Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সামাজিক লিঙ্গ পরিচয় শব্দ দ্বারা একজন মানুষের সামাজিক লিঙ্গ (জেন্ডার) সম্পর্কে নিজস্ব অভিজ্ঞতাকে বোঝানো হয়।[১] এই শব্দজোড়া দিয়ে সবসময়ই যে জন্মসূত্রে প্রাপ্ত সামাজিক লিঙ্গ পরিচয়কে বোঝায়, তা কিন্তু নয়।[২] অনেক সময়ই সামাজিক লিঙ্গ পরিচয় ব্যক্তির নিজস্ব সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে যে তিনি কোন সামাজিক লিঙ্গ পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সব সমাজেই সামাজিক লিঙ্গভিত্তিক শ্রেণীতালিকা রয়েছে, যা দিয়ে সমাজের অন্যান্য সদস্যদের সাথে একজন ব্যক্তির সামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।[৩] তবে বেশিরভাগ সমাজে শুধুমাত্র নারী ও পুরুষের ভিত্তিতে সামাজিক লৈঙ্গিক বৈশিষ্ট্যাবলীর পার্থক্য রয়েছে।[৪] জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠে যেকোন সামাজিক লিঙ্গের মানুষের সমভাবে পুরুষত্ব এবং নারীত্ব প্রকাশকেই জেন্ডার বাইনারি অনুপ্রাণিত করে।[৫] প্রতিটি সমাজেই, কিছু ব্যক্তি থাকে যারা তাদের জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের সাথে সম্পর্কিত সামাজিক বৈশিষ্ট্যাবলির সবগুলি বা কিয়দংশ প্রকাশ করে না।[৬] এদের মাঝে কেউ কেউ রূপান্তরিত সামাজিক লিঙ্গ অথবা সামাজিক লিঙ্গগতভাবে কুইয়ার (সমাজনির্ধারিত মান-বহির্ভূত সংখ্যালঘু সামাজিক লিঙ্গ)। আবার কেউ কেউ তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে পরিচিত।
সামাজিক লিঙ্গ পরিচয়ের প্রাথমিক কাঠামো ৩ বছর বয়সে গড়ে উঠে।[৭][৮] এরপর এর পরিবর্তন হওয়া সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। এমনকি পরবর্তীতে জোর করে পরিবর্তন আনার চেষ্টা সামাজিক লিঙ্গগত অস্থিতিশীলতার (জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া) তৈরি করতে পারে। জৈবিক এবং সামাজিক উভয়ের প্রভাবেই এই সামাজিক লিঙ্গ পরিচয় গড়ে তুলে।
বাচ্চাদের ভাষা বুঝতে পারার অসুবিধার কারণে শুধুমাত্র ধারণার ভিত্তিতে সামাজিক লিঙ্গ পরিচয় আসলে ঠিক কোন সময়ে গড়ে উঠে তা নিয়ে একাধিক তত্ত্ব রয়েছে। বলা বাহুল্য, এসব তত্ত্ব সরাসরি কোনও প্রমাণের ভিত্তিতে গড়ে উঠেনি।[৯] জন মানি বলেন বাচ্চারা ১৮ মাস থেকে দুই বছর বয়েসেই নির্দিষ্ট সামাজিক লিঙ্গের প্রতি সংবেদনশীল ও আকর্ষণবোধ করা শুরু করে। অন্যদিকে লরেন্স কোলবার্গ দাবী করেন তিন বছর বয়সের আগে সামাজিক লিঙ্গ পরিচয় গড়ে উঠে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানা হয় তিন বছর বয়স হতে হতে সামাজিক লিঙ্গ পরিচয়ের প্রধান ভিত্তি দাঁড় হয়।.[১০] এই বয়সে এসে বাচ্চারা নিজেদের সামাজিক লিঙ্গ সম্পর্কে বক্তব্য প্রদানে সক্ষম হয় এবং সামাজিকভাবে স্বীকৃত ও তাদের সামাজিক লিঙ্গের জন্য প্রযোজ্য খেলনার প্রতি আগ্রহী হয়। যেমন মেয়েশিশুরা পুতুল এবং আঁকাআঁকির দিকে ঝুঁকে এবং ছেলেশিশুদের আগ্রহ থাকে ঘরবাড়ি বানানো খেলনা বা যন্ত্রপাতির উপর।[১১] যদিও এই বয়সে এসে শিশুরা সামাজিক লিঙ্গের গুরুত্ব সম্পূর্ণভাবে অনুধাবন করতে পারে না। তিন বছর বয়সের পর এই সামাজিক লিঙ্গ পরিচয়ের পরিবর্তন আনা সহজসাধ্য নয় বরং ক্ষেত্রবিশেষে জোর প্রয়োগে তা জটিলতা তৈরি করতে সক্ষম।[১২] চার থেকে ছয় বছর বয়সে বাচ্চাদের সামাজিক লিঙ্গ পরিচয়ের অন্যান্য দিকও সুগঠিত হয়।[১৩] যা প্রাপ্তঃবয়স্ক হওয়ার আগ অব্দি বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত চলে।.
