Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব ( আরবি: حمزة بن عبد المطلب; আনু. ৫৭০–)[1][2] ছিলেন নবী মুহাম্মাদ সা. এর সাহাবি, চাচা ও দুধভাই। তিনি উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। তার ডাকনাম হল আবু উমারা ও আবু ইয়ালা। তার উপ-নামগুলো ছিল, আসাদুল্লাহ (আল্লাহর সিংহ) এবং আসাদ আল-জান্নাহ (জান্নাতের সিংহ)। মুহাম্মদ সা. তাকে মরণোত্তর সায়্যিদুশ-শুহাদা উপাধি দিয়েছিলেন।[3]
হামযা حَمْزَة | |
---|---|
'আসাদুল্লাহ (أَسَد ٱللَّٰه) সাইয়েদাস শুহাদাʾ (سَيِّدُ الشُّهَدَاء) | |
মদিনা প্রতিরক্ষায় দায়ত্বশীল | |
পূর্বসূরি | কেউ নয় |
উত্তরসূরি | খালিদ বিন ওয়ালিদ |
জন্ম | হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আনু. ৫৬৬-৫৭০ মক্কা, হেজাজ, আরব উপদ্বীপ |
মৃত্যু | ২২ মার্চ ৬২৪ (৫৬-৫৭বছর) উহুদ পর্বত, মদিনা, আরব উপদ্বীপ |
দাম্পত্য সঙ্গী | সালমা বিনতে উমায়স, উম্মে আল মিলা, খাওলা বিনতে কায়েস |
বংশধর | উমামা বিনতে হামযা, আমির, ইয়ালা |
রাজবংশ | বনু হাশিম |
পিতা | আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম |
মাতা | হালাহ বিনতে উহাইব |
ধর্ম | ইসলাম |
ইবনে সা'দ, আল-ওয়াকিদীর দাবির উপর ভিত্তি করে বলেন যে, হামযা মুহাম্মদের চেয়ে চার বছর বড় ছিলেন।[2] তবে ইবনে সাইয়্যিদ এক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করেন। যিনি যুক্তি দেন: "যুবায়ের বর্ণনা করেছেন যে, হামজা নবীর চেয়ে চার বছর বড় ছিলেন। তবে এটি সঠিক বলে মনে হচ্ছে না, কারণ নির্ভরযোগ্য হাদিসে বলা হয়েছে, থুওয়াইবা হামজা ও নবী উভয়কেই একইসাথে লালন-পালন করেছিলেন"। বনে সাইয়্যিদ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, হামজা মুহাম্মদের চেয়ে মাত্র দুই বছর বড় ছিলেন, যদিও তিনি পুরোপরি নিশ্চিত ছিলেন না, তাই তিনি বলেন, "একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন"।[4] ইবনে হাজার, বনে সাইয়্যিদের হাদিসের শেষে লিখেছেন: "হামজার জন্ম মুহাম্মদের দুই থেকে চার বছর আগে"।[5]
ইবনে কাসীর আল-সীরাহ আল-নবুইয়্যাতে আবু নাঈম আল-ইসফাহানীর হাদিস উল্লেখ করেন, যেটি ইবনে আব্বাস থেকে এসেছে। হাদিসে বলা হয়, আব্দুল মুত্তালিব একবার ইয়েমেন গমন করেন। তিনি একজন ইহুদি পুরোহিতের সঙ্গে থাকলেন। একজন সন্ন্যাসী ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, তার ক্ষমতা এবং নবুওয়াত উভয়ই থাকবে এবং সে আব্দুল মুত্তালিবকে বনু যুহরার এক মহিলার সঙ্গে বিবাহ করার পরামর্শ দেন। মক্কায় ফিরে আসার পরে, তিনি গোত্রের এক মহিলা, হালাকে বিয়ে করেন এবং হামজা জন্মগ্রহণ করে। পরে আবদুল্লাহ আমিনাকে বিয়ে করেন এবং কুরাইশরা বলতো যে, তিনি বিয়ের ব্যাপারে সবসময়ই জিততেন। [6]
হামজা কুস্তি, তীরন্দাজ ও লড়াইয়ে দক্ষ ছিলেন। [3] তিনি সিংহ শিকার করা খুব পছন্দ করতেন এবং তাকে "কুরাইশের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং অপ্রতিরোধ্য হিসাবে বিবেচনা করা হত। [7]
