মধেশ প্রদেশ[2] (নেপালি: मधेश प्रदेश) নেপালের নতুন সংবিধান অনুসারে গঠিত দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের একটি প্রদেশ। এটি জনসংখ্যার দিক থেকে নেপালের দ্বিতীয় জনবহুল[3] কিন্তু আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে ছোট প্রদেশ। এর পূর্বে কোশি প্রদেশ, উত্তরে বাগমতী প্রদেশ এবং দক্ষিণে ভারত। এর আয়তন প্রায় ৯,৬৬১ কিমি (৩,৭৩০ মা) এবং ২০১১ নেপাল জনগণনা অনুসারে জনসংখ্যা প্রায় ৫৪,০৪,১৪৫ জন। এটি নেপালের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ প্রদেশ।[4]

দ্রুত তথ্য মধেশ প্রদেশ मधेश प्रदेश, দেশ ...
মধেশ প্রদেশ
मधेश प्रदेश
প্রদেশ
Thumb
Thumb
Thumb
Thumb
Thumb
উপর থেকে ঘড়ির কাঁটা অনুসারে
জানকী মন্দির, নেপালের প্রবেশদ্বার বীরগঞ্জ, গঢিমাই মন্দির, কোশী বাঁধ, ছিন্নমস্তা মন্দির এবং কঙ্কালিনী মন্দির
Thumb
সীলমোহর
Thumb
প্রদেশ নং ২ এর অবস্থান
দেশ   নেপাল
প্রতিষ্ঠা২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
রাজধানীজনকপুর (অস্থায়ী)
বৃহত্তম শহরবীরগঞ্জ
জেলা
সরকার
  শাসকপ্রদেশ নং ২ সরকার
  গভর্নরতিলক পরিয়ার[1]
  মুখ্যমন্ত্রীমোহাম্মদ লালবাবু রাউত গদধী (এফএসএফএন)
  উচ্চ আদালতজনকপুর উচ্চ আদালত
  প্রদেশ সভাএককক্ষবিশিষ্ট (১০৭ আসন)
  সংসদীয় আসন৩২
আয়তন
  মোট৯,৬৬১ বর্গকিমি (৩,৭৩০ বর্গমাইল)
এলাকার ক্রম৭ম
জনসংখ্যা (২০১১)
  মোট৫৪,০৪,১৪৫
  ক্রম২য়
  জনঘনত্ব৫৬০/বর্গকিমি (১,৪০০/বর্গমাইল)
  ঘনত্বের ক্রম১ম
বিশেষণমধেশী (দক্ষিণ নেপালি)
সময় অঞ্চলএনএসটি (ইউটিসি+৫:৪৫)
এলাকা কোড০৪১
ভাষাসমূহ১. মৈথিলী (৪৫.৩০%)
২. ভোজপুরী (১৮.৫৮%)
৩. বাজ্জিকা (১৪.৭%)
৪. নেপালি (৬.৬৭%) (নেপালের সংবিধান অনুসারে সরকারি ভাষা)
এইচডিআই০.৪৮৫ (নিম্ন)
সাক্ষর‍তা৪৯.৫৪%
মানব লিঙ্গানুপাত১০১.১৮ /১০০ (২০১১)
ওয়েবসাইটhttp://p2.gov.np
বন্ধ

পূর্বে কোশী নদী এবং কোশী তাপ্পু বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রম প্রদেশ নং ১ ও ২ এর মধ্যে সীমান্ত নির্ধারণ করে। পশ্চিমে চিতবন জাতীয় উদ্যান এবং পারসা জাতীয় উদ্যানের (পূর্বোক্ত বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রম) মধ্যবর্তী সীমানা প্রদেশ নং ২ ও ৩ এর সীমানা নির্ধারণ করে।

পূর্বে সপ্তরী জেলা থেকে পশ্চিমে পারসা জেলা পর্যন্ত আটটি জেলা এই প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত। প্রদেশের অধিকাংশ মানুষ মৈথিলী, ভোজপুরী, বাজ্জিকানেপালি ভাষায় কথা বলে।[4]

প্রদেশের রাজধানী জনকপুর (উপমহানগর, জনকপুরধাম নামেও পরিচিত) একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পর্যটনকেন্দ্র।[5][6] ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে মিথিলা অঞ্চলে রাজত্ব করা বিদেহ সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল জনকপুর।[5]

নেপালের প্রথম পরিকল্পিত নগরপালিকা রাজবিরাজ তরাইয়ের অন্যতম প্রাচীন নগরপালিকা।[7][8] ১৭শ শতকে প্রতিষ্ঠিত রাজদেবী মন্দিরের নামানুসারে এই শহরের নামকরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রদেশের একমাত্র নগরপালিকা বীরগঞ্জ একটি অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র।[9][10][11][12][13]

২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে জনকপুর প্রদেশের অন্তর্বর্তীকালীন রাজধানী ঘোষণা করা হয়।[14] মুহাম্মদ লালবাবু রাউত গদধি প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।[15][16]