মার্টিন ও রুবল সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকে তিনটি ধাপে সাজিয়েছেন।
বারবারা নিউম্যান চারটি ধাপ উল্লেখ করেন,
যদিও সামাজিক লিঙ্গ পরিচয় উঠার ব্যাপারটা সঠিকভাবে বোঝা যায়নি তবে এর গঠনে একাধিক প্রভাবক কাজ করে বলে একাধিক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে, সামাজিকীকরণ বনাম জীববিজ্ঞানীয় কারণ এই দুইয়ের মাঝে কোনটা তীব্রভাবে কাজ করে এ নিয়ে মনোবিজ্ঞানে বিতর্ক রয়েছে। আর এই বিতর্ককে প্রকৃতি বনাম প্রতিপালন বলে অবহিত করা হয়। যদিও দুইটি কারণই প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। জৈবিক কারণের মধ্যে, ভ্রূণীয় দশা ও এর পরবর্তী সময়ের হরমোন মাত্রা কাজ করে।[১৬] অন্যদিকে বংশাণুর গঠন সামাজিক লিঙ্গ পরিচয় প্রভাবিত করলেও এটাই সামাজিক লিঙ্গ পরিচয় গঠনের প্রধান কারণ নয়।[১৭][১৮][১৯]
পরিবার, সংবাদমাধ্যম ও সামাজিকভাবে সামাজিক লিঙ্গভিত্তিক আচরণ ও চরিত্রায়ন শিশুর সামাজিক লিঙ্গ পরিচয় গড়ে উঠতে বড় প্রভাব ফেলে।[২০] শিশুরা যে সমাজে বড় হয়, সেই সমাজে যদি নির্দিষ্ট সামাজিক লিঙ্গের মানুষের নির্দিষ্ট কিছু আচরণগত গতানুগতিক স্বভাব থাকে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুরা সেই আচরণ নিজেদের মাঝে ধারণ করে বড় হয়। [২১] অবচেতন মনে ভাষা শেখার সময়ই শিশুরা পুরুষবাচক ও নারীবাচক শব্দাবলি আলাদা করে বুঝতে পারে যা তাদের আচরণে প্রভাব ফেলে।[২২] সামাজিক লিঙ্গভিত্তিক আচরণ দেখে তা নকল করার মাধ্যমে এবং আচরণের উপর নির্ভর করে তাঁরা পুরষ্কৃত বা তিরষ্কৃত হয় কিনা এগুলোর ভিত্তিতেও শিশুদের মাঝে নিজস্ব সামাজিক লিঙ্গ পরিচয় গড়ে উঠে বলে "সামাজিক শিক্ষা তত্ত্ব" দাবী করে। [২৩] সামাজিক লিঙ্গ পরিচয় নিজস্ব আকার পায় শিশুদের চারিদিকে থাকা মানুষের আচরণের মাধ্যমে, কেননা শিশুরা বড় হয় অনুকরণ করেই। [২৪]
ডেভিড রেইমার "প্রকৃতি বনাম প্রতিপালন" এর একটি পরিচিত উদাহরণ- যা "জন/জোয়ান" নামে পরিচিত। ছোটকালে রেইমার ভিন্ন ধরনের অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। তিনি তার পুরুষ জননাঙ্গ হারান। মনোবিজ্ঞানী জন মানি তার মা-বাবাকে বোঝান তাঁরা যেন রেইমারকে মেয়ে হিসেবে বড় করে তোলে। রেইমার সবসময় মেয়েদের জামাকাপড় পড়েছেন, মেয়েদের খেলনা তার চারিদিকে সবসময় থাকলেও তিনি কখনই নিজেকে একজন মেয়ে হিসেবে মনে করেন নি। তের বছর বয়সে তিনি আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত হলে তাকে জানানো হয় যে তিনি পুরুষ জননাঙ্গ সমেত একজন ছেলে হিসেবে জন্ম নিয়েছিলেন। তিনি একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুরুষ জননাঙ্গ ফিরে পান।[২৫] এই ঘটনা জন মানির তত্ত্ব "সামাজিক লিঙ্গ পরিচয় কিংবা যৌন অভিমুখিতা জীববিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়" তত্ত্বকে মিথ্যা প্রমাণ করে।[২৬]
একাধিক জৈব কারণ (বায়োলজিকাল ফ্যাক্টর) অনুসারে, জন্মের আগেই, বংশাণু (জিন) ও হরমোন সামাজিক লিঙ্গ পরিচয়ের উপর প্রভাব ফেলে।.[২৭] জৈবরাসায়নিক তত্ত্ব মতে, সামাজিকতার চেয়ে এই ধরনের প্রভাব দ্বারাই মানুষের লিঙ্গ পরিচয় বেশি প্রভাবিত হয়।
