Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চিকিৎসা বিজ্ঞান বা চিকিৎসা শাস্ত্র হল রোগ উপশমের বিজ্ঞান কলা বা শৈলী। মানব শরীর এবং মানব স্বাস্থ্য ভালো রাখার উদ্দেশ্যে রোগ নিরাময় ও রোগ প্রতিষেধক বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধ্যায়ন করা হয় এবং প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
সমসাময়িক চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অধ্যয়ন, গৱেষণা, এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যবহার করে লব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে ঔষধ বা শল্য চিকিৎসার দ্বারা রোগ নিরাময় করার চেষ্টা করা হয়।ঔষধ বা শল্য চিকিৎসা ছাড়াও মনোচিকিৎসা (psychotherapy), কৃত্রিম অঙ্গ সংস্থাপন, আণবিক রশ্মির প্রয়োগ, বিভিন্ন বাহ্যিক উপায় (যেমন, স্প্লিণ্ট (Splint) এবং ট্রাকশন),জৈবিক সামগ্রি (রক্ত, অণু জীব ইত্যাদি), শক্তির অন্যান্য উৎস (বিদ্যুৎ, চুম্বক, অতি-শব্দ ইত্যাদি) ইত্যাদিরও প্রয়োগ করা হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইংরেজি মেডিসিন (Medicine) । মেডিসিন শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন ভাষার ars medicina শব্দ থেকে, যার অর্থ হচ্ছে "the medical art" ('চিকিৎসা কলা') [1][2]।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস মানবেতিহাসের ন্যায় প্রাচীন। সুদূর অতীতে মানব প্রজাতির বিকাশের সাথে সাথেই চিকিৎসাবিদ্যাও বিকশিত হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ঔষধ হিসাবে উদ্ভিদ (herbalism), পশুর দেহের বিভিন্ন অংশ, এবং খনিজ পদার্থ ব্যবহার করা হতো। অনেক ক্ষেত্রে পুরোহিত, shamans, বা চিকিৎসকরা এই উপকরণগুলিকে ঐন্দ্রজালিক পদার্থ হিসাবে ব্যবহার করতেন। সুপরিচিত কিছু আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাসমূহের কথা বলা যায় যেমন, প্রাণবৈচিত্র্য (আত্মার অনিবার্য বস্তু সম্পর্কে ধারণা), আধ্যাত্মিকতা (দেবতাদের কাছে আপীল বা পূর্বপুরুষের আত্মার সাথে আলাপ করা); Shamanism (রহস্যময় ক্ষমতার সঙ্গে ব্যক্তির পরিচিতি); এবং ভবিষ্যদ্বাণী (জাদুর মাধ্যমে সত্যকে প্রাপ্তি)। চিকিৎসা নৃতত্ত্বের ক্ষেত্রগুলি মূলত স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যসেবা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলির দ্বারা আমাদের সংস্কৃতি ও সমাজের চারপাশ কী করে সংগঠিত বা প্রভাবিত হয় এমন উপায়গুলি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে।
চিকিৎসা শাস্ত্রে অসংখ্য অবদান রাখার কারণে গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস কে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক বলা হতো কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হলেন ইবনে সিনা (আবু আলি হুসাইন বিন আব্দুল্লাহ ইবনুল হাসান বিন আলী ইবনে সিনা)।
প্রাচীন চিকিৎসার প্রমাণগুলি পাওয়া গেছে মিশরীয় ঔষধ, বেবিলনিয়ান ঔষধ, আয়ুর্বেদিক ঔষধ (যা ভারতীয় উপমহাদেশে সুপ্রচলিত ছিল), ক্লাসিক্যাল চীনা ওষুধ ( যাকে আধুনিক ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধের পূর্বসূরি বলে ধারণা করা হয়), প্রাচীন গ্রিক ঔষধ এবং রোমান ঔষধ থেকে।