ভৌগোলিক অবস্থান

এই অঞ্চলের চারদিকে অবস্থিত:[17]

কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর (সিবিএস) তথ্যানুসারে[18] প্রদেশের আয়তন প্রায় ৯,৬৬১ কিমি (৩,৭৩০ মা) এবং জনসংখ্যা প্রায় ৫৪,০৪,১৪৫ জন। এটি নেপালের দ্বিতীয় জনবহুল প্রদেশ।[3][19]

তরাইয়ের সমভূমিতে প্রদেশটির অবস্থিত। মধ্য তরাই উপত্যকাশিবালিক পর্বতশ্রেণি প্রদেশটির উত্তরে প্রাকৃতিক সীমানা তৈরি করে। প্রদেশের দক্ষিণে ভারতের সাথে আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে। প্রদেশের পূর্বে কোশী নদী প্রদেশ নং ১-এর সাথে প্রাকৃতিক সীমানা তৈরি করে। প্রদেশ নং ২-এ আড়াআড়ি সজ্জিত আটটি জেলা রয়েছে। কোশী, বাগমতী, কমলা, লখনদেই এবং বিষ্ণুমতি প্রদেশের প্রধান নদী।

আরও তথ্য শহর, আগস্ট (°ফা) ...
প্রদেশ নং ২ এর কয়েকটি শহরের গড় তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত[20]
শহর আগস্ট

(°ফা)

আগস্ট

(°সে)

জানুয়ারি

(°ফা)

জানুয়ারি

(°সে)

বার্ষিক

বৃষ্টিপাত (মিমি/ইঞ্চি)

গৌড় ৯১/৭৭.৯ ২৩/৯.১ ৭৩.৪/৪৮.৪ ৩২.৮/২৫.৫ ১৫৯০.২/৬২.৬
সিরাহা ৮৯.৬/৭৬.৩ ৩২/২৪.৬ ৭২.১/৪৭.৩ ২২.৩/৮.৫ ১২৯৩.১/৫০.৯
বীরগঞ্জ ৮৪.৭ ২৯.৩ ৬০.৮ ১৬ ১৮৬২.২/৭৩.৩
জলেশ্বর ৮৪.৪ ২৯.১ ৬১.২ ১৬.২ ১৪৯২.৯/৫৮.৮
মলঙ্গবা ৮৪.৪ ২৯.১ ৬০.৮ ১৬ ১৮১৭.৭/৭১.৬
জনকপুর ৮৪.২ ২৯ ৬০.৮ ১৬ ১৫১৬.৫/৫৯.৭
রাজবিরাজ ৮৩.৩ ২৮.৫ ৬০.৪ ১৫.৮ ১২২৩.৩/৪৮.২
লহান ৮৩.৩ ২৮.৫ ৬০.৩ ১৫.৭ ১২৩১.৪/৪৮.৫
বন্ধ

সরকার ও প্রশাসন

গভর্নর হলেন প্রদেশের প্রধান এবং মুখ্যমন্ত্রী প্রদেশ সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জনকপুর উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারক প্রদেশের বিচার বিভাগের প্রধান।[21] প্রদেশের বর্তমান গভর্নর, মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধান বিচারক হলেন তিলক পরিয়ার, মুহাম্মদ লালবাবু রাউত ও উদয় প্রকাশ চাপাগইন।[22][23] প্রদেশ সভার আসনসংখ্যা ১০৭ এবং নেপালের প্রতিনিধি সভায় প্রদেশ নং ২ থেকে নির্বাচিত সদস্য সংখ্যা ৩২।[24]

প্রদেশ নং ২-এর প্রদেশ সভা অন্যান্য প্রদেশের মতো এককক্ষবিশিষ্ট। প্রতিটি প্রদেশ সভার মেয়াদ পাঁচ বছর। জনকপুরের জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে প্রদেশ সভার অস্থায়ী কার্যালয় অবস্থিত।[25]

প্রশাসনিক উপবিভাগ

প্রদেশ নং ২ আটটি জেলায় বিভক্ত, যা নিচের তালিকায় দেওয়া আছে। প্রতিটি জেলাই জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান ও জেলা প্রশাসক দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রতিটি জেলা আবার নগরপালিকা ও গ্রামপালিকায় বিভক্ত। প্রদেশ নং ২-এ একটি মহানগরপালিকা, তিনটি উপমহানগরপালিকা, ৭৩টি নগরপালিকা এবং ৫৯টি গ্রামপালিকা রয়েছে।[26]