হরমোনজনিত প্রভাব বেশ জটিল। ভ্রুণের ক্রমবিকাশের খুব প্রাথমিক ধাপে সামাজিক লিঙ্গ নির্ধারণকারী হরমোন তৈরি হয় [২৮] এবং এই হরমোনের মাত্রা কোন কারণে বদলে গেলে বহির্বৈশিষ্ট্যতেও (ফিনোটাইপেও) এর প্রভাব পড়ে। এতে প্রকৃতিগতভাবে নির্দিষ্ট এক সামাজিক লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করার যে প্রবণতা কাজ করার কথা, তা বিঘ্নিত হয় অথবা বাহ্যিক যৌনাঙ্গের গঠন প্রভাবিত হয়। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন][২৯]
নারী ও পুরুষের সক্ষমতা, স্মৃতি এবং আগ্রাসন প্রবণতা হরমোন দ্বারা সম্ভবত প্রভাবিত হয়। জন্মের আগেই হরমোনের প্রভাব পরবর্তী জীবনে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস থেকে হরমোন নির্গত হওয়াকে প্রভাবিত করে। "নারীর যৌন হরমোন একটি মাসিক চক্রের মধ্য দিয়ে যায় যা পুরুষের ক্ষেত্রে হয় না।"[৩০]
১৯৫৫ থেকে ২০০০ সালে সাহিত্যের উপর গবেষণা করে একটি সার্ভে থেকে দেখা যায় প্রতি শতে একাধিক আন্তঃলিঙ্গ চরিত্রায়ন দেখা যায়।[৩১] আন্তঃলিঙ্গ বা ক্লীবলিঙ্গ মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর ক্রোমোজোম, কর্মক্ষম জননাঙ্গ, যৌন হরমোন অথবা গোপনাঙ্গসহ বিভিন্ন যৌন বৈশিষ্ট্যের সে সকল পার্থক্যকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যেগুলো জাতিসংঘের "অফিস অব দি হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস" এর বর্ণনা অনুযায়ী নারী বা পুরুষ দেহের যৌন দ্বিরূপতার ধারণার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না। এই পার্থক্যগুলো হতে পারে যৌনাঙ্গের অস্পষ্টতা, এবং এক্সওয়াই-পুরুষ এবং এক্সএক্স-নারী ব্যতিরেকে অন্যান্য ক্রোমোজোমীয় জিনোটাইপ (জেনেটিক বৈশিষ্ট্য) এবং যৌন ফিনোটাইপ (বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য) এর সমন্বয়। আন্তঃলিঙ্গকে পূর্বে উভলিঙ্গ বলা হত কিন্তু বর্তমানে উভলিঙ্গ শব্দটির ব্যবহার সীমিত হয়ে আসছে কারণ শব্দটিকে বিভ্রান্তিকর এবং অসম্মানজনক বলে বিবেচনা করা হয়। ২০০৬ সালে ''ডিজঅর্ডার অব সেক্স ডেভলাপমেন্ট'' (যৌন ক্রমবিকাশের বৈকল্য) হিসেবে আন্তঃলিঙ্গীয় বৈশিষ্ট্যের মেডিক্যাল সঙ্গায়ন প্রবর্তিত হয় যা প্রবর্তনের পর থেকেই যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছে। [৩২][৩৩]
২০১২ সালের একটি ক্লিনিকাল রিভিউ পেপারে ৮০৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ সামাজিক আন্তঃলৈঙ্গিক মানুষের মাঝে জেন্ডার ডাইস্ফোরিয়া দেখতে পাওয়া যায়।[৩৪] অস্ট্রেলিয়ায় করা একটি সামাজিক রিসার্চে, 'ক' যৌন শ্রেনীবিন্যাসের একটি দেশে জন্ম নেয়া ১৯ শতাংশ মানুষ "ক" অথবা "অন্যান্য" লিঙ্গ পরিচয় সিলেক্ট করে। যেখানে অন্তত ৫২ % নিজেদের নারী, ২৩% পুরুষ এবং ৬% নিশ্চিত নই বলেন। জন্মসূত্রে ৫২% মানুষ নারী এবং ৪১% পুরুষ হিসেবে তালিকবদ্ধ হয়েছিল।[৩৫][৩৬]
রেইনার এবং গিয়ারহার্ট এর উদাহরণ থেকে আমরা দেখতে পাই, জিনগতভাবে একজন পুরুষকে "ক্লকাল এস্ট্রফির দরুণ থেকে নারী হিসেবে বড় করার ফলাফল কী হতে পারে। জন মানির তৈরি তত্ত্ব অনুযায়ী, ১৪ জন বাচ্চার মাঝে ৫ থেকে ১২ বছর বয়সেই আটজন নিজেদের ছেলে হিসেবে লিঙ্গ পরিচয় দেয়া শুরু করে।[৩৭]
