ক্যাথরিন হেপবার্ন
মার্কিন অভিনেত্রী / From Wikipedia, the free encyclopedia
ক্যাথরিন হৌটন হেপবার্ন (ইংরেজি: Katharine Houghton Hepburn; ১২ই মে ১৯০৭ - ২৯শে জুন ২০০৩) ছিলেন একজন মার্কিন অভিনেত্রী। তিনি ষাট বছরের অধিক সময় হলিউডের প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করে গেছেন। তিনি স্কুবল কমেডি থেকে শুরু করে সাহিত্যিক নাট্যধর্মীসহ অনেক ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি চারবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন, যা অভিনয় শাখায় যেকোন অভিনয়শিল্পীর জন্য সর্বাধিকবার অস্কার বিজয়।[1] ১৯৯৯ সালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট তাকে ধ্রুপদী হলিউড চলচ্চিত্রের সেরা নারী তারকা বলে ঘোষণা দেয়। তিনি তার উগ্র স্বাধীনতা, প্রফুল্ল ব্যক্তিত্ব এবং নারীদের সীমানা অতিক্রমের জন্য পরিচিত ছিলেন।
ক্যাথরিন হেপবার্ন | |
---|---|
Katharine Hepburn | |
জন্ম | ক্যাথরিন হৌটন হেপবার্ন (১৯০৭-০৫-১২)১২ মে ১৯০৭ |
মৃত্যু | ২৯ জুন ২০০৩(2003-06-29) (বয়স ৯৬) ফেনউইক, কানেটিকাট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
সমাধি | সিডার হিল সমাধি, হার্টফোর্ড ৪১.৭২২৬৬৬৭° উত্তর ৭২.৭০৩৭৪৪৩° পশ্চিম / 41.7226667; -72.7037443 |
স্মৃতিস্তম্ভ | নিচে দেখুন |
জাতীয়তা | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
মাতৃশিক্ষায়তন | ব্রিন মার কলেজ |
পেশা | অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ১৯২৮–১৯৯৪ |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | দেখুন |
দাম্পত্য সঙ্গী | লুডল অগডেন স্মিথ (বি. ১৯২৮; বিচ্ছেদ. ১৯৩৪) |
সঙ্গী | স্পেন্সার ট্রেসি (১৯৪১; মৃ. ১৯৬৭) |
পিতা-মাতা |
|
পরিবার | দেখুন হৌটন পরিবার |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
কানেটিকাটে ধনী ও প্রগতিশীল পিতামাতার ঘরে বেড়ে ওঠা হেপবার্ন ব্রিন মার কলেজে অধ্যয়নকালীন অভিনয় শুরু করেন। ব্রডওয়ে থিয়েটারে চার বছর অভিনয় করে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর তিনি হলিউডে মনোনিবেশ করেন। চলচ্চিত্রে তার শুরুর বছরগুলোতে তিনি সফলতা অর্জন করেন এবং তার অভিনীত তৃতীয় চলচ্চিত্র মর্নিং গ্লোরি (১৯৩৩) দিয়ে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তবে এরপরে সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হলেও ধারাবাহিক বাণিজ্যিক ব্যর্থতার পর তিনি ক্যারি গ্র্যান্টের সাথে ব্রিংগিং আপ বেবি (১৯৩৮) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৩৮ সালে তাকে "বক্স অফিস পয়জন" উপাধি দেয়া হয়। হেপবার্ন ঘুরে দাড়ানোর পরিকল্পনা করেন এবং তিনি শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করবেন এই শর্তে আরকেও রেডিও পিকচার্সের সাথে চুক্তিতে যান ও দ্য ফিলাডেলফিয়া স্টোরি মঞ্চনাটকটির চলচ্চিত্র উপযোগকরণের স্বত্ব গ্রহণ করেন। পুনরায় গ্রান্টের বিপরীতে অভিনীত এই হাস্যরস চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে সাফল্য অর্জন করেছিল এবং হেপবার্ন তার তৃতীয় একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
১৯৪০-এর দশকে তিনি মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ার কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। সেখানে তিনি স্পেন্সার ট্রেসির সাথে জুটি গড়েন এবং এই যুগল ২৬ বছর একসাথে অভিনয় করেন ও ৯টি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। যদিও বিবাহিত ট্রেসির সাথে তার প্রণয় জনসাধারণের কাছ সে সময়ে গোপন ছিল। এই জুটির প্রথম কাজ "যৌনতার লড়াই" ও প্রণয়ধর্মী হাস্যরস ওম্যান অব দ্য ইয়ার (১৯৪২), এবং পরে অ্যাডাম্স রিব (১৯৪৯) সহ বর্ণ-সমস্যাধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র গেজ হুজ কামিং টু ডিনার (১৯৬৭) চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে এই জুটির সমাপ্তি ঘটে। চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের অল্প সময়ের মধ্যেই ট্রেসি মারা যান।
হেপবার্ন পরবর্তীতে শেকসপিয়রিয় মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন এবং বিভিন্ন সাহিত্যিক চরিত্রে কাজ করেন। তিনি দি আফ্রিকান কুইন (১৯৫১) চলচ্চিত্রে মধ্যবয়সী স্পিনস্টারের মতো একটি প্রকৃত চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যার জন্য তিনি একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেছিলেন। সাডেনলি, লাস্ট সামার (১৯৫৯) ছিল আরেকটি বাণিজ্যিক এবং সমালোচনামূলক সাফল্য যার জন্য তাকে অস্কারের মনোনীত করা হয়েছিল। তিনি গেজ হুজ কামিং টু ডিনার (১৯৬৭), দ্য লায়ন ইন উইন্টার (১৯৬৮) এবং অন গোল্ডেন পন্ড (১৯৮১) চলচ্চিত্রে তার কাজের জন্য বাকি তিনটি অস্কার লাভ করেন। ১৯৭০-এর দশকে তিনি টেলিভিশন চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন এবং তার বাকি কর্মজীবনে টেলিভিশন পর্দায় কাজ করেছেন। তিনি বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত অভিনয়ে সক্রিয় ছিলেন। তিনি সর্বশেষ কাজ করেন ১৯৯৪ সালে ৮৭ বছর বয়সে। শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় তিনি আর কাজ করতে পারেননি এবং ২০০৩ সালে ৯৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
হেপবার্ন হলিউডের গণমাধ্যম থেকে দূরে থাকতেন এবং সমাজের নারীর প্রতি প্রত্যাশা পূরণের রীতি মেনে চলার বিরোধী ছিলেন। তিনি সবসময় স্পষ্টবাদী, ইতিবাচক, ও মল্লক্রীড়াসুলভ ছিলেন এবং নারীদের জন্য কেতাদুরস্ত হওয়ার পূর্ব থেকেই ট্রাউজার পড়তেন। তিনি ওগডেন লুডলোকে বিয়ে করেন এবং অল্প কিছুদিন পরে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। স্পেন্সার ট্রেসির সাথে তার ২৬ বছরের সম্পর্ক গণমাধ্যমের কাছে গোপন ছিল। তার রীতিবিরুদ্ধ জীবনযাত্রা ও পর্দায় তার স্বাধীন চরিত্রগুলো তাকে বিংশ শতাব্দীর "আধুনিক নারী"র প্রতীক এবং গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রতিমূর্তি হিসেবে স্মরণীয় করে তোলে।