সোনালী ত্রিভুজ (ইংরেজি: Golden Triangle, বর্মী: ရွှေတြိဂံ နယ်မြေ, আইপিএ: [ʃwè tɹḭɡàɴ nɛ̀mjè]; থাই: สามเหลี่ยมทองคำ, আইপিএ: [sǎːm.lìəm.tʰɔːŋ.kʰam]; লাও: ສາມຫຼ່ຽມທອງຄຳ; ভিয়েতনামী: Tam giác Vàng) হল এশিয়ার প্রধান দুটি আফিম উৎপাদন অঞ্চলের একটি। এর আয়তন প্রায় ৯৫০,০০০ বর্গ কিলোমিটার, যা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার তিনটি দেশ মায়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ডের পাহাড়ি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
আফগানিস্তানের সোনালী চন্দ্ররেখার পাশাপাশি, ১৯৫০ সাল থেকে এটি এশিয়ার ও বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাপক আফিম উৎপাদনকারী এলাকার একটি। ২১ শতকের শুরু পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হেরোইন সোনালী ত্রিভুজ থেকে আসত, তারপর আফগানিস্তান বিশ্বের বৃহত্তম হেরোইন উৎপাদন হয়।[1]
সোনালী ত্রিভুজ নামটি এসেছে রুয়াক নদী ও মেকং নদীর মিলনস্থল হতে, এই নামটি থাই পর্যটন শিল্পে ব্যবহৃত হয় পার্শ্ববর্তী মায়ানমার,লাওস ও থাইল্যান্ড সীমান্তের ত্রিসীমানা নির্দেশ করতে।
উৎপাদন
মায়ানমার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অবৈধ আফিম উৎপাদনকারী, ১ম আফগানিস্তান[2] এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বহুজাতিক মাদক ব্যবসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।[3] UNODC মতে ২০০৫ সালে মায়ানমারের ৪৩০ বর্গ কিলোমিটার (১৬৭ বর্গমাইল) এলাকায় আফিম চাষ হয়েছিল।[4]
১৯৬৬ সালের জানুয়ারিতে মং তাই সেনাবাহিনীর সেনাপতি খুন সা আত্মসমর্পণ করলে মায়ানমার সরকার কর্তৃক একে বিরাট সাফল্য হিসেবে ধরা হয়। মাদকপাচারকারীদের ধরার সরকারের সদিচ্ছা ও তৎপরতার অভাব এবংটাকা পাচার প্রতিরোধে ব্যর্থতা মাদকবিরোধী সফলতাকে ম্লান করে দিচ্ছে। মায়ানমার ও থাইল্যান্ডের আফিম উৎপাদনকারী গ্রামবাসীরা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে।
মায়ানমারে চার বছরব্যাপী একটি তদন্তে বের হয় যে 'মায়ানমার অয়েল এন্ড গ্যাস কোম্পানি' মায়ানমার সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত হেরোইন ব্যবসা অর্জিত অর্থ লন্ডারিং করার প্রধান চ্যানেল।[5] রেঙ্গুনের ব্যাংকগুলো ৪০% কমিশনে টাকা পাচার এর সুযোগ দিত।[6]
মায়ানমারের মাদক ব্যবসার প্রধান নিয়ামক ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি, তারা থাইল্যান্ড সংলগ্ন পূর্ব সীমান্তের মাদক উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। এই বাহিনী মায়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে জোটবদ্ধ, তারা একসময় চীনের মদদপপুষ্ট বর্মী কম্যুনিস্ট পার্টির সামরিক শাখা ছিল।
মায়ানমারে মাদকবিরোধী অভিযানের ফলস্বরূপ পপি চাষ ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ সালের মাঝে প্রায় ৮০% কমে গিয়েছিল। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিভাগের মতে বর্তমানে তা বাড়ছে। ২০০৭ সাল নাগাদ পপি চাষের জমি ২৯ % বেড়েছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুসারে দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও সরকারের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা এর মূল কারণ।[7]
পাচার
মায়ানমারের উত্তরপূর্ব অঞ্চলে উৎপাদিত আফিম ও হেরোইনের কাঁচামাল ঘোড়া গাধার ঠেলাগাড়ির মাধ্যমে থাইল্যান্ড-মায়ানমার বর্ডারে অবস্থিত রিফাইনারিতে নেয়া হয় হেরোইন তৈরির জন্য। উৎপাদিত পণ্য পরবর্তীতে বর্ডার পার করে থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে বণ্টনের জন্য ।
পূর্বে ব্যাংককে থাই-চাইনিজ ও বার্মিজ-চাইনিজ পাচারকারীরা থাইল্যান্ড হতে অন্যান্য দেশে পাচার নিয়ন্ত্রণ করত, কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন সরকারি পদক্ষেপ এদের প্রাধান্য কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকক ও থাইল্যান্ডের অন্যান্য অংশের পাচারকারীরা অল্প পরিমাণে তা নিয়ন্ত্রণ করে।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়া হতে আমেরিকাতে হেরোইন পাচারের মূল মাধ্যম কুরিয়ার,সাধারণত থাইল্যান্ড ও আমেরিকার নাগরিক যারা বাণিজ্যিক প্লেনে ভ্রমণ করেন তারাই এতে অংশ নেন। ক্যালিফোর্নিয়া ও হাওয়াই এই হেরোইনের প্রাথমিক প্রবেশপথ,কিন্তু অল্প পরিমাণে নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনেও পৌছায়।[8]
বর্তমানে মাদক উৎপাদন ইয়াবা তে ব্যাপক হারে স্থানান্তরিত হয়েছে।
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.