নাজকা রেখাসমূহ
From Wikipedia, the free encyclopedia
নাজকার রেখাসমূহ (ইংরেজি: Nazca Lines) হল দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর নাজকা মরুভূমিতে অঙ্কিত কিছু বিপুলকায় ভূরেখাচিত্র বা জিওগ্লিফ। এই বিশালাকৃতির রেখা বা নকশাগুলো ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো দ্বারা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। পেরুর রাজধানী লিমা থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত প্রায় ৮০ কিলোমিটার লম্বা ও ৫০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত শুষ্ক নাজকা মালভূমি অঞ্চলে মাটির উপর টানা বিশাল বিশাল সরলরেখা এবং তার সমন্বয়ে অঙ্কিত এইসব জ্যামিতিক চিত্র ও নানা পশুপাখির ছবি, বিশেষজ্ঞদের অনুমান মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে অঙ্কিত। এগুলি সৃষ্টির কৃতিত্ব সাধারণত পেরুর প্রাচীন নাজকা সংস্কৃতির মানুষদের দেওয়া হয়ে থাকলেও, বর্তমান গবেষণা ইঙ্গিত করে, এর মধ্যে যেগুলি বেশি পুরনো, সেগুলি নাজকাদের থেকেও বেশি প্রাচীন। সেই হিসেবে অন্তত সেগুলির স্রষ্টা আরও পূর্বতন পারাকাস সংস্কৃতির মানুষ।
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান | |
---|---|
![]() | |
মানদণ্ড | সাংস্কৃতিক: i, iii, iv |
সূত্র | ৭০০ |
তালিকাভুক্তকরণ | ১৯৯৪ (১৮তম সভা) |
নাজকা মালভূমি জুড়ে অঙ্কিত এসব ভূচিত্রগুলো এতো বিশাল যে, আকাশ থেকে না দেখলে সেগুলোর অবয়ব বোঝা যায় না। মরুদ্যানের মাঝ বরাবর চলেছে একটি লম্বা সরলরেখা, যার দুপাশ বেয়ে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর গেছে কিছু সমান্তরাল রেখা। সেখানে রয়েছে বিপুলায়তন ত্রিভূজ, চতুর্ভুজ, আয়তক্ষেত্র, সামন্তরিক -এরকম অনেক জ্যামিতিক নকশা। এছাড়া আছে প্রায় একশো দেড়শো ফুট প্রশস্ত স্থানজুড়ে আঁকা নানারকম জন্তু-জানোয়ার, পাখি, পোকামাকড় ইত্যাদি। জ্যামিতিক নকশাগুলোর যেখানে রেখা টানা হয়েছে, সেগুলো একচুল এদিক-ওদিক না হয়ে চলে গেছে মাইলের পর মাইল অবধি। প্রতিটা রেখায়, নকশায় যেন অতি সূক্ষ্ম হিসাব রক্ষা করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রাণীর নকশার মধ্যে রয়েছে মাকড়সা, পাখি, নয় আঙ্গুলবিশিষ্ট বানর, মাছ এবং সরীসৃপজাতীয় প্রাণীদের বিরাট বিরাট প্রতিকৃতি।[1][2] এমনকি রয়েছে অনেক সামুদ্রিক মাছের (যেমন: তিমি) প্রতিকৃতি। ড্রেসডেনের জার্মান গবেষিকা মারিয়া রাইখা এরকম ৫০টি চিত্র ও ১০০০টিরও বেশি রেখা আবিষ্কার করেছেন, যাদের কোনও কোনওটি এমনকী ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা।[3][4][5]
পেরুর ইনকা সভ্যতারও আগে সেখানকার নাজকা মালভূমিতে গড়ে উঠেছিল একটি কৃষিভিত্তিক সভ্যতা - নাজকা সংস্কৃতি (সময়কাল মোটামুটি ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৮০০ খ্রিষ্টাব্দ)। কিন্তু ভৌগোলিকভাবে মালভূমিটি অতিরিক্ত শুকনো। এই শুষ্কতাকে মার্কিন মহাকাশ গবেষকরা মঙ্গল গ্রহের ক্ষয়ের সমতুল্য বলে উল্লেখ করে থাকেন। আর এই অতিরিক্ত শুষ্কতার জন্যই এই নকশাগুলো এতো দীর্ঘদিন যাবত প্রায় অক্ষত অবস্থায় টিকে আছে।[1]
আবিষ্কারের প্রারম্ভলগ্ন থেকেই এসব ভূচিত্র নিয়ে গবেষক মহলে তৈরি হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মতবিরোধ। এদের মধ্যে কেউ কেউ দাবি করেছেন যে, এগুলো আদিম মহাকাশচারীদের তৈরি করা নিদর্শন, যেখানে তারা অবতরণের জন্য তৈরি করেছিল একটি রানওয়ে। যদিও কোনো প্রথম সারির বাস্তবিক গবেষকই এমন ভূয়োদর্শন যুক্তিতে ঠিক অটল থাকতে পারেননি। অনেক বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে, এই বিপুলায়তন প্রাণীর ও জ্যামিতিক নকশাগুলো মূলত বৃষ্টিকামনা এবং পূর্বসূরিদের আত্মার সাথে যোগাযোগের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে করা হয়েছিল। তাদের ব্যাখ্যা হলো উর্ধ্বস্থিত ঈশ্বরকে দেখানোর জন্যই নাজকার আদিম অধিবাসীরা এমনটা করেছিলেন। এমনকি ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকেও ঐ অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে অনুরূপ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনের রেওয়াজ দেখা যায়।[6]