মিশরের ইমহোতেপ (৩য় সহস্রাব্দের বিসি) ছিল প্রথম পরিচিত চিকিৎসক যা ইতিহাসে পাওয়া যায় । ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে প্রাচীনতম মিশরীয় চিকিৎসা পাঠ্যক্রমটি কাহুন গাইনোকোলজিক্যাল প্যাপিরাস নামে পরিচিত যা মূলত গাইনোকোলজিক্যাল রোগের বর্ণনা দেয়ার ক্ষেত্র ব্যবহৃত হতো। ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস সার্জারির উপর প্রথম কাজ করেছিলেন, আর ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে Ebers Papyrus কাজ করেছিলেন যা চিকিৎসা সংক্রান্ত পাঠ্যপুস্তকের অনুরূপ ছিল।
চীনে চিকিৎসা বিষয়ক প্রত্নতাত্ত্বিক যে প্রমাণগুলি পাওয়া যায় তা ছিল ব্রোঞ্জ যুগের নিদর্শন । তখন সেখানে শং রাজবংশের শাসন চলিতেছিল । চীনে অস্ত্রোপচারের জন্য বনজঙ্গল থেকে সংগৃহীত বীজ ব্যবহৃত হতো । Huangdi Neijing ছিল চীনের চিকিৎসা শাস্রের জন্য মাইল ফলক যা ছিল দ্বিতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দের শুরু এবং তৃতীয় শতাব্দীতে লেখা একটি মেডিকেল পাঠ।
ভারতে, শল্যচিকিৎসক Sushruta প্লাস্টিকের অস্ত্রোপচারের প্রাচীনতম রূপসহ অসংখ্য অস্ত্রোপচারের বর্ণনা দিয়েছেন। অস্ত্রোপচারের সবচেয়ে পুরনো রেকর্ডগুলি পাওয়া যায় শ্রীলংকার মিহিনটলে অবস্থিত উৎসর্গীকৃত হাসপাতালে , যেখানে রোগীদের জন্য সুষম চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রমাণ পাওয়া যায়।
গ্রীসে, গ্রীক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস যাকে "পশ্চিমা চিকিৎসা শাস্রের জনক বলা হয়", তিনিই প্রথম ঔষধের যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতির ভিত্তি স্থাপন করেন। হিপোক্রেটিসই চিকিৎসকদের জন্য হিপোক্রেটিক ওথ চালু করেছিলেন, যা এখনও প্রাসঙ্গিক এবং আজ অবধি ব্যবহৃত হয়ে আসতেছে । রোগকে তখনি প্রথম acute, chronic, endemic and epidemic হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাছাড়া তাদেরকে "exacerbation, relapse, resolution, crisis, paroxysm, peak, and convalescence" হিসাবেও শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছিল । গ্রীক চিকিৎসক গ্যালেন প্রাচীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সার্জন ছিলেন বলে ধারণা করা হয় । মস্তিষ্ক ও চক্ষু অস্ত্রোপচার সহ অনেক অদ্ভুত অপারেশন তিনি করেছিলেন। পশ্চিমা রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর এবং মধ্যযুগীয় যুগের সূচনা হওয়ার পরে পশ্চিম ইউরোপে ঔষধের গ্রীক ঐতিহ্য হ্রাস পেতে থাকে, যদিও এই পদ্ধতিটি পূর্ব রোমান (বাইজানটাইন) সাম্রাজ্যের মধ্যে অব্যাহত ছিল।
১ম সহস্রাব্দের দিকে প্রাচীন হিব্রু চিকিৎসা পদ্বতির অধিকাংশই তওরাত থেকে আসে । যেমন মুসা (আ) এর পাঁচটি বই, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আইন এবং রীতিনীতিগুলি ধারণ করে। আধুনিক ঔষধের উন্নয়নে হিব্রুদের অবদান বাইজেন্টাইন যুগে শুরু হয়েছিল ইহুদি চিকিৎসক আসফ এর মাধ্যমে।
