বীর
From Wikipedia, the free encyclopedia
বীর (প্রাচীন গ্রিক: ἥρως, hḗrōs; ইংরেজি: Hero) একজন ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি যিনি অসাধারণ কিংবা অতি মানবীয় গুণাবলীর অধিকারী। তার অসাধারণ কর্মকাণ্ডের ফলে দেশ, জাতি কিংবা অন্যান্যদের জন্য কল্যাণকর বার্তা বা সুবিধা বয়ে নিয়ে আসে। তিনি বিপুল শক্তিমত্তা, দুঃসাহসিক কার্যাবলী সম্পাদন, বুদ্ধি-কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে যুদ্ধ জয় করে স্বীয় সুনাম বৃদ্ধিসহ জাতীয় বীর তথা সুগভীর শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হন। গ্রীক পৌরাণিকীতে তিনি একজন অর্ধ-দেবতা ও অর্ধ-মানব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য নিয়ে গড়া ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত। দেবরাজ জিউস ও সাধারণ মানবী আল্কমেনের পুত্র হেরাক্লেস বীর হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে আছেন। প্রাচীন গ্রীসের ধর্মীয় বেড়াজালে আবদ্ধ গ্রিক পৌরাণিকী ও কল্পকাহিনীতে একজন বীর অর্ধ-দেবতারূপে চিত্রিত হয়ে আছেন।[1] পরবর্তীতে পুরুষ ও নারী - উভয়কেই প্রধান চরিত্র হিসেবে সর্বসমক্ষে পরিচিতি ঘটানো হয় যারা বিভিন্ন ধরনের বিপদ-আপদকে পাশ কাটিয়ে, ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করে সাহসিকতা প্রদর্শনসহ প্রয়োজনে আত্মোৎসর্গ ও নীতি-নৈতিকতাবোধের মাধ্যমে মানবজাতির বৃহৎ মঙ্গলাকাঙ্খায় অংশগ্রহণ করে সফলকাম হন।
নারীদের ক্ষেত্রে যিনি এ ধরনের বীরত্বপূর্ণ কর্মের অধিকারী হন, তিনি জনসমক্ষে বীরাঙ্গনা নামে পরিচিত হন। বীরদেরকে ঘিরে অনেক নীতিকথামূলক উদাহরণ গল্পাকারে আজো লিখিত হয়ে থাকে। হেরাক্লেস, পার্সেসাস, আচিলেসের ন্যায় প্রমূখ বীর প্রাচীন গ্রীসের ধর্মীয় বিষয়াদির উল্লেখযোগ্য বিষয় হিসেবে অঙ্কিত হয়ে রয়েছেন। প্রাচীন এবং বর্তমান - উভয় পর্যায়েরই বিভিন্ন রাজনীতিবিদ স্ব-মহিমায় ও ব্যক্তিত্বগুণে বীরের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়ে আছেন। উল্লেখ্য যে বীরদের বীরত্বের পশ্চাতে তাদের নিজ নিজ ধর্মের সৃষ্টকর্তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তা অবশ্যই থাকে যদিও রামায়নের ইন্দ্রজিৎ, মহাভারতের ভীস্ম বা দ্রোণাচার্য, গ্রীকদের হেরাক্লেস কিংবা শাহানামার রুস্তম বা ইসফানদিয়ার নিজ বাহুবলে বলিষ্ঠ। এক্ষেত্রে আব্রাহামিক তিন ধর্ম বিশেষ করে মহান ইসলাম ধর্মে বীরত্বের ব্যাপার সম্পূর্ণ আলাদা। ইসলামের বীরত্ব অস্ত্র নির্ভর নয় বরং যিনি ক্ষমা, দয়া, দান, রিপু নিয়ন্ত্রণ ও তাকওয়া অবলম্বনকারী তিনিই বীর। ইসলামে এমন একজন বীরও নেই যিনি যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে স্বাভাবিক জীবনেও দানশীল নন, ক্ষমাশীল নন বা তাকওয়া অবলম্বনকারী নন। সর্বোপরি ইসলামে যুদ্ধের মাঠে জয় বা বীরত্বের ধারণা পুরোটা আল্লাহ নির্ভর। অর্থাৎ মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে বিজয় আল্লাহর দান এখানে বীরত্ব বা অস্ত্র গৌণ। যেমন বদর বা ওহুদের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী সংখ্যা ও অস্ত্রে দুর্বল ছিল অথচ বিজয় তাদের করতলে ছিল। আবার ইসলামের ইতিহাসে হামজা , আলী , খালিদ বা সালাউদ্দিন আয়্যুবি বিখ্যাত বীর কিন্তু কেও-ই বীর হিসেবে পরিচিত হন নি কারণ তাদের ও সব মুসলিমদের বিশ্বাস অভিন্ন; শক্তি আল্লাহর উপহার, এটা বীরদের নিজস্ব নয়। ত্রোইয়ার যুদ্ধ আখিলেসের বীরত্ব ও ওডিসিয়াসের চাতুর্যে এসেছে বলে গ্রীক পুরাণের ধারণা। ফেরাউনের বিরুদ্ধে মুসা -এর জয় মুসা -এর চাতুর্যে ছিল না, ইব্রাহিম নমরুদকে পরাজিত করেন নি বা রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসকে খালিদ পরাজিত করতে পারতেন না, বরং এটা জয় পরাজয়ের নির্ধারক মহান আল্লাহর হস্তক্ষেপ ছিল।