পতঙ্গ
From Wikipedia, the free encyclopedia
পতঙ্গ, কীট বা পোকা বা কীটপতঙ্গ হলো আর্থ্রোপোডা পর্বের অন্তর্গত অমেরুদন্ডীদের একটি শ্রেণী যাদের একটি করে কাইটিনযুক্ত বহিঃকঙ্কাল, একটি তিন খণ্ডের দেহ (মস্তক, ধড় ও উদর), তিন জোড়া করে সংযুক্ত পা, জটিল পুঞ্জাক্ষি, এবং এক জোড়া করে শুঙ্গ বা এ্যান্টেনা রয়েছে। দেহের রক্তপূর্ণ গহ্বর হিমোসিল নামে পরিচিত। এরা হল পৃথিবীর প্রাণীদের মধ্যে সবচাইতে বৈচিত্রময় যাদের দশ লাখেরও বেশি বর্ণনাকৃত প্রজাতি রয়েছে এবং এখন পর্যন্ত জানা জীবন্ত জীবকূলের অর্ধেকেরও বেশির প্রতিনিধিত্ব এরাই করে।[1][2] এখন পর্যন্ত বিদ্যমান প্রজাতির সংখ্যা ৬০ লক্ষ থেকে ১ কোটির মধ্যে।[1][3][4] এরা সম্ভবত পৃথিবীর ৯০ শতাংশেরও বেশি বিসদৃশ প্রাণীর প্রতিনিধিত্ব করে।[5] প্রায় সব ধরনের পরিবেশেই এদেরকে পাওয়া যায়।
কীটপতঙ্গ সময়গত পরিসীমা: ৩৯.৬–০কোটি আদি ডেভোনিয়ান–বর্তমান | |
---|---|
ফুলের মধুপানরত সাধারণ মৌমাছি | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | আর্থ্রোপোডা |
উপপর্ব: | ম্যান্ডিবুলাটা |
শ্রেণী: | ইনসেক্টা লিনিয়াস, ১৭৫৮ |
কীটের জীবনচক্রের মাঝে ভিন্নতা রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ কীটই ডিম থেকে ফুটে বের হয়। অনমনীয় বহিঃকঙ্কাল থাকার ফলে কীটের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এর ক্রমবিকাশের সাথে বেশ কয়েকটি মোচন সংশ্লিষ্ট থাকে। অপরিণত পর্যায়ের সাথে প্রাপ্তবয়স্ক কীটের গঠন, অভ্যাস ও আবাসের মধ্যে তফাৎ থাকতে পারে এবং যেসব উপদল সম্পূর্ণ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় তাদের মধ্যে একটি নিষ্ক্রিয় পিউপা পর্যায় দেখা যায়। যেসব কীট অসম্পূর্ণ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় তাদের মাঝে পিউপা পর্যায় অনুপস্থিত থাকে, এবং প্রাপ্তবয়স্করা ক্রমাণ্বয়ে নিম্ফ পর্যায়ের মধ্য দিয়ে ক্রমবিকাশ লাভ করে।[6] সবচাইতে বৈচিত্রময় পতঙ্গের দল সপুষ্পক উদ্ভিদের সাথে সহবিবর্তনের মাধ্যমে আবির্ভূত হয়েছে।
প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ সাধারণত হাঁটা, উড়া, অথবা মাঝে মাঝে সাতারের মাধ্যমে চলাচল করে। দ্রুত অথচ স্থির চলাচলের সুবিধার জন্য অনেক কীট ত্রিপদি চলনভঙ্গি পরিগ্রহণ করে থাকে যেখানে তারা একান্তর ত্রিভূজে মাটির সাথে পা স্পর্শ করে হাঁটাহাঁটি করে। কীট হল একমাত্র অমেরুদন্ডী যারা বিবর্তনের মাধ্যমে উডডয়ন আয়ত্ত করেছে। শূক বা লার্ভার কানকো অভিযোজনের ফলে অনেক পোকা জীবনের অন্তত একটি অধ্যায়ে পানির নিচে বসবাস করে। কিছু প্রাপ্তবয়স্ক কীট জলজ এবং সাতারের জন্য অভিযোজিত। কয়েকটি প্রজাতি, যেমন ওয়াটার স্ট্রাইডার, পানির উপরিতলে হাঁটতে সক্ষম। পোকারা প্রধানত একাকী, কিন্তু কিছু কিছু, যেমন মৌমাছি, পিঁপড়া, এবং উইপোকা, সামাজিক এবং এরা বৃহৎ, সুসংগঠিত বসতিতে বসবাস করে। কতিপয় কীটে, যেমন ইয়ারউইগ বা কেন্নোপোকা, মাতৃযত্ন দেখা যায় যারা তাদের ডিম এবং বাচ্চাকে প্রহরা দেয়। পুরুষ মথেরা স্ত্রী মথের ফেরোমোনের ঘ্রাণ অনেক দূর থেকেও আঁচ করতে পারে। অন্যান্য প্রজাতিরা শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগ করেঃ ঝিঁঝিঁ পোকারা তাদের ডানাকে একসাথে ঘসে শব্দ উৎপন্ন করে যা সঙ্গীকে আকর্ষণ করে এবং পুরুষকে বিকর্ষণ করে। জোনাকিপোকা আলোর সাহায্যে যোগাযোগ সম্পন্ন করে।
মানুষ, কিছু নির্দিষ্ট পতঙ্গকে বালাই হিসেবে বিবেচনা করে, এবং কীটনাশক ও অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করে এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা চালায়। কতিপয় পোকা প্রাণরস, পাতা ও ফল ভোজন করে শস্যের ক্ষতি করে থাকে। অল্পসংখ্যক পরজীবীয় প্রজাতি রোগসৃষ্টিকারি বা প্যাথজেনিক। কয়েক ধরনের কীটের রয়েছে জটিল বাস্তুগত ভূমিকা। যেমন, ব্লো ফ্লাই, পূতিমাংস বা ক্যারিয়ন ভক্ষণে সহায়তা করে আবার রোগও ছড়ায়। পতঙ্গ পরাগবহনকারীরা বহুসংখ্যক সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতির জীবন-চক্রের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। মানুষসহ অধিকাংশ জীবসত্তা এদের উপর কোনো না কোনোভাবে নির্ভরশীল। এসব পতঙ্গ ছাড়া জীবমন্ডলের (মানুষসহ) স্থলজ অংশ বিধ্বস্ত হয়ে যেত।[7] অন্যান্য বহুসংখ্যক কীট পরিবেশগতভাবে উপকারি, যেমন, শিকারি পোকা এবং অল্পসংখ্যক অন্যান্য পোকা সরাসরি অর্থনৈতিক উপকার সাধন করে। রেশম পোকা এবং মৌমাছিকে যথাক্রমে রেশম এবং মধু উৎপাদনের জন্য মানুষ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। কতিপয় সংস্কৃতিতে, নির্দিষ্ট কিছু প্রজাতির শূক অথবা প্রাপ্তবয়স্ক পোকা মানুষের খাদ্যের উৎস যোগায়। উদাহরণ: পিপীলিকা, আরশোলা, চিংড়ি ইত্যাদি।