মধ্যযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের হাতে চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে আবু আলী হোসাইন ইবনে সিনা সবচেয়ে বিখ্যাত। মধ্যযুগীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভিত রচনায় তার অবদান অনস্বীকার্য। তার মূল অবদান ছিল চিকিৎসা শাস্ত্রে। তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রের বিশ্বকোষ আল-কানুন ফিত-তীব রচনা করেন যা ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্তও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল প্রতিষ্ঠানসমূহে পাঠ ছিল। আরবিতে ইবন সীনাকে আল-শায়খ আল-রাঈস তথা জ্ঞানীকুল শিরোমণি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পশ্চিমে তিনি অ্যাভিসিনা নামে পরিচিত। তাকে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিসেবে সম্মান করা হয়ে থাকে।
৭৫০ খ্রিষ্টাব্দের পর মুসলিম বিশ্বের হাতে ছিল হিপোক্রেটস, Galen এবং Sushruta আরবি অনুবাদিত অনুলিপি । তাছাড়া ইসলামী চিকিৎসকগণ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা গবেষণার সাথেও জড়িত ছিল। উল্লেখযোগ্য ইসলামিক চিকিৎসা অগ্রগামীদের মধ্যে রয়েছে ফারসি আভিসিনা, ইমহোটেপ ও হিপোক্রেটসের সাথে তাকেও "মেডিসিনের জনক" বলা হয়। তিনি কানুন অফ মেডিসিন গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত বইগুলির মধ্যে একটি বলে গণ্য করা হয়। এছাড়া আবুলকাসিস, আভেনজার, ইবনে আল নাফিস, এবং আভিরোস ও তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। Rhazes গ্রিক theory of humorism নিয়ে প্রথম প্রশ্ন করেছিল, যা মধ্যযুগীয় পশ্চিমা ও মধ্যযুগীয় ইসলামী চিকিৎসা পদ্বতিতে খুবই প্রভাবশালী ছিল। শিয়া মুসলমানদের অষ্টম ইমাম আলি-আল-রাধা Al-Risalah al-Dhahabiah রচনা করেছিলেন যা আজ অবধি চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে মূল্যবান ইসলামি সাহিত্য হিসেবে সম্মানিত। ফারসি বিমরস্তান হাসপাতালগুলি পাবলিক হাসপাতালগুলির মধ্যে প্রাথমিক উদাহরণ হিসাবে গণ্য করা হয়।
ইউরোপে, শার্লিমেন ঘোষণা করেছিলেন যে প্রতিটি ক্যাথিড্রাল এবং মঠের জন্য একটি হাসপাতালকে সংযুক্ত করা উচিত । ইতিহাসবিদ জ্যফ্রে ব্লেইন মধ্যযুগের স্বাস্থ্যসেবার ক্যাথলিক চার্চের কার্যক্রমগুলিকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রাথমিক সংস্করণের সাথে যুক্ত করেছিলেন । যেখানে বয়স্কদের জন্য হাসপাতাল, অনাথ শিশুদের জন্য এতিমখানা এবং সব বয়সের রোগীদের জন্য ঔষধ, কুষ্ঠরোগীদের জন্য থাকার জায়গা; এবং তীর্থযাত্রীদের জন্য হোস্টেল বা inns যেখানে তারা সস্তায় বিছানা এবং খাবার কিনতে পারবে। এটি দুর্ভিক্ষের সময় জনসাধারণের জন্য খাদ্য সরবরাহ এবং দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা করে। এই কল্যাণ ব্যবস্থাটি মূলত গির্জা অর্থায়ন করতো । এই বড় আকারের টাকা তারা কর সংগ্রহের মাধ্যমে সম্পন্ন করতো যার মূল উৎস ছিল বৃহৎ কৃষিভূমি এবং এস্টেটগুলি। বেলডিসটাইনের আদেশটি তাদের মঠগুলিতে হাসপাতাল ও রোগীর স্থাপনা নির্মাণ করাতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল, ক্রমবর্ধমান চিকিৎসা সেবার জন্য এবং তাদের জেলাসমূহের প্রধান চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারীর জন্য Abbey of Cluny সুপরিচিত ছিল। এছাড়াও গির্জা ক্যাথেড্রাল স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল যেখানে চিকিৎসা বিদ্যা অধ্যয়ন করা যেতো । মধ্যযুগীয় ইউরোপের সালেনোতে গ্রিক ও আরব চিকিত্সকগণের চিকিৎসা শাস্র অধ্যয়নেরর জন্য সেরা মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যার নাম ছিল Schola Medica Salernitana.
