Loading AI tools
পৃথিবীর মহাসাগরগুলির পানির পিএইচ মান হ্রাস পাবার চলমান ঘটনা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধি (Ocean acidification) বলতে পৃথিবীর আবহমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO
২) গ্যাস শোষণের ফলে পৃথিবীর মহাসাগরগুলির পিএইচ মান ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাওয়ার চলমান ঘটনাটিকে নির্দেশ করা হয়।[1] কার্বন-সমৃদ্ধ জীবাশ্ম জ্বালানির দহন মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধির মূল কারণ। মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধি হল মহাসাগরগুলির উপর জলবায়ু পরিবর্তনঘটিত অনেকগুলি প্রভাবের একটি। সাগরের পানি সাধারণত সামান্য ক্ষারীয় হয়ে থাকে (অর্থাৎ পিএইচ মান ৭-এর বেশি থাকে)। মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধি বলতে মহাসাগরের পানি অম্লীয় (পিএইচ ৭-এর কম) হওয়াকে বোঝায় না, বরং নিরপেক্ষ-পিএইচ মানের (অর্থাৎ পিএইচ=৭) দিকে সরণের ঘটনাটিকে বোঝায়।[2] মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধি এই কারণে উদ্বেগজনক যে এর ফলে কম্বোজ-কবচী জাতীয় খোলসী মাছ এবং ক্যালসিয়াম কার্বনেট দিয়ে তৈরি খোলসবিশিষ্ট সামুদ্রিক জীবসমূহের সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে এবং একই সাথে অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের জন্য এটি শারীরবৃত্তীয়ভাবে টিকে থাকার সামর্থ্যের একটি জীবন-মরণ পরীক্ষায় পরিণত হতে পারে। কেননা ক্যালসিয়াম কার্বনেটের খোলসবিশিষ্ট জীবগুলি উচ্চমাত্রায় সম্পৃক্ত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অম্লীয় পানিতে ঠিকমতো প্রজনন কার্য সম্পাদন করতে পারে না। মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট ও বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রায় ৩০-৪০% সমুদ্র, নদী ও হ্রদগুলিতে দ্রবীভূত হয়ে যায়।[3][4] এই দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইডের কিছু অংশ পানির সাথে বিক্রিয়া করা কার্বনিক অ্যাসিড নামক অম্ল গঠন করে। এভাবে উৎপন্ন কার্বনিক অ্যাসিডের অণুগুলির কিয়দংশ বিশ্লিষ্ট হয়ে একটি বাইকার্বনেট আয়ন ও একটি হাইড্রোজেন আয়ন তৈরি করে, ফলে মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধি পায়। (আরও জানতে H+ আয়ন ঘনমাত্রা দেখুন)।
১৭৫১ থেকে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মহাসাগরের পৃষ্ঠতলের পিএইচ মান আনুমানিক ৮.২৫ থেকে ৮.১৪-এ নেমে এসেছে,[5] যার অর্থ বিশ্বের মহাসাগরগুলিতে H+ আয়নের ঘনমাত্রা প্রায় ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে (লক্ষণীয় যে পিএইচ মাপনীটি একটি লগারিদম-ভিত্তিক মাপনী, সুতরাং পিএইচ মানের ১ একক পরিবর্তন হল H+ আয়নের ঘনমাত্রায় দশ গুণ পরিবর্তনের সমান)।[6][7] অম্লতা বৃদ্ধি সামুদ্রিক জীবগুলির জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফলাফল বয়ে আনতে পারে বলে ধারণা করা হয়। যেমন এর ফলে কিছু কিছু জীবের বিপাকীয় হার ও অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া অবদমিত হয় এবং প্রবাল বিরঞ্জনের (Coral bleaching) মতো ঘটনা ঘটে।