Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো (তিব্বতি: ཐུབ་བསྟན་རྒྱ་མཚོ་, ওয়াইলি: thub bstan rgya mtsho), (১৮৭৬ - ১৭ই ডিসেম্বর, ১৯৩৩) তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের অন্যতম প্রধান ধর্মসম্প্রদায় দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের ত্রয়োদশ দলাই লামা ছিলেন। তিনি একাধারে একজন সুদক্ষ রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিদীপ্ত সমাজ সংস্কারক ছিলেন, যিনি বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিব্বতকে আধুনিকীকরণের পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতের গ্লাং-ম্দুন (ওয়াইলি: glang mdun) নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল কুন-দ্গা'-রিন-ছেন (ওয়াইলি: kun dga' rin chen) এবং মাতার নাম ছিল ব্লো-ব্জাং-স্গ্রোল-মা (ওয়াইলি: blo bzang sgrol ma)।[1] দ্বাদশ দলাই লামার মৃত্যুর পর তৎকালীন তিব্বতের রাজপ্রতিনিধি ঙ্গাগ-দ্বাং-দ্পাল-ল্দান-ছোস-ক্যি-র্গ্যাল-ম্ত্শান (ওয়াইলি: ngag dbang dpal ldan chos kyi rgyal mtshan) নামক দশম র্তা-ত্শাগ-র্জে-দ্রুং উপাধিধারী বৌদ্ধ লামার নির্দেশে ম্খান-জুর-ব্লো-ব্জাং-দার-র্গ্যাস (ওয়াইলি: mkhan zur blo bzang dar rgyas) নামক গ্যুতো তন্ত্র মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান দ্বাদশ দলাই লামার পুনর্জন্ম চিহ্নিতকরণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোকে পরবর্তী দলাই লামা হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং চিং সম্রাট গুয়াংজু (光緒) এই চিহ্নিতকরণ প্ররিয়াকে অনুমোদন করেন। একশত তিব্বতী সৈন্য ও বৌদ্ধ ভিক্ষু নবচিহ্নিত দলাই লামাকে সপরিবারে লাসা শহর নিয়ে যান, যেখানে অষ্টম পাঞ্চেন লামা তার নামকরণ করেন ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো-'জিগ্স-ব্রাল-দ্বাং-ফ্যুগ-ফ্যোগ্স-লাস-র্নাম্স-র্গ্যাল-দ্পাল-ব্জাং-পো (ওয়াইলি: ngag dbang blo bzang thub bstan rgya mtsho 'jigs bral dbang phyug phyogs las rnams rgyal dpal bzang po)। তার পিতাকে চিং সম্রাট গোং (公) উপাধি প্রদান করেন এবং তার পরিবারকে অভিজাত পরিবারের মর্যাদা প্রদান করে য়াব-ব্ঝিস-গ্লাং-ম্দুন (ওয়াইলি: yab bzhis glang mdun) নাম দেওয়া হয়। ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ১লা আগস্ট থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ত্রয়োদশ দলাই লামা হিসেবে অধিষ্ঠিত করা হয়। এই সময় তিব্বতের রাজপ্রতিনিধি ঙ্গাগ-দ্বাং-দ্পাল-ল্দান-ছোস-ক্যি-র্গ্যাল-ম্ত্শান এবং ব্যাম্স-পা-র্গ্যা-ম্ত্শো (ওয়াইলি: byams pa rgya mtsho) নামক তৃতীয় ফুর-ল্চোগ (ওয়াইলি: phur lcog) উপাধিধারী বৌদ্ধ লামা তার উল্লেখযোগ্য শিক্ষক ছিলেন।[2]
কুড়ি বছর বয়স পর্যন্ত থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো ধর্মীয় শিক্ষালাভেই অধিক মনোযোগ দেন। ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয় ফুর-ল্চোগ ব্যাম্স-পা-র্গ্যা-ম্ত্শো তাকে লাসা শহরের জোখাং মন্দিরে ভিক্ষুর শপথ প্রদান করেন। যদিও থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে চাইছিলেন না, তবুও এই বছরে ত্শোংস-'দু-র্গ্যাস-'দ্জোম (ওয়াইলি: tshongs 'du rgyas 'dzom) বা তিব্বত সরকারের জাতীয় সভা আহ্বান করে দলাই লামাকে তিব্বতের রাজনৈতিক ক্ষমতাগ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। এর ফলশ্রুতি হিসেবে পোতালা প্রাসাদে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোকে তিব্বতের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়। ক্ষমতালাভের প্রথম দুই বছর তার শাসন শান্তিপূর্ণ ছিল, কিন্তু ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে লু চুয়ানলিন (鹿傳霖) নামক সিচুয়ান অঞ্চলের চীনা শাসক তিব্বতের শাসনাধীন ন্যাগ-রোং অঞ্চল অধিকারের উদ্দেশ্যে একটি সামরিক অভিযান প্রেরণ করেন ও ঝৌ ওয়ানশুন (周萬順) নামক তার এক সেনাপতি এই অঞ্চল অধিকার করে নেন। থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো চিং সম্রাট গুয়াংজুর নিকট শেস-রাব-ছোস-'ফেলের (ওয়াইলি: shes rab chos 'phel) নেতৃত্বে কলকাতা হয়ে সমুদ্রপথে একটি গোপণ প্রতিনিধিদল পাঠান। এই প্রতিনিধিদলের মধ্যস্থতায় গুয়াংজু ন্যাগ-রোং অঞ্চল থেকে চীনা সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন ও এই অঞ্চলের ওপর তিব্বতের শাসন মেনে নেন। তিব্বতের শাসনকর্তা হিসেবে এটি ছিল থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোর অন্যতম প্রধান কূটনৈতিক সাফল্য। ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাম্স-পা-র্গ্যা-ম্ত্শোর নির্দেশে দ্গে-ব্শেস-ল্হা-রাম্স-পা (ওয়াইলি: dge bshes lha rams pa) উপাধি লাভের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন এবং তিব্বতের ইতিহাসে প্রথম দলাই লামা হিসেবে এই উপাধি লাভ করেন।[2]
ক্ষমতালাভের কয়েক বছর পরেই ত্রয়োদশ দলাই লামার ক্ষুধামান্দ্য ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। এই অসুস্থতার কারণ হিসেবে অলৌকিক মন্ত্রপূত জুতোর একটি কাহিনী প্রচলিত রয়েছে, যার পরিণতিতে একজন উচ্চপদস্থ লামা সহ বেশ কিছু ব্যক্তি গ্রেপ্তার হন। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে ত্রয়োদশ দলাই লামা লক্ষ্য করেন যে, তার শিক্ষক লাস-রাব-গ্লিং-পা দ্বারা উপহার হিসেবে প্রদত্ত একজোড়া জুতো পরে থাকার কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। এই জুতোজোড়া পরীক্ষা করে দেখা যায়, যে তার শুকতলার ভেতরে একটি ঘাতক মন্ত্র লুকোনো রয়েছে। লাস-রাব-গ্লিং-পাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি নিজেকে নিরপরাধ ঘোষণা করে বলেন যে এই জুতো পড়লে তার নিজের নাক থেকেও রক্তপাত। তিনি বলেন যে, ন্যাগ-রোং অঞ্চলের একজন জাদুকরী ক্ষমতা সম্পন্ন লামা তাকে এই জুতোজোড়া উপহার দিয়েছিলেন। সেই লামা তদন্তে স্বীকার করে যাবতীয় দোষ প্রাক্তন রাজপ্রতিনিধি নবম দে-মো ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-'ফ্রিন-লাস-রাব-র্গ্যাসের ওপর চাপিয়ে দেন। ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-'ফ্রিন-লাস-রাব-র্গ্যাস ও তার পরিবারকে তিব্বত সরকার গ্রেপ্তার করেন ও কারাগারেই তাদের মৃত্যু ঘটে। তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং বেশ কয়েক বছর পরবর্তী পুনর্জন্ম চিহ্নিতকরণ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। যদিও গোল্ডস্টেইনের মতে ত্রয়োদশ দলাই লামাকে সরিয়ে ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-'ফ্রিন-লাস-রাব-র্গ্যাস এই হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন[3], কিন্তু