ঘর্ম নিঃসরণ
From Wikipedia, the free encyclopedia
ঘর্ম নিঃসরণ বলতে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের চর্মের ঘর্মগ্রন্থি থেকে ঘর্ম বা ঘাম নামক তরল পদার্থ উৎপাদন ও নিঃসরণের ঘটনাটিকে বোঝায়।[1]
ঘর্ম নিঃসরণ | |
---|---|
প্রতিশব্দ | ঘর্মণ, স্বেদন |
চর্মের উপরে ঘামের ফোঁটা বা স্বেদবিন্দু | |
বিশেষত্ব | চর্মবিজ্ঞান |
কারণ | জ্বর, তাপ, অতিজ্বর |
মানবদেহে দুই ধরনের ঘর্মগ্রন্থি দেখতে পাওয়া যায়: : বহিঃস্রাবী ঘর্মগ্রন্থি (Eccrine gland) এবং অপস্রাবী ঘর্মগ্রন্থি (Apocrine sweat gland)।[2] বহিঃস্রাবী বা বহিঃক্ষরা ঘর্মগ্রন্থিগুলি দেহের অধিকাংশ স্থানে ছড়িয়ে আছে এবং এগুলি প্রায়শই মাত্রাতিরিক্ত দেহ তাপমাত্রায় কারণে উদ্দীপ্ত হয়ে পানি-সদৃশ, লবণাক্ত ঘাম নিঃসরণ বা ক্ষরণ করার জন্য দায়ী। অন্যদিকে অপস্রাবী ঘর্মগ্রন্থিগুলি বগলের তলায় এবং দেহের অন্যান্য কিছু অংশে অবস্থিত এবং এগুলি থেকে এক ধরনের গন্ধহীন, তৈলাক্ত, অস্বচ্ছ রস নিঃসৃত হয়, যেগুলি ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা বিযোজিত হয়ে বৈশিষ্ট্যসূচক গন্ধ প্রকাশ করে।
মানুষের জন্য ঘর্ম নিঃসরণ তাপ-নিয়ন্ত্রণের একটি প্রধান উপায়। বহিঃস্রাবী ঘর্মগ্রন্থিগুলির পানি-সমৃদ্ধ নিঃসরণের মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যটি সম্পন্ন করা হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ থেকে ৪ লিটার পর্যন্ত ঘাম ছাড়তে পারেন এবং দৈনিক সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৪ লিটার (মিনিটে ১০-১৫ গ্রাম) ঘাম নিঃসরণ করতে পারেন। তবে বয়োসন্ধির আগে শিশুদের মধ্য ঘাম নিঃসরণের হার কম।[3][4][5] চর্মের পৃষ্ঠতল থেকে ঘামের বাষ্পীভবনের ফলে একটি শীতলীকরণ ক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাই গরম আবহাওয়াতে কিংবা কোনও ব্যক্তির পেশী কাজ করার ফলে উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ঘাম উৎপন্ন হয়। যেসমস্ত প্রাণীর দেহে ঘর্মগ্রন্থি কম, যেমন কুকুর, সেগুলি মুখ হা করে জিহ্বা বের করে রাখে যাতে মুখগহ্বর ও স্বরযন্ত্রের আর্দ্র আবরণগুলি থেকে পানি বাষ্পীভূত হয় এবং ফলে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়।
যদিও ঘর্ম নিঃসরণ বহু বিভিন্ন স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীতে পরিলক্ষিত হয়,[6][7] মানুষ ও ঘোড়ার ব্যতিক্রম বাদে খুবই কম সংখ্যক প্রাণীই শীতল হবার জন্য বিপুল পরিমাণে ঘর্ম নিঃসরণ করে থাকে।[8][9]
ইংরেজিতে ঘর্ম নিঃসরণকে চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক পরিভাষায় "ডায়াফোরেসিস" (Diaphoresis) বা "হাইড্রোসিস" (Hidrosis) বলা হয়ে থাকে।[10][11] তবে কখনও কখনও এই পরিভাষাগুলি দিয়ে অতিঘর্মণও বোঝানো হতে পারে।