হামজার পিতা ছিলেন মক্কার কুরাইশী গোত্রের "আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম ইবনে আবদ মানাফ ইবনে কুসাই" । [2] তার মা ছিলেন কুরাইশের জুহরা গোত্রের 'হালা বিনতে উহাইব' । তাবারি দুটি ভিন্ন মত উল্লেখ উদ্ধৃত করেছেন। একটিতে আল-ওয়াকিদী বর্ণনা করেছেন যে, আবদুল মুত্তালিব তার পুত্র আবদুল্লাহর সাথে ওয়াহব ইবনে আবদ মানাফের বাড়িতে ওয়াহাবের মেয়ে আমিনাকে বিয়ের জন্য দেখতে যান। তারা সেখানে থাকাকালীন আবদুল-মুত্তালিব ওয়াহাবের ভাগ্নী, হালা বিনতে উহাইবকে লক্ষ্য করেন এবং তিনি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ওয়াহব রাজি হন এবং মুহম্মদ (সা:) এর পিতা আবদুল্লাহ এবং তার দাদা আবদুল-মুত্তালিব দু'জনের বিয়ের অনুষ্ঠানে একসাথে হয়েছিলো। তবে ইবনে শিহাব আল জুহরির উল্লিখিত হাদীসে এ জাতীয় কোন বিবাহের কথা উল্লেখ করা হয়নি। [8] হামযা ছিলেন মুহাম্মদের পিতার ছোট ভাই।
হামজা তিনবার বিয়ে করেছিলেন এবং তার ছয়টি সন্তান ছিলো। [2]
হামজা ইসলাম আসার প্রথম কয়েক বছর পর্যন্ত খুব কমই তা সম্পর্কে জানতেন। ৬১৩ সালে যখন মুহাম্মদ বনু হাশিমের কাছে দাওয়াত নিয়ে আসেন, তখনও তিনি এতে সাড়া দেননি।[7]
৬১২ সালের শেষদিকে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।[2] মরুভূমিতে শিকার করার পরে মক্কায় ফিরে তিনি শুনলেন যে, আবু জাহল "নবীকে আক্রমণ করেছিলো এবং তাকে গালিগালাজ ও অপমান করেছিলো," " তাকে তার ধর্মের নিয়ে কথা বলে অসম্মানিত করার চেষ্টা করা হচ্ছিল"। মুহাম্মদ নিশ্চুপ ছিলেন তখন। [7] "ক্রোধে ভরে," হামজা আবু জাহেলকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ...ছুটে আসলেন"। তিনি কাবাতে প্রবেশ করলেন এবং আবু জাহেল প্রবীণদের সাথে যেখানে বসে ছিলেন, সেখানে এসে তাকে তার ধনুক দিয়ে "মারাত্মক আঘাত করলেন"। তিনি বললেন, "আমি যদি তার ধর্ম গ্রহণ করি তাহলে কি তোমরা তাকে এরকম অপমান করতে থাকবে? পারলে আমাকে মেরে দেখাও! " তিনি "আবু জাহেলের মাথায় আঘাত করলে মাথা কেটে যায়" জাহেলের আত্মীয়-স্বজনরা তাকে সাহায্য করার জন্য কাছে আসে, কিন্তু তিনি তাদের বলেছিলেন, "আবু উমারা [হামজা]কে তোমরা একা ছেড়ে দাও, কারণ আল্লাহর কসম, আমি তার ভাগ্নীকে চরম অপমান করেছি"।
এই ঘটনার পরে হামজা আল-আরকামের ঘরে প্রবেশ করে ইসলাম গ্রহণ করেন। [2] "হামজা ইসলামে পুরোপুরি প্রবেশ করেন, এবং সকল বিধিবিধান মেনে চলেন। তিনি যখন মুসলমান হয়েছিলেন, তখন কুরাইশদের কাছে মুহাম্মদের শক্তি কিছুটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলো, এবং হামজাকে তিনি একজন রক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন। তাই তাদের জন্য নবীকে হয়রান করার সুযোগ কমে গিয়েছিলো। "[7] এর পরিবর্তে, তারা নবীর সাথে দর কষাকষি করার চেষ্টা করেছিল; কিন্তু তিনি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
হামজা একবার মুহাম্মদের কাছে ফেরেশতা জিবরাঈল কে আসল রুপে দেখতে চেয়েছিল। মুহাম্মদ হামজাকে বলেছিলেন যে, আপনি তাকে দেখতে পারবেন না। কিন্তু হামজা বলেন যে সে জিবরাঈলকে দেখতে চান। তাই মুহাম্মদ তাকে সে যেখানে বসা ছিলেন সেখানেই বসতে বললেন। বলা হয় যে, জিবরাইল তার সামনে অবতীর্ণ হয় এবং হামজা জিবরাঈলের পা দেখতে পান যা ছিলো পান্নার মত, এটি দেখার পরেই তিনি অচেতন হয়ে পড়ে যান [2]