বেশ কয়েকজন ঐতিহাসিক মনে করেন যে, ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-'ফ্রিন-লাস-রাব-র্গ্যাসের শক্রুরা তার ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে তাকে ফাঁসিয়েছিলেন। ত্রয়োদশ দলাই লামা পরবর্তীকালে চার্লস বেলকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন যে ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-'ফ্রিন-লাস-রাব-র্গ্যাস দোষী ছিলেন বলেই তার বিশ্বাস।[4]
দলাই লামা হিসেবে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোর সময়কালের শুরুর দিনগুলো থেকে তিব্বতে ব্রিটিশ অভিযানের সম্ভাবনা তৈরী হয়ে ছিল। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে চিং সরকারের নিকট হতে ব্রিটিশরা লাসা শহরে প্রতিনিধিদল পাঠানোর অনুমতি লাভ করেন। কোলম্যান ম্যাকুলের নেতৃত্বে একটি ব্রিটিশ সামরিক প্রতিনিধিদল সিক্কিম ও তিব্বতের সীমান্তে উপস্তিত হলে তিব্বতীরা তাদের তিব্বত প্রবেশে অনুমতি দিতে অস্বীকার করলে তারা ফিরে যান। ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশদের সামরিক অভিযানের সম্ভাবনায় সন্দিগ্ধ হয়ে তিব্বত সরকার তাদের সীমান্ত প্রতিরক্ষার জন্য তিব্বত-সিক্কিম সীমান্তে সেনা পাঠালে ব্রিটিশদের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ শুরু হয় এবং এই যুদ্ধে সামরিক ভাবে উন্নত ব্রিটিশ বাহিনীর নিকট তাদের পরাজয় ঘটে। এই যুদ্ধের ফলশ্রুতি হিসেবে দার্জিলিং শহরে ব্রিটিশ সরকার ও চিং সরকারের মধ্যে তিব্বত ও সিক্কিম বিষয়ক ইঙ্গ-চীনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে ব্রিটিশরা তিব্বতে ব্যবসা করার অধিকার লাভ করে এবং তিব্বত ও সিক্কিমের মধ্যে সীমান্ত নির্দিষ্ট করা হয়।[5]:৫০-৬১ তিব্বতীদের বাদ দিয়ে চীনা ও ব্রিটিশদের মধ্যেকার এই চুক্তি হওয়ায় তিব্বতীরা তা মেনে নেননি।
১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে সিক্কিম ও তিব্বতের ব্যবসায়ীদের নিকট হতে ব্রিটিশরা জানতে পারেন যে লাসা শহরে বেশ কয়েকজন রুশ সামরিক উপদেষ্টা রয়েছেন এবং ত্রয়োদশ দলাই লামা ও জারের মধ্যে একটি গোপণ আঁতাত তৈরী হয়েছে। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা রুশ পত্রিকাগুলি থেকে জানতে পারে যে লাসা শহরে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে যাওয়া আগভান দোর্জিয়েভ নামক রুশ বৌদ্ধ ভিক্ষু ত্রয়োদশ দলাই লামার বার্তা নিয়ে জার দ্বিতীয় নিকোলাসের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এই বার্তায় তিব্বত সরকারের পক্ষ থেকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রুশদের সমর্থনের অনুরোধ জানানো হয়। এই সমস্ত ঘটনা তৎকালীন ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড কার্জন ব্রিটিশ ভারতের সুরক্ষার ক্ষেত্রে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করেন। যদিও রুশদের পক্ষ থেকে জানান হয় যে, তারা তিব্বতের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না, কিন্তু ব্রিটিশরা এই ব্যাপারে সন্দিগ্ধ থাকেন। প্রথমে ব্রিটিশরা চিং সম্রাটদের নিকট তিব্বতকে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবী জানায়, কিন্তু ত্রয়োদশ দলাই লামা সরাসরি তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে অস্বীকার করলে তারা বুঝতে পারেন যে, তিব্বতীদের ওপর চীনাদের কোন রকম কর্তৃত্বের অস্তিত্ব নেই। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লর্ড কার্জন তিব্বতে সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।[6] ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে কর্ণেল ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ডের নেতৃত্বে আট হাজার সেনার একটি বাহিনী সিক্কিম সীমান্ত থেকে তিব্বত আক্রমণ করে এবং লড়াইয়ে প্রায় এক হাজার তিব্বতী সেনা মৃত্যুবরণ করেন। এই বছর জুলাই মাসে ব্রিটিশ সেনা লাসা শহর থেকে একদিনের দুরত্বে অবস্থিত ল্চাগস-জাম (ওয়াইলি: lcags zam) নামক স্থানে পৌছলে ব্লো-ব্জাং-র্গ্যাল-ম্ত্শান নামক ছিয়াশিতম দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পাকে তিব্বতের রাজপ্রতিনিধি নিযুক্ত করে বিশ্বস্ত কয়েকজন সঙ্গীর সঙ্গে লাসা থেকে পলায়ন করেন। তারা র্বা-স্গ্রেং বৌদ্ধবিহার পৌছলে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো একজন ধনী মঙ্গোল ব্যবসায়ীর বেশে উত্তর তিব্বত হয়ে মঙ্গোলিয়া যাত্রা করে রাজধানী উর্গা নগরীতে পৌঁছন। দলাই লামা তিব্বত ছেড়ে পালিয়ে গেলে চিং রাজবংশ সমগ্র তিব্বত, নেপাল ও ভূটানের ওপর নিজের অধিকারের দাবী জানায়।[7] ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই সেপ্টেম্বর ব্রিটিশদের সঙ্গে তিব্বতীদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়[8] এবং ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ও চীনাদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে ব্রিটিশরা চিং রাজসভা থেকে বাৎসরিক অর্থের বিনিময়ে তিব্বত অধিগ্রহণ না করার এবং তিব্বতের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। অপর পক্ষে চীন তিব্বতের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অন্য কোন বিদেশী শক্তির হস্তক্ষপের অনুমতি না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।[9][10]
উর্গা শহরে পৌঁছে ত্রয়োদশ দলাই লামা আগভান দোর্জিয়েভকে দ্বিতীয় নিকোলাসের নিকট প্রেরণ করেন ও উর্গা নগরীর রুশ প্রতিনিধি শিশমার্যোভের নিকট চীন ও ইংরেজদের হাত থেকে তিব্বতকে রক্ষা করার দাবী জানান। এই নগরীতে বসবাস কালে মঙ্গোলিয়ার ধর্মীয় প্রধান ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-ছোস-ক্যি-ন্যি-মা-বস্তান-'দ্জিন-দ্বাং-ফ্যুগ (ওয়াইলি: ngag dbang blo bzang chos kyi nyi ma bstan 'dzin dbang phyug) নামক অষ্টম র্জে-ব্ত্সুন-দাম-পা-হো-থোগ-থু (ওয়াইলি: rje btsun dam pa ho thog thu) উপাধিধারী লামার সঙ্গে তার বিবাদের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যার ফলে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোর মঙ্গোলিয়ায় বসবাস কষ্টকর হয়ে ওঠে। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়া ও ব্রিটিশরা একটি চুক্তির মাধ্যমে তিব্বতের ব্যাপারের হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্তে আসলে দলাই লামা মঙ্গোলিয়া থেকে তিব্বতের দিকে যাত্রা করে স্কু-'বুম বৌদ্ধবিহারে বসবাস শুরু করেন। এই সময় লাসা থেকে একটি প্রতিনিধিদল এই বিহারে তাকে লাসা ফিরে যেতে অনুরোধ করলে তিনি ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের গ্রীষ্মকালে লাসা না গিয়ে বেজিং যাত্রা করেন।[2]
