সিজারিয়ান সেকশন
From Wikipedia, the free encyclopedia
সিজারিয়ান সেকশন (ইংরেজি: Caesarean section বা মার্কিন ইংরেজিতে Cesarean section), যা সি-সেকশন (C-section) বা সিজার (Caesar) নামেও পরিচিত। এটি এক প্রকার শল্যচিকিৎসা যা এক বা একাধিক শিশু জন্মদানের জন্য মায়ের উদর ও জরায়ুতে করা হয়। এটি সাধারণত করা হয় তখন, যখন প্রাকৃতিক নিয়মে জন্মনালির মাধ্যমে যোনীয় প্রসব সম্ভব হয় না, বা সম্ভব করতে গেলে মায়ের বা শিশুর, জীবন বা স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। যদিও বর্তমান সময়ে প্রাকৃতিক পন্থায় জন্মদান সম্ভব হলেও অনেক মা সিজারিয়ানের মাধ্যমে শিশু জন্মদানের জন্য অনুরোধ করেন। [1][2][3] বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পরামর্শ দেয় যে, কোনো দেশের সিজারিয়ানের মাধ্যমে শিশু জন্মদানের হার, যেন মোট জন্মহারের ১৫%-এর বেশি না হয়।[4]
সিজার করতে প্রায় ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা সময় লাগে।[5] এটি মেরুদন্ড ব্লকের মাধ্যমে করা যেতে পারে যে ব্যবস্থায় গর্ভবতীকে ঘুম পাড়ানো হয় না বা সাধারণ মাত্রার এনেস্থেশিয়া প্রয়োগকৃত অবস্থায় থাকে।[5] প্রস্রাব নিঃস্কাষনের জন্য ক্যাথিটার ব্যবহৃত হয়। পেটের চামড়া এন্টিসেপটিক দ্বারা পরিষ্কার করা হয়।[5] তারপর প্রায় ৬ ইঞ্চি পরিমাণ (প্রায় ১৫ সেমি) তলপেটের অংশে অপারেশন করেন একজন অভিজ্ঞ শল্যবিদ।[5] তারপর জরায়ুতেও একইভাবে অপারেশনপূর্বক শিশুকে বের করে আনা হয়।[5] তারপর চামড়া সেলাই করে জোড়া দেয়া হয়।[5] অপারেশনের পরপরই সদ্য মাকে অপারেশন কক্ষের বাইরে নিয়ে আসা হয় তখন তিনি যদি সজাগ থাকেন তবে শিশুকে বুকের দুধ পান করাতে পারেন।[6] তবে পরিপূর্নভাবে সুস্থ হতে গেলে হাসপাতালে কয়েকদিন থাকতে হতে পারে।[5]
কম-ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সিজারের ফলাফল সামান্য অসন্তোষজনক হতে পারে।[7] কেননা সাধারণ সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়া থেকে অপারেশনের ক্ষেত্রে প্রায় ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে পুরোপুরি ভাল হবার জন্য।[5] অন্যান্য ঝুঁকির মধ্যে আছে শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, মায়ের মধ্যে অ্যামনিওটিক তরল রক্তে মিশে যাওয়া এবং প্রসবকালীন রক্তপাত ইত্যাদি।[7] নির্দেশনা অনুযায়ী, গর্ভধারণের ৩৯ সপ্তাহ পার হবার আগে কোনও কারণ ছাড়া সীজারিয়ান উপায়টি ব্যবহার করা উচিত কাজ নয়।[8] এ পদ্ধতির ডেলিভারির সাথে পরবর্তী যৌন কার্যক্রমের কোনো সম্পর্ক নেই।[9]
২০১২ সালে প্রায় ২৩ মিলিয়ন সিজার করা হয় পুরো বিশ্বে।[10] আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রদায় পূর্বে ১০-১৫% জন্মদান পদ্ধতি সিজারে করানোকে ভাল বলে সুপারিশ করেছিল।[11] কিছু প্রামাণিক কারনে দেখা গেছে ১৯ ভাগ পর্যন্ত ভাল ফলাফল লাভ করা যেতে পারে।[10] প্রায় ৪৫টির বেশি দেশে সিজাররের হার ৭.৫ ভাগ কিন্তু ৫০টিরও বেশি দেশে এ হার ২৭ ভাগেও বেশি।[10] সিজারের হার কমানো এবং প্রয়োজন হলেই ব্যবহার করার উপর জোর দেয়া হয়।[10] ২০১৭ সালে আমেরিকায় প্রায় ৩২ ভাগ জন্মদান হয়েছে সিজারের মাধ্যমে।[12] এই শল্যচিকিৎসার ইতিহাস খুজে পাওয়া যায় ৭১৫ বিসিতেও, তখন মায়ের সাথে শিশুর বাচার হার খুব কম ছিল।[13] ১৫০০ দিকে মায়ের বেচে থাকার পরিমানে বিষয়ে বর্ণনা পাওয়া যায়। জুলিয়াস সিজারও সিজারের মাধ্যমে জন্মদান করে। ধারণা করা হয় সেই থেকে এই শল্য ব্যবস্থার নাম হয় সিজারিয়ান।[13] ১৯শ শতকে এন্টিসেপটিক এবং এনেস্থেশিয়ার প্রচলনের মাধ্যমে মা এবং শিশু মৃত্যুহার ব্যাপক আকারে কমে যায়।[13][14]