Loading AI tools
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
লক্ষ্মীপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি মেঘনা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। এ জেলাটি সয়াবিন, নারিকেল এবং সুপারির জন্য বিখ্যাত।
লক্ষ্মীপুর | |
---|---|
জেলা | |
বাংলাদেশে লক্ষ্মীপুর জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৫৭′০″ উত্তর ৯০°৪৯′৩০″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
শহর | |
সদরদপ্তর | লক্ষ্মীপুর |
প্রতিষ্ঠাকাল | ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ |
আসন | ৪টি |
সরকার | |
• জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান | মোঃ শাহজাহান (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
আয়তন | |
• মোট | ১,৪৫৬ বর্গকিমি (৫৬২ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ১৭,২৯,১৮৮ |
• জনঘনত্ব | ১,২০০/বর্গকিমি (৩,১০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫১.৪০% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৩৭০০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ২০ ৫১ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
লক্ষ্মীপুর নামে সর্বপ্রথম থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬০ সালে। এরপর ১৯৭৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ৫নং বাঞ্ছানগর ইউনিয়ন লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। পরে এই পৌরসভাটির বিস্তৃতি ঘটে। রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নিয়ে ১৯৭৯ সালের ১৯ জুলাই লক্ষ্মীপুর মহকুমা এবং একই এলাকা নিয়ে ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় লক্ষ্মীপুর জেলা।[2]
লক্ষ্মীপুর জেলার নামকরণ নিয়ে কয়েকটি মত প্রচলিত রয়েছে।
লক্ষ্মী, হিন্দু ধর্মানুসারে ধন-সম্পদ ও সৌভাগ্যের দেবী (দুর্গা কন্যা ও বিষ্ণু পত্নী) এবং পুর হল শহর বা নগর। এ হিসাবে লক্ষ্মীপুর এর সাধারণ অর্থ দাঁড়ায় সম্পদ সমৃদ্ধ শহর বা সৌভাগ্যের নগরী। ঐতিহাসিক কৈলাশ চন্দ্র সিংহ রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস লিখতে গিয়ে তৎকালীন নোয়াখালীর পরগণা ও মহালগুলোর নাম উল্লেখ করেছেন। এতে দেখা যায়, বাঞ্ছানগর ও সমসেরাবাদ মৌজার পশ্চিমে লক্ষ্মীপুর নামে একটি মৌজা ছিল। আজকের পশ্চিম লক্ষ্মীপুর মৌজাই তৎকালীন লক্ষ্মীপুর মৌজা।
আবার অন্যমতে, সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজা আরাকান পলায়নের সময় ১৬২০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মে ঢাকা ত্যাগ করেন। তিনি ধাপা ও শ্রীপুর হয়ে ৯ মে লক্ষ্মীদাহ পরগনা ত্যাগ করে ভুলুয়া দুর্গের ৮ মাইলের মধ্যে আসেন। ১২ মে ভুলুয়া দুর্গ জয় করতে না পেরে আরাকান চলে যান। সেই লক্ষ্মীদাহ পরগনা থেকে লক্ষ্মীপুর নামকরণ করা হয়েছে বলে কেউ কেউ ধারণ করেন। লক্ষ্মীপুর শহরের পূর্ব পাশে শাহ সুজার নামানুসারে একটি সড়কের নামকরণ করা হয় সুজা বাদশা সড়ক। বিখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সানাউল্লাহ নূরী সুজা বাদশা সড়ক নামে একটি ইতিহাস গ্রন্থও রচনা করেছেন।
১৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে মগ ও ফিরিঙ্গীদের মিলিত বাহিনী ভুলুয়া, ভবানীগঞ্জ ও ইসলামাবাদ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। স্যার যদুনাথ সরকার এ সংক্রান্ত বর্ণনায় লিখেছেন, ইসলামাবাদ চাটগাঁ শহর নয়। ভুলুয়ার পশ্চিমে একটি দুর্গ সমৃদ্ধ শহর। ঐতিহাসিক ড. বোরাহ ইসলামাবাদকে লক্ষ্মীপুর বলে ধারণা করেছেন। এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় যে, তৎকালীন লক্ষ্মীপুর মৌজার অংশ মেঘনা পাড়ের দুর্গ সমৃদ্ধ কামানখোলাই ইসলামাবাদ নামের মগ ও ফিরিঙ্গীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল।
শ্রী সুরেশ চন্দ্রনাথ মুজমদার রাজপুরুষ যোগীবংশ নামক গবেষণামূলক গ্রন্থে লিখেছেন দালাল বাজারের জমিদার রাজা গৌর কিশোর রায় চৌধুরী ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী থেকে রাজা উপাধি পেয়েছেন। তার পূর্বপুরুষরা ১৬২৯ থেকে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে দালাল বাজার আসেন। তার বংশের প্রথম পুরুষের নাম লক্ষ্মী নারায়ণ রায় (বৈষ্ণব) এবং রাজা গৌর কিশোরের স্ত্রীর নাম লক্ষ্মী প্রিয়া। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, লক্ষ্মী নারায়ণ রায় বা লক্ষ্মী প্রিয়ার নাম অনুসারে লক্ষ্মীপুরের নামকরণ করা হয়।[2]
