ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহ
পৃথিবীর আদি ভাষা পরিবারের একটি / From Wikipedia, the free encyclopedia
ইন্দো-ইউরোপীয় বা হিন্দ-ইউরোপীয় ভাষাসমূহ (ইংরেজি: Indo-European languages) হল পশ্চিম ও দক্ষিণ ইউরেশিয়ার স্থানীয় একটি ভাষা পরিবার। এটি উত্তর ভারতীয় উপমহাদেশ এবং ইরানীয় মালভূমির ভাষাসমূহের সাথে অধিকাংশ ইউরোপের ভাষাসমূহ নিয়ে গঠিত। এই পরিবারের কিছু ইউরোপীয় ভাষা যেমন, ইংরেজি, ফরাসি, পর্তুগিজ, রুশ, ডেনীয়, ওলন্দাজ ও স্পেনীয় ভাষাসমূহের আধুনিক যুগে উপনিবেশবাদের দরুণ বিস্তার ঘটেছে এবং বর্তমানে অনেক দেশে এই ভাষাগুলোতে কথা বলা হয়ে থাকে। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারটিকে বিভিন্ন শাখা বা উপ-পরিবারে বিভক্ত করা হয়, যেগুলোর মধ্যে আটটি শাখা এখনও বিদ্যমান, যথা: আলবেনীয়, আর্মেনীয়, বাল্টো-স্লাভীয়, কেল্টীয়, জার্মানীয়, হেলেনীয়, ইন্দো-ইরানীয় এবং ইতালীয়; এবং বাকি ছয়টি শাখা বর্তমানে বিলুপ্ত।
| |
---|---|
ভৌগোলিক বিস্তার | প্রাক্-ঔপনিবেশিক যুগ: ইউরেশিয়া, এবং উত্তর আফ্রিকা; বর্তমান: বিশ্বব্যাপী। |
ভাষাগত শ্রেণীবিভাগ | বিশ্বের ভাষা পরিবারসমূহের অন্যতম একটি |
প্রত্ন-ভাষা | প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় |
উপবিভাগ |
|
আইএসও ৬৩৯-২/৫ | ine |
গ্লটোলগ | indo1319[1] |
ইউরেশিয়াতে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহের বর্তমানকালীন বণ্টন:
অনা-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহ
ফুটকিওয়ালা/ডোরাকাটা অঞ্চলগুলো দ্বারা বহুভাষিকতা প্রচলিত থাকা জায়গাসমূহ নির্দেশিত করা হয়েছে (মানচিত্র পরিবর্ধন করলে বেশি দৃশ্যমান হবে।) | |
নোটসমূহ |
|
বর্তমানে এই ভাষা-পরিবারের সবচাইতে বেশি কথিত ভাষাসমূহ হল ইংরেজি, হিন্দুস্তানি, স্পেনীয়, বাংলা, ফরাসি, রুশ, পর্তুগিজ, জার্মান, ফার্সি, পাঞ্জাবি; উল্লিখিত প্রতিটি ভাষারই ১০কোটির চাইতে বেশি বক্তা আছে। কিন্তু, আবার অনেক ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাই সংখ্যায় ছোট এবং বিলুপ্তির পথে, যেমন: কর্নিশ ভাষায় ৬০০জনের থেকেও কম লোক কথা বলে থাকে।[2]
পৃথিবীর সর্বমোট ৪৬ শতাংশ জনসংখ্যা (৩২০ কোটি) প্রথম ভাষা হিসাবে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা বলে, যা কিনা বাকি সকল ভাষা পরিবারসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি। এথনোলগ দ্বারা কৃত হিসাব অনুযায়ী ৪৪৫টি চলমান ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ভাষাই (৩১৩টি) ইন্দো-ইরানি শাখার অন্তর্গত।[3]
প্রতিটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাই একটি প্রাগৈতিহাসিক ভাষা থেকে উদ্ভুত হয়েছে, যা কিনা প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় হিসাবে পুনর্নিমিত করা হয়েছে এবং নব্যপ্রস্তরযুগ থেকে নব ব্রোঞ্জ যুগের মধ্যবর্তী কোনো সময়ে বলা হত। এটির যথাথথ ভৌগোলিক অবস্থান অজানা এবং এই বিষয়ে বিভিন্ন অনুমান করা হয়েছে, যার মধ্যে সর্বাপেক্ষা গৃহীত অনুকল্পটি হল কুর্গান অনুকল্প। কুর্গান অনুকল্প পন্টিক-কাস্পিয়ান স্তেপকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহের উৎসভূমি হিসাবে মেনে নিয়েছে এবং প্রায় ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বের ইয়াম্নায়া সংস্কৃতির সাথে এর সংযোগ স্থাপন করেছে। প্রথমবারের মতন লিপিবদ্ধ আবিষ্কার হওয়ার বহু পূর্বেই ইন্দো-ইউরোপীয় অন্য অনেক ভাষায় বিবর্তিত হয় এবং ইউরোপের বহুলাংশ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াতে কথিত হওয়া শুরু হয়। মাইসিনীয় গ্রিক এবং আনাতোলীয় ভাষাসমূহ, হিতাইট ও লুইয়ান-এর রূপে ব্রোঞ্জ যুগে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার লিখিত সাক্ষ্য পাওয়া যায়। সর্বপ্রাচীন লেখ্যগুলো হল বিশ্লিষ্ট হিতাইট শব্দ ও নাম যেগুলো বিভিন্ন লিপিতে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, অন্যথা অসম্পর্কিত প্রাচীন এসিরীয় আক্কাদীয় ভাষায় পাওয়া যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ২০শতকের পূর্ব আনাতোলিয়ার কুলতেপের এসিরীয় বসতির লেখাগুলিতে লব্ধ একটি সেমিটিক ভাষা।[4] যদিও প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় মানুষদের কোনো পুরানো লিখিত লিপি পাওয়া যায় না, তথাপি তাদের থেকে উদ্ভুত সংস্কৃতির প্রামাণ্য লিপিগুলোর সাহায্যে তাদের সংস্কৃতি ও ধর্মের কিছু কিছু বিষয় পুনর্নিমাণ করা যেতে পারে। [5] ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের জন্য ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবরার খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মিশরীয় ভাষা এবং সেমিটিক ভাষাসমূহের রূপে উপলব্ধ আফ্রো-এশীয় ভাষা পরিবারের পর উক্ত ভাষা পরিবারেরই দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ লিপিবদ্ধ ইতিহাস আছে। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহের মধ্যে সম্পর্কের বিশ্লেষণ এবং তাদের সাধারণ উৎসের পুনর্নিমাণ ১৯শ শতাব্দীতে ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের একটি শিক্ষাগত বিষয় হিসাবে উন্নত হওয়ার অপরিহার্য ও অন্যতম কারণ ছিল।
এই ভাষা পরিবারের সাথে অন্য কোনো ভাষ-পরিবারের কোনো ধরনের বংশগত সম্পর্ক নেই, যদিও বা এই নিয়ে বিভিন্ন বিতর্কিত প্রস্তাব করা হয়েছে।