মানুষের নাক হলো মুখের সবচেয়ে প্রসারিত অংশ। এটি শ্বাসযন্ত্র ও ঘ্রাণতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ। নাকের হাড়, নাকের কার্টিলেজ এবং নাকের সেপ্টাম দ্বারা নাকের আকৃতি নির্ধারিত হয়। নাকের সেপ্টাম নাকের ছিদ্রগুলোকে পৃথক করে এবং নাকের গহ্বরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে। পুরুষদের নাক গড়ে মহিলাদের নাকের চেয়ে বড় হয়।

দ্রুত তথ্য মানুষের নাক, বিস্তারিত ...
মানুষের নাক
Thumb
মানুষের নাকের দৃশ্য
Thumb
ঘ্রাণের সাথে সম্পর্কিত নাকের এমন অংশগুলোর প্রস্থচ্ছেদের নিচের দৃশ্য দেখানো হয়েছে (ঘ্রাণতন্ত্রের অংশ)
বিস্তারিত
ধমনীস্ফেনোপ্যালাটাইন ধমনী, বৃহৎ প্যালাটাইন ধমনী
শিরাফেসিয়াল শিরা
স্নায়ুবাহ্যিক ন্যাসাল স্নায়ু
শনাক্তকারী
লাতিনnasus
টিএ৯৮A06.1.01.001
A01.1.00.009
টিএ২117
এফএমএFMA:46472
শারীরস্থান পরিভাষা
বন্ধ

নাকের প্রধান কাজ হচ্ছে শ্বাসক্রিয়া সম্পন্ন করা। নাকের মিউকোসা নাকের গহ্বরের দেয়ালে অবস্থান করে এবং প্যারানাসাল সাইনাস শ্বাসের সময় নেওয়া বায়ুকে উষ্ণ এবং আর্দ্র করে নাকের ভিতরে প্রয়োজনীয় কন্ডিশনিং বজায় রাখে। ন্যাসাল কঙ্কা হলো গহ্বরের দেয়ালে অবস্থিত শেলের মতো হাড় যেগুলো এই প্রক্রিয়ায় একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। নাকের মধ্যে নাকের মিউকাস দ্বারা বাতাস ফিল্টার হয় এবং এর ফলে নাকে প্রবেশকৃত অপ্রয়োজনীয় কণাগুলিকে ফুসফুসে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। হাঁচির মাধ্যমে নাক থেকে অবাঞ্ছিত কণাগুলি বের হয়ে যায়। অ্যারোসল হাঁচি প্রক্রিয়াকে বাঁধা দিতে পারে।

নাকের আরেকটি প্রধান কাজ হল ঘ্রাণ এবং গন্ধের অনুভূতি। উপরের নাক গহ্বরের এপিথেলিয়ামে ঘ্রাণের জন্য সংবেদী বিশেষ ঘ্রাণকোষ রয়েছে।

গঠন

বেশ কয়েকটি অস্থি এবং তরুণাস্থি নাকের কাঠামো এবং অভ্যন্তরীণ কাঠামো তৈরি করে। ত্বক, এপিথেলিয়া, শ্লেষ্মা ঝিল্লি, পেশী, স্নায়ু এবং রক্তনালীর মতো নরম টিস্যুও নাকের গঠনে অংশ নেয়। ত্বকে সেবেসিয়াস গ্রন্থি রয়েছে, এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে নাকগ্রন্থি রয়েছে। অস্থি এবং তরুণাস্থি নাকের অভ্যন্তরীণ কাঠামোর জন্য শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করে। বেশ কয়েকটি পেশী রয়েছে যা নাকের নড়াচড়ার সাথে জড়িত। তরুণাস্থি, নাকের পেশী নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নাকে নমনীয়তা দেয় যাতে বায়ুপ্রবাহ পরিবর্তন করা যায়।[1]

অস্থি

Thumb
নাক এবং সেপ্টাল কার্টিলেজের অস্থি
Thumb
মুখের ছাদের গঠনে প্যালাটাইন অস্থির অবস্থান দেখানো হয়েছে যেটি নাকের মেঝে গঠন করে

ম্যাক্সিলা, ফ্রন্টাল অস্থি এবং কয়েকটি ছোট অস্থির সমন্বয়ে নাকের গঠন বর্ণনা করা যায়।[1]

তরুণাস্থি

Thumb
নাকের তরুণাস্থি

নাকের তরুণাস্থিগুলো হলো সেপ্টাল, পার্শ্বীয়, প্রধান অ্যালার এবং ক্ষুদ্র অ্যালার তরুণাস্থি।[2] প্রধান ও ক্ষুদ্র তরুণাস্থিগুলো বৃহত্তর এবং কম অ্যালার তরুণাস্থি নামেও পরিচিত। ভোমার এবং সেপ্টাল তরুণাস্থির মধ্যে অবস্থিত ভোমেরনাসাল তরুণাস্থি নামে তরুণাস্থির একটি সংকীর্ণ স্ট্রিপ রয়েছে।[3]

