উন্মুক্ত উৎস
সফটওয়্যারের ফ্রি ডিস্ট্রিবিউশন ও ফ্রি একসেস সম্পর্কিত দর্শন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ওপেন সোর্স (ইংরেজি: Open-source), বাংলায় উন্মুক্ত উৎস হলো একটি বিকেন্দ্রিক সফটওয়্যার উন্নয়ন মডেল যেটি উন্মুক্ত সহযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করে।[১][২] ওপেন সোর্স সফটওয়্যার উন্নয়নের অন্যতম মূলনীতি হল জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত পণ্য: উৎস কোড, ব্লুপ্রিন্ট এবং ডকুমেন্টেশনের সাথে সাথে একতাবদ্ধভাবে উন্নয়ন। মালিকানাধীন কোডের সীমাবদ্ধতা থেকেই ওপেন সোর্স আন্দোলনের শুরু। এই মডেলটি ওপেন সোর্স এপ্রোপ্রিয়েট প্রযুক্তি,[৩] এবং দ্য ওপেন সোর্স ড্রাগ ডিস্কভারির মত প্রকল্পে ব্যবহৃত হয়।[৪][৫]

একটি ওপেন সোর্স অনুমতিপত্রের মাধ্যমে ওপেন সোর্স সার্বজনীন প্রবেশাধিকার প্রদান করে।[৬]"ওপেন সোর্স" শব্দদ্বয় জনপ্রিয় হওয়ার পূর্বে ডেভলপাররা অনেক শব্দ ব্যবহার করতেন। ইন্টারনেটের কল্যাণে "ওপেন সোর্স" স্থায়িত্ব পায়।
সাধারণত, ওপেন সোর্স বলতে কোন কম্পিউটার প্রোগ্রামকে বুঝায় যার সোর্স কোড সাধারণ মানুষের ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের জন্যে উন্মুক্ত করা থাকে। ওপেন সোর্স কোড তৈরি হয় সমন্বিত শ্রমে, যেখানে প্রোগ্রামার উৎস কোডের উপর্যুপরি উন্নয়ন করে ও সম্প্রদায়ের সাথে ভাগাভাগি করে। একটি সফটওয়্যার লাইসেন্সের নিচে সফটওয়্যার প্রকাশিত হয়। লাইসেন্স টার্মের উপর ভিত্তি করে অন্যরা তারপর তাদের সংস্করণ (ফোর্ক) ডাউনলোড, মোডিফাই, ও কমুনিটিতে প্রকাশ করতে পারে।
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
টেকনিক্যাল তথ্য ভাগাভাগি ইন্টারনেট আর ব্যক্তিগত কম্পিউটারেরও বহু আগে থেকে আছে। উদাহরণস্বরূপ, অটোমোবাইল উন্নয়নের প্রথম দিকে পূঁজিবাদী একাধিপত্যবাদীদের একটি দল ২-সাইকেল গ্যাসোলিন-ইনজিনের স্বত্বাধিকারী ছিলো।[৭] এ স্বত্বাধিকার নিয়ন্ত্রণ করে তারা কার প্রস্তুতকারকদের তাদের চাহিদা পূরণে বাধ্য করে পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে একাধিপত্য চালু করেছিলো।
১৯১১ সালে স্বাধীন গাড়ি প্রস্তুতকারক হেনরি ফোর্ড সেলডেন প্যাটেন্টের একটি চ্যালেঞ্জ জিতে যান। ফলাফলস্বরূপ সেলফন প্যাটেন্ট মূল্যহীন হয়ে পড়ে এবং একটি নতুন সংঘ গঠন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয়, ৯২টি ফোর্ড প্যাটেন্ট ও অন্যান্য কোম্পানির ৫১৫টি প্যাটেন্ট অন্যান্য প্রস্তুতকারকদের সাথে কোন অর্থ (বা মামলা-মোকাদ্দমা) ছাড়া ভাগাভাগি করা হয়।
ওপেন সোর্স কোডের ফ্রি ভাগাভাগির উদাহরণের মধ্যে আইবিএম-এর অপারেটিং সিস্টেম ও অন্যান্য প্রোগ্রামের সোর্স মুক্তি, এবং সফটওয়্যার আদান-প্রদান সহজসাধ্য করতে শেয়ার ব্যবহারকারী গোষ্ঠীর উদাহরণ অন্যতম।[৮] ১৯৬০ এর দশকের শুরুর দিকে ফিডব্যাকে উৎসাহিত করতে আরপানেট রিসার্চসাররা উন্মুক্ত "রিকুয়েস্ট ফর কমেন্টস" প্রক্রিয়া ব্যবহার করে। এটিই ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের জন্ম দেয়।
ইন্টারনেট শুরুর কিছুদিন পরেই ইউইউসিপি(UUCP), ইউজনেট, ইন্টারনেট রিলে চ্যাট (IRC), ও গোফার ব্যবহার করে ইন্টারনেটে সোর্স কোড ভাগাভাগি শুরু হয়। বার্কেলি সফটওয়্যার ডিস্ট্রিবিউশন, উদাহরণস্বরূপ, comp.os.linux এ পোস্টের মাধ্যমে ইউজনেটে বিস্তৃতভাবে বণ্টন করা হয়, যেখানে এর উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়। লিনাক্সও পরে এভাবেই বণ্টিত হয়।
শব্দ হিসেবে ওপেন সোর্স
ফ্রি সফটওয়্যার আন্দোলনের একদল লোক, যারা "ফ্রি সফটওয়্যার" শব্দগুচ্ছের রাজনৈতিক বিষয়সূচি ও নৈতিক দর্শনের বিরোধী ছিলো, "ওপেন সোর্স" শব্দগুচ্ছ ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়। ম[৯] তদুপরি, ফ্রি সফটওয়্যার শব্দগুচ্ছ বাণিজ্যিক দিক দিয়েও নিরুৎসাহিত ছিলো।[১০][১১] এ দলের মধ্যে ক্রিশ্চিয়ান পিটারসন, টড এন্ডারসন, ল্যারি অগাস্টিন, জন হল, স্যাম ওকম্যান, মাইকেল টাইম্যান ও এতিক এস. রেয়ম্যান্ড ছিলেন। পিটারসনই একটি মিটিং এ ওপেন সোর্স সাজেস্ট করেন। [১২]লিনুস তোরভালদস পরেরদিনই তার সমর্থন দেন, পিল হিউজেস "লিনাক্স জার্নাল"-এ তা প্রকাশ করেন।রিচার্ড স্টলম্যান, ফ্রি সফটওয়্যার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা, প্রথমে এটি গ্রহণ করেছেন মনে হলেও, পরবর্তীতে মত পরিবর্তন করেন। [১২][১৩] নেটস্কেপ তার সোর্স কোড নেটস্কেপ পাবলিক লাইসেন্সের অধীনে প্রকাশ করে ও পরবর্তীতে মোজিলা পাবলিক লাইসেন্সের অধীনে।[১৪]
অর্থনীতি
কিছু অর্থনীতিবিদ এ ব্যাপারে একমত যে, ওপেন সোর্স হচ্ছে ইনফরমেশন গুড[১৫] অথবা নলেজ গুড।
প্রয়োগ

