Loading AI tools
আক্কাদীয় সাম্রাজ্যের প্রথম শাসক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
এই প্রবন্ধটি আক্কাদীয় রাজার ব্যাপারে, এস্যাইরিয়ান রাজাদের ব্যাপারে দেখতে চাইলে সরগন ১ম ও সরগন ২য় । ইউটিউবারদের জন্য দেখুন কার্ল বেঞ্জামিন
আক্কাদীয় সরগন 𒈗𒁺 | |
---|---|
| |
King of the Akkadian Empire | |
রাজত্ব | c. ২৩৩৪–২২৮৪ খ্রিস্টপূর্ব (MC) |
উত্তরসূরি | রিমুস |
দাম্পত্য সঙ্গী | তাসলুলতুম |
বংশধর | মানিসতুসু, রিমুস, এনহেডুন্না, ইবারুম, আবাইস-তাকাল |
রাজবংশ | আক্কাদীয়ান(সরগনিক) |
পিতা | লাইবুম |
আক্কাদীও সরগন (আক্কাদীয়ানঃ সারু-উকিন বা সারু-কেন) যাকে অনেক সময় মহান সরগনও বলা হয়ে থাকে। তিনি ছিলেন আক্কাদীয়ান সম্রাজ্যের প্রথম শাসক, তিনি ২৪-২৩ শতাব্দীর সুমেরিয়ান নগর রাজ্যের বিজয়াভিযানের জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন।
তিনি “সারগনিক” বা প্রাচিন আক্কাদীয়ান রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা, যেটি তার মৃত্যু পরবর্তী সুমের এর গুটিয়ান অভিযান পর্যন্ত একশো বছর রাজত্ব করেছে। সুমেরিয়ান রাজাদের তালিকা অনুযায়ী সে ছিল কিস এর রাজা উর-জাবাবা এর মদ্য-পরিবেশক। মেসপটেমিয়া অধিকাংশ, লিভান্টের অংশবিশেষ, হুরিত্তে ও এলামিটে আক্রমণে প্রাপ্ত এলাকা তার সম্রাজ্যের অধিগ্রহণে ছিল, সে তার রাজধানী আক্কাদ (প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবে এখনো অনাবিষ্কৃত) থেকে রাজ্য পরিচালনা করত।
৮ম-৭ম শতাব্দীর নিও-আস্যারিয়ান সাহিত্যে সরগন একজন কিংবদন্তি হিসেবে প্রতীয়মান হয়। আসুরবানিপাল পাঠাগারে সরগনের জন্মলগ্নের চমকপ্রদ ইতিহাস সংবলিত ফলকের টুকরা পাওয়া গিয়েছে।
আক্কাদীয়ান নামকে প্রচলিত ভাষায় সারু-উকিন অথবা সারু-কেন বলা হয়, কীলকাকার পদ্ধতি অনুযায়ী এই নামের বানান বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে যেমন, লুগাল-উ-কিন, সার-রু-জেন, সার-রু-কিন-ইন, সার-রু-উম-কি-ইন ইত্যাদি। মৃত আস্যারিয়ান তথ্যসূত্র অনুযায়ী নামের বানান বেশিরভাগই ক্ষেত্রেই “লুগাল-জি।না” বা “লুগাল-জিন” হবে, যেটি আবার কিনা নিও-আস্যারিয়ান রাজা সরগন ২য় এর নামের সাথে মিল আছে। উল্লেখ্য যে নামের বানান টি হিব্রু বাইবেলের আইজ্যাক ২০:১ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত একবার বানান থেকে উদ্ভূত (সরগন ২য় এর তথ্যসূত্র অনুযায়ী)।
নামের প্রথম উপাদানটি হল সাররু, যার আক্কাদীয়ান মানে (পূর্ব সেমেটিক অনুযায়ী) হল রাজা, যাকে হিব্রুতে তুলনামুলকভাবে “স্যার” উচ্চারণ করা হয়, আর নামের দ্বিতীয় উপাদানটি উদ্ভূত হয়েছে “কিনুম” উচ্চারনের ক্রিয়া থেকে যার মানে “প্রতিস্থাপন করা বা নিশ্চিত করা” হিব্রুতে যাকে “কুন” নামে উচ্চারণ করা হয়।