পেশী

টিস্যু

বাহিরের নাক

অনুনাসিক গহ্বর

Thumb
অনুনাসিক গহ্বরের এনাটমি

প্যারান্যাসাল সাইনাস

Thumb
প্যারান্যাসাল সাইনাস

নাকের আকৃতি

রক্তপ্রবাহ

Thumb
ক্যারোটিড ধমনী

নাকের রক্ত সরবরাহ অপথ্যালমিক, ম্যাক্সিলারি এবং ফেসিয়াল ধমনীর শাখা দ্বারা সম্পন্ন হয়। এগুলো ক্যারোটিড ধমনীর শাখা। এই ধমনীর শাখাগুলো নাকের মিউকাসে এবং নাকের নীচের অংশে প্লেক্সাস গঠন করতে অ্যানাস্টোমোসিস তৈরি করে। সেপ্টাল অঞ্চলে কিসেলবাখের প্লেক্সাস নাক থেকে রক্তপাতের একটি সাধারণ স্থান।[1]

স্নায়ু সরবরাহ

নাক এবং প্যারান্যাসাল সাইনাসে স্নায়ু সরবরাহ সাধারণত ট্রাইজেমিনাল স্নায়ুর দুটি শাখা যথা: অপথ্যালমিক স্নায়ু ও ম্যাক্সিলারি স্নায়ু এবং এদের শাখাগুলো থেকে আসে।[1][4]


শ্বাস ক্রিয়ায় সাহায্য

Thumb
নাকের মাধ্যমে বায়ু উপরের শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে

নাক শ্বাসযন্ত্রের উপরের অংশে শ্বাসনালীর প্রথম অঙ্গ। এর প্রধান শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতা হলো শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় বাতাসের কণাগুলির উষ্ণায়ণ, ময়শ্চারাইজিং এবং ফিল্টারিং। নাকের মিউকাস ফুসফুসে প্রবেশের সময় বড় কণাগুলিকে ফাঁদে ফেলে। প্রশ্বাসবায়ু এবং নিঃশ্বাস বায়ু নাসারন্ধ্রের পথ দিয়েই যায় বা ফিরে আসে।

ঘ্রাণের অনুভূতি গ্ৰহণ

নাসিকা বা নাক আমাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয়, মাথার সামনে দুটি চোখের মাঝে নাসিকা বা নাক অবস্থিত। নাকের বাইরের ছিদ্রকে বহিঃনাসারন্ধ্র (External Nasal opening) বলা হয়। ভেতরের নলাকৃতি অংশের নাম নাসাপথ (Nasal passage)। দুটি নাসাপথ বাইরের দিকে সেপটাম (Septum) প্রাচীর দিয়ে পৃথক থাকে। কিন্তু শেষ অংশে এই বিভেদ প্রাচীর থাকে না। নাসিকা বাইরে তরুণাস্থি দিয়ে গঠিত। নাসাপথ গলবিলের সঙ্গে অন্তঃনাসারন্ধ্র (Internal Nasal opening) দিয়ে যুক্ত থাকে। নাসাপথে ঝিল্লিময় আবরণ দেখা যায়, একে ঘ্রাণ-ঝিল্লি (Olfectory Epithelium) বলে। ঘ্রাণ-ঝিল্লিতে প্রচুর স্নায়ুকোষ বা নিউরন দেখা যায়। এগুলির মুক্তপ্রান্ত নাসাপথে অবস্থান করে। বহিঃনাসারন্ধ্রে সাধারণতঃ রোম থাকে। এগুলি ধূলো-বালি আটকায়। নাসিকা বা নাকের কাজ ঘ্রাণের অনুভূতি গ্রহণ করা। বাতাসে বাহিত হয়ে আসা কোন উদ্বায়ী বস্তু নাসিকায় প্রবেশ করলে তা ঘ্রাণ-ঝিল্লিতে অবস্থিত ঘ্রাণ-কোষ (Olfectory Cells)-গুলিকে উদ্দীপিত করে। এই উদ্দীপনা ঘ্রাণ-স্নায়ু (Olfectory Nerve) মাধ্যমে মস্তিষ্কে গেলে তবেই তার ঘ্রাণ আমরা অনুভব করতে পারি।[5]

ক্লিনিকাল গুরুত্ব

নাকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা অবস্থার মধ্যে একটি হলো নাক থেকে রক্তপাত (এপিট্যাক্সিস)। নাক থেকে রক্তপাতের প্রধান কারণ হলো কিসেলবাখ প্লেক্সাসে আঘাত পাওয়া। এটি হলো সেপ্টামের নীচের সামনের অংশে একটি ভাস্কুলার প্লেক্সাস যা চারটি ধমনীর অ্যানাসটোমোসিসের সাথে জড়িত। নাক থেকে রক্তপাতের আরেকটি কারণ হলো উড্রফের প্লেক্সাসে আঘাত। উড্রফের প্লেক্সাস হলো নাকের সেপ্টামের নিচে মাংসের পিছনের অংশে পড়ে থাকা বড় পাতলা-প্রাচীরযুক্ত একটি শিরাযুক্ত প্লেক্সাস।[6] শিশুদের ক্ষেত্রে নাক হলো শরীরে বহিরাগত পদার্থ প্রবেশের একটি সাধারণ পথ।[7] নাক উন্মুক্ত অঞ্চলগুলির একটি যা ফ্রস্টোবাইট এর জন্য সংবেদনশীল।

আরও দেখুন

আরও পড়ুন

Nestor, James (২০২০)। Breath: The New Science of a Lost Art। Riverhead Books। পৃষ্ঠা ৩০৪। আইএসবিএন 978-0735213616

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.