Loading AI tools
ইরাকে সক্রিয় আল-কায়েদার সাথে সংযুক্ত একটি শাখা সংগঠন। উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আল-কায়েদা ইন ইরাক(AQI) বা আল-কায়েদা ইন মেসোপটেমিয়া ছিল ইরাকে সক্রিয় আল-কায়েদার সাথে সংযুক্ত একটি শাখা সংগঠন। প্রথম ১৯৯৯ সালে জর্ডানি বংশোদ্ভূত জিহাদি নেতা আবু মুসয়াব আল জারকাভি জামাত আল তাওহিদ আল জিহাদ নামে গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৪ তিনি এটিকে আল কায়েদার সাথে সংযুক্ত করেন এবং ২০০৬ সালে এটির নাম আল কায়েদা ইন ইরাক বা আল কায়েদা ইরাক শাখা রাখা হয়। এরপর জারকাভি মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হলে গ্রুপের নেতারা আল কায়েদার কমান্ড থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এরপর গ্রুপটির নাম ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক রাখা হয় এবং শেষ পর্যায়ে এই গ্রুপটিই ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্টে পরিণত হয়। ২০১৪ সালে গ্রুপটি আল কায়েদা সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।[1][2]
১৯৯৯ সালে দলটি প্রথম জর্ডানের জিহাদি নেতা আবু মুসাব আল জারকাভির নেতৃত্বে জামাত আল তাওহিদ ওয়াল জিহাদ নামে গঠিত হয়। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন জোটের আগ্রাসন ও ইরাক দখলের পাঁচ মাস পর গ্রুপটি জাতিসংঘের প্রতিনিধি, ইরাকি শিয়া প্রতিষ্ঠান ও মার্কিন বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইরাকে বোমা হামলা শুরু করে।
২০০৬ সালের ৭ জুন গ্রুপটির নেতা আল-জারকাভি ও তার আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা শেখ আব্দুর রহমানসহ প্রায় ৫০০ জন সদস্য মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হন। এরপর গ্রুপের নেতৃত্ব মিশরীয় জিহাদি আবু আইয়ুব আল-মিসরি গ্রহণ করেন। তিনি যিনি আবু হামজা আল-মুহাজির নামেও পরিচিত।[3]
২০০৫ সালের জুলাই মাসে আল-জারকাভীকে লেখা একটি চিঠিতে আল-কায়েদার নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি ইরাকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া থেকে শুরু করে চার ধাপবিশিষ্ট একটি পরিকল্পনার রূপরেখা দেন।
১ম ধাপ: ইরাক থেকে মার্কিন বাহিনীকে বহিষ্কার।
২য় ধাপ: ইরাকে ইসলামি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
৩য় ধাপ : প্রতিবশী ধর্মনিরপেক্ষ দেশগুলিতে জিহাদের তরঙ্গ প্রসারিত করা।
২০০৩ সাল থেকে আল কায়েদা ইন ইরাক বিচ্ছিন্ন হামলা পরিচালনা করা শুরু করে। ২০০৪ সাল থেকে এটি নিয়মিত নিজের উপস্থিতি জানান দিতে থাকে। বিশেষ করে ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন সেনাবাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট শিয়ারা নিয়মিত তাদের হামলার শিকার হতে থাকে। ২০০৪ সালের অক্টোবরে গোষ্ঠীটি জাপানি নাগরিক শোসেই কোডাকে অপহরণ করে।[6] একটি অনলাইন ভিডিওতে গোষ্ঠীটি ইরাক থেকে জাপানি সৈন্য প্রত্যাহার করার জন্য জাপানকে ৪৮ ঘন্টার সময় বেধে দেয়। অন্যথায় কোডার ভাগ্য তার পূর্বসূরী বার্গ, বিগলি ও অন্যান্য কাফেরদের মতো হবে বলে জানিয়ে দেয়।[7] জাপান সরকার এই দাবি মানতে অস্বীকার করলে কোডার শিরশ্ছেদ করা হয় এবং ৩০ অক্টোবর তার খণ্ডিত দেহ পাওয়া যায়।[8] ২০০৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর গোষ্ঠীটি শিয়াদের পবিত্র শহর নাজাফ ও তার নিকটবর্তী শহর কারবালায় গাড়ি বোমা হামলার দায় স্বীকার করে।[9]
২০০৫ সালে গোষ্ঠীটির দাবি করা হামলার মধ্যে রয়েছে:
শরৎ 2006, AQI দিয়ালা গভর্নরেটের রাজধানী বাকুবাহ দখল করে এবং 2007 সালের মার্চের আগে, AQI বা এর ছাতা সংগঠন ' ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক ' (আইএসআই) বাকুবাহকে তার রাজধানী হিসেবে দাবি করে।[20]
২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে তাল আফার শহরে মার্কিন আক্রমণের পর আল-জারকাভী মার্কিন মদদপুষ্ট ইরাকী শিয়াদের বিরুদ্ধে "সর্বস্ব যুদ্ধ" ঘোষণা করেন।[22]