তবে, চৌদ্দ এবং পঞ্চদশ শতকের কালো মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ উভয়কেই ধ্বংস করে দিয়েছিল । তাছাড়া তর্কবিতর্ক করা হয়েছিল যে মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় পশ্চিম ইউরোপ সাধারণত আরও বেশি কার্যকর ছিল রোগ মুক্তির জন্য । প্রাক আধুনিক যুগে, চিকিৎসা বিদ্যা এবং শরীর বিদ্যা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পরিসংখ্যান ইউরোপে আবির্ভূত হয়েছিল, যার মধ্যে Gabriele Falloppio এবং William Harvey এর নাম অন্যতম।
চিকিৎসা সংক্রান্ত চিন্তাভাবনায় প্রধান পরিবর্তন ক্রমবর্ধমান প্রত্যাখ্যানটাই ছিল একটি আলোচ্য বিষয় যা মূলত চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতাব্দীতে বিশেষভাবে কালো মৃত্যুর সময় যাকে 'traditional authority' বলা যেতে পারে চিকিৎসা ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে । Andreas Vesalius 'De humani corporis fabrica' নামে একটা বই লিখেছিলেন যা মানব অজ্ঞ গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। ১৬৭৬ সালে এন্টোনি ভ্যান লিউভেনহোক একটি মাইক্রোস্কোপ দিয়ে ব্যাকটেরিয়া পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে প্রথম বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে মাইক্রোবায়োলজির যাত্রা শুরু করেছিলেন। মাইকেল সার্ভেটাস 'pulmonary circulation' সন্ধান পেয়েছিলেন স্বাধীনভাবে ইবনে আল নাফিসের কাছ থেকে, , কিন্তু এই আবিষ্কারটি জনগণের কাছে পৌঁছেনি কারণ এটি প্রথমবারের জন্য "Manuscript of Paris" এ লেখা হয়েছিল ১৫৪৬ সালের দিকে । পরবর্তীতে এটি ধর্মতত্ত্ব নামে প্রকাশিত হয়েছিল ১৫৫৩ সালে যা তার জীবনের সবচেয়ে কাজ ছিল এটি। পরবর্তীতে এটি রেনালডাস কলম্বাস এবং আন্দ্রে সিলেপিনোর মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছিল । Herman Boerhaave কখনও কখনও তাকে "শারীরবৃত্তির জনক" হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন লিডেন এবং পাঠ্যপুস্তক 'ইনস্টিটিউশন মেডিয়াকে' (1708) শিক্ষা প্রদান করার কারণে । পিয়ের ফৌচারকে "আধুনিক দন্তচিকিৎসার জনক" বলা হয়। সম্পাদনা মোঃ শাহাদাত হোসেন, বাংলা বিভাগ, ঢাবি
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল যুগ হচ্ছে ঊনবিংশ এবং বিংশ শতক। এই দুই শতকে বিজ্ঞানের অন্যান্য সব শাখার ন্যায় চিকিৎসাবিজ্ঞানেও বিপ্লবাত্মক সব আবিষ্কার হয়। বিশেষ করে বিংশ শতকের প্রথমার্ধে সংঘটিত দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধ চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। যুদ্ধকালীন প্রয়োজনেই আবিষ্কার হয় বহু চিকিৎসাকৌশল।
১৭৬১ সালের দিকে পশু চিকিৎসা ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল যা মানবদেহের চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে একটু পৃথক ছিল। ফ্রান্সের পশু চিকিৎসক ক্লড বুগ্রেল্যাট ফ্রান্সের লায়নে বিশ্বের প্রথম পশুচিকিৎসা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই আগে মেডিকেলের ডাক্তারাই মানুষের এবং অন্যান্য প্রাণীর চিকিৎসা করতো।
আধুনিক বৈজ্ঞানিক বায়োমেডিকাল গবেষণা (যেখানে ফলগুলি পরীক্ষাযোগ্য এবং প্রজননযোগ্য হয়)শুরু হয়েছিল পশ্চিমা ঐতিহ্য ভেষজের উপর ভিত্তি করে। প্রথম দিকে গ্রীক "four humours" এর পরিবর্তে এবং পরে অন্যান্য ধরনের প্রাক-আধুনিক ধারণার পরিবর্তন শুরু হতে থাকে । আধুনিক যুগ আসলে শুরু হয়েছিল ১৮ শতকের শেষের দিকে এডওয়ার্ড জেনারের smallpox এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার (এশিয়ায় প্রচলিত টিউশুর পদ্ধতির দ্বারা অনুপ্রাণিত), ১৮৮৮ সলে রবার্ট কোচের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা রোগের সংক্রমণের আবিষ্কার তারপর ১৯০০ এর কাছাকাছি এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ।
অষ্টাদশ শতাব্দীর পরে আধুনিকতার যুগ ইউরোপ থেকে আরো জাগ্রত গবেষক খুঁজে পেয়েছিল। জার্মানি ও অস্ট্রিয়া থেকে, ডাক্তার রুডলফ বীরভো, উইলহেল্ম কনরাড রন্টজেন, কার্ল ল্যান্ডস্টেইনটার ও অটো লোইই উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। যুক্তরাজ্য থেকে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং, জোসেফ লিস্টার, ফ্রান্সিস ক্রিক এবং ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। স্প্যানিশ ডাক্তার সান্তিয়াগো র্যামন ও কাজালকে আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞানের জনক বলে মনে করা হয়।
নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে মরিস উইলকিন্স, হাওয়ার্ড ফ্লোরী এবং ফ্রাঙ্ক ম্যাকফার্লেন বার্নেট কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয় ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উইলিয়াম উইলিয়ামস কিন, উইলিয়াম কলি, জেমস ডি.ওয়াটসন ইতালি (সালভাদর লুরিয়া) থেকে, সুইজারল্যান্ড থেকে আলেক্সান্ডার ইয়ারসিন, জাপান থেকে কিটাসাটো শিবাশাবুরো এবং ফ্রান্স থেকে জিন মার্টিন চারকোট, ক্লাউড বার্নার্ড, পল ব্রোকা এবং অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল। রাশিয়ান নিকোলাই করতোকভ উল্লেখযোগ্য কাজ করেছিলেন যেমন করেছিলেন স্যার উইলিয়াম ওসলার এবং হার্ভি কুশিং ।
বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ঔষধের উপর নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে । ইউরোপ জুড়ে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে কেবল পশু ও উদ্ভিদজাত দ্রব্যই ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় নি সাথে সাথে মানুষের দেহের অংশ এবং তরলও ব্যবহৃত হয়েছিল। ফারমাকোলজি বিকশিত হয়েছে হারবালিজম থেকে এবং কিছু কিছু ঔষধ (এট্রোপাইন, এফ্রেডিন, ওয়ারফারিন, অ্যাসপিরিন, ডাইগক্সিন, ভিনকা অ্যালকোলোড, ট্যাকোলোল, হাইস্কিন ইত্যাদি) এখনও উদ্ভিদ থেকে থেকে প্রস্তুত হয়। এডওয়ার্ড জেনার এবং লুই পাস্তুর টিকা আবিষ্কার করেছিলেন।
প্রথম অ্যান্টিবায়োটিকটি ছিল অ্যারফেনামাইন (সালভারসন) যা ১৯০৮ সালে পল এরিলিচ আবিষ্কার করেন। তারপর তিনা আবিষ্কার করেন ব্যাক্টেরিয়া যে বিষাক্ত রঞ্জন গ্রহণ করে মানুষের কোষে তা করেনা। প্রথম এবং প্রধান এন্টিবায়োটিকস হলো সালফা ওষুধ যা জার্মান রসায়নবিদ azo dyes থেকে সংগ্রহ করেছিলেন ।
