Loading AI tools
রাশিয়ান ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস এবং কেজিবি এর একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আলেকজান্ডার লিটভিনেঙ্কো ছিলেন রাশিয়ান ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) এবং কেজিবি এর একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা, যিনি রাশিয়ায় আদালতের তদন্ত থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা ও স্ত্রীর মতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার পর তিনি এমআই-৬ এবং এমআই-৫ এর হয়ে কাজ করছিলেন।
যুক্তরাজ্যে, লিটভিনেঙ্কো চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদী ওয়েবসাইট, চেচেনপ্রেস এর জন্য সাংবাদিকতা করতেন। লিটভিনেঙ্কোর লিখা দুইটি বইয়ে (ব্লোয়িং আপ রাশিয়া: টেরর ফ্রম উইদিন এবং লুবায়াঙ্কা ক্রিমিনাল গ্রুপ) রাশিয়ান এপার্টমেন্টে বোমা ফাটানো এবং নানারকম সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম নাটক সাজিয়ে ভ্লাদিমির পুতিনকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য রাশিয়ান সিক্রেট সার্ভিস কে অভিযুক্ত করেছেন।
পহেলা নভেম্বর ২০০৬, লিটভিনেঙ্কো হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন সপ্তাহ পরে, তার মৃত্যু হয় মারণ-ঘাতী পোলোনিয়াম-২১০ এর তেজস্ক্রিয়া জনিত জটিলতায় সর্বপ্রথম শিকার হয়ে।[1] এফএসবি এর অনৈতিকতার বিরুদ্ধে লিটভিনেঙ্কোর অভিযোগসমূহ এবং তার অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যুর পিছনে ভ্লাদিমির পুতিনের যুক্ত থাকার জনসম্মুখে আসা প্রমাণসমূহ, বিশ্বব্যাপী প্রচারমাধ্যমের নজর কেড়ে নিয়েছিল।[2]
লিটভিনেঙ্কোর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের ধারাবাহিক তদন্তের ফলে রাশিয়া সরকারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কে বিরোধ তুঙ্গে উঠে। .২০১৪-১৫ সালের বিচারিক কার্যক্রমে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাক্ষ্য দেন " সকল তথ্য প্রমাণ নির্দেশ করে যে রাশিয়া সরকার কোন না কোনভাবেই লিটভিনেঙ্কোর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত". আরেকজন সাক্ষী দিমিত্রি কোভতুন খোলাখুলি বলে আসছেন লিটভিনেঙ্কোর হত্যার পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল "বিশ্বাসঘাতকের" শাস্তি হিসেবে "একটি উদাহরণ তৈরী করা"। এ ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন, রাশিয়ান ফেডারেল প্রটেক্টিভ সার্ভিসের (FSO) একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা আন্দ্রে লুগোভয়,রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। দ্যুমা'র সদস্য হিসেবে যিনি বিচারের আওতামুক্ত হওয়ার সুবিধা ভোগ করছেন। এ ব্যক্তি দ্যুমা'র সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগেই, ব্রিটিশ সরকার তাকে হস্তান্তর করার জন্য আহবান জানালেও তা বিফলে যায়।
এছাড়াও লিটভিনেঙ্কোর পিতা যিনি ইতালীতে বসবাসরত, মনে করেন বরিস বেরেযোভস্কি এবং আলেকজান্ডার গোল্ডফার্ব এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত[3] ২৩শে মার্চ ২০১৩ সালে বেরেযোভস্কি কে যুক্তরাজ্যে তার বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
আলেকজান্ডার লিটভিনেঙ্কো ছিলেন রাশিয়ান ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) এর প্রাক্তন কর্মকর্তা, যিনি রাশিয়ায় আদালতের তদন্ত চলাকালে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। তার রচিত ব্লোয়িং আপ রাশিয়া: টেরর ফ্রম উইদিন এবং লুবায়াঙ্কা ক্রিমিনাল গ্রুপ বইসমূহে লিটভিনেঙ্কো, তুলে ধরেন কীভাবে ভ্লাদিমির পুতিন এফএসবি এর সামরিক সহযোগিতায় (ক্যুদেঁতা-অভ্যুত্থান) ক্ষমতায় আরোহণ করেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে এফএসবি এর পরিকল্পনা হল মূলত রাশিয়ার জনগণকে মস্কো এবং অন্যান্য শহরেরএপার্টমেন্ট ভবনে বোমা হামলা করে ভয় দেখানো।[4] তিনি রাশিয়ান গুপ্তচরদের দোষী হিসেবে চিহ্নিত করেন মস্কো থিয়েটার জিম্মি সংকট সৃষ্টি করার জন্য, যাতে তাদের চেচেন এজেন্ট প্রোভোকেতিয়াঁ (ফরাসী শব্দ; অর্থ-ভাড়াটে সন্ত্রাসী) ব্যবহৃত হয়, এবং ১৯৯৯ সালের আর্মেনিয়ান সংসদে গোলাগুলির জন্য ও দায়ী করেন। তিনি আরো বর্ণনা করেন আতঙ্কবাদী 'আইমান আল জওয়াহিরি' ১৯৯৭ সালে রাশিয়ার অবস্থান কালীন সময়ে এফএসবি এর নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।[5]
