বাড়তি (সাধারণত উদ্ভট) কিছু ব্যক্তির মাথায় ঢুকে যায়।
অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম | |
---|---|
নিজের অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম নিয়ে বহুসংখ্যক চিত্রাঙ্কনকারী জার্মান চিত্রশিল্পী আউগুস্ট নাটেরারের আঁকা My eyes at the moment of the apparitions | |
বিশেষত্ব | মনোবিজ্ঞান |
দেহের যেকোনো সংবেদী অংশেই অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম ঘটতে পারে। যেমন, দর্শন-ইন্দ্রিয়, শ্রবণ-ইন্দ্রিয়, ঘ্রাণ-ইন্দ্রিয়, স্বাদ-ইন্দ্রিয়, স্পর্শ-ইন্দ্রিয়, স্বয়ংক্রিয় চলন-ইন্দ্রিয়, ভারসাম্য রক্ষাকারী ইন্দ্রিয়, ক্ষতিরোধক ইন্দ্রিয়, তাপ-ইন্দ্রিয় এবং সময়জ্ঞান-ইন্দ্রিয়।
অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমের একটি হালকা পর্যায় আছে যাকে আমরা ভ্রম বা অনুভূতির বিশৃঙ্খলাও বলতে পারি। এটিও উপর্যুক্ত স্নায়ুগুলোতে ঘটতে পারে। এর উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রান্তিক দর্শনশক্তির মাধ্যমে কোনকিছু নড়তে দেখা, ক্ষীণ শব্দ বা ঝিরঝির আওয়াজ শুনতে পাওয়া। ভগ্নমনস্কতা রোগে অমূলক শ্রবণ বিভ্রম খুবই সাধারণ ব্যাপার। ভগ্নমনস্ক রোগীর এই অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমের কল্পিত ধ্বনিটি রোগীর উপকারীও হতে পারে (যেমন, তাকে ভাল ভাল উপদেশ দিতে পারে) আবার ক্ষতিকরও হতে পারে, রোগীকে সারাক্ষণ অভিশাপ দিতে পারে ইত্যাদি। ক্ষতিকর অমূলক শ্রবণ বিভ্রম ঘন ঘন শ্রুত হতে থাকে। মনে হতে পারে রোগীর পেছন থেকে কিছু মানুষ অনবরত কথা বলে যাচ্ছে। অমূলক শ্রবণ বিভ্রমের মত, শব্দের উৎসের প্রতিকৃতিও রোগীর পেছনে থাকার অনুভূতি হতে পারে। মনে হতে পারে শব্দ করা মানুষগুলো পেছন থেকে লক্ষ করছে বা তাকিয়ে আছে। এটাও সাধারণত ক্ষতিকর অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম হিসেবেই ঘটে। রোগীর এমনও হতে পারে যে, অমূলক শ্রবণ বিভ্রম এবং পেছন থেকে কাউকে দেখতে পাওয়ার ঘটনা একই সাথে ঘটতে পারে।
তন্দ্রাকালীন (হিপনাগজিক) এবং অর্ধজাগ্রত (হিপনোপম্পিক) অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমকে সাধারণ ঘটনা হিসেবেই গণ্য করা হয়। তন্দ্রাকালীন অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম ঘটতে পারে মানুষ যখন ঘুমাতে যায়। আর অর্ধজাগ্রত অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম ঘটে ঘুম থেকে ওঠার ঠিক আগে। মাদক সেবনের মাধ্যমেও অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম ঘটতে পারে (বিশেষত চিত্তবিকারকারক মাদকসমূহ)। এছাড়া অপর্যাপ্ত ঘুম থেকে, মনোবৈকল্য (Psychosis) থেকে, স্নায়ুকোষ বা স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা থেকে, ডেলিরিয়াম ট্রিমেনস (DTs-নেশাসৃষ্ট রোগ বিশেষ) থেকে।
অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম কথাটির ইংরেজি পরিভাষা "হ্যালুসিনেশন" শব্দটির প্রথম ইংরেজি ভাষায় প্রয়োগ করেন ১৭শ শতাব্দীর চিকিৎসক স্যার টমাস ব্রাউন। ১৬৪৬ সনে তিনি লাতিন শব্দ আলুসিনারি ("alucinari") শব্দটি আনয়ন করেন যার অর্থ "মনের ভেতরে ঘুরে বেড়ানো"।[2]