২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দেশীয় ইরাকি সুন্নি বিদ্রোহীদের মধ্যে বিভক্তির লক্ষণ দেখা দেয়। এতে মৌলিকভাবে দুইটি দল দেখা যায়: প্রথমত, যারা জাতীয় রাজনীতিতে সুন্নি প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছিল[23] এবং সে লক্ষ্যে ২০০৫ সালের ১৫ অক্টোবরে আয়োজিত গণভোটে "না" ভোটকে সমর্থন করেছিল[24]; দ্বিতীয়টি আল-জারকাভীর নেতৃত্বাধীন আল কায়েদা ইন ইরাক, যারা একটি ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রাম শুরু করেছিল এবং যারা শিয়া ও কুর্দিদের সাথে জাতীয় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জড়িত হওয়ার লক্ষ্যে সেই গণভোটে অংশ নেবে, তাদের হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল।[23][24]
২০০৬ এর মাঝামাঝি থেকে উপজাতীয় নেতারা AQI কে তাদের শক্ত ঘাটি গ্রামীণ আনবার প্রদেশ থেকে ফালুজা ও কাইম পর্যন্ত প্রকাশ্য যুদ্ধে ঠেলে দিতে শুরু করে। এই প্রচারাভিযানে ইরাকি সরকার উপজাতীয় শেখদের প্রতি মাসে $৫,০০০ পর্যন্ত নগদ উপহার এবং নির্দিষ্ট বেতন প্রদান করে সহায়তা করে।[25] ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে আনবার প্রদেশে ৩০ জন উপজাতি AQI এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য "আনবার জাগরণ" নামে একটি জোট গঠন করে।[26]
২০০৬ সালে আবু মুসয়াব আল জারকাভী নিহত হওয়ার পর আল কায়েদা ইন ইরাক স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠো এবং আল কায়েদার হাই কমান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে এটি ইরাকে সুন্নি বিদ্রোহীদের একত্রিত করার প্রয়াসে মুজাহিদিন শুরা কাউন্সিল (MSC) নামে একটি সংগঠন তৈরি করে। এরপর ২০০৬ সালের ১৩ অক্টোবর MSC ইরাকের ছয়টি সুন্নি আরব গভর্নরেট নিয়ে গঠিত ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক (ISI) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। গভর্নেটগুলি হল: বাগদাদ, আনবার, দিয়ালা, কিরকুক, সালাহ উদ্দীন, নিনাওয়া ও বাবেলের কিছু অংশ। আবু ওমর আল-বাগদাদিকে রাষ্ট্রের আমির ঘোষণা করা হয়। মুজাহিদীন শুরা কাউন্সিলের এক নেতা বলেন, আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এখানে শরিয়া আইন স্থাপন করব এবং আমরা মার্কিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। শুরা কাউন্সিল সুন্নি মুসলিম উপজাতীয় নেতৃবৃন্দকে আমাদের ধর্ম ও জনগণকে রক্ষা করা, বিবাদ প্রতিরোধ করা এবং শহীদদের আত্মত্যাগ নষ্ট যেন বৃথা না হয় সে লক্ষ্যে ইসলামিক স্টেটে যোগদান করার আহ্বান জানায়।
এরপর ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল আল-বাগদাদী কর্তৃক গ্রুপটির নাম ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে ২০১১ সালের ৪ অক্টোবর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর আবু বকর আল-বাগদাদীকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে এবং তাকে জীবিত বা মৃত গ্রেফতারের তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য $১০ মিলিয়ন পুরস্কার ঘোষণা করে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২৯ জুন গোষ্ঠীটি খিলাফত ঘোষণা করা এবং আবু বকর আল-বাগদাদীকে এর খলিফা হিসেবে মনোনীত করে। তখন থেকে আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেট সম্পূর্ণরূপে পৃথক হয়ে যায় এবং আল কায়েদা এটিকে চরম ফেতনা হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়।[27]
২০০৫ সালের অক্টোবরে মার্কিন গোয়েন্দারা আইমান আল-জাওয়াহিরির পক্ষ থেকে প্রেরিত একটি চিটি জব্দ করে। এতে তিনি ইরাকে শিয়াদের উপর নির্বিচারে আক্রমণ করা নিয়ে AQI এর কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।[28]
২০০৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে আল জাওয়াহিরি সাবেক আল কায়েদা ইন ইরাকের কিছু বিশ্বাসঘাতক কর্তৃক সংঘটিত বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে অপরাধ থেকে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করেন।[29]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.