পত্রোপন্যাস বা পত্র উপন্যাস হলো ধারাবাহিকভাবে লিখিত চিঠি বা পত্রের আকারে লেখা একটি উপন্যাস। সাধারণত চিঠিপত্রের রূপে লেখা হলেও দিনপঞ্জী, পত্রিকার খণ্ডাংশ (কাটিং) এবং অন্যান্য নথিপত্র ব্যবহার করেও লেখা যায়। সম্প্রতি ইলেকট্রনীয় নথি ("ডকুমেন্ট") যেমন যন্ত্রে ধারণকৃত কথোপকথন (রেকর্ডিং), বেতার, ব্লগ এবং বৈদ্যুতিন চিঠি (ই-মেইল) মাধ্যমও ব্যবহৃত হচ্ছে। পত্রোপন্যাসের ইংরেজি পরিভাষা "এপিস্টোলারি নভেল" (Epistolary Novel) গ্রিক শব্দ এপিস্তোলে (ἐπιστολή epistolē, অক্ষর) থেকে লাতিন হয়ে এসেছে ।

Thumb
অফরা বেনের লাভ লেটার্স (১৬৮৪) বইয়ের প্রথমপাতা।

পত্ররূপটি কাহিনীতে অনেকটা বাস্তব একটি ভাব আনে, যেহেতু চিঠিপত্র বাস্তব জীবনের অংশ। সবজান্তা আখ্যানকার কৌশলের আশ্রয় না নিয়েই এভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ দেখানো সম্ভব হয়।

প্রাথমিক রচনাসমূহ

পত্রোপন্যাসের উৎপত্তি সম্পর্কে দুইটি তত্ত্ব বিদ্যমান। প্রথম মতানুসারে, সাধারণ উপন্যাসগুলোতে পাত্রপাত্রীর চিঠির বর্ণনা দেয়া থেকেই এ ধারার শুরু, পরে ক্রমে ক্রমে উপন্যাসের লেখা কমিয়ে কেবল চিঠিতেই তা সীমাবদ্ধ করা হয়।[1] অন্য একটি মত অনুযায়ী একসময় পত্র ও কবিতা প্রভৃতি নিয়ে যে সংকলনগুলো বের হত, সেগুলির মধ্যে কয়েকটি চিঠিকে একত্র করে সাধারণত (প্রায়শই রগরগে) গল্প বানানো হতো।[2] দুটি মতই স্বীকৃত।

বাংলা সাহিত্যে

বাংলা সাহিত্যে পত্রোপন্যাস খুব বেশি লেখা হয়নি। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের পোনুর চিঠি, কাজী নজরুল ইসলামের বাঁধন হারা, প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রিয়তমাসু, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের ক্রৌঞ্চমিথুন ও তরুণকুমার ভাদুড়ীর সন্ধ্যাদীপের শিখা উল্লেখযোগ্য।[3]আহমদ ছফার আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসঅর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরীও মূলত পত্রোপন্যাস। বুদ্ধদেব গুহর অবরোহী ও পত্রোপন্যাস গোত্রের রচনা।

ধরন

বহু ধরনের পত্রোপন্যাস আছে: একপাক্ষিক (কেবল একটি চরিত্রের চিঠি দেয়া, যেমন লেটার্স অফ এ পর্তুগিজ নান এবং দ্য স্প্যারোস অফ ইয়াং ওয়েদার), সংলাপীয় বা দ্বিপাক্ষিক ( দুটি চরিত্রের চিঠি বিনিময়, যেমন লেটার্স অফ ফ্যানি বাটলার্ড), এবং বহপাক্ষিক (তিন বা তারও বেশি লোকের চিঠি বিনিময়, যেমন ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা)। এছাড়াও, ক্লারিসা বা ডেন্জারাস লিয়াজোঁ প্রভৃতি বহুপাক্ষিক পত্রোপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য-কৌশলটি হলো- একইসাথে, তবে আলাদাভাবে, নায়িকা এবং খলনায়কের পত্রবিনিময় দেখানো যা নাটকীয় উত্তেজনা তৈরি করে।

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.