ওপেন সোর্স ধারণার প্রচারের সাথে সাথে সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। একটি অংশের প্রবক্তা প্রায়সময়ই অন্য অংশের সম্প্রসারণকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু এরিক রেয়মন্ড ও ওপেন সোর্স আন্দোলনের অন্যান্য প্রবক্তারা সফটওয়্যারের বাইরেও এর প্রয়োগ নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলেছেন।
ওপেন সোর্স আন্দোলন জৈবপ্রযুক্তি গবেষণায় পরিচ্ছন্নতা ও স্বাধীনতা এনেছে। ওপেন সোর্স হার্ডওয়্যার ব্যবস্থারও শুরু হয় পরবর্তীতে।
কম্পিউটার সফটওয়্যার


যেসব সফটওয়্যারের সোর্স কোড জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, যেখানে কেউ কোন অর্থ ছাড়া তা নকল, পরিবর্তন বা পুনঃবিতরণ করতে পারে সেস্পব সফটওয়্যারকে ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার বলে।[১৬] ওপেন সোর্স প্রকল্পের কিছু উদাহরণ হলো:[১৭]
- লিনাক্স (লিনাক্স কার্নেল-ভিত্তিক একগুচ্ছ অপারেটিং সিস্টেম)
- মিডিয়াউইকি (যার উপর উইকিপিডিয়ার ভিত)
- ফায়ারফক্স (জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার)
- লিব্রেঅফিস (অফিস স্যুট)
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ
এরকম একটা ভুল ধারণা আছে যে, ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার তৈরি করে শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবীরা। এটি সত্যি যে অধিকাংশ ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার স্বেচ্ছাসেবীরাই তৈরি করছে, কিন্তু এর অনেক ব্যতিক্রমও আছে। আসলে ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার বাণিজ্যে আয়ের মূল উৎস সফটওয়্যারের বিক্রিলব্ধ অর্থ নয়, বরং সফটওয়্যার সার্ভিস থেকে প্রাপ্ত অর্থ। সফটওয়্যার সার্ভিস বলতে বোঝায় সফটওয়্যারের কাস্টমাইজড সংস্করণ তৈরি, উন্নতকরণ, নির্দেশিকা বিক্রি, প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি। সর্বাধিক সফল ওপেন-সোর্স কোম্পানি সম্ভবত রেডহ্যাট। ওপেন-সোর্স সার্ভিস প্রদানকারী নামীদামী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আই.বি.এম., সান মাইক্রোসিস্টেম্স ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.