সারু-উকিন নাম এর একটি সম্ভাব্য অনুবাদ হতে পারে যে “রাজা দ্বারা স্থাপিত স্থিতি/সাম্যতা” বা “প্রভু দ্বারা রাজার প্রতিস্থাপন”, যদিও এরকম একটি নাম অনেকটাই বেমানান, অন্যান্য নামের মধ্যে ইন-উকিন নামটি একই সাথে কর্তা ও কারক এর কাজ করে থাকে যেমন; ‘সামাস-সুমা-উকিন’ মানে ‘সামাস একজন উত্তরসূরি প্রতিষ্ঠা করেছেন’। উক্ত নাম গৃহীত রাজাংকের (অলঙ্কার স্বরূপ) নাম না জন্ম নাম এ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। অন্যদিকে সারু-কেন নামটি ‘সিংহাসনে আসিন বৈধ রাজা’ (গুনবাচক) নাম হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে, যা সারুম-কি-নুম বাক্য আকারে পরে বর্ধিত হয়েছে।
আক্কাদের সারগনের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব নিশ্চিত হবার আগেই সরগন-পূর্ব ও সরগন-পরবর্তী এই শব্দ দুটি নাবনিডাসের ক্রমধারার উপর ভিত্তি করে আস্যিরিওলজি তে ব্যবহৃত হয়েছে। বলা হয়ে থাকে নিনেভ এ অবস্থিত আসুরবানিপাল পাঠাগারে, ১৮৬৭ সালে আবিষ্কৃত আস্যাইরিয়ান সরগন কিংবদন্তি থেকেই সারু-উকিন নাম গঠিত হয়েছিল। সরগন এর অধীনস্থ ইবনি-সারু নামের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সিলিন্ডার সিল থেকে সরগন এর তৎকালীন যোগসূত্র পাওয়া যায়, ১৮৭৭ সালে যোয়াচিম মিনান্ত নামে এক ব্যারিস্টার এই সিল এর বিবরন প্রকাশ করেছিলেন, এতে রাজার নাম পাওয়া গিয়েছিল ‘সেগানি-সার-লুক’ নামে যদিও ‘প্রৌঢ় সরগন’ নামটিকে চিহ্নিত করা যায় নি (যাকে কিনা খুজে পাওয়া গিয়েছিল প্রাচীন আস্যারিয়ান রাজা সরগন ১ম এর সাথে)। ১৮৩৩ সালে ব্রিটিশ জাদুঘর “সারগানি-সারি এর রাজদণ্ড” অধিগত করে যা কিনা সিপ্পার এর সমসা মন্দিরে ব্রত-উপহার হিসেবে জমা হয়েছিল, এই সারগানি টি আস্যাইরিয়ান কিংবদন্তির আগাদের সরগন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল, কিন্তু ১৯১০ সাকে সরগন দ্বারা “সার-গানি-সারি” কে চিহ্নিত করা ভুল হিসেবে প্রকাশ পায়, আসলে সার-গানি-সারি(সার-কালি-সাররি) ছিলেন সারগনের প্রৌপুত্র, যিনি নারাম-সিন এর উত্তরসূরি।
এটা সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার নয় যে নিও-আস্যারিয়ান রাজা ‘সরগন দ্বিতীয়’ সরাসরি আক্কাদীও সারগনের নামে নামকরণ হয়েছিলেন কিনা, যেহেতু আসল নাম বিষয়ে (সারু-উকিন ও সারু-কেনু) মতভেদ রয়েছে।