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে লক্ষ্মীপুর ভুলুয়া রাজ্যের অধীন ছিল। মুঘল ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে লক্ষ্মীপুরে একটি সামরিক স্থাপনা ছিল। ষোড়শ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এ এলাকায় প্রচুর পরিমাণে লবণ উৎপন্ন হত এবং বাইরে রপ্তানি হত। লবণের কারণে এখানে লবণ বিপ্লব ঘটে। স্বদেশী আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরবাসী স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করে। এ সময় মহাত্মা গান্ধী এ অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তিনি তখন প্রায়ই কাফিলাতলি আখড়া ও রামগঞ্জের শ্রীরামপুর রাজবাড়ীতে অবস্থান করতেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৬ সালের জুন মাসে লক্ষ্মীপুর সফরে আসেন।[2]
১৯৭১ সালের ৬ জুলাই মুক্তিযোদ্ধারা লক্ষ্মীপুর শহরের রহমতখালি সেতুর কাছে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ৭২ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। ২৫ অক্টোবর সদরের মীরগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকসেনাদের এক সম্মুখ লড়াইয়ে পাকবাহিনীর মেজরসহ ৭০ জন সৈন্য ও ৪১ জন রেঞ্জার নিহত হয়। রামগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর দীঘির পাড়ে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক লড়াই সংঘটিত হয়। এ লড়াইয়ে বহুসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়। পরবর্তীকালে পাকসেনারা ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করে রামগঞ্জ ক্যাম্পে এনে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রামগতি উপজেলার জমিদার হাটের বাঁকে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে কয়েকজন রাজাকারসহ ১৭ জন পাকসেনা নিহত হয়।[3]
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২২°৩০´ থেকে ২৩°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৮´ থেকে ৯০°০১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে লক্ষ্মীপুর জেলার অবস্থান।[3] রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ১৫৭ কিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে চাঁদপুর জেলা, দক্ষিণে ভোলা জেলা ও নোয়াখালী জেলা, পূর্বে নোয়াখালী জেলা, পশ্চিমে মেঘনা নদী, ভোলা জেলা ও বরিশাল জেলা। লক্ষ্মীপুর শহর রহমতখালি নদীর তীরে অবস্থিত।
লক্ষ্মীপুর জেলার মোট আয়তন ১৩৬৭.৫৯ বর্গ কিলোমিটার।[3]
লক্ষ্মীপুর জেলা ৫টি উপজেলা, ৬টি থানা, ৪টি পৌরসভা, ৫৮টি ইউনিয়ন, ৪৪৫টি মৌজা, ৫৩৬টি গ্রাম ও ৪টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
লক্ষ্মীপুর জেলায় মোট ৫টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল:[4]
সংসদীয় আসন | জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[5] | সংসদ সদস্য[6][7][8][9][10] | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|---|
২৭৪ লক্ষ্মীপুর-১ | রামগঞ্জ উপজেলা | আনোয়ার হোসেন খান | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
২৭৫ লক্ষ্মীপুর-২ | রায়পুর উপজেলা এবং লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী, দক্ষিণ হামছাদী, দালাল বাজার, চর রুহিতা, পার্বতীনগর, বশিকপুর, শাকচর, চর রমণীমোহন ও টুমচর ইউনিয়ন | নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
২৭৬ লক্ষ্মীপুর-৩ | লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর পৌরসভা, বাঙ্গাখাঁ, দত্তপাড়া, উত্তর জয়পুর, চন্দ্রগঞ্জ, হাজিরপাড়া, চর শাহী, দিঘলী, মান্দারী, লাহারকান্দি, ভবানীগঞ্জ, কুশাখালী ও তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন | গোলাম ফারুক পিংকু | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
২৭৭ লক্ষ্মীপুর-৪ | কমলনগর উপজেলা এবং রামগতি উপজেলা | আলহাজ্ব মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ আল - মামুন | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী লক্ষ্মীপুর জেলার মোট জনসংখ্যা ১৭,২৯,১৮৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮,৬৬,৮৬৮ জন এবং মহিলা ৮,৬২,৩২০ জন।[1]
ধর্মবিশ্বাস অনুসারে এ জেলার মোট জনসংখ্যার ৯৫.৩১% মুসলিম, ৪.৬৬% হিন্দু এবং ০.০৩% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।[1]
লক্ষ্মীপুর জেলার সাক্ষরতার হার ৬২.০১%।[3] এ জেলায় রয়েছে:[1]
লক্ষ্মীপুর জেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক হল চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক এবং কুমিল্লা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক। সব ধরনের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়। এছাড়া নদী মাতৃক জেলা হওয়ায় নদী পথেও লক্ষ্মীপুরের সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষ ও পণ্য পরিবহন করা হয়।
লক্ষ্মীপুর জেলার প্রধান নদীগুলো হল মেঘনা নদী, ডাকাতিয়া নদী, কাটাখালী নদী, রহমতখালি নদী চন্দনা ও ভুলুয়া নদী।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.