রূপান্তরকামিতা ও রূপান্তুরিতলিঙ্গের পেছনে জীববৈজ্ঞানিক কারণ আছে কি নেই তা জানতে একাধিক কিছু গবেষণা হয়েছে।[৩৮][৩৯] একাধিক গবেষণায় রূপান্তরকামিদের দ্বিরূপী মস্তিষ্কের গঠনে তাদের জন্মসূত্রে প্রাপ্ত যৌন পরিচয় ও তাদের নিজের পছন্দের যৌন পরিচয় নিজদের মাঝে স্থান পরিবর্তন করেছে।[৪০][৪১][৪২] বিশেষত, ট্রান্সনারীর স্ট্রিয়া টারমিনালের বেড নিউক্লিয়াস অথবা বিএসটিসি (ভ্রুণাবস্থায় মস্তিষ্কের বেসাল গ্যাংগিলিয়া এন্ড্রোজেন দ্বারা প্রভাবিত হয়) সিসলিঙ্গের নারীদের মতো তবে পুরুষদের মত নয়। [৪৩][৪৪] একই মস্তিষ্কের গঠনের তারতম্য লক্ষ্যনীয় সমকামি ও বিষমকামি পুরুষদের মাঝে এবং সমকামি ও বিষমকামী নারীদের মাঝে।[৪৫][৪৬] আরেকটি গবেষণায় রূপান্তরকামিতার ক্ষেত্রে খুব সম্ভবত বিশেষ একধরনের জিনগত উপাদান কাজ করছে বলে দেখায়।[৪৭]
গবেষকরা বলেন, একই হরমোন জরায়ুতে যৌনাঙ্গের পার্থক্য গড়ে ওঠার সময় এবং বয়ঃসন্ধির সময় ভিন্নভাবে কাজ করে। নারী হরমোন ও পুরুষ হরমোনে পার্থক্য একজন মানুষের আচরণ এবং বাহ্যিক যৌনাঙ্গের সাথে আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ সম্পর্কহীন হতে পারে। ব্যক্তি তার বিপরীত লিঙ্গের মত আচরণ দেখাতে পারে।[৪৮]
১৯৫৫ সালে জন মানি প্রস্তাব করেন,শিশু শৈশবকালে নারী নাকি পুরুষ দ্বারা বড় হচ্ছে এর উপর লিঙ্গ পরিচয় অনেকাংশেই নির্ভর করে। [৪৯][৫০] তবে তার এই তত্ত্বকে বাতিল করে দেয়া হলেও [৫১] গবেষকেরা এখনো লিঙ্গ পরিচয় গড়ে উঠতে সামাজিক উপাদান নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৬০ থে ১৯৭০ এর সময়ে বাবার অনুপস্থিতি, মায়ের কন্যা কামনা অথবা পিতামাতার বাচ্চাপালনের নিজস্ব ধরন ইত্যাদিকে বিভিন্ন প্রভাবক হিসেবে ধরা হত। সদ্যপ্রাপ্ত গবেষণা অনুসারে পিতা-মাতার মনস্তাত্ত্বিক দিক খুব হাল্কাভাবে হলেও লিঙ্গ পরিচয় গড়ে তুলতে খুব সম্ভবত প্রভাব ফেলে। ২০০৪ সালের একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, "জন্মের পর সামাজিক প্রভাব লিঙ্গ পরিচয় গড়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এমন প্রমানের অভাব আছে।"[৫২] জেন্ডার ডিসফোরিক বাচ্চাদের পিতামাতার হাল্কা বিষন্নতা ছাড়া অন্য কোন মানসিক আচরণগত ইস্যু এখা যায়নি। [৫৩]
প্রমানের অভাব থাকলেও বলা হয়ে থাকে,শিশুর প্রতি পিতামাতার আচরণ শিশুর লিঙ্গ পরিচয়ে ভূমিকা রাখে। [৫৪]
যেসকল পিতামাতা লিঙ্গ পূর্বনির্ধারিত নয় বলে মানেন না, তাদের সন্তানরা খুব তীব্রভাবে লৈঙ্গিক আচরণসমূহ মানে। সম্প্রতিকালের সাহিত্য থেকে দেখা যায়, লৈঙ্গিক আচরণ কিংবা লিঙ্গ পরিচয় খুব একটা তীব্রভাবে দেখানো হয় না। অনেক পিতামাতাই এখন ছেলে-মেয়েদের খেলনা আলাদা করেন না। বেশ কিছু ক্ষেত্রেই পুতুল এখন শুধুমাত্র মেয়েলী খেলনা হিসেবে বিবেচিত হয় না। [৫৫] যাই হোক, এমিলি কেইন দেখিয়েছেন এখনো ছেলে শিশুর পিতামাতারা মেয়েলি খেলনা নিজেদের সন্তানের হাতে তুলে দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। . গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পিতামাতারা ছেলে শিশুদের এমনভাবে বড় করেন যেন তারা কোন রকমের মেয়েলি আচরণ না দেখায়। কেন উল্লেখ করেন, "এক ধরনের নির্দিষ্ট দেয়াল তুলে ছেলে শিশুদের তাদের পিতামাতা বড় করেন যেন তারা শুধুমাত্র পুরুষসুলভ আচরণ দেখায়, মেয়েদের থেকে আলাদা করা, কিংবা মেয়েসুলভ আচরণ বলে হেয় করা ইত্যাদি লিঙ্গ বৈষম্যকে তীব্রভাবে প্রকাশ করে।”