বেজিং যাত্রার পথে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো উটাই শান নামক বৌদ্ধ তীর্থস্থানে পৌছলে চীনে মার্কিন প্রতিনিধি উইলিয়াম উডভিল রকহিলের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। রকহিল তাকে একজন অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত, মুক্তমনা, দয়ালু, সদাহাস্য ও বন্ধুসুলভ যুবা বলে বর্ণনা করেন।[n 1] ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেজিং শহরে পৌছলে একজন স্বাধীন সার্বভৌম জাতির শাসক হিসেবে তাকে স্বাগত জানানো হয়।[n 2] বেজিং শহরে বসবাস কালে তিনি জাপানী সামরিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন, যার ফলশ্রুতি হিসেবে পরবর্তীকালে ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে জাপান তিব্বতী সেনাদের আধুনিকীকরণের উদ্দেশ্যে সামরিক উপদেষ্টা প্রেরণ করেন। থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো চীনের নিম্ন আধিকারিকদের সঙ্গে সাক্ষাতে অস্বীকার করেন ও একজন স্বাধীন জাতির শাসক হসেবে সরাসরি চিং সাম্রাজ্ঞী চিজির (慈禧) সঙ্গে সাক্ষাতের দাবী জানান। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই অক্টোবর তিনি চিং সম্রাট জুয়ানটোং (宣統) এবং সাম্রাজ্ঞী চিজির সঙ্গে সাক্ষাত করেন। থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো সম্রাটের নি ঝুঁকে সম্মান জানাতে অস্বীকার করেন।[12]
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে পাঁচ বছর তিব্বতের বাইরে কাটানোর পর থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো লাসা ফিরে আসেন ও তাকে পুনরায় তিব্বতের শাসনক্ষমতা প্রদান করা হয়। এই সময় মাঞ্চু সেনাপতি ঝাও এর্ফেং (趙爾豊) চিং সম্রাটের নিকট আবেদন করে নিজেকে তিব্বতের আম্বান নিযুক্ত করতে এবং তার সেনাবাহিনী তিব্বত নিয়ে যাওয়ার অনুমতিলাভ করতে সমর্থ হন। থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোর ধর্মীয় কর্তৃত্ব সম্বন্ধে বলা হলেও ঝাও তার রাজনৈতিক কর্তৃত্বের ব্যাপারে নীরব থাকেন। তিব্বতীরা এই পদক্ষেপকে দলাই লামার শাসনকে হঠিয়ে দেওয়ার একটি ষড়যন্ত্র বলে মনে করে চিং সম্রাটের নিকট ব্যর্থ আবেদন করেন। এই সময় তিব্বতী সেনাবাহিনীরও কোন অস্তিত্ব ছিল না, যার ফলে তারা ঝাওয়ের সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে অসমর্থ হন। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ঝাও প্রায় বিনা প্রতিরোধে লাসা অধিকার করেন। য়াব-গ্ঝিস-ফুন-খাং (ওয়াইলি: yab gzhis phun khang) নামক নবগঠিত তিব্বত বিদেশ দপ্তরের প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার দুই আধিকারিককে হত্যা করা হয়। থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কায় ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-ব্স্তান-পা'ই-র্গ্যাল-ম্ত্শান (ওয়াইলি: ngag dbang blo bzang bstan pa'i rgyal mtshan) নামক তৃতীয় ত্শে-স্মোন-গ্লিং রিন-পো-ছে (ওয়াইলি: tshe smon gling rin po che) উপাধিধারী লামাকে তিব্বতের রাজপ্রতিনিধি নিযুক্ত করে লাসা ছেড়ে ভারত পালিয়ে যান।[13]