ফার্মাকোলজি ক্রমবর্ধমানভাবে অত্যাধুনিক হয়ে উঠেছে; আধুনিক জৈবপ্রযুক্তি নির্দিষ্ট শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় মাদকদ্রব্যকে বিকশিত করতে সহায়তা করে, আবার কখনও কখনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমাতে শরীরের সাথে সামঞ্জস্যের ব্যবস্থা করা হয়। জিনোমিক্স এবং জেনেটিক্স সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান ঔষধের উপর কিছু প্রভাব ফেলেছে, কারণ বেশিরভাগ মনোজেনিক জেনেটিক ডিসঅর্ডারগুলির জিনগুলি এখন চিহ্নিত করা হয়েছে যা causative genes হিসাবে কার্যকারী। তাছাড়া আণবিক জীববিদ্যা এবং জেনেটিক্সের কৌশলগুলির বিকাশ ও চিকিৎসা প্রযুক্তি অনুশীলনের এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকে অনেক প্রভাবিত করছে।
চিকিৎসাবিদ্যা অনেকগুলো শাখায় বিভক্ত। এগুলোকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। প্রাথমিক বা বেসিক, প্যারাক্লিনিক্যাল এবং ক্লিনিক্যাল। বেসিক শাখাগুলোর মধ্যে রয়েছে এনাটমী বা অঙ্গংস্থানতত্ত্ব, ফিজিওলজি বা শারীরতত্ত্ব, বায়োকেমিস্ট্রি বা প্রাণরসায়ন ইত্যাদি। প্যারাক্লিনিক্যাল শাখার মধ্যে অণুজীববিদ্যা, রোগতত্ত্ব বা প্যাথোলজি, ভেষজতত্ত্ব বা ফার্মাকোলজি অন্যতম। ক্লিনিক্যাল হলো প্রায়োগিক চিকিৎসাবিদ্যা। এর প্রধান দুটি শাখা হলো, মেডিসিন এবং শল্যচিকিৎসা বা সার্জারি। আরও আছে ধাতৃ ও স্ত্রীরোগবিদ্যা, শিশুরোগবিদ্যা বা পেডিয়াট্রিক্স, মনোরোগবিদ্যা বা সাইকিয়াট্রি, ইমেজিং ও রেডিওলোজি ইত্যাদি। এগুলোর সবগুলোরই আবার বহু বিশেষায়িত্ব শাখা রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার বেশকয়েকরকম পদ্ধতি আছে। সাধারণত মেডিকেল স্কুল বা কলেজগুলোতে শিক্ষা দেওয়া হয়। একে সাধারণত দুইভাগে ভাগ করা হয়: স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্নাতক ডিগ্রি হিসেবে এম.বি.বি.এস বা এম.ডি প্রচলিত। প্রথমোক্ত ডিগ্রিটি যুক্তরাজ্যসহ কমনওয়েলথ দেশগুলোতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর এম.ডি. ডিগ্রি যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কয়েকটি দেশে প্রচলিত। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মেডিকেল কলেজ ডি.ও. ডিগ্রিও প্রদান করে থাকে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মধ্যে এমআরসিপি, এফআরসিএস ইত্যাদি বিভিন্ন মেম্বারশিপ ও ফেলোশিপ অন্যতম। বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে সম্মানজনক স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মধ্যে এফ.সি.পি.এস. অন্যতম, যা দেশগুলোর নিজ নিজ রাষ্ট্রীয় 'কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এণ্ড সার্জনস' কর্তৃক প্রদান করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার মূল ক্ষেত্র মেডিকেল কলেজ। প্রতিবছর সরকারি প্রায় ৩৭ ও বেসরকারি অনেকগুলো কলেজে প্রায় দশহাজারের মতো ছাত্রছাত্রি ভর্তি হয়ে থাকে। পাঁচবছর মেয়াদি পড়াশোনা শেষে স্নাতক হিসেবে এম.বি.বি.এস. ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর একবছর শিক্ষানবিশ হিসেবে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। শিক্ষানবিশি শেষে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্টার্ড ডাক্তার হিসেবে চর্চা করতে পারেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.