Loading AI tools
জীববিদ্যা ভিত্তিক প্রযুক্তি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জৈবপ্রযুক্তি বা জীবপ্রযুক্তি হলো বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলগত নীতি অনুসরণ ও প্রয়োগ করে জীবদের ব্যবহার করার মাধ্যমে মানুষের জন্য কল্যাণকর ও ব্যবহারযোগ্য প্রয়োজনীয় মালামাল তৈরির বিশেষ প্রযুক্তি। এটি মূলত জীববিদ্যাভিত্তিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে যখন প্রযুক্তি কৃষি, খাদ্য বিজ্ঞান, এবং ঔষধশিল্পে ব্যবহৃত হয়। ১৯১৯ সালে হাঙ্গেরীয় কৃষি প্রকৌশলী কারোলি এরাকি সর্বপ্রথম জৈবপ্রযুক্তি শব্দটি ব্যবহার করেন।[1]
জাতিসংঘের কনভেনশন অন বায়োলোজিক্যাল ডাইভার্সিটি অনুসারে জৈব প্রযুক্তিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়:[2]
যে কোনো প্রকারের প্রায়োগিক প্রাযুক্তিক কাজ যা জৈবিক ব্যবস্থা, মৃত জৈবিক বস্তু অথবা এর থেকে প্রাপ্ত কোনো অংশকে ব্যবহার করে কোনো দ্রব্য বা পদ্ধতি উৎপন্ন করে বা পরিবর্তন করে যা বিশেষ ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
যদিও কৃষিকাজে জৈবপ্রযুক্তি বহুকাল পূর্বে থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে, তবুও উদ্ভিদের চাষাবাদে এর আধুনিকতম প্রয়োগ দেখা যায়।
নব্যপ্রস্তর যুগের নবোপলীয় বিপ্লবের পর থেকেই কৃষিকে খাদ্য উৎপাদনের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হিসেবে গণ্য করা হয়। আধুনিক যুগের কৃষকেরা শ্রেষ্ঠ বীজ নির্বাচন ও ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ফলন ঘটিয়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণ করছে। যখন শস্য ও জমির পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তখন এমন কিছু জীব এবং তাদের থেকে উৎপন্ন পদার্থের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে, নাইট্রোজেন সংবদ্ধকরণ করে, এবং ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ বা পেস্ট দমন করে। কৃষির ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষক ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন উদ্ভিদের সাথে কোনো উদ্ভিদের প্রজনন ঘটিয়ে উদ্ভিদের জিনে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে জৈবপ্রযুক্তির প্রাথমিক রূপ উন্মোচন করেছেন।
বিয়ারের গাঁজন ও আদিম জৈবপ্রযুক্তির একটি উদাহরণ।[3] এই পদ্ধতিগুলো মেসোপটেমিয়া,মিশর,চিন এবং ভারতে প্রচলিত ছিল এবং পদ্ধতিগুলোর জীববৈজ্ঞানিক মূলনীতিগুলো এখনো একই রয়েছে। ১৮৫৭ সালে লুই পাস্তুরের গাঁজনবিষয়ক কাজের আগে এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু বোঝা না গেলেও এটিই একপ্রকার খাদ্যকে অন্য প্রকার খাদ্যে রূপান্তরকারী জৈবপ্রযুক্তির প্রাথমিক রূপ। গাঁজন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রকার খাদ্যের কার্বোহাইড্রেট ভেঙে অ্যালকোহল উৎপন্ন হয়।
হাজার বছর ধরে মানুষ শস্য এবং প্রাণীর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এই পদ্ধতিতে প্রত্যাশিত উন্নত বৈশিষ্ট্যধারী জীবের মিলনে সৃষ্ট সন্তান একই বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বৃহত্তম ও সর্বাধিক মিষ্টি ভুট্টা উৎপাদন করা হয়েছিল।[4]
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিজ্ঞানীগণ অণুজীব সম্পর্কে অনেক তথ্য লাভ করতে থাকেন এবং পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ১৯১৭ সালে Chaim Weizmann বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে প্রথম বিশুদ্ধ অণুজীব কালচারের প্রয়োগ করেন। তিনি Clostridium acetobutylicum ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে ভুট্টার স্টার্চ প্রক্রিয়াজাত করে অ্যাসিটোন উৎপাদন করেছিলেন যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাজ্যের খুব দরকার ছিল বিস্ফোরক তৈরি করতে।[5]
জৈবপ্রযুক্তি অ্যান্টিবায়োটিকের উন্নতিতেও ব্যবহৃত হয়েছে। অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং ১৯২৮ সালে Penicillium মোল্ড আবিষ্কার করেন। তার কাজ Howard Florey, Ernst Boris Chain এবং Norman Heatley কে পরিচালিত করে পেনিসিলিন উদ্ভাবনের দিকে। ১৯৪০ সাল থেকে পেনিসিলিন মানুষের দেহে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে আসছে।[6]