আরও তথ্য #, নাম ...
# নাম নেপালি ভাষা জেলা সদর জনসংখ্যা (২০১১) আয়তন
সপ্তরী জেলা सप्तरी जिल्ला রাজবিরাজ ৬,৩৯,২৮৪ ১,৩৬৩ কিমি²
পর্সা জেলা पर्सा जिल्ला বীরগঞ্জ ৬,০১,০১৭ ১,৩৫৩ কিমি²
সর্লাহী জেলা सर्लाही जिल्ला মলঙ্গবা ৭,৬৯,৭২৯ ১,২৫৯ কিমি²
বারা জেলা बारा जिल्ला কালাইয়া ৬,৮৭,৭০৮ ১,১৯০ কিমি²
সিরাহা জেলা सिराहा जिल्ला সিরাহা ৬,৩৭,৩২৮ ১,১৮৮ কিমি²
ধনুষা জেলা धनुषा जिल्ला জনকপুর ৭,৫৪,৭৭৭ ১,১৮০ km²
রৌতহট জেলা रौतहट जिल्ला গৌড় ৬,৮৬,৭২২ ১,১২৬ কিমি²
মহোত্তরী জেলা महोत्तरी जिल्ला জলেশ্বর ৬,২৭,৫৮০ ১,০০২ কিমি²
বন্ধ

প্রদেশ নং ২ এর লোকধর্ম

  হিন্দুধর্ম (৮৪.৭৫%)
  ইসলাম (১১.৫৫%)
  বৌদ্ধ (৩.০১%)
  কিরাট মুনধুম (০.১১%)
  প্রকৃতি (০.০৯%)
  অন্যান্য ও নাস্তিক (০.৩৫%)

প্রদেশ নং ২ এর ভাষাসমূহ

  মৈথিলী (৪৫.৩০%)
  ভোজপুরী (১৮.৫৮%)
  বাজ্জিকা (১৪.৬৫%)
  নেপালি (৬.৬৭%)
  উর্দু (৫.৮৭%)
  থারু (৩.৭৭%)
  মাগধী (০.৫৭%)
  হিন্দি (০.১৬%)
  অন্যান্য (৪.৪৪%)

অবকাঠামো

পরিবহন

প্রদেশ নং ২-এর ভূখণ্ড প্রতিবন্ধকতা মুক্ত হলেও যথাযথ বিনিয়োগের অভাব ও গাফিলতির কারণে প্রদেশের পরিবহন ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়।

সড়ক পরিবহন

প্রদেশের প্রধান সংযোগকারী সড়ক হলো মহেন্দ্র মহাসড়ক (পূর্ব পশ্চিম মহাসড়ক), যা প্রদেশের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। কিন্তু প্রদেশের প্রধান শহরগুলো এই মহাসড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন রয়ে গেছে। জনকপুর, রাজবিরাজ, বীরগঞ্জ এবং গৌড় মহেন্দ্র মহাসড়ক থেকে যথাক্রমে ২৫, ১০, ২৪ এবং ৪২ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত।[27] অন্যদিকে ত্রিভুবন মহাসড়ক মহেন্দ্র মহাসড়কের মতো প্রদেশের ভেতর দয়ে তেমনভাবে যায় না। তবে এই মহাসড়কটি প্রদেশকে রাজধানী কাঠমান্ডুভারতের সাথে যুক্ত করে বিধায় গুরুত্বপূর্ণ।[28] ত্রিভুবন মহাসড়কের শুরু হয় বীরগঞ্জ থেকে, যা প্রদেশ ও সমগ্র নেপালের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রবেশপথ, এবং এই কারণে বীরগঞ্জ "নেপালের প্রবেশদ্বার" হিসেবে খ্যাত। বীরগঞ্জ থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় হয়। বীরেন্দ্র মহাসড়ক ৪২ কিমি দীর্ঘ, যা মহেন্দ্র মহাসড়কের সাথে রৌতহাট জেলার গৌড় থেকে চন্দ্রনিগহপুরকে সংযুক্ত করে।

  • মহেন্দ্র মহাসড়ক (পূর্ব পশ্চিম মহাসড়ক) - আংশিক
  • পোস্টাল মহাসড়ক - আংশিক
  • ত্রিভুবন মহাসড়ক - আংশিক
  • বীরেন্দ্র মহাসড়ক - আংশিক

রেলপথ

প্রদেশ নং ২-এ নেপাল রেলওয়ের বেশকিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। নেপাল সরকার ১,০২৪ কিমি দীর্ঘ পূর্ব-পশ্চিম মেট্রোরেলের জন্য জনকপুরকে প্রধান স্টেশন করার প্রস্তাব পেশ করেছে। এটি পরবর্তীতে বাণিজ্য ও পর্যটন বিস্তারের জন্য ভারতীয় রেলচীন রেলওয়ের সাথে ভারতচীন পর্যন্ত সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে।[29]

বিমানপথ

প্রদেশ নং ২-এ তিনটি বিমানবন্দর রয়েছে:

  • রাজবিরাজ বিমানবন্দর, রাজবিরাজ
  • জনকপুর বিমানবন্দর, জনকপুর
  • সিমরা বিমানবন্দর, পিপরা সিমরা, বীরগঞ্জ

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.