ইউক্রেন
ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র / From Wikipedia, the free encyclopedia
ইউক্রেন বা উক্রাইনা (ইউক্রেনীয়: Україна, প্রতিবর্ণীকৃত: Ukraïna উক্রায়িনা আ-ধ্ব-ব: /ukraˈjina/) পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। আয়তনের বিচারে রাশিয়ার পরে এটি ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র; এর আয়তন ৬,০৩,৬২৮ বর্গকিলোমিটার (২৭,০০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ক্রিমিয়া অঞ্চলসহ)। দেশটিতে প্রায় ৪ কোটি ৩৬ লক্ষ অধিবাসীর বাস, ফলে এটি ইউরোপ মহাদেশের ৮ম সর্বোচ্চ জনবহুল দেশ। ইউক্রেনের পশ্চিমে পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি, দক্ষিণ-পশ্চিমে রোমানিয়া ও মলদোভা[lower-alpha 1]), দক্ষিণে কৃষ্ণ সাগর ও আজভ সাগর, পূর্বে ও উত্তর-পূর্বে রাশিয়া এবং উত্তরে বেলারুস। দক্ষিণে ক্রিমিয়া উপদ্বীপে অবস্থিত স্বায়ত্বশাসিত ক্রিমিয়া প্রজাতন্ত্র ইউক্রেনের সীমান্তের মধ্যে পড়েছে।[lower-alpha 2] কিয়েভ ইউক্রেনের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।
ইউক্রেন | |
---|---|
জাতীয় সঙ্গীত: Державний Гімн України Derzhavnyi Himn Ukrainy "State Anthem of Ukraine" | |
| |
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | কিয়েভ ৪৯° উত্তর ৩২° পূর্ব |
সরকারি ভাষা | ইউক্রেনীয় |
স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা | |
নৃগোষ্ঠী (২০০১)[3] |
|
ধর্ম (২০১৮)[4] |
|
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | ইউক্রনিয়ান |
সরকার | Unitary semi-presidential republic |
ভলোদিমির জেলেনস্কি | |
• Prime Minister | Denys Shmyhal |
• Chairman of the Verkhovna Rada | Ruslan Stefanchuk |
আইন-সভা | Verkhovna Rada |
Formation | |
• Kievan Rus' | 882 |
• Kingdom of Ruthenia | 1199 |
• Cossack Hetmanate | 18 August 1649 |
• Ukrainian People's Republic | 10 June 1917 |
• Declaration of independence of the Ukrainian People's Republic | 22 January 1918 |
• West Ukrainian People's Republic | 1 November 1918 |
• Act of Unity | 22 January 1919 |
• Withdrawal from the Soviet Union | 24 August 1991 |
• Referendum | 1 December 1991 |
• Current constitution | 28 June 1996 |
১৮ই–২৩ই ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | |
আয়তন | |
• মোট | ৬,০৩,৬২৮ কিমি২ (২,৩৩,০৬২ মা২) (৪৫তম) |
• পানি (%) | ৭ |
জনসংখ্যা | |
• জানুয়ারি ২০২২ আনুমানিক | ৪,১১,৬৭,৩৩৬[6]
(ক্রিমিয়া ও সেভাস্তোপল ব্যতীত) (৩৬তম) |
• ২০০১ আদমশুমারি | ৪,৪৫,৫৭,১০২[3] |
• ঘনত্ব | ৭৩.৮/কিমি২ (১৯১.১/বর্গমাইল) (১১৫তম) |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০২২ আনুমানিক |
• মোট | ৬২,২০০ কোটি মার্কিন ডলার[7] (৪৮তম) |
• মাথাপিছু | ১৫,১২৪ মার্কিন ডলার[7] (108th) |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০২২ আনুমানিক |
• মোট | ২০,৪০০ কোটি মার্কিন ডলার[7] (৫৬তম) |
• মাথাপিছু | ৪,৯৫৮ মার্কিন ডলার[7] (১১৯তম) |
জিনি (২০১৯) | 26.6[8] নিম্ন |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৯) | 0.779[9] উচ্চ · ৭৪তম |
মুদ্রা | হ্রিভনিয়া (₴) (UAH) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+২[10] (পূইস) |
ইউটিসি+৩ (পূইগ্রীস (EEST)) | |
গাড়ী চালনার দিক | ডানদিকে |
কলিং কোড | +৩৮০ |
ইন্টারনেট টিএলডি |
|
ইউক্রেনের অধিকাংশ এলাকা কৃষিকাজের উপযোগী উর্বর সমভূমি নিয়ে গঠিত। ইউক্রেন খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। দেশটির অর্থনীতি উন্নত এবং এর কৃষি ও শিল্পখাত যথেষ্ট বড়। ইউক্রেনে একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান যেখানে রাষ্ট্রপতি হলেন সরকারপ্রধান।