সারগনের তথ্যের প্রাথমিক উৎস খুবই বিক্ষিপ্ত, কাছাকাছি তৎকালীন তথ্যসূত্রের মধ্যে প্রধানটি সুমেরিয়ান রাজাদের তালিকার কয়েকটি সংস্করন এর মাঝে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, এখানে সারগনের পরিচয় একটি মালির ছেলে হিসেবে, যে কিশ গোষ্ঠীর রাজা উর জাবাবা এর মদ্য-পরিবেশক ছিল, যে কিনা উরুক এর রাজা লুগাল-যাগে-সি কে সিংহাসনচ্যুত করেছিল এবং রাজত্ব তার নিজ শহর আক্কাদে স্থানান্তরিত করেছিল, রাজা তালিকার বিভিন্ন সংস্করণে তার রাজত্বকাল ৫৪,৫৫ অথবা ৫৬ বছর দেখা যায়।
তার শাসনের চরমকাল, মধ্য-পরিক্রমার (লৌহ ও তাম্র যুগের মাঝামাঝি) খ্রিস্টপূর্ব ২৩৪০-২২৮৪ সালের সাথে মিলে যায়। মেসোপটেমিয়ান ইতিহাসে অনুযায়ী সুমের এর গুটিয়ান বিজয়াভিযানের আগ পর্যন্ত তার উত্তরসূরিদের সারগনিক রাজবংশ এবং তাদের শাসনকে সারগনিক রাজত্ব বলা হয়ে থাকতো।
সারগনের ৫৫ বছরের শাসনের বিপক্ষে ফস্টার (১৯৮২) বলেন যে সেটা আসলে ৩৭ বছরের শাসনের একটি ভুল অনুবাদ, তিনি আরও বলেন যে একটি অতি প্রাচীন রাজাদের তালিকা অনুযায়ী সারগনের রাজত্ব ৪০ বছরব্যাপি টিকে ছিল।
সারগনের বাবার মালি হওয়ার ঘটনাকে অনর্থবহ ইঙ্গিত করে, থরক্লিড জ্যাকবসন নামে এক ইতিহাসবেত্তা একে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাওয়া এক বিষয় বলে চিহ্নিত করেন। তিনি আরও বলেন উর-জাবাবা ও লুগাল-যাগে-সি উভয়ই তালিকাভুক্ত রাজা ছিলেন, তবে তা ভিন্নভাবে কিস গোষ্ঠীর আক্কাদীয়ান সম্রাজ্যের সাধারণ শাসক, নগরাধ্যক্ষ ও জায়গিরদারদের সাথে উচ্চারিত হত।
সারগনের আক্কাদীয়ান সম্রাজ্যের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা হওয়ার যে দাবি, তা এনসাকুসান্না নামে এক রাজার রাজ্য ও প্রথম বছর এর শাসনকালের তথ্যসূত্র সংবলিত প্রাচীন লিপি দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যাকে প্রায় তার পূর্বসুরি হিসেবে গণ্য করা হয়। ওয়েডনার এর উপাখ্যান (এ,বি,সি, ১৯:৫১) অনুযায়ী, আক্কাদের সম্মুখে ব্যাবিলন স্থাপিতকারি সরগন ছাড়া আর কেউ না, অন্যদিকে নব্য রাজাদের উপাখ্যান (এ,বি,সি, ২০:১৮-১৯) অনুযায়ী সরগন তার শাসনের শেষের দিকে ‘উত্তোলিত ব্যাবিলনের মাঠের মাটি দিয়ে আগাদের (রাজধানী আক্কাদের) সম্মুখে ব্যাবিলনের প্রতিরুপ তৈরি করেন’। ভ্যান ডে মিরুপ নামের এক ইতিহাসের অধ্যক্ষ বলেন উল্লেখিত দুই উপাখ্যান আক্কাদীও সরগন নয় বরং পরবর্তী নিও-আস্যাইরিয়ান সম্রাজ্যের আস্যারিয়ান রাজা “সরগন দ্বিতীয়” এর কথা নির্দেশ করে।
আস্যাইরিয়ান ও ব্যাবলিয়ান সাহিত্যে সরগন তার অবনমিত অবস্থান থেকে ক্ষমতায় উত্থান ও মেসোপটেমিয়া অভিযানের জন্য কিংবদন্তি গল্পের মুল উপজীব্যে পরিনত হয়েছিলেন, এরকম আরও কিছু কিছু আংশিক কিংবদন্তি
