তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা যা পার্থিব বস্তু এবং সিস্টেমের গাণিতিক মডেলতত্ত্বীয় ধারণাকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান প্রাকৃতিক ঘটনার ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎদ্বাণী করে থাকে। এই শাখা পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞান থেকে ভিন্নতর, যেখানে এইসব ঘটনা প্রমাণের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলক যন্ত্রের প্রয়োজন পড়ে।

Thumb
সোয়ার্জশিল্ড ওয়ার্মহোলের কাল্পনিক দৃশ্য। ওয়ার্মহোল অদ্যাবধি পর্যবেক্ষণ করা না গেলেও এদের অস্তিত্ব গাণিতিক মডেল এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞানের উন্নতি মূলত পরীক্ষামূলক এবং তাত্ত্বিক — দুইপ্রকার বিজ্ঞানের সমন্বয়ের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান গাণিতিক প্রমাণের উপর অনেক বেশি জোর দিয়ে থাকে, আর পরীক্ষামূলক কিংবা পর্যবেক্ষণের উপর কম গুরুত্ব দেয়।[lower-alpha 1] উদাহরণস্বরূপ, আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব উন্নয়নের সময় আলবার্ট আইনস্টাইন লরেঞ্জ রূপান্তর নিয়ে চিন্তিত ছিলেন (যা কিনা ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণকে অপরিবর্তিত অবস্থায় রাখে); কিন্তু লুমিনিফেরাস ইথারের সাপেক্ষে পৃথিবীর বেগ নিয়ে মাইকেলসন-মর্লি পরীক্ষা নিয়ে কম চিন্তিত ছিলেন। পরবর্তীতে আইনস্টাইন আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া ব্যাখ্যার জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, যার মূল ভিত্তি ছিল পরীক্ষামূলক ফলাফল, শুধুমাত্র তাত্ত্বিক গঠন নয়।[1]

বিবরণ

পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তত্ত্ব হল কোনো পার্থিব ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত মডেল। পর্যবেক্ষণের সাথে এই তাত্ত্বিক ধারণার কতটা সঙ্গতি রয়েছে তা বিচারের মাধ্যমে এর যৌক্তিকতা যাচাই করা হয়। নতুন পর্যবেক্ষণকে ব্যাখ্যা করার সক্ষমতার উপরও একটি তত্ত্বকে বিচার করা হয়। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র আর গাণিতিক সূত্রের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যদিও উভয়ই কিছু নির্দিষ্ট স্বতঃসিদ্ধ মেনে চলে, গাণিতিক সূত্র কোনো পরীক্ষণের উপর ভিত্তি করে পাওয়া যুক্তির উপর গড়ে ওঠে না।[2][3] পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব একইভাবে গাণিতিক তত্ত্ব থেকে ভিন্নতর। এখানে "তত্ত্ব" শব্দটি গাণিতিক পরিভাষায় অন্য অর্থ লাভ করেছে।.[lower-alpha 2]

স্থান-কালের বক্রতা ব্যাখ্যায় সাধারণ আপেক্ষিকতায় ব্যবহৃত আইনস্টাইন ম্যানিফোল্ডের সমীকরণ

পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব বিভিন্ন পরিমাপযোগ্য রাশির মধ্যে এক বা একাধিক সম্পর্ক নিয়ে গড়ে উঠতে পারে। আর্কিমিদিস বুঝতে পারেন যে জাহাজ এর সমপরিমাণ ভরের পানি সরিয়ে ভেসে থাকে, পিথাগোরাস প্রথম কম্পনশীল তার এবং সংগীতের সুরের মধ্যকার সম্পর্ক বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন।[4][5] দেখতে পাওয়া যায় না এমন কণার অবস্থান এবং গতি পরিমাপের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহৃত হয় এনট্রপি; আবার কোয়ান্টাম তত্ত্বানুযায়ী ঘটন এবং শক্তি অবিচ্ছিন্ন একক নয় — এসবই তত্ত্বের উদাহরণ।

তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান আরো নানান দিক নিয়ে গড়ে উঠেছে। তাত্ত্বিক কণা পদার্থবিদ্যা একটি ভালো উদাহরণ। ফেনোমেনোলজিস্টরা হয়ত বাস্তব পর্যবেক্ষণের সাথে মিলে যাওয়ায় (আংশিক) অভিজ্ঞতাগত সূত্র ব্যবহার করবেন, কিন্তু গভীরভাবে সেটাকে বুঝবেন না।[lower-alpha 3]

আরও দেখুন

টীকা

  1. তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান মূলত গণিতকে ব্যবহার করে নিজস্ব চিন্তা এবং ধারণাকে পার্থিব রূপ দান করার জন্য (বিশেষত যেখানে সাধারণ অভিজ্ঞতা হার মানে), তত্ত্ব গঠনের অংশ হিসেবে নয় — এমন একটি বিতর্ক প্রচলিত আছে। এর কারণ হিসেবে দেখানো হয় যে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানের ন্যায় গণিতকে ততটা যথাযথভাবে প্রয়োগ করে না, বরং নিজস্ব চিন্তা-ধারণাকে বাস্তবায়নের পথে যেভাবে দরকার, সেভাবেই ব্যবহার করে।
  2. অনেকসময় "তত্ত্ব" শব্দটি দ্ব্যর্থবোধক হতে পারে, কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে না বুঝিয়ে গবেষণা কিংবা কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার খাতকে বোঝাতে পারে। যেমন আপেক্ষিকতা তত্ত্ব, কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব, স্ট্রিং তত্ত্ব।
  3. বর্ণালিবীক্ষণে জোহান বামার এবং জোহানেস রিডবার্গের কাজ এবং আণবিক পদার্থবিজ্ঞানে সংকেত ভর এর একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে।

তথ্যসূত্র

আরো পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.