ইউক্রেন অঞ্চলটিতে খ্রিস্টপূর্ব ৩২শ শতক আগ পর্যন্ত মানব বসতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। মধ্যযুগে এলাকাটি পূর্ব স্লাভীয় সংস্কৃতির একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল। খ্রিস্টীয় ৯ম শতক থেকে ইউক্রেনের উত্তর অংশ কিয়েভান রুশ নামক একটি মুক্ত সংঘের অংশ ছিল, যা পরবর্তীতে ইউক্রেনীয় আত্মপরিচয়ের ভিত্তি স্থাপন করে। কিয়েভান রুশ ছিল প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব স্লাভীয় রাষ্ট্র। ১৩শ শতকে এটি অনেকগুলি উপরাজ্যে ভাগ হয়ে যায় এবং এরপর মঙ্গোলদের আক্রমণে অঞ্চলটি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। এর পর বহু শতাব্দী ধরে ইউক্রেন বিভিন্ন বিদেশী শক্তির দখলে ছিল। এদের মধ্যে আছে পোল্যান্ড-লিথুয়ানিয়া রাষ্ট্রজোট, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য, উসমানীয় সাম্রাজ্য ও রুশ জার সাম্রাজ্য। ১৭শ ও ১৮শ শতকে এখানে কসাক রাজ্যের উত্থান ঘটলেও পরবর্তীতে তা পোল্যান্ড ও রাশিয়ার মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। রুশ বিপ্লবের পরে ১৯১৮ সালে ইউক্রেনে একটি জাতীয়তাবাদী আত্মনিয়ন্ত্রণবাদী আন্দোলনের জের ধরে এখানে একটি বলশেভিক সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় ও ইউক্রেন গণপ্রজাতন্ত্র রাষ্ট্রটি আত্মপ্রকাশ করে। ১৯২২ সালে ইউক্রেনীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের চারটি প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের একটি ছিল। ১৯৯১ সালের ইউক্রেন স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ১লা ডিসেম্বর এক গণভোটে এটির প্রতি ইউক্রেনের জনগণ সমর্থন দেয়। ইউক্রেনের এই ঘোষণা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে একটি বড় ভূমিকা রাখে। স্বাধীনতার পরে ইউক্রেন নিজেকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়।[11] দেশটি রাশিয়া ও অন্যান্য স্বাধীন রাষ্ট্রসংঘের (প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র) সাথে সীমিত সামরিক অংশীদারিত্বে যোগ দেয়। কিন্তু একই সাথে এটি ১৯৯৪ সালে উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোটেও (ন্যাটো) যোগদান করে। ২০১৩ সালে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে চুক্তি মুলতবি করে রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিলে দেশটিতে ইউরোময়দান নামক মিছিল-বিদ্রোহ শুরু হয়, এবং এর জের ধরে মর্যাদারক্ষার বিপ্লব নামক একটি বিপ্লবের মাধ্যমে ইয়ানুকোভিচকে ক্ষমতাচ্যুত করে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ঘটনাগুলির পটভূমিতে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে রাশিয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপটিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এরপর ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেনের পূর্বভাগে দোনবাসের যুদ্ধ শুরু করে। ২০১৬ সালে ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের গভীর ও পূর্ণাঙ্গ মুক্ত বাণিজ্য এলাকার অর্থনৈতিক অংশটিতে যোগ দেবার আবেদন করে।[12] ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে।
ইউক্রেন একটি উন্নয়নশীল দেশ; মানব উন্নয়ন সূচকে এর অবস্থান বিশ্বে ৭৪তম। মাথাপিছু মোট জাতীয় উৎপাদনের হিসেবে এটি ইউরোপের দরিদ্রতম রাষ্ট্র; এখানে দারিদ্র্যের হার ও দুর্নীতির পরিমাণ অনেক উচ্চ।[13][14] তবে ব্যাপক উর্বর কৃষিভূমির কারণে ইউক্রেন বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম শস্য রপ্তানিকারক দেশ।[15][16] রাজনৈতিকভাবে ইউক্রেন একটি অর্ধ-রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থাধীন এককেন্দ্রিক প্রজাতন্ত্র যেটিতে বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও আইনপ্রণয়ন বিভাগ তিনটির মধ্যে ক্ষমতার পৃথকীকরণ বিদ্যমান। দেশটি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় পরিষদ, ইউরোপের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থা, গুয়াম সংস্থা, ত্রিপাক্ষিক সংস্থা (মলদোভা ও জর্জিয়ার সাথে) এবং লুবলিন ত্রিভুজ (পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার সাথে) জোটটির সদস্য।