উপাখ্যান ছাড়াও সারগনের খোদ নিজের অনেক লিপি আছে যদিও তার বেশিরভাগ পরবর্তী সংস্করনগুলি থেকে নেওয়া। ল্যুভর জাদুঘরে দুটি সারগনিক বিজয় ফলক এর অংশবিশেষ আছে যা সুসা (যেখানে এগুলি খুব সম্ভবত মেসোপটেমিয়া ত্থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল) থেকে পুনঃউদ্ধার করা হয়েছিল।
দৃশ্যত সরগন সেমেটিক (আক্কাদীয়ান) ভাষার লিপির লিখিত আকারে প্রসার ঘটিয়েছিলেন, তিনি আক্কাদ শহর প্রতিষ্ঠিত করার প্রথমদিকে নিজেকে প্রায়শয়ই আক্কাদীয়ান রাজা হিসিবে প্রচার করতেন, পরে তিনি কোন এক সময় কিস শহর অধিগ্রহণ করে নেন, পরবর্তীতে মেসোপটেমিয়ার বৃহদাংশও দখল করে নেন, এবং ক্রমে ক্রমে “সরগন, আক্কদীয়ান রাজা, ইনান্নার তত্ত্বাবধায়ক, কিস এর রাজা, আনুর স্থলাভিষিক্ত, রাজ্যের[মেসোপটেমিয়া] রাজা, এনলিলের রাজ্যপাল[এনসি]” নামে নিজেকে প্রচার করে ছিলেন।
যদিও সুমেরিয়ান রাজাদের তালিকার অনেক অনুলিপিতে সারগনের শাসনকাল ৫৬, ৫৫ বা ৫৪ বছর বলা হয়েছে, কিন্তু তারিখ সংবলিত নথি অনুযায়ী তার আসল শাসনকালের শুধুমাত্র ৪ টি ভিন্ন ভিন্ন বছরের উল্লেখ পাওয়া যায়, এই চার শাসন-বছরে তিনি এলাম, মারি, সিমুররাম(একটি হুঋয়ান অঞ্চল) এবং উরুয়ার (একটি এলামিটে নগররাষ্ট্র) বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন বলে বিবরন পাওয়া যায়।
সারগনের শাসনামলে, কীলকাকার লিপির জন্য পূর্ব সেমেটিক ভাষাকে প্রমিতকরণ ও স্বীকৃতকরণ করা হয়েছিল, যা পূর্বে সুমেরিয়ান ভাষার সাথে ব্যবহৃত হত এবং বর্তমানের ‘আক্কাদীয়ান ভাষা’ হিসেবে প্রচলিত।মাটির ফলক ও স্তম্ভে, পুরাণ এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের দৃশ্য প্রথিত করার এক শিল্পস্বরুপহস্তলিপি (ক্যালিগ্রাফি) এই সময়ে বিকশিত হয়েছিল।
সারগনের শাসনামলের তথ্যের ব্যাপারে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন ব্যাবিলনিয়ান যুগের ফলকটি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ পেন্সিল্ ভেনিয়ায় অবস্থিত যা ১৮৯০ সালে নিপ্পুর শহর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিলো, এই ফলকটি এনলিলের মন্দিরে সারগনের দ্বারা স্থাপিত একটি মূর্তির স্তম্ভের অনুলিপি, এই ফলকের লিপি সম্পাদনা করেন আরনো পেবেল নামের এক অধ্যাপক(১৯০৯) ও লিওন লিগ্রাইন(১৯২৬) নামের এক ভদ্রলোক।
এই লিপি অনুযায়ী সরগন নিজেকে “সরগন, আক্কদীয়ান রাজা, ইনান্নার তত্ত্বাবধায়ক, কিস এর রাজা, আনুর স্থলাভিষিক্ত, রাজ্যের[মেসোপটেমিয়া] রাজা, এনলিলের রাজ্যপাল[এনসি] ইত্যাদি নামে ডাকতে সাছন্দ্যবোধ করতেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, অধিকন্তু এই লিপিতে রাজা সারগনের উরুক এর বিজয় ও রাজা লুগালজাগেসির পরাজয়কে উদযাপন করা হয়েছে, যাকে রাজা সরগন কলার ধরে এনলিল এর প্রবেশদ্বার পর্যন্ত এনেছিলেন।