[8] মহাসাগরে যে অতিরিক্ত কার্বনিক অ্যাসিড সৃষ্টি হয়, সেগুলির কারণে মুক্ত হাইড্রোজেন আয়নের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং শেষ পরিণামে এর ফলে কার্বনেট আয়নগুলি বাইকার্বনেট আয়নে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে মহাসাগরের ক্ষারতার (যেটি মোটামুটি [HCO3−] + 2[CO32−]-এর সমান) তেমন কোনও পরিবর্তন হয় না, বরং দীর্ঘ মেয়াদে কার্বনেট খনিজের দ্রবীভবনের ফলে ক্ষারতা বৃদ্ধি পেতে পারে।[9] কিন্তু এই প্রক্রিয়ার ফলে বিদ্যমান কার্বনেট আয়নের সংখ্যা হ্রাস পায় বলে প্রবাল ও কিছু প্লাংকটন জাতীয় জীবের জন্য ক্যালসিয়ামীভবন প্রক্রিয়াটি দুরূহ হয়ে ওঠে, ফলে তারা জৈবিকভাবে ক্যালসিয়াম কার্বনেট গঠন করতে পারে না, বা তৈরি করলেও সেগুলি দ্রবীভূত হয়ে যাবার ঝুঁকি থেকে যায়।[10] মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধি চলমান থাকলে ভবিষ্যতে সামুদ্রিক খাদ্য-শৃঙ্খলগুলি হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।[11][12]
প্রাথমিক স্তর গুলির যেমন- ডিম্বাণু/ শুক্রাণু, জাইগট, লার্ভা, ভ্রূণ, ডিম-পোনা,রেণু, জুভেনাইল ইত্যাদি)উপর বেশ প্রভাব ফেলবে কেননা এসকল স্তরে এরা বেশ সংবেদনশীল থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীদের ক্ষেত্রে এটা তাদের-স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও প্রজননকে ক্ষতিগ্রস্ত-করতে পারে। হয়তো প্রাণীর জীবনরক্ষা পাবে কিন্তু তাদের স্বাভাবিক-বংশবৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটার-ফলে প্রাণীর পুনরুৎপাদন হ্রাস পেতে-পারে। সমুদ্রের অম্লতা বৃদ্ধির ফলে-সরাসরি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন-প্রাণী ও উদ্ভিদের তালিকায়-প্রথমদিকে রয়েছে খোলস বিশিষ্ট-প্রাণী, যেমন বিশেষ ধরনের মোলাস্ক (টেরোপড, ওয়েস্টর,মাসেল, ক্ল্যাম), একাইনোডার্ম (শি আর্চিন, স্টার ফিস, ব্রিটল স্টার)জাতীয় প্রাণী এবং কোরাল ও বিশেষ ধরনের খোলস বিশিষ্ট সামুদ্রিক অ্যালজি। কেননা সমুদ্রের অম্লতা-বৃদ্ধির ফলে pH এর মান কমে যাওয়ার-সাথে সাথে পানিতে থাকাকার্বনেট আয়নের (CO 32-) পরিমাণও কমে-যাচ্ছে। এ কার্বনেট আয়ন আবার-উপরোল্লিখিত খোলস বিশিষ্ট-প্রাণীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় কেননা এটা তাদের বাইরের শক্তখোলস ও মূল কাঠামো বা কঙ্কালতৈরিতে মূল ভূমিকা পালন করে।পানিতে কার্বনেট আয়নের স্বল্পতা এ \প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে-প্রাণীর বৃদ্ধি এবং শারীরিক গঠন-প্রক্রিয়াকে মন্থর করে ফেলবে। আতংকের ব্যাপার হল, সমুদ্রের-পানিতে এ কার্বনেট আয়নের পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট মাত্রার নিচে নেমে-গেলে ঐ সকল প্রাণীর শরীরের-ক্যালসিয়াম কার্বনেটের শক্ত-বহিরাবরণ দ্রবীভূত হতে শুরু করবে।ফলস্বরূপ ক্যালসিয়াম কার্বনেটেরখোলস যুক্ত অন্যান্য সকল প্রাণীর সাথে সাথে কোরাল সমূহও ক্ষতিগ্রস্ত হবে জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সটিটিউটে ক্যাথরিনা শিখ ও তার দলের এক গবেষণায় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের প্রেক্ষিতে দেখান যে, “সমুদ্রের পানির অম্লতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ফাইটোপ্লাঙ্কটনরা পূর্বের তুলনায় কম ডাইমিথাইল সালফাইড উৎপন্ন-করছে।""তারা নিজেদের রক্ষার করার জন্যে একটা মেকানিজম অনুসরণ করে "
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.