অনেক পিতামাতা আল্ট্রাসাউন্ড টেকনোলজির মাধ্যমে জন্মের আগেই শিশুর লিঙ্গ জেনে যান। ফলে শিশুর একটি নির্দিষ্ট লিঙ্গের নাম, খেলনা এমনকি তার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়ে যায়। একবার শিশুর লিঙ্গ জানা হয়ে গেলেই, বেশিরভাগ শিশুকে তা অনুসারে নারী কিংবা পুরুষরূপে বড় করা হয়। পিতামাতা নিজ সন্তানকে হয় নারী কিংবা পুরুষ হিসেবে লৈঙ্গিক আচরণ অনুসারে বড় করেন।
যদি কোন ব্যক্তিটি গতানুগতিকভাবে লিঙ্গ পরিচয়ে নিজেকে সনাক্ত না করেন তাহলে তার লিঙ্গ পরিচয় একজন ব্যক্তির নিরাপত্তায় প্রভাবে ফেলতে পারে। [৫৬] কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয় তার জন্মসূত্রে পাওয়া যৌন গঠনের (যৌনাঙ্গ এবং অন্যান্য শারিরীক গঠন) চেয়ে আলাদা হয়। ফলে ব্যক্তি যে আচরণ বা পোশাক পরিচ্ছদ পড়ে তা তার সমাজের গতাঙ্গতিক ধারার বাইরে যায়। এদেরকে লিঙ্গ পরিচয়ের বহিঃপ্রকাশকে রূপান্তরিত লিঙ্গ , জেন্ডারকুইয়্যার ইত্যাদি বলে অবহিত করা হয়।[৫৭] এসমস্ত লিঙ্গ পরিচয়ের জন্য নতুন আভিধানিক শব্দ উৎপত্তি লাভ করছে।[৫৮] রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষদের ভাষাজনিত কারণে (যেমনঃসঠিক সর্বনাম) নিজেদের রূপান্তরিত হওয়াকালীন, পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে জীবনে প্রভাব পড়ে। [৫৯]
ব্যক্তি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে যে লিঙ্গের পরিচয়ে নিজেকে পরিচত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তাকেই "লিঙ্গ পরিচয়" বলে। "লিঙ্গ পরিচয়" ও "প্রধান লিঙ্গ পরিচয়" শব্দজোড়া ১৯৬০ সালের কোন এক সময়। [৬০][৬১] সবার প্রথম বর্তমানে প্রচলিত অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছিল। [১][৬২]-এখন পর্যন্ত, একই অর্থে এই শব্দগুলো ব্যবহার হয়।[৪] যদিও কিছু কিছু স্কলার এই টার্ম দিয়ে যৌন অভিমুখিতা এবং যৌন পরিচয় তালিকার গে, লেসবিয়ান এবং উভকামি বর্ননা করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেন।[৬৩]
১৯ শতকের শেষের দিকে, যেসমস্ত নারীরা সামাজিকভাবে প্রচলিত লৈঙ্গিক আচরণ মেনে চলতো না চিকিৎসাবিদ্যায় তাদের "ইনভার্ট" বলা হত। তাদেরকে জ্ঞানপিপাসু এবং শিক্ষানুরাগী বলে চিহ্নিত করা হত এবং "সূচিকর্মে অনাগ্রহী ও অসামর্থ্য" বলে আখ্যা দেয়া হত। ১৯০০ এর মাঝামাঝি সময়ে ডাক্তারেরা এরকম নারী ও শিশুদের উপর "কারেকট থেরাপি" প্রয়োগ শুরু করেন। সামাজিক গতানুগতিক লৈঙ্গিক আচরণ মেনে না চললে ব্যাক্তিকে শাস্তি দেয়া হত এবং জোর পূর্বক তাদের পরিবর্তিত হতে বাধ্য করা হত। এই থেরাপির প্রধান লক্ষ্য ছিল শিশুদের "সঠিক" লৈঙ্গিক আচরণে ফিরিয়ে আনা এবং এতে রূপান্তরিত লিঙ্গের শিশুর সংখ্যা কমে আসতে থাকে।[৬৪]
১৯০৫ সালে, সিগমুন্ড ফ্রয়েড তার "সাইকোসেক্সুয়াল ডেভলপমেন্ট" তত্ত্বে যৌন অভিমুখিতার উপর তিনটি রচনা পেশ করেন। এসব রচনায় প্রমাণ করা হয় যে, মানবশিশুর জননাঙ্গ পরিপূর্ণভাবে গঠনের পূর্বে তাদের যৌনতার প্রকাশ ঘটেনা। তারা ধরেই নেয়, পিতামাতা উভয়ই একই জননাঙ্গ এবং প্রজনন ক্ষমতার অধিকারী। এই ধারণার ভিত্তিতে সিগমুন্ড দাবী করেন, উভকামিতা হচ্ছে আসল যৌন অভিমুখিতা। যা পরবর্তীতে গিয়ে বিভিন্ন প্রভাবে ফ্যালিক স্টেজে গিয়ে বিষমকামিতায় রূপ নেয়। ফ্রয়েডের মতে, এই দশায় শিশুদের মাঝে ঈডীপাস কমপ্লেক্স দেখা দেয়। ফলস্বরূপ সন্তান তার পিতা কিংবা মাতার প্রতি যৌনাকর্ষণ বোধ করে এবং একই লিঙ্গের অভিভাবকের (মেয়ে শিশু হলে মাতা এবং ছেলে শিশু হলে পিতার প্রতি) প্রতি হিংসা ও ঘৃণাবোধ করে। এই অনুভূতির উৎপত্তি সম্পূর্ণভাবে অবচেতন মনে ঘটে থাকে। যা পরবর্টিতে অবচেতনভাবে নিজের পরিবর্তন এবং এবং সচেতনভাবে নিজের পরিচিতিতে প্রভাবে ফেলে।[২৩] ১৯১৩ সালে কার্ল ইয়াং "ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্স" এর প্রস্তাবণা দেন। কার্ল বিশ্বাস করতেন, উভকামিতা মানসিক জীবনের একেবারেই শুরুতেই বিরাজ করে না। তার মতে ফ্রয়েড নারী শিশুর ব্যাপারে যথেষ্ট বর্ননা দেননি। এই পরামর্শ অবশ্য ফ্রয়েড বাতিল করে দিয়েছিলেন। [৬৫]