এরপর সরগন উর ও ই-নিন্মার হাসিল করেন এবং লাগাস থেকে সমুদ্র পর্যন্ত ধ্বংসলীলা চালান, সেখান থেকে তিনি আবার অভিযানে রওনা দেন এবং উম্মা (বর্তমানে ইরাকের শহর) ধ্বংস করেন, পরে তিনি মারি ও এলাম থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করেন, সর্বমোট তিনি ৩৪ টি শহর দখল করেন, মেলুহহা , মাগান ও দিলমুন থেকে আগত জাহাজ সারগনের আক্কাদের রাজধানীতে নোঙর করত। দাগান(লেভান্টাইন ঈশ্বর) এর পূজারী সরগন মেসোপটেমিয়ার উত্তরাংশ, লেভান্ট, মারি, ইয়ারমুটি (জারমুথ?), ইব্লা, কেদার বন(আমানুস), সোনালি পাহাড়(আলাদাঘ?) ভুমধ্যসাগর থেকে পারসিয়ান সাগর পর্যন্ত দখল করেছিলেন। সরগন একটি ৪৫০০ সৈন্যের সেনাবাহিনীর ভরণপোষণ করতেন।
চারটি ব্যাবিলনীয় লিপির একটি সমস্টি যা 'সারগনীয় মহাকাব্য' বা 'রেস গেস্টে সারগনিস' নামে পরিচিত, সরগনকে এমন একজন সামরিক শাসক হিসেবে প্রতিয়মান করছে যে অভিযানে যাবার আগে তার অধিনস্থদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করত। সংকটময় মুহুর্তে সারগনের গল্প, বিজয়ী নেতা এইসব উপাখ্যান সারগনের কোর্টে উপস্থাপিত হত। সরগন তার যোদ্ধাদের দেখাশুনা করত, তাদের বীরত্বের প্রশংসা করত, রাজসভাসদদের দ্বারা বীরশ্রেষ্ঠদের গৌরবের বর্ণনা করাতেন। সংকটময় মুহুর্তে সরগন তার দুরবর্তী উটা-রাস্পাস্টিম, সূর্যের অন্ধকারাচ্ছন্নতা, সিমুররাম এর অভিযান, বীরত্বের প্রশংসা, রাজসভাসদদের দ্বারা বীরশ্রেষ্ঠদের গৌরবের এবং আনুষ্ঠানিক বানী সংবলিত উপ্পাখান দিয়ে তার যোদ্ধাদের উৎসাহিত করতেন।
রাজা সরগন তার বনিকদের রক্ষা করার জন্য পুরুসান্ধার শহর এনাটোলিয়ান আক্রমণ করেন যা 'যুদ্ধের রাজা' উপাখ্যান নামে পরিচিত। এই উপাখ্যান এর হিটাট ও আক্কাদীয়ান উভয় সংস্করণই পাওয়া গিয়েছে। হিটাটি সংস্করণ ৬ খণ্ডে বিভক্ত, আর আক্কাদীয়ান সংস্করণ আমারনা, আসসুর, নিনেভইত্যাদি পান্ডুলিপিতে খুজে পাওয়া যায়। উক্ত সংস্করণটি সরগনকে ১৯ শতকের ব্যক্তিত্ব হিসেবে ফুটিয়ে তোলার জন্য অসংগতিপূর্ণ হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই একই উপাখ্যানে সারগনের ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করে কুপ্পারা পৌছানোর কথা বলা হয় যাকে কিছু লেখক আক্কাদীয়ান শব্দে 'কেফটু' অনুবাদ করেছেন, যা ক্রিটি বা সাইপ্রাস এর সাথে সংযুক্ত।
সারগনের রাজত্ব তার শাসনকালের শেষের দিকে দুর্ভিক্ষ ও বহিঃআক্রমনের শিকার হয়েছিলো। নব্য রাজাদের উপাখ্যান অনুযায়ী সারগনের শাসনামলের শেষ দশ বছরে অনেক সারাদেশ জুড়ে অনেক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিলো।
