সরদার (পদবি)
From Wikipedia, the free encyclopedia
সরদার বা সর্দার (ইংরেজি: Sordar, Sardar, আরবি: سردار) মুসলিমদের মধ্যে খুব প্রচলিত এবং সম্ভ্রান্ত একটি পদমর্যাদা। সেরদার বা সরদার ছিলো একটি উপাধি যা উসমানীয় সাম্রাজ্যে একটি সামরিক পদবি এবং মন্টিনিগ্রো ও সার্বিয়ায় অভিজাত পদবি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মধ্যযুগে সামন্তবাদী সমাজ ব্যবস্থার ফলে পরবর্তীতে বৃটিশ আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সমান্তরালে বাঙালির পদবির বিকাশ ঘটেছে বলে মনে করা হয়। ঢাকার নবাব পরিবারে তাদের সরদারি প্রথা বেশ প্রভাব বিস্তার করেছিল। রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত এ প্রথায় প্রতিটি মহল্লায় স্থানীয় প্রভাবশালী মুসলমান ব্যক্তিদের থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি করে কমিটি গঠন করা হতো যারা উক্ত মহল্লার ছোটখাটো বিষয়াদি মীমাংসা করতেন। প্রতিটি কমিটির প্রধান সরদার বা সর্দার নামে পরিচিত ছিলেন। ঢাকার নবাব পরিবার পঞ্চায়েত কমিটি অনুমোদন ও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করতেন। কিছু পদবি সম্রাট বা জমিদাররা পেশা বা দায়িত্ব অনুসারে প্রদান করতেন। তার মধ্যে দলনেতা, গোষ্ঠী প্রধানদের সরদার উপাধি দেওয়া হতো।
সরদার শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ Leader, Chief, Guardian, Captain বা Commander হিসাবে পাওয়া যায়। অনেক ইতিহাসবিদ অবশ্য সুলতানি আমলে কর বা রাজস্বকাজে নিযুক্ত দলপতিকে সরদার বলা হতো এমন কথাও বলেন। তাছাড়া ভাষাবিদরা বহুল প্রচলিত পদবি আমীর এর উপমহাদেশীয় মুসলিম রূপ হিসাবে উৎস খুঁজে পান বলে জানান। মির বা মীর শব্দটি এসেছে আরবি থেকে। আরবি শব্দ আমীর’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে মীর। সেই অর্থে মীর অর্থ দলপতি বা নেতা, প্রধান ব্যক্তি, সরদার ইত্যাদি। এখান থেকেও সরদার (সর্দার) উপাধির প্রচলন বলেও অনেকে ধারণা করেন। সেই অর্থে মীর অর্থ দলপতি বা নেতা, প্রধান ব্যক্তি, সরদার ইত্যাদি। জিতে নেয়া বা জয়ী হওয়া অর্থে মীর সরদার শব্দের ব্যবহার হতো। তবে মীর বা সরদার বংশীয় লোককে সম্ভ্রান্ত এবং সৈয়দ বংশীয় পদবিধারী’র একটি শাখা বলে গাবেষকরা মনে করেন। সেই হিসাবে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ স. এর বংশের সাথে সরদার বংশের সাদৃশ্যে আছে বলে মনে করেন অনেকে।
তাছাড়া সেরদার, সর্দার বা সরদার ছিলো একটি উপাধি যা উসমানীয় সাম্রাজ্যে একটি সামরিক পদবি এবং মন্টিনিগ্রো ও সার্বিয়ায় অভিজাত পদবি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সেরদার হলো সরদার-এর তুর্কি ভাষায় একটি বৈকল্পিক বানান। সেরদারগণ বিশেষত উসমানীয় সাম্রাজ্যের সীমান্ত প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তারা তাদের ভূখন্ডের নিরাপত্তার জন্য দায়ী ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ইয়েনিস হতে আগত বারবারোসের পিতা ইয়াকুপ আগা। মন্টিনিগ্রো রাজ্য এবং সার্বিয়া রাজ্যে ভোজভোডার অধস্তন সম্মানসূচক অভিজাত পদবি হিসেবে সর্দার (সেরদার) উপাধিটি ব্যবহার হতো(ঊদাহরণস্বরূপ, জানকো ভুকোতিজ নামক মন্টিনিগ্রোর একজন সামরিক নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী সেরদার উপাধিটি বহন করতেন।
তবে একথা সকল ইতিহাসবিদ, বা ভাষাবিদ স্বীকার করে নেন যে, মধ্যযুগে, সুলতানী আমলে বা আব্বাসীয় খিলাফতের সময় দলপতি বা গোত্রপতি বা রাজস্ব কাজে নিযুক্ত একটি বা একাধিক বিভাগের কমান্ডারকে সরদার পদবি দেওয়া হতো। যেটা পরবর্তীতে আত্মমর্যাদাবোধ এবং বংশমর্যাদার প্রতীক হিসাবে গৃহীত হতো। অনেকে অবশ্য সরদার ফারসি মূল থেকে আগত হিসাবেও গণ্য করেন। কারণ বাংলা বা উপমহাদেশীয় ভাষা আরবি ও ফারসি ভাষার প্রাদুর্ভাব খুব দেখা যায়। যার অর্থ প্রভূ, মালিক, ভূস্বামী, শাসনকর্তা, বা রাজা। মোগল আমলে এদেশের স্থানীয় রাজকর্মচারিদেরও নাকি এ পদবি দেয়া হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং সমাজসেবামূলক কাজে তাদের প্রত্যক্ষ অবদান আছে। নবাবী আমল থেকে সমগ্র বাংলাদেশে সরদার বংশ ছড়িয়ে পড়ে।
পেশাভিত্তিক পদবি যেটা আরও বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়, যেমন, মাওলানা, মুফতী, কাজি, কানুনগো, কারকুন, গাজী, গোলন্দাজ, দেওয়ান, নিয়াজী, খন্দকার, পাটোয়ারী, মলঙ্গী, মল্লিক, মাতব্বর, মুন্সি/মুন্সী, মুহুরী, মৃধা, লস্কর, ব্যাপারী, হাজারী, প্রামাণিক, পোদ্দার, সরদার, হাওলদার, শিকদার, জোয়ার্দার, শেখ, চৌধুরী, ইনামদার ও সরকার।