এই সময় ব্রিটিশ সরকার থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোর দেখাশোনার জন্য চার্লস বেল নামক সিক্কিমের একজন তিব্বতী ভাষায় পারদর্শী ব্রিটিশ আধিকারিককে দায়িত্ব প্রদান করেন। বেল তার বর্ণনায় থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শোকে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু অপেক্ষা একজন চৌখস প্রশাসক হিসেবে উল্লেখ করেন।[n 3] থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো ঝাওয়ের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের নিকট সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করেন কিন্তু রুশদের সঙ্গে চুক্তির ফলে ব্রিটিশরা তিব্বতে হস্তক্ষেপ করতে রাজী ছিল না। অপরদিকে চীনারা তিব্বতী মন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করে ও চীনা সৈন্যরা বৌদ্ধবিহারগুলি লুঠপাট শুরু করে। এই পরিস্থিতে তিব্বতীরা চীনাদের পরিবর্তে ব্রিটিশদের দিকে ঝুঁকে পড়বে এই আশঙ্কায় ঝাওকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই সময় তিব্বতীরা চীনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিলে ত্শা-রোং-জ্লা-ব্জাং-দ্গ্রা'-'দুল (ওয়াইলি: tsha rong zla bzang dgra' 'dul) নামক তিব্বতের অন্যতম বিখ্যাত এক কূটনীতিক ও সামরিক অধিকর্তাকে এই বিদ্রোহ সংগঠিত করার জন্য পাঠানো হয়। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে চিং রাজবংশের পতন হলে নতুন সরকার তিব্বতের দিকে নজর দিতে ব্যর্থ হন।[14] এই সময় তিব্বতীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে পুনরায় তিব্বতের অধিকার কেড়ে নিতে সক্ষম হন। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে ত্রয়োদশ দলাই লামা ভারত থেকে যাত্রা করে এক সপ্তাহ পরে ব্সাম-স্দিংস বৌদ্ধবিহারে (ওয়াইলি: bsam sdings dgon) পৌঁছন। সেখানে এক মাস থেকে তিনি লাসা শহরের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখেন এবং আম্বানের সমর্পণ পত্র লাভ করলে তিনি লাসা শহরে প্রবেশ করেন। এই বছর ১২ই ফেব্রুয়ারি তিনি চীনের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে তিব্বতকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন।[15] ষোড়শ শতাব্দী থকে দলাই লামাদের বিদেশী শক্তির পৃষ্ঠপোষকতার ঐতিহ্যের বিপরীতে তিনি প্রথম দলাই লামা ছিলেন, যিনি তিব্বতী জাতীয়তাবাদের কথা বলেন এবং তিব্বতী জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে তিব্বতের পতাকা চালু করেন। এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে তিব্বতে অবস্থিত সমস্ত চীনা সৈন্যদের তিব্বত ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।[2]
মধ্য তিব্বত থেকে চীনা সেনাবাহিনীকে বহিষ্কার করা হলেও খাম্স ও আমদো অঞ্চলের অধিকাংশ স্থান চীনের অধিকারে ছিল। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো তার প্রধান মন্ত্রী ব্লোন-ছেন-ব্শাদ-স্গ্রা-দ্পাল-'ব্যোর-র্দো-র্জেকে (ওয়াইলি: blon chen bshad sgra dpal 'byor rdo rje) ভারতের সিমলা শহরে চীন ও ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে পাঠান। চীন ও তিব্বতের মধ্য সীমান্ত নির্ধারণ করা ছিল এই বৈঠকের উদ্দেশ্য। তিব্বতের পক্ষ থেকে খাম্স ও আমদো অঞ্চলে চীন অধিকৃত অঞ্চলগুলি তিব্বতীদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানানো হয়। ব্রিটেনের পক্ষ থেকে অন্তঃ তিব্বত ও বহিঃ তিব্বত নামক দুইটি অঞ্চল গঠন করে অন্তঃ তিব্বতকে চীনের অধীনে এনে বহিঃ তিব্বতকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব করে। যাই হোক, এই সভায় ঐকমত্য্য প্রতিষ্ঠিত হয় নি।[2]