৪টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তির প্রয়োগ দেখা যায়। এগুলো হচ্ছে
অণুজীব দ্বারা জৈব পদার্থ প্রক্রিয়াজাতে জৈবপ্রযুক্তির প্রয়োগ হয়। আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশনে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহারও জৈবপ্রযুক্তির উদাহরণ। এছাড়া কোনো জিনিসকে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা, বর্জ্য শোধন, কলকারখানা দ্বারা দূষিত এলাকা পরিষ্কার এবং জীবাণু অস্ত্র তৈরিতে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
জৈবপ্রযুক্তির বিভিন্ন শাখাকে শনাক্ত করার জন্য কিছু শব্দ বা পরিভাষা উদ্ভূত হয়েছে। যেমন:-
গোল্ড বায়োটেকনোলজি বা স্বর্ণ জৈবপ্রযুক্তি
এই শাখাটি মূলত বায়োইনফরমেটিকসের উপরে ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে যা জৈবপ্রযুক্তির একটি আন্তঃবিষয়ক ক্ষেত্র যেখানে জীববিজ্ঞানের সমস্যাগুলো দ্রুত সাজানো যায় এবং তথ্য বিশ্লেষণ করা যায় কম্পিউটারের প্রযুক্তি ব্যবহার করে।এ টি অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন- functional genomics, structural genomics and proteomics যা জৈবপ্রযুক্তি ও ওষুধশিল্পের মূল উপাদান তৈরিতে সাহায্য করে।
ব্লু বায়োটেকনোলজি বা নীল জৈবপ্রযুক্তি
মূলত সামুদ্রিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্র। যেমন- জৈব জ্বালানি পরিশোধনের ক্ষেত্রে সালোকসংশ্লেষণকারী মাইক্রো-শৈবাল ব্যবহৃত হয়।
গ্রিন বায়োটেকনোলজি বা সবুজ জৈবপ্রযুক্তি
জৈবপ্রযুক্তির সেই শাখা, যেখানে জৈবপ্রযুক্তি কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। যেমন- মাইক্রোপ্রোপাগেশনের মাধ্যমে একসাথে অনেক উদ্ভিদ উৎপন্ন করা যায়। নির্দিষ্ট পরিবেশে বেড়ে ওঠার জন্য ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ (বাইরে থেকে জিন প্রবেশ করানোর মাধ্যমে উৎপন্ন উদ্ভিদ) তৈরি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী এবং অধিক ফলনশীল উদ্ভিদ উৎপাদন।
রেড বায়োটেকনোলজি বা লাল জৈবপ্রযুক্তি
চিকিৎসা শাস্ত্র এবং ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি। এই শাখার অন্তর্গত কাজগুলো হল টিকা ও অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি, বিভিন্ন থেরাপি, কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি, কৃত্রিম হরমোন তৈরি, স্টেম কোষ প্রভৃতি তৈরি।
হোয়াইট বায়োটেকনোলজি বা সাদা জৈবপ্রযুক্তি
এটিকে শিল্প জৈবপ্রযুক্তিও বলা হয় কারণ এই প্রযুক্তি শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যেমন- বিভিন্ন এনজাইমের সঠিক ব্যবহারের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ তৈরি এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ধ্বংস করা হয়।
ইয়োলো বায়োটেকনোলজি বা হলুদ জৈবপ্রযুক্তি
খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি।যেমন- গাঁজন পদ্ধতিতে ওয়াইন, পনির, বিয়ার প্রভৃতি উৎপাদন। বিভিন্ন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তিও এই শাখার আলোচ্য বিষয়।
গ্রে বা ধূসর জৈবপ্রযুক্তি
পরিবেশে প্রয়োগকৃত জৈবপ্রযুক্তি। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং পরিবেশ দূষণ দূর করাই এর প্রধান লক্ষ্য।
ব্রাউন বা বাদামি জৈবপ্রযুক্তি
শুষ্ক বা মরুভূমি এলাকার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি। এক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বীজ উৎপাদন করা হয় যা কঠিন প্রাকৃতিক সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে সক্ষম।
ভায়োলেট বা বেগুনি জৈবপ্রযুক্তি
এই ক্ষেত্রটি জৈবপ্রযুক্তির আইনি, নৈতিক এবং দার্শনিক দিকগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত।
ডার্ক বা অন্ধকার জৈবপ্রযুক্তি
সন্ত্রাসবাদে জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার, জীবাণু অস্ত্র তৈরি এই শাখার অন্তর্গত।যেমন- অণুজীব বা বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে মানুষ, গবাদি পশু বা ফসলের রোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষতি সাধন করা।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.