সুসমাচার
From Wikipedia, the free encyclopedia
সুসমাচার (প্রাচীন গ্রিক: Εὐαγγέλιον; লাতিন: Bona annuntiatio; হিব্রু ভাষায়: בשורות; আরবি: إنجيل; প্রাচীন ইংরেজি: Gōdspel; ইংরেজি: Gospel)[1] বলতে মূলত খ্রিস্টান বার্তা বোঝানো হত, কিন্তু দ্বিতীয় শতাব্দীতে এসে এটি সেই পুস্তকগুলির জন্যও ব্যবহৃত হতে থাকে যার মাধ্যমে বার্তাটি প্রচার করা হত;[2] এই অর্থে একটি সুসমাচারকে নাসরতীয় যীশুর কথা ও কাজের উপাখ্যানপূর্ণ বর্ণনার, তাঁর বিচার ও মৃত্যু এবং তাঁর পুনরুত্থানোত্তর আবির্ভাবের বিভিন্ন প্রতিবেদনের মাধ্যমে সমাপ্ত, একটি আলগা বুনন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।[3]
সাধু মথি, মার্ক, লূক ও যোহন লিখিত চারটি ধর্মসম্মত সুসমাচার অভিন্ন মৌলিক রূপরেখা ভাগ করে নেয়: যীশু বাপ্তিস্মদাতা যোহনকে সাথে নিয়ে পরিচর্যা শুরু করেন, শিষ্যদের ডাকেন, শিক্ষা দেন ও সুস্থ করেন এবং ফরীশীদের মুখোমুখি হন, ক্রুশারোপিত হয়ে মারা যান এবং মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হন।[4] প্রত্যেকটিরই যীশু ও তাঁর ঐশ্বরিক ভূমিকা সম্বন্ধে নিজস্ব স্বতন্ত্র ধারণা রয়েছে:[5] মার্ক কখনো তাঁকে “ঈশ্বর” বলেন না,[6] লূক কিছু অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেললেও মার্ককে প্রসারিত করেন, কিন্তু তবুও মথির চেয়ে বিশ্বস্তভাবে তাঁর পটভূমি অনুসরণ করেন[7] এবং যোহন, সবচেয়ে স্পষ্টত ধর্মতাত্ত্বিক, যীশুর জীবনের বর্ণনার প্রেক্ষাপটের বাইরে প্রথম খ্রিস্টীয় বিচার প্রয়োগ করেন।[5] এগুলোর মধ্যে এমন বিবরণ রয়েছে যা অসামঞ্জস্যবিধানযোগ্য এবং তাদের সমন্বয় করার প্রচেষ্টা তাদের স্বতন্ত্র ধর্মতাত্ত্বিক বার্তাগুলির জন্য বিঘ্ন সৃষ্টি করবে।[8] এগুলি সম্ভবত ৬৬ ও ১১০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে লেখা হয়েছিল।[9][10][11] চারটি সুসমাচারই বেনামি ছিল (আধুনিক নামগুলো দ্বিতীয় শতাব্দীতে যোগ করা হয়েছিল), প্রায় কোনো প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না এবং সবগুলিই দীর্ঘ মৌখিক ও লিখিত প্রেষণের শেষ ফলাফল।[12] বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে মার্কই প্রথম লেখা হয়েছিল;[13][14] মথি ও লূকের লেখকরা স্বাধীনভাবে কার্যনির্বাহী করে মার্ককে যীশুর কবরণের জন্য ব্যবহার করেছিলেন, এটিকে কিউ ডকুমেন্ট নামক বাণীসংগ্রহ ও অনন্য অতিরিক্ত উপাদানের সাথে সম্পূরক করেছিলেন;[15] এবং একটি কাছাকাছি ঐকমত্য আছে যে যোহনের উৎপত্তি একটি “লক্ষণ” উৎস (বা সুসমাচার) হিসাবে ছিল যা একটি যোহনীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচারিত হয়েছিল।[16] প্রথম তিনটি ও যোহনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও অসঙ্গতি উভয় ঐতিহ্যকে সমানভাবে নির্ভরযোগ্য হিসাবে গ্রহণ করা অসম্ভব করে তোলে।[17] আধুনিক পণ্ডিতগণ সুসমাচারগুলোর উপর অযৌক্তিকভাবে নির্ভর করার ব্যাপারে সতর্ক, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা যীশুর জনসম্পৃক্ত কর্মজীবন সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা প্রদান করে এবং সমালোচনামূলক অধ্যয়ন পরবর্তী লেখকদের থেকে যীশুর মৌলিক ধারণাগুলিকে আলাদা করার চেষ্টা করতে পারে।[18][19]
অনেক অধর্মসম্মত সুসমাচারও লেখা হয়েছিল, সবগুলো চারটি ধর্মসম্মত সুসমাচারের পর এবং তাদের মতো তাদের বিভিন্ন লেখকের বিশেষ ধর্মতাত্ত্বিক মতামতকে সমর্থন করে।[20][5] গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে থোমা লিখিত সুসমাচার, পিতর লিখিত সুসমাচার, যিহূদা লিখিত সুসমাচার, মরিয়ম লিখিত সুসমাচার, শৈশবকালীন সুসমাচার যেমন যাকোব লিখিত সুসমাচার (মরিয়মের চিরস্থায়ী কুমারীত্বের প্রথম পরিচায়ক) এবং দিয়াতেসারনের মতো সুসমাচার সঙ্গতি।
খ্রিস্টধর্মে ধর্মসম্মত সুসমাচারগুলিরই মর্যাদা বেশি। এগুলিকে ঈশ্বর-কর্তৃক প্রকাশিত মনে করা হয়। এগুলি খ্রিস্টধর্মের ধর্মীয় ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু।[21] চারটি ধর্মসম্মত সুসমাচারে প্রকাশিত খ্রিস্টের জীবনকথাই যথাযথ ও প্রামাণ্য বলে খ্রিস্টানদের বিশ্বাস।[22] তবে অনেক গবেষকের মতে, এই চারটি সুসমাচারের সবকিছু ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বাসযোগ্য নয়।[23][24][25][26][27][28][29]
ইসলামে ইঞ্জিল (আরবি: إنجيل) নামে একটি আসমানী কিতাবের উল্লেখ আছে। ইসলাম মতে, এই বইটি আল্লাহ নবী ঈসার উপর নাজিল করেছিলেন। ইঞ্জিল শব্দটি কোনো কোনো অনুবাদে ‘গসপেল’ অর্থাৎ সুসমাচার হয়েছে। কুরআনে যে চারটি বইকে আল্লাহ্-কর্তৃক প্রকাশিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি তার একটি। তবে ইসলাম অনুসারে, পরবর্তী যুগে ইঞ্জিলের কথা পাল্টে দেওয়া হয়েছিল। তাই আল্লাহ নবী মুহাম্মদকে পাঠিয়েছিলেন সর্বশেষ কিতাব কুরআন প্রকাশ করার জন্য।[30]