"সারাদেশ সারগনের বৃদ্ধ বয়সে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহে করে, যখন বিদ্রোহীরা তাকে আক্কাদে ঘিরে ফেলে, সরগন তখন সম্মুখসমর এ জড়িয়ে পরেন, তিনি তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেন, তাদের সমুলে উৎপাটন করেন, এর পর তিনি তার সর্বশক্তি দিয়ে সুবারতু আক্রমণ করেন, সেখানে বাকি বিদ্রোহীরা তাদের অস্ত্রশস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করে, এভাবে সরগন তাদের পরাজিত করে বিদ্রোহ দমন করেন, তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেন, তাদের সমুলে উৎপাটন করেন এরপর তিনি বিজয়লব্ধ সম্পদ আক্কাদে নিয়ে আসেন, ফিরে এসে তিনি ব্যবিলনের মাঠ থেকে যুদ্ধের পরিখা মাটি এবং আক্কাদের চারপাশের দেয়াল সরিয়ে ফেলেন। কিন্তু তার অন্যায়ের ফলে মহাপ্রভু মারডুক অনেক তার ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন, তিনি সারগনের প্রজাদের দুর্ভিক্ষ দিয়ে বিধ্বংস করে দেন, এর ফলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রজারা সারগনের বিরোধিতা করেছিল এবং তাকে মানসিক অশান্তিতে রেখেছিল।"
এডলফ লিও অপেনহাইম শেষ বাক্যের অনুবাদ করেন এভাবে “পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত তিনি(মারডুক) বিচ্ছিন্ন করেন(প্রজাদের) তার(সরগন) থেকে এবং আনয়ন করেন (তার প্রতি শাস্তিস্বরূপ), যাতে সে শান্তিলাভ করতে না পারে(তার কবরেও)।”
সুমের দখল করার অনতিবিলম্বে, সরগন সমগ্র উর্বর চন্দ্রকলা অধিগ্রনের প্রয়াসে কয়েকটি অভিযানের উদ্দেশে বেরিয়ে পরেন। নব্য রাজাদের উপাখ্যান অনুযায়ী, ব্যবিলনিয় পরবর্তী একটি ঐতিহাসিক লিপি বর্ণনা করে;
“সারগনের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না, না ছিল কোন সমসাময়িক, তার ঐশ্বর্য ছিল বিস্তৃত ভূমি পর্যন্ত ছড়ানো, সে অতিক্রম করেছিল পূর্বেউরুকেরর সমুদ্র, এগারো বছর বয়সে সে পশ্চিমাঞ্চলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দখল করেছিল, সে পুরো অঞ্চলকে একক কর্তৃত্বের বশে এনেছিলেন, তিনি সেখানে তার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এবং খেয়াপার করে পূর্বের লুটের মাল তার রাজধানীতে ফেরত এনেছিলেন, সে তার রাজসভাসদদের দ্বৈত পাচ ঘণ্টার বিরতিতে নিয়োগ করতেন, এবং এভাবে তিনি সমগ্র দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর উপর অখণ্ডভাবে শাসন করতেন। তিনি কাজাল্লু আক্রমণ করেন এবং, কাজাল্লুর এমন ক্ষয়সাধন করেন যে কাজাল্লুতে একটি পাখি বসার ও জায়গা ছিল না।“