লন্ডনে এসে, তিনি পলাতক রাশিয়ান পুঁজিপতি 'বরিস বেরেযোভস্কি', কে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারকার্যে সাহায্য করতে থাকেন।[6] যুক্তরাজ্যে, লিটভিনেঙ্কো চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওয়েবসাইট 'চেচেনপ্রেস' এর সাংবাদিক হয়েছিলেন।[citation needed] মৃত্যুর মাত্র দু-সপ্তাহ আগে, লিটভিনেঙ্কো দাবী করেন আনা পলিত্কোভস্কায়া এর হত্যাকান্ডের পেছনে পুতিন দায়ী ছিলেন।[7]
পহেলা নভেম্বর ২০০৬ সালে, লিটভিনেঙ্কো হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। সেদিন তিনি কেজিবি এর দুজন প্রাক্তন কর্মকর্তা, আন্দ্রে লুগোভয় এবং দিমিত্রি কোভতুন এর সাথে দেখা করেন। লুগোভয় ছিলেন রাশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইগর গইদার (তিনিও নভেম্বর ২০০৬ সালে বিষপ্রয়োগের শিকার হন) এর দেহরক্ষী এবং একটি টিভি চ্যানেল এর নিরাপত্তা শাখার প্রধান। কোভতুন বর্তমানে একজন ব্যবসায়ী। লিটভিনেঙ্কো অসুস্থ হওয়ার দিনে ইতালীয় আণবিক বিশেষজ্ঞ মারিয়ো সারামেল্লা এর সাথে মধ্যাহ্নভোজন করেন। স্থানটি ছিল ইটস্যু, নামের একটি সুশি রেস্তোরা যা লন্ডন শহরের পিকাডেলিতে অবস্থিত। তিনি সেখানে কেজিবি এর সাথে এককালীন ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী রোমানো প্রোদি এর যোগাযোগ থাকার সন্দেহ প্রকাশ করছিলেন। সারামেল্লা, মিত্রোখিন কমিশনের সাথে ইতালির রাজনীতিতে কেজিবির অণুপ্রবেশ তদন্ত করেন। তিনি সেদিন ৪৮ বছর বয়স্কা সাংবাদিক আনা পলিত্কোভস্কায়ার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তথ্য তার কাছে থাকার দাবী করেন। তিনি এ নারীর ভাগ্য কি ঘটেছে সে তথ্য সংবলিত কাগজ-পত্র লিটভিনেঙ্কোর কাছে তুলে দেন। ২০শে নভেম্বর, সারামেল্লা নিজ প্রাণভয়ে আত্মগোপনে চলে যান বলে জানা যায়।
ইতোমধ্যে পহেলা নভেম্বরের পর বেশ কয়েক দিন যাবত, লিটভিনেঙ্কো মারাত্মক উদরাময় আক্রান্ত হন এবং বমি-ভাব অনুভব করেন। এতে তিনি এত দুর্বল হন যে নিজে নিজে হাঁটা এবং উঠে দাঁড়াতে অপারগ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ব্যাথা অসহনীয় হয়ে উঠলে, লিটভিনেঙ্কো তার স্ত্রীকে সাহায্যের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে বলেন।[8] কয়েক সপ্তাহ যাবত, লিটভিনেঙ্কোর অবস্থা অবনতির দিকে যেতে থাকে এবং চিকিৎসকরা রোগের উৎস খুজতে থাকেন। এ সময় লিটভিনেঙ্কো শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন এবং অচেতন অবস্থায় থাকেন, পরিবার-পরিজনরা তার পাশেই ছিলেন। তার মৃত্যু-শয্যায় শোয়া অবস্থায় একটি ছবি তুলে প্রকাশ করা হয় এবং তিনি বলেছিলেন -আমি চাই পৃথিবীর সবাই দেখুক ওরা আমার কি হাল করেছে।[8]
উত্তর লন্ডনের স্থানীয় হাসপাতাল হতে সেন্ট্রাল লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যার জন্য স্থানান্তর করার পর, রক্ত ও মূত্র নমুনা সংগ্রহ করে যুক্তরাজ্যের আণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থে প্রেরণ করা হয়। সেখানকার বিজ্ঞানীরা তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি নিরুপণে গামা বিচ্ছুরণ (স্পেক্ট্রোস্কোপি) প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। যদিও কোন গামা রশ্মির উপস্থিতি পাওয়া যায়নি, একটি অল্প পরিমাণের শক্তির ৮০৩ কিলো-ইলেক্ট্রন ভোল্ট বিকিরণ লক্ষিত হয়। বিবিসি উল্লেখ করে যে ঘটনা ক্রমে অপর একজন বিজ্ঞানী এ সংবাদ পেয়ে এটিকে পোলোনিয়াম-২১০ হতে নির্গত গামা রশ্মি হিসেবে শনাক্ত করেন, যিনি কয়েক দশক আগে ব্রিটেন এর প্রথম আণবিক সমরাস্ত্র কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। অতীতে যেসব পরমাণু বোমা তৈরি হতো তাতে পোলোনিয়াম-২১০ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল। ২০শে নভেম্বর রাতে, লিটভিনেঙ্কোর শেষ নিশ্বাস ত্যাগের মুহূর্তে, চিকিৎসকরা জানতে পারলেন যে মারণ-ঘাতী বিষটির নাম ছিল পোলোনিয়াম-২১০। অধিকতর পরীক্ষার পর আলফা-রশ্মি শনাক্তকারী বিচ্ছুরণ (স্পেক্ট্রোস্কোপি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে মূত্র নমুনাতে পোলোনিয়াম-২১০ এর উপস্থিতির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।[9]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.