ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্য
ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলামিক স্থাপত্য / From Wikipedia, the free encyclopedia
ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্য বলতে ভারতীয় উপমহাদেশের এমন স্থাপত্যকে বোঝায় যেগুলো ভারতের মুসলমান শাসকদের দ্বারা তাদের প্রয়োজনে নির্মিত হয়েছে। সিন্ধু সপ্তম শতাব্দীতে মুসলমান শাসকদের অধীনে গেলেও, ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমান শাসনের ইতিহাস মূলত মুহাম্মাদ ঘুরির ১১৯৩ সালে দিল্লিকে মুসলিম সাম্রাজ্যের রাজধানী বানানোর মাধ্যমে শুরু হয়। দিল্লির সুলতান ও মোগল সম্রাটরা মধ্য এশিয়া থেকে আফগানিস্তান হয়ে এসেছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে। তারা তাদের নির্মিত স্থাপত্যে ইসলামি স্থাপত্যের মধ্য এশীয় রীতি ব্যবহার করেছিলেন, যা ইরানি ইসলামি স্থাপত্যরীতি থেকে উদ্ভূত।[1]
মুসলিম আমিরদের যে ধরনের ও যে আকারের বৃহৎ ইময়ারতের প্রয়োজন ছিল, সেগুলো ভারতীয় উপমহাদেশে পূর্বে নির্মিত ইমারতগুলো থেকে আলাদা। তারা যেসব ইমারত ভারতীয় উপমহাদেশে নির্মাণ করেছিলেন, তন্মধ্যে প্রধান ছিল মসজিদ ও সমাধিসৌধ। মুসলমান শাসকদের দ্বারা নির্মিত ইমারতের বহির্মুখের ওপরে প্রায়শই বড় গম্বুজের দেখা মেলে। এছাড়া, এসব ইমারতে তোরণের দেখা যায় খিলানের ব্যবহার। গম্বুজ ও খিলানের ব্যবহার ভারতীয় স্থাপত্যরীতি ও হিন্দু মন্দিরে কদাচিৎ দেখা যায়। মুসলমান শাসকদের নির্মিত মসজিদ ও সমাধিসৌধে একটি বিশাল ফাঁকা জায়গাত উপরে বৃহৎ গম্বুজের দেখা মেলে। এসব ইমারতে মানবমূর্তির চিত্রায়ন বাদ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো হিন্দু মন্দিরের আবশ্যকীয় অঙ্গ।[2]
ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যরীতিকে শুরুর দিকে ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যরীতিকে নিজেদের মত করে আপন করতে হয়েছিল। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের ইসলামি স্থাপত্যরীতিতে ইটের ব্যবহার দেখা গেলেও, ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যরীতিতে ইটের পরবর্তী পাথরকে ইমারতের মূল উপাধান হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যায় কেননা, ভারতীয় কারিগররা পাথর দিয়ে উন্নত মানেত ইমারত নির্মাত করতে জানতেন।[3] দিল্লি কে কেন্দ্র করে ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যরীতি গড়ে উঠলেও ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানের মুসলমান শাসকদের হাতে এর নানা ধরনের আঞ্চলিক স্থাপত্যরীতি গড়ে ওঠে। মোগল আমলে ইন্দো ইসলামি স্থাপত্যরীতির প্রভাব দেখা যায় হিন্দুদের মাঝেও। তারা মন্দির নির্মাণে গম্বুজ ও খিলানের ব্যবহার শুরু করে। বিশেষত, তারা তাদের বসবাসের জন্য ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে গম্বুজ ও খিলান রাখা শুরু করে।
এছাড়াও, আধুনিক ভারতীয়, পাকিস্তানি, বাংলাদেশি স্থাপত্যশৈলীতে প্রভাব দেখা যায় ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যের। এছাড়াও, ব্রিটিশদের হাতে ভারতবর্ষে যাত্রা শুরু হওয়া ইন্দো-গোথিক স্থাপত্যরীতির এর প্রভাভ বিদ্যমান। ইন্দো-গোথিক স্থাপত্যরীতির ধর্মীয় ও সাধারণ, সব ধরনের ইমারতেই ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যের প্রভাব লক্ষ করা যায়। ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যে ভারতীয়, ইসলামি, ইরানি, মধ্য এশীয় ও অটোমান তুর্কি স্থাপত্যের প্রভাব বিদ্যমান।