সরগন পূর্ব দিগন্তে আওয়ান রাজার নেতৃত্বে এলামের চার নেতার পরিচালিত একটি আগ্রাসন প্রতিহত করেন,এবং পরবর্তীতে তাদের শহরগুলি আক্রমণ করেন, এতে তাদের রাজ্যপাল, সুসার রাজা, রাজপ্রতিনিধি, বারহাসে এবং প্রতিবেশী জেলাগুলি তার অধিনে চলে আসে।
সুমেরিয়ান ভাষায় সারগনের কিংবদন্তি, মূলত সারগনের ক্ষমতার শীর্ষে ওঠার এক উপকথা, এটি একটি আগের এস্যারিয়ান উপকথার পুরানো সংস্করন, যেটি ১৯৭৪ সালে নিপ্পুরে আবিষ্কৃত হয় এবং ১৯৮৩ সালে সম্পাদিত হয়।
বর্তমানের সহজলভ্য সংস্করণগুলি অসম্পূর্ণ, কিন্তু টিকে থাকা লিপির অংশবিশেষ অনুযায়ী সারগনের বাবার পাওয়া যায় লাইবাম, এবং একটু লেকুনার (কোনো লেখার হারিয়ে যাওয়া অংশ) পর লিপিটি সরাসরি কিস এর রাজা উর-জাবাবার কথা উল্লেখ করে যে কিনা একটি স্বপ্নের পর জেগে উঠেছে, যদিও স্বপ্নের ফজিলতের অংশ ফলকের কোথাও খুজে পাওয়া যায় নি। উর-জাবাবা দ্বারা সারগনের মদ্য-পরিবেশক হওয়ার কারণ এখানেও অপ্রকাশ্য, এরপর কিস এর রাজা উর-জাবাবা সারগনের প্রতি দেবী ইনান্না দ্বারা সাহায্য ও উর-জাবাবাকে সাস্তি দেবার একটি স্বপ্নের আলোচনার জন্য সারগণকে তার কক্ষে আমন্ত্রণ জানান, ভীতসতন্ত্র উর-জাবাবা সারগনের স্বপ্নের কথা জানতে পেরে, সারগণকে হত্যার জন্য কামার প্রধান বেলিস টিকালকে নির্দেশ দেন, কিন্তু দেবী ইনান্না এই কু-চক্রান্ত প্রতিহত করেন, তিনি সারগণকে প্রবেশদ্বারে বসে রক্তে দুষিত হওয়ায় থামতে বলেন, যখন সরগন রাজা উর-জাবাবার কাছে ফিরে যায়, তখন রাজা সারগণকে বেচে থাকতে দেখে আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পরেন এবং সারগণকে উরুকের রাজা লুগাল-জাগে-সি এর নিকট একটি মাটির ফলকের লিপির সহিত প্রেরন করেন যেটিতে সারগণকে হত্যা করার অনুরোধ ছিল, এই পর্যন্ত এসে উপকথাটির বাকি অংশ আর খুজে পাওয়া যায়নি, সম্ভবত বাকি অংশে সারগনের রাজা হওয়ার কাহিনির বর্ণনা ছিল।
রাজার স্বপ্নের অনুবাদের অংশটুকুর সাথে বাইবেলের জোসেফের ঘটনার মিল পাওয়া যায়, আর মৃত্যুর আদেশের ঘটনার সাথে, বাইবেলের উরিয়াহ গল্প ও গ্রিক বেলেরফেনের গল্পের মিল পাওয়া যায়।
৭ম শতাব্দীর একটি নিও আস্যাইরিয়ান লিপি যেটি সরগনের আত্মজীবনী হিসেবে বেশি পরিচিত, সেতি অনুযায়ী মহান রাজা একজন ধর্মযাজিকার বৈধ সন্তান, এই লিপির তিনটি বিছিন্ন অংশ থেকে শুধু প্রারম্ভ (প্রথম দুই লাইন) জানা গিয়েছে, যা ১৮৫০ শতকের প্রথম দিকে আবিষ্কৃত হয়েছিলো।
সরগনের জন্ম ও শৈশবকাল সম্পর্কে একটি বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হল;
“আমার মা ছিলেন এক উচ্চমাপের ধর্মযাজিকা, বাবা সম্পর্কে আমার আমার স্মৃতি কম, আমার চাচারা পাহাড় ভালবