পাকিস্তান মুসলিম লীগ
অবিভক্ত পাকিস্তানের একটি বিলুপ্ত রাজনৈতিক দল / From Wikipedia, the free encyclopedia
পাকিস্তান মুসলিম লীগ (উর্দু: پاکستان مسلم لیگ; পিএমএল হিসাবে পরিচিত), পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম যারা ১৯৬০ এর দশক থেকে পাকিস্তানে রক্ষণশীল-ডানপন্থী রাজনীতির উপর আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। ১৯৬২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল আইয়ুব খান মূল মুসলিম লীগের উত্তরসূরি হিসাবে প্রথম "পাকিস্তান" মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের পরেই দলটি কনভেনশন মুসলিম লীগ এবং কাউন্সিল মুসলিম লীগ নামে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। কনভেনশন মুসলিম লীগ রাষ্ট্রপতি হিসেবে জেনারেল আইয়ুব খান এবং নতুন সংবিধানকে সমর্থন করে। অন্যদিকে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নতুন সংবিধানকে বিরোধিতা তথা জেনারেল আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরোধিতা করে।[1] রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের পদত্যাগের পরে মুসলিম লীগের প্রবীণ ডানপন্থী রাজনৈতিক নেতা নুরুল আমিন পাকিস্তান মুসলিম লীগের দলগুলিকে পুনরায় একত্রিত করার চেষ্টা করেছিলেন। কেউ কেউ তার এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন হলেও অনেকেই এর বিরোধিতা করে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে কাউন্সিল মুসলিম লীগের সিনিয়র নেতা আবদুল কাইয়ুম খান কাইয়ুম মুসলিম লীগ নামে তার নিজস্ব ধারার একটি মুসলিম লীগ গঠন করেন। তিনি এবং তার দল কোনো না কোনো সময়ে স্বৈরতন্ত্র তথা একনায়কতন্ত্রকে সমর্থনকারী দলের সাথে সহযোগিতা কিংবা একসাথে কাজ করার বিরোধিতা করে। পাকিস্তানের ভাঙ্গনের (বাংলাদেশের স্বাধীনতা) পর ১৯৭৩ সালে নুরুল আমিনের প্রচেষ্টা সফল হয় এবং ফাংশনাল মুসলিম লীগ (পিএমএল-এফ) প্রতিষ্ঠিত হয়।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ پاکستان مسلم لیگ | |
---|---|
ঐতিহাসিক নেতৃবৃন্দ | নুরুল আমিন সৈয়দ শাহ মর্দান শাহ-২য় আব্দুল কাইয়ুম খান |
প্রতিষ্ঠা | ৮ জুন ১৯৬২ |
ভাঙ্গন | ১৫ মার্চ ১৯৭১ |
পূর্ববর্তী | মুসলিম লীগ |
ভাবাদর্শ | সংখ্যাগরিষ্ঠতা রক্ষণশীলতা অর্থনৈতিক উদারতাবাদ রাজস্ব রক্ষণশীলতা জাতীয়তাবাদী মধ্যপন্থী Pro-presidency Pro-Parliament |
পাকিস্তানের রাজনীতি |
পিএমএল-এফ এবং আব্দুল কাইয়ুম খান নেতৃত্বাধীন পিএমএল-কাইয়ুম উভয় দলই ভুট্টো প্রশাসনের অধীনে সংঘবদ্ধ হয় এবং এর অনেক সদস্য বামপন্থী পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে যোগদান করে।
১৯৭৭ সালে পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি হলে অন্যান্য দলের মত পাকিস্তান মুসলিম লীগও আনুষ্ঠানিকভাবে বিলীন হয়ে যায়। যদিও পাকিস্তান মুসলিম লীগ সামরিক আইন জারির প্রতি সমর্থন করেছিল।
তবে ১৯৮৫ সালে জেনারেল জিয়া-উল-হক মুহাম্মদ খান জুনজোর নেতৃত্বে তার সমর্থকদের একটি আনুষ্ঠানিক দলে সংগঠিত করার পর দলটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল।
১৯৮৮ সালে জিয়া-উল-হক জুনেজোকে বরখাস্ত করলে এবং দলটি পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন) এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগের (জে)-এর মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়।
একই বছর জিয়া-উল-হকের মৃত্যুর পর পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বে আসে এবং দলটি ইসলামী গণতান্ত্রিক জোটে যোগ দেয়। ১৯৯৩ সালে জোটের ভাঙ্গন এবং ১৯৯৯-এর অভ্যুত্থানের পরে, পিএমএল-এন একটি অস্থায়ী পতনের দিকে যায়। ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান মুসলিম লীগ ভেঙ্গে তিনটি নতুন উপদলের (পরবর্তীতে দল) সৃষ্টি হয়। এগুলো হল মোশাররফ-বিরোধী পিএমএল (জিয়া), মোশাররফপন্থী-রক্ষণশীল আওয়ামী মুসলিম লীগ এবং মোশাররফপন্থী-উদারপন্থী পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কিউ) (পিএমএল-কিউ)।
২০০৪ সালে পিএমএল-কিউ এবং পিএমএল-এফ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য পাকিস্তান মুসলিম লীগ হিসাবে পুনরায় একত্রিত হয়েছিল। যদিও তাদের এই পুনর্মিলনী পুরোপুরি ভাবেই ব্যর্থ হয়েছিল কারণ কয়েকদিনের মধ্যেই উভয় দল আবার পৃথক যাত্রা শুরু করে।