মোল্লা ওমর (পশতু: ملا محمد عمر مجاهد, মোল্লা মোহাম্মদ ওমর মুজাহিদ; আনু. ১৯৫০–১৯৬২[3][4] – ২৩ এপ্রিল ২০১৩), পুরো নাম মোল্লা মোহাম্মদ ওমর। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিশাল অঞ্চল তৎপরতা চালানো প্রধান তালেবানের আধ্যাত্মিক নেতা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের কার্যত প্রধান ছিলেন তিনি। তাকে বলা হতো সরকারের সর্বোচ্চ পরিষদের প্রধান। তালেবান শাসিত ইসলামী আমিরাতে আমিরুল মুমিনিন (বিশ্বাসীদের নেতা) বলে মানা হতো তাকে। পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও তাকে ও তার সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। মনে করা হয়, পাকিস্তানে হামলা ছাড়াও এবং আফগানিস্তানে কারজাই সরকার এবং ন্যাটোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হামলার নেতৃত্ব দিতেন মোল্লা ওমর।[5][6]
মুহাম্মদ ওমর ملا محمد عمر | |
---|---|
আফগানিস্তান সর্বোচ্চ পরিষদ প্রধান | |
কাজের মেয়াদ ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ – ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০১ | |
প্রধানমন্ত্রী | মোহাম্মদ রব্বানি আব্দুল কাদির (ভারপ্রাপ্ত) |
পূর্বসূরী | বুরহানউদ্দিন রব্বানী (President) |
উত্তরসূরী | বুরহানউদ্দিন রব্বানী (President) |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৯৫৯ নদেহ, উরোজগান প্রদেশ, আফগানিস্তান[1][2] |
রাজনৈতিক দল | আফগানিস্তান ইসলামী ও জাতীয় বিপ্লব আন্দোলন তালেবান |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | দারুল উলুম হাক্কানিয়া |
ধর্ম | সুন্নি |
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য | মুজাহেদীন তালেবান |
যুদ্ধ | সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ' আফগানিস্তান যুদ্ধ |
ব্যক্তিগত জীবন
মোল্লা ওমরের সঠিক জন্মতারিখ জানা যায় না। তবে ১৯৫৯ সালের কোনো এক সময় কান্দাহারের নিকটবর্তী শহর নোদেহতে একটি দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম।[7] বড় হয়েছেন কান্দাহার প্রদেশের ছোট্ট গ্রাম মেইওয়ান্দে। তিনি স্থানীয় ঘিলজাইয়ে গোষ্ঠীর একটি অংশ হোতাক উপজাতীর সদস্য।[8] আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী পশতুনেরই একটি শাখা এটি। জন্মের আগেই বাবা মারা যাওয়ায় কমবয়সেই পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নেন মোল্লা ওমর।[9] তিনি আফগানিস্তানের দারুল উলুম হাক্কানি মাদরাসায় পড়াশুনা করেছেন বলেও জানা যায়।[1][2][10]
তালেবান গঠন
মোল্লা ওমর প্রথম অস্ত্র ধরেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে। নেক মোহাম্মদের নেতৃত্বে মুজাহেদিন গ্রুপ হরকাত-ই-ইনকিলাব-ই-ইসলাম এ যোগ দেন। সোভিয়েতদের সমর্থনে ক্ষমতায় থাকা নজিবুল্লাহ সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ করেছেন।[9] যুদ্ধে চারবার আহত হন ওমর। সোভিয়েতবিরোধী আফগানযুদ্ধে পানজোয়াই জেলার সাংসারে এক সংঘর্ষের সময় তিনি এক চোখ হারান। [11] অন্য এক সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে জালালাবাদ যুদ্ধে তিনি চোখ হারান। [12] অথবা ১৯৮৯ Battle of Jalalabad.[13] এরপর যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানের সীমান্ত শহর কুয়েটায় একটি মাদ্রাসাতে শিক্ষকতা করেন ওমর। তখন থেকে তিনি মোল্লা নামে পরিচিত। পরে তিনি করাচিতে বিনুরি মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর সেখানেই প্রথমবারের মতো ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তার, পরে ঘনিষ্টতা।[14] আফগান মুজাহিদিনের অন্য নেতাদের মতো তিনি পশতু ভাষায় কথা বলতেন না, বলতেন আরবিতে। [15] বিখ্যাত মিশরীয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব শেখ আব্দুল্লাহ আজ্জামের একজন বড় ভক্ত তিনি।[16]
তালেবান গঠন
১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিলে দুর্বল নজিবুল্লাহ সরকারের পতন ঘটে ১৯৯২ সালে। তবে এরপরেই আফগানিস্তানজুড়ে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা আর নৈরাজ্য। আফগান মুজাহিদিন বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে যায়। ওই সঙ্কট মুহূর্তে মোল্লা ওমর সিঙ্গেসরে ফিরে আসেন। প্রায় অর্ধশত মাদ্রাসাছাত্র নিয়ে একটি সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলেন। এ দলটিই তালেবান (ছাত্র) নামে পরিচিত। সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ করা হতো আফগানিস্তানের বিভিন্ন মাদ্রাসা এবং শরণার্থী শিবির থেকে। গৃহযুদ্ধের সময় ছড়িয়ে পড়া ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলায় খুব শিগগির দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তালেবান। ১৯৯৪ সালের নভেম্বরে কান্দাহার প্রদেশ এবং পরের বছর সেপ্টেম্বরে হেরাত দখল করে নেয় তালেবান।.[17][18]
আফগানিস্তান ইসলামী আমিরাতের নেতা হয়ে ওঠা
তালেবানের কর্মী-সমর্থক দিন দিন বাড়তে থাকে। আফগানিস্তানের অনেক এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে সমর্থকরা ওমরকে আমির-উল-মুমেনিন (أمير المؤمنين, "বিশ্বাসীদের নেতা") উপাধিতে ভূষিত করে।[19] এরপর ১৯৯৬ সালে তার হাতে কাবুলের পতন ঘটে। ১৯৯৭ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানকে ইসলামি রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। আরব দেশের মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং পাকিস্তান তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।[14] যদিও তখনও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গৃহযুদ্ধ চলছিল। অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ এবং অনাড়ম্বর জীবনযাপনে অভ্যস্ত মোল্লা ওমর ‘৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত সময়ে মাত্র দুইবার কাবুল সফর করেছেন। বেশিরভাগ সময়ই তিনি কান্দাহারে অবস্থান করতেন। ওমরের একটি বিখ্যাত উক্তি এখানে উল্লেখযোগ্য; তিনি বলতেন, ‘সব তালেবানই প্রগতিশীল। দুইটি বিষয়: চরমপন্থা এবং রক্ষণশীলতা। এ দুটি থেকে আমরা মুক্ত। এর ভিত্তিতে আমরা সবাই প্রগতিশীল, মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী।’[20]
আত্মগোপন
আফগানিস্তানে ২০০১ সালের অক্টোবরে ইঙ্গ-মার্কিন যৌথ সামরিক আক্রমণ শুরু হলে মোল্লা ওমর আত্মগোপন করেন। এরপর তার অবস্থান সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হতো, আফগানিস্তান অথবা পাকিস্তানের পশতুন উপজাতি এলাকায় তিনি আত্মগোপন করে আছেন। তার অবস্থা সম্পর্কে তথ্য দাতাকে এক কোটি ডলার পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
আফগানিস্তান আক্রমণের শুরুতেই কান্দাহারে ওমরের বাড়িতে বোমা ফেলা হয়। হামলায় তার সৎপিতা এবং ১০ বছর বয়সী শিশুপুত্র নিহত হয়।[21]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.