Loading AI tools
বাঙালি স্বরলিপিকার, সংগীতজ্ঞ ও কবি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর( ১৬ ডিসেম্বর, ১৮৮২– ২১ জুলাই,১৯৩৫), ছিলেন প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ও কবি। রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রধান স্বরলিপিকার এবং রবীন্দ্রনাথের "সকল গানের ভাণ্ডারী"। [1]
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর | |
---|---|
জন্ম | ১৬ ডিসেম্বর,১৮৮২ |
মৃত্যু | ২১ জুলাই,১৯৩৫ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | সঙ্গীতজ্ঞ ও কবি |
দাম্পত্য সঙ্গী | বীণাপাণি দেবী (বি.১৮৯৭) কমলা দেবী(বি.১৯০২) |
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর (২ পৌষ, ১২৮৯ বঙ্গাব্দ) বৃটিশ ভারতের কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৌত্র ও দ্বীপেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র। আট বৎসর বয়সের সময় তার মাতা সুশীলা দেবী প্রয়াত হন। কাশিয়াবাগান স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে প্রথমে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে ও পরে সিটি স্কুলে ভর্তি হন। এখান তিনি এন্ট্রান্স পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে আই.এসসি তে ভর্তি হন। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে আইন পড়তে লণ্ডন যান, কিন্তু পড়া শেষ না করে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রপিতামহ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর সময় দেশে ফিরে আসেন। এই সময়ে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় আইন পড়তে লণ্ডনে গেলেও পরীক্ষা না দিয়ে দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু পাশ্চাত্য সঙ্গীতের তালিম নিয়ে আসেন। ঠাকুর বাড়ির সাঙ্গীতিক পরিমণ্ডলে বড় হওয়ার সূত্রে তার সঙ্গীতে অনুরাগ জন্মেছিল। অনেক গুণীজনের কাছে তালিম পেয়ে হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে দক্ষতা অর্জন করেন। প্রাথমিক ভাবে তিনি পণ্ডিত বিষ্ণু নারায়ণ ভাতখন্ডে প্রদর্শিত পথে স্বরলিপি ব্যবহার করতেন, যদিও তিনি মধ্যে পাশ্চাত্য সঙ্গীতে নৈপুণ্য ছিল। তিনি অত্যন্ত সুকন্ঠ ছিলেন ও গানের স্বরলিপি রচনায় তার স্বাভাবিক দক্ষতা ছিল। রবীন্দ্রনাথের বহু সংগীতের সুর সংযোজন করেন এবং সুর-সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও নিয়েছিলেন। তিনিই রবীন্দ্রনাথের গানকে রবীন্দ্র সংগীত নামে পরিচিতি দেন।
১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগেই ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সঙ্গীত ভবন। তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন মরাঠি গায়ক ভীমরাও শাস্ত্রী, নকুলেশ্বর গোস্বামী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। শুরুতে তিনিই অধ্যক্ষ ছিলেন। [2]
১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে অধ্যক্ষ হন ভীমরাও শাস্ত্রী। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ভীমরাও মহারাষ্ট্রে ফিরে গেলে তিনি পুনরায় অধ্যক্ষ হন। পঁচিশ বৎসর তিনি সঙ্গীতের শিক্ষক ছিলেন।
অমায়িক স্বভাবের দিনেন্দ্রনাথ অভিনয়েও কুশলী ছিলেন। সেকারণে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম ও বিশ্বভারতীর অভিনয় ও সংগীতানুষ্ঠানে তার সহযোগিতা অপরিহার্য ছিল। রবীন্দ্রনাথের বহু নাটকে তিনি অসামান্য অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে "নটীর পূজা" ছবিতে সুরারোপ ও ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত "তাসের দেশ" নৃত্যনাট্যে অংশগ্রহণ করেছেন। দিনেন্দ্রনাথ কবিতা রচনাতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে তার রচিত "বীণ" কাব্যগ্রন্থ বোলপুরের ব্রহ্মচর্যাশ্রম হতে প্রকাশিত হয়েছিল।
রবীন্দ্রসঙ্গীতের সিংহভাগের স্বরলিপিকার ছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ নতুন কোনো গান রচনা করার পরপরই তিনি স্বেচ্ছায় বা রবীন্দ্রনাথের নির্দেশে শিখে নিতেন। এরপর তিনি সে গানের স্বরলিপি করে - সংরক্ষণ করতেন এবং তা অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরকে শিখিয়ে দিতেন। পরবর্তীকালে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ কোনো গানের সুর ভুলে গেলে - তিনি দিনেন্দ্রনাথের স্মরণাপন্ন হতেন। রবীন্দ্রনাথ তার “ফাল্গুনী”নাটকের উৎসর্গপত্রে তাঁকে — সেই বালকদলের সকল নাটের কাণ্ডারী, আমার সকল গানের ভাণ্ডারী আখ্যায় অভিহিত করেছেন। [3]
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরবর্তীতে মনোমালিন্য হলে তিনি ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতন পরিত্যাগ করে কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে জুলাই ( ৫ ই শ্রাবণ, ১৩৪২ বঙ্গাব্দে) কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু সংবাদ আশ্রমে পৌঁছালে স্মরণসভায় রবীন্দ্রনাথ যে-ভাষণ দেন, সেটি 'দিনেন্দ্রনাথ' শীর্ষক নামে "প্রবাসী" -র ভাদ্র সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। তার পত্নী কমলা দেবী ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে দিনেন্দ্রনাথের রচনা সংকলিত করে 'দিনেন্দ্র রচনাবলী' প্রকাশ করেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.