১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে চামদো অঞ্চলে রয়ে যাওয়া চীনা সেনাবাহিনীর সাথে তিব্বতী বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ব্কা'-ব্লোন-ব্যাম্স-পা-ব্স্তান-'দার (ওয়াইলি: bka' blon byams pa bstan dar) নামক এক সেনাপতির নেতৃত্বে তিব্বতী সেনা চীনাদের পরাজিত করতে সক্ষম হয় এবং খাম্স অঞ্চলের অধিকাংশ স্থান তিব্বতের শাসনাধীন হয়। এই যুদ্ধের খরচ সামলানো তিব্বত সরকারের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়ে। সেই কারণে সরকার থেকে নির্দেশিকা জারি করা হয়, যে সৈন্যবাহিনী প্রতিপালনের খরচের এক চতুর্থাংশ ব্ক্রা-শিস-ল্হুন-পো বৌদ্ধবিহার থেকে সংগ্রহ করা হবে। এই বিহারের পক্ষ থেকে নবম পাঞ্চেন লামা এই প্রস্তাবে রাজী হলেও কিছুদিন পরে এই বিপুল ব্যয়ভার তারা বহন করতে অসমর্থ হয়ে পড়ে। এর ফলে ত্রয়োদশ দলাই লামা ও নবম পাঞ্চেন লামার মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। ত্রয়োদশ দলাই লামা নবম পাঞ্চেন লামাকে লাসা শহরে তার সঙ্গে গোপণে দেখা করার অনুরোধ করলে ব্ক্রা-শিস-ল্হুন-পো বৌদ্ধবিহারের আধিকারিকেরা নবম পাঞ্চেন লামার গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করেন। এই আশঙ্কার ফলশ্রুতিতে নবম পাঞ্চেন লামা চীন পালিয়ে যান এবং ভবিষ্যতে কোনদিন তিব্বত ফিরে আসেননি।[2]
মঙ্গোলিয়া, চীন ও ভারতে বসবাসকালে থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো বহির্জগতের পরিবর্তন সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হন এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় তিব্বতের অনুন্নয়নের বিষয়টি উপলব্ধি করেন। এই কারণে তিনি তিব্বতে ব্যাপক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তিনি তিব্বতীদের চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে লাসা শহরে স্মান-র্ত্সিস-খাং (ওয়াইলি: sman rtsis khang) নামক একটি চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করেন, যেখানে তিব্বতী চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।[16] এছাড়া তিনি ব্যাং-ঙ্গোস-পা-রিন-স্গাং (ওয়াইলি: byang ngos pa rin sgang), ম্খ্যেন-রাব-কুন-ব্জাং (ওয়াইলি: mkhyen rab kun bzang), ব্সোদ-নাম্স-স্গোম-পো-গো-খার-বা (ওয়াইলি: bsod nams sgom po go khar ba) এবং দ্বাং-'দুস-নোর-বু ওয়াইলি: dbang 'dus nor bu) নামক চারজন তিব্বতীকে ব্যবহারিক শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড প্রেরণ করেন। এঁদের মধ্যে ব্যাং-ঙ্গোস-পা-রিন-স্গাং বৈদ্যুতিক প্রকৌশলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে তিব্বতে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেন, দ্বাং-'দুস-নোর-বু লাসা থেকে র্গ্যাল-র্ত্সে (ওয়াইলি: rgyal rtse) পর্যন্ত টেলিগ্রাফের লাইন স্থাপন করেন এবং ব্সোদ-নাম্স-স্গোম-পো-গো-খার-বা সামরিক অধিকর্তা হিসেবে তিব্বতী সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেন।[17] ইয়াসুজিরো ইয়াহিগমা নামক এক জাপানী সামরিক উপদেষ্টা তিব্বতী সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দান করেন। ব্রিটিশদের নিকট হতে নতুন সামরিক যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হয়। তিনি তিব্বতের ইতিহাসে প্রথম ডাকব্যবস্থা এবং কাগজের মুদ্রার প্রচলন করেন। একটি জাতীয় করব্যবস্থা এবং আরক্ষা বাহিনী তৈরী করা হয়। মৃত্যুদণ্ড সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় এবং কারাগারে বন্দীদের জন্য ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো হয়।[17][18] তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থের পুনঃপ্রকশনা উদ্দেশ্যে শোল প্রকাশনী নামে একটি ছাপাখানা নির্মাণ করান, যেখানে পরবর্তীকালে ধর্মীয় পুস্তকের পাশাপাশি ইংরেজি, রুশ ও জাপানী ভাষা থেকে সামরিক প্রশিক্ষণে পুস্তকের অনুবাদও ছাপা হত। ভারতের বিদ্যালয়গুলির এক পরিদর্শকক ফ্র্যাঙ্ক লাডলোকে র্গ্যাল-র্ত্সে নামক স্থানে একটি ইংরেজি ব্যাকরণ শিক্ষার জন্য বিদ্যালয় খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়।[2] ১৯২০-এর দশকের মধ্যে তিব্বতী সমাজের জীবনযাপনে ও আচার আচরণে বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাব বৃদ্ধি পায়। তিব্বতীদের মধ্যে পশ্চিমের অনুকরণের পোশাক ও সিগারেটের প্রচলন শুরু হয়। ত্রয়োদশ দলাই লামা তামাক ও সিগারেট নিষিদ্ধ করেন। তিনি অভিজাতদের সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সময় পশ্চিমা পোশাক পরিধান এবং মূল্যবান অলঙ্কারের লোকদেখানো প্রদর্শনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেন।[2] ত্রয়োদশ দলাই লামার সংস্কার অভিযান বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচন্ড বাধার সম্মুখীন হয়। ফ্র্যাঙ্ক লাডলো প্রতিষ্ঠিত ইংরেজি ব্যাকরণ শিক্ষার বিদ্যালয়টি লামাদের বিরুদ্ধাচরণের ফলে বন্ধ করে দিতে হয়। ইংল্যান্ড থেকে প্রশিক্ষিত একজন তিব্বতী ছাত্র তিব্বতে স্বর্ণখণি নির্মাণের প্রস্তাব করলে লামারা ভূমির দেবতাদের রোষে পড়ার কথা বলে সেই প্রকল্প বন্ধ করে দেন। অস্ত্রের ঘাটতির ফলে একটি শক্তিশালী ও সুপ্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর গুরুত্বও তিব্বতীরা বুঝতে পারেননি। বৈদেশিক মুদ্রার আমদানী এবং উৎপাদনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় তিব্বতের অর্থনীতি এই সংস্কারের ভার ঠিক মতো বহন করতে পারেনি। উপরন্তু বিভিন্ন বৌদ্ধবিহার, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও উৎসব পরিচালনার জন্য দেশের সিংহভাগ অর্থ খরচ হওয়ায় সংস্কার কার্য ব্যাহত হয়।[2]
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ত্রয়োদশ দলাই লামা দেশের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত থাকতেন। তিনি সাম্যবাদী বিপ্লবের পরবর্তী মঙ্গোলিয়ার পরিস্থিতি সম্বন্ধে খবর নিতেন এবং চীনের গৃহযুদ্ধকে তিব্বতের পক্ষে ক্ষতিকারক হিসেবে মনে করতেন। জনগণের প্রতি তার ভাষণগুলিতে তিনি বৈদেশিক শক্তিগুলির থেকে রক্ষার জন্য তিব্বতে পরিবর্তনের ওপর বার বার গুরুত্ব আরোপ করতেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে তিব্বতকে বৈদেশিক শক্তি থেকে রক্ষা করতে না পারলে তিব্বত থেকে দলাই লামা সহ অন্যান্য অবতারী লামা এবং বৌদ্ধ ধর্মের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে।[n 4] ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং ১৭ই ডিসেম্বর তার মৃত্যু ঘটে।[2][19]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.