মুহাম্মদ (সাঃ) হামযাকে কুরাইশের বিরুদ্ধে প্রথম আক্রমণে প্রেরণ করেছিলেন। সিরিয়া ফিরত এক ব্যবসায়ী-কাফেলাকে আটকাতে হামজার নেতৃত্বে জুহায়না অঞ্চলের উপকূলে ত্রিশ জন নিয়ে তিনি অভিযানে যান। হামজা সমুদ্র উপকূলে আবু জাহেলের তিনশ জনের কাফেলার সাথে সাক্ষাত করলেন। মাজদী ইবনে আমর আল-জুহানী তাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন, "কারণ উভয় পক্ষের সাথেই তখন শান্তি চুক্তি ছিলো" ফলে দুই পক্ষ কোন লড়াই ছাড়াই যার যার মত চলে যায়। [2][7]
তার দ্বিতীয় চাচাত ভাই উবাইদাহ ইবনুল হারিস কে কি রাসুল প্রথম পতাকা দিয়েছিলেন নাকি হামজাকে দিয়েছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। [7]
হামজা বদরের যুদ্ধ করেছিলেন, সেখানে তিনি জায়েদ ইবনে হারিথার [7] সাথে একই উটে ছিলেন এবং তার বুকে একটি স্বতন্ত্র উটপাখির পালক ছিলো যা তাকে অত্যন্ত দৃশ্যমান করে তুলেছিল। [2] মুসলমানরা বদরের কূপগুলিকে অবরুদ্ধ করেছিল।
আল-আসওয়াদ ইবনে আবদালাসাদ আল-মাখজুমী, যিনি একজন ঝগড়াটে অসুস্থ প্রকৃতির লোক ছিলেন, সে এগিয়ে এসে বলল, "আমি ইশ্বরের শপথ করে বলছি যে, আমি তাদের কুয়া কাছে গিয়ে পানি পান করবই, অথবা গিয়ে ধ্বংস করব, দরকার হলে আমি মরে যাবো"। হামজা তার বিরুদ্ধে এসে দাঁড়াল, কুয়ার কাছে আসা মাত্রই হামজা তার পায়ের অর্ধেক কেটে ফেললো। সে মাটিতে পরে গেলো এবং তার সহযোদ্ধাদের সামনে তার রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল। তারপরেও সে কূপের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে তার করা শপথ আদায়ের জন্য যেতে চাচ্ছিলো, কিন্তু হামজা তাকে অনুসরণ করে কুয়ার কাছেই হত্যা করল। " [7]
পরে তিনি একক লড়াইয়ে উত্তবা ইবনে রাবিয়াহকে হত্যা করেন এবং আলীকে উতবাহের ভাই শায়বাকে হত্যা করতে সহায়তা করেন। [7] যদিও তুওয়ামা ইবনে আদিয়াকে কে হামজা নাকি আলি হত্যা করেছিল তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
পরে বনু কায়নুকার বিরুদ্ধে অভিযানে মুহাম্মদের পতাকা তিনি বহন করে।[2]
হামজা তার ৫৯ বছর (চন্দ্র) বছর বয়সে ২২এ মার্চ ৬২৫ (৭ শাওয়াল ৩ হিজরি ) উহুদ যুদ্ধে নিহত হন। তিনি মুহাম্মদের সামনে দাঁড়িয়ে দুই তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ করছিলেন। আবিসিনিয়ার দাস ওয়াহশী ইবনে হারব তাকে হত্যা করে, যাকে হিন্দ হামজাকে হত্যা করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিল। এটি তার পিতা উত্তবাহ ইবনে রাবিয়াহের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ছিলো, যাকে বদর যুদ্ধে হামজা হত্যা করেছিলেন । [7] হামজা বর্শার আঘাত পেয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান; ওয়াহশী বলেছেন, "আবিসিনিয়রা যেভাবে বর্শা নিক্ষেপ করতে পারে তা কখনই লক্ষ ভ্রষ্ট হত না," বর্শাটি হামজার বুকে বিঁধে এবং তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
এরপরে ওয়াহশী তার পেট কেটে তার কলিজাকে হিন্দ বিনতে উতবার কাছে আনে,[2] যার বাবাকে হামজা বদরে হত্যা করেছিলেন। হিন্দ হামজার কলিজাকে চিবিয়ে খান। "অতঃপর তিনি গিয়ে হামযার লাশকে বিকৃত করেন এবং তার শরীরের হাঁড় থেকে গলার হার এবং দুল তৈরী করেন এবং সেগুলোসহ সে তার কলিজা মক্কায় নিয়ে আসেন"।
হামজা তার ভাতিজা আবদুল্লাহ ইবনে জাহশ এর সাথে একই কবরে সমাহিত হোন। মুহাম্মদ পরে বলেছিলেন, "আমি দেখেছিলাম ফেরেশতারা হামজাকে গোছল করাচ্ছে কারণ সে জান্নাতে আছে"।[2] ফাতেমা হামজার কবরে প্রায়ই যেতেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.