১৯৫০ থেকে ১৯৬০- এই এক দশকের মনোবিজ্ঞানীরা বাচ্চাদের মাঝে লিঙ্গ গড়ে উঠা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এই গবেষণার অন্যতম লক্ষ্য ছিল সমকামিতা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া। যা সেই আমলে মানসিক সমস্যা বলে বিবেচিত হত। ১৯৫৮ সসালে, ইউসিএলএ মেডিকেল সেন্টারের তত্ত্ববধানে সর্বোপ্রথম লিঙ্গ পরিচয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। আন্তঃলিঙ্গ এবং রূপান্তরিত লিঙ্গদের নিয়ে গবেষণা ছিল এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। রবার্ট স্টলার এই প্রকল্পে থেকে পাওয়া একাধিক ধারণা ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত তার রচিত "যৌনতা এবং লিঙ্গঃ পুরুষত্ব ও নারীত্বের উন্নয়নে" বইয়ে লিপিবদ্ধ করেন। সু্যডেনের স্টকহোমে আন্তর্জাতিক সাইকোএনালাইটিক কংগ্রেসে তিনিই সর্বোপ্রথম "লিঙ্গ পরিচয়" শব্দজোড়ার পরিচয় ঘটান। আচরণীয় সাইকোলজিস্ট, জন মানি তৎকালীন সময়ে প্রচলিত লিঙ্গ পরিচয়ের তত্ত্বের উপর আস্থা রাখতে পারেননি। এই বিষয়ে জন্স হপকিন্স চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিঙ্গ পরিচয় ক্লিনিকে তার "ইন্টারেকশনিস্ট" তত্ত্ব একটি উল্লেখযোগ্য কাজ। এই তত্ত্ব অনুসারে একটি নির্দিষ্ট বয়সে লিঙ্গ পরিচয় তরল এবং আলোচনার বিষয়। তার রচিত "পুরুষ ও নারী এবং ছেলে ও মেয়ে" (১৯৭২) বইটি কলেজের পাঠ্যপুস্তক হিসেবে সমাদৃত হয়। যদিও তার অনেক ধারণায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। [৬৬][৬৭]
১৯৮০ এর শেষের দিকে, জুডিথ বাটলার লিঙ্গ পরিচয়ের উপর নিয়মিত লেকচার লিঙ্গ দেয়া শুরু করেন।১৯৯০ সালে তার রচিত বই "লিঙ্গ সমস্যা" বা "জেন্ডার ট্রাবল" প্রকাশিত হয়। এই বইয়ে তিনি লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে কথা বলেন এবং তর্ক বিতর্কের মাধ্যমে তুলে ধরেন যৌনতা এবং লিঙ্গ পরিচয় উভয়ই ধীরে ধীরে গড়ে উঠে। [৬৮]
২০১৪ সাল থেকে লিঙ্গ অনির্ধারক ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তাধারায় কিছুটা পরিবর্তন আসা শুরু করেছে। চিকিৎসাক্ষেত্রের কিছু সদস্য এমনকি অনেক পিতামাতাও এখন "কথোপকথন থেরাপি"তে বিশ্বাস করছেন না। [৬৯] অন্যদিকে অনেক চিকিৎসকই মনে করেন, লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে নিশ্চিত নয় এমন শিশুদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা উচিৎ। তাদের মতে গতানুগতিক লিঙ্গভিত্তিক খেলনা শিশুদের নিজ নিজ লিঙ্গ পরিচয় গড়ে তুলতে সহায়ক।[৬৪]
রূপান্তরিত লিঙ্গের বলে দাবী করা মানুষেরা প্রায়শঃঈ শল্যচিকিৎসার দ্বারা নিজেদের শারীরিক গঠনের পরিবর্তন আনতে উদ্ধত হন। তারা মনে করেন, নিজেদের শরীরের পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমের তারা নিজেদের শরীরে আরো বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। শারীরিক পরিবর্তন আনার মধ্যে রয়েছে, পুরুষ জননাঙ্গ অপসারণ, টেস্টিকল অথবা স্তন অপসারণ, কৃত্রিম পুরুষ জননাঙ্গের গঠন, অথবা যোনী কিংবা স্তন স্থাপন। অতীতে শুধুমাত্র যেসব বাচ্চারা অনির্ধারিত যৌনাঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করতো, তাদের ক্ষেত্রে এধরনের অপসারণ প্রচলিত থাকলেও এখন তা কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়। কেননা, অনেক শিশুই পরবর্তীতে তাদের জন্মের পরপরেই করে দেয়া এই পরবির্ততিত শারীরিক গঠন নিয়ে সন্তুষ্টিবোধ করেন না। বর্তমানে, প্রাপ্ত বয়স্করা নিজেদের লিঙ্গ পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে লিঙ্গ নির্ধারক শল্যচিকিৎসার দ্বারগ্রস্থ হন। যেন তাদের লিঙ্গ পরিচয় শারীরিক গঠনের সাথে খাপ খায়।[৭০]
জেন্ডার ডিসফোরিয়া (পূর্বে ডিএসএম-এ একে "জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিজর্ডার" বা জিআইডি বলা হত) হচ্ছে সেই সব ব্যক্তিগণের একটি আনুষ্ঠানিক ডায়াগনিস যেখানে সেই ব্যক্তিগণ জন্মের সময় তাদের উপর প্রযুক্ত লিঙ্গ এবং/অথবা তাদের লিঙ্গের সাথে সম্পর্কিত লৈঙ্গিক ভূমিকা নিয়ে উল্লেখযোগ্য ডিসফরিয়ার (অসন্তুষ্টি) অভিজ্ঞতা লাভ করেন:[৭১][৭২] "সাধারণত আইডেন্টিটি ডিজর্ডারের ক্ষেত্রে ব্যক্তির বাহ্যিক লিঙ্গের সাথে লিঙ্গ নিয়ে মস্তিষ্কের কোডিং এর মধ্যে একটি অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়।"[৬০] ডায়াগনস্টিক এন্ড স্ট্যাটিস্টিকাল ম্যানুয়াল অব মেন্টাল ডিজর্ডারস (৩০২.৮৫) এর ৫টি ক্রাইটেরিয়া আছে যেগুলোকে অবশ্যই জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিজর্ডার থাকার ডায়াগনোসিস এর পূর্বে পূর্ণ করতে হবে, এবং এই ডিজর্ডারকে বয়সের ভিত্তিতে আরও কিছু শাখায় বিভক্ত করা হয়, যেমন শিশুদের ক্ষেত্রে জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিজর্ডার (যেখানে একটি শিশু জেন্ডার ডিসফোরিয়ার অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত হয়)।
ডায়াগনস্টিক এন্ড স্ট্যাটিস্টিকাল ম্যানুয়াল অব মেন্টাল ডিজর্ডারসে লিঙ্গ পরিচয় এর ধারণা আসে এর তৃতীয় সংস্করণ, DSM-III (১৯৮০) তে। এখানে লিঙ্গ পরিচয় এর ধারণাটি জেন্ডার ডিসফোরিয়ার দুটো সাইকিয়াট্রিক ডায়াগনোসিস এর আকারে আসে। একটি হল জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিজরডার অব চাইল্ডহুড (GIDC), আরেকটি হল ট্রান্সেক্সুয়ালিজম (কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য)। এই ম্যানুয়ালের ১৯৮৭ সালের পুনরালোচনা, DSM-III-R এ একটি তৃতীয় ডায়গনোসিস যুক্ত করা হয়: জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিজর্ডার অব এডোলেসেন্স এন্ড এডাল্টহুড, ননট্রান্সসেক্সুয়াল টাইপ। পরের রিভিশন, DSM-IV (১৯৯৪) তে আবার এটাকে উঠিয়ে দেয়া হয়, যেখানে GIDC ও ট্রান্সসেক্সুয়ালিজমকে নিয়ে মিলিতভাবে জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিজর্ডার নামক ডায়াগনসিস তৈরি করা হয়।[৭৩] ২০১৩ সালের DSM-5 এ এর নাম জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিজর্ডার থেকে পরিবর্তন করে জেন্ডার ডিসফোরিয়া রাখা হয়, এবং এর সংজ্ঞা নতুন করে প্রদান করা হয়।[৭৪]
২০০৫ সালের একটি একাডেমিক পেপারের লেখক জেন্ডার আইডেন্টিটি প্রবলেমকে মানসিক সমস্যা হিসেবে শ্রেণীভূক্ত করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেন, কেউ কেউ যখন সমকামিতাকে একটি মানসিক সমস্যার শ্রেণী থেকে দূর করছিলেন, তারই ঢিলের বদলে পাঠকেল নীতির কারণে DSM এর পুনরালোচনায় এরকম শ্রেণীকরণ করা হয়েছে। এটি বিতর্কিত থেকে যায়,[৭৩] যদিও আজকের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পেশাদারগণ DSM এর শ্রেণীকরণ অনুসরণ করেন এবং এতে সম্মত হন।
ইয়গিয়াকার্তা নীতিমালা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রয়োগের উপর একটি নথি, যেখানে লিঙ্গ পরিচয়কে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যে, এটি প্রত্যেকটি ব্যক্তির লিঙ্গের গভীরভাবে অনুভূত অন্তর্নিহিত এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যা জন্মের সময় তার লিঙ্গ, দৈহিক অনুভূতি (যেখানে দেহ চিকিৎসাগতভাবে, অস্ত্রপ্রচারের দ্বারা বা অন্য কোনভাবে স্বাধীনভাবে নির্বাচনও করা যেতে পারে) ও লিঙ্গের অন্যান্য অনুভূতি যেমন পোশাক, বক্তব্য, ব্যবহার এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতেও পারে, নাও পারে। নীতি ৩ এ বলা হয়, "প্রত্যেক ব্যক্তির স্ব-সংজ্ঞায়িত [...] লিঙ্গ পরিচয় তার ব্যক্তিত্বের সাথে যুক্ত এবং আত্মনির্ণয়, আত্মসম্মান ও স্বাধীনতার সবচেয়ে মৌলিক বিষয়। কারও লিঙ্গের বৈধ স্বীকৃতির জন্য জোড় করে সেক্স রিএসাইনমেন্ট সারজারি, স্টেরিলাইজেশন বা হরমোন থেরাপির মত চিকিৎসা পদ্ধতি কেউ জোড় করে প্রয়োগ করতে পারবেন না।"[৭৫] নীতি ১৮ তে বলা হয়, "... কোন ব্যক্তির যৌন অভিমুখিতা এবং লিঙ্গ পরিচয়কে কখনও কোন মেডিকেল কন্ডিশন হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না যেগুলোকে চিকিৎসা করা বা দমন করা যায়।"[৭৬] ইয়গিয়াকার্টা নীতিমালার একটি আইনগত টীকায় লেখা হয়, "জন্মের সময় আরোপিত লিঙ্গ পরিচয় থেকে ভিন্ন লিঙ্গ পরিচয়, বা সমাজ কর্তৃক বর্জিত লৈঙ্গিক প্রকাশকে মানসিক সমস্যা হিসেবে দেখা হয়েছে। এর ফলে জেন্ডার-ট্রান্সগ্রেসিভ শিশু-কিশোরকে বিভিন্ন সাইকিয়াট্রিক প্রতিষ্ঠানে আবদ্ধ রাখা হয়েছে, এবং তাদেরকে এই লিঙ্গ পরিচয় থেকে বের করে আনার জন্য বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একটি হল এদেরকে "সুস্থ" করার জন্য ইলেক্ট্রোশক থেরাপি।[৭৭] "ইয়গিয়াকার্টা প্রিন্সিপলস ইন একশন"-এ বলা আছে, "এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, অনেক দেশেই যৌন অভিমুখিতার ভিন্নতার ব্যাপারটিকে আর মানসিক সমস্যা হিসেবে বিবেচনা না করা হলেও, "লিঙ্গ পরিচয়" বা "জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিজর্ডার" এর ভিন্নতাগুলো এখনও মানসিক সমস্যা বলে বিবেচিত হয়।"[৭৮] এই নীতিমালা যৌন অভিমুখিতা এবং লিঙ্গ পরিচয় বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাকে (UN declaration on sexual orientation and gender identity) প্রভাবিত করেছে।
১৯১৫ সালে, লিঙ্গ পরিচয় এর বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের একটি সুপ্রিম কোর্ট কেসের অংশ হয়ে দাঁড়ায়, যা ওবার্গেফেল বনাম হজেস নামে পরিচিত পায়। এই কেসের রায় অনুসারে, বিবাহ আর কেবল নারী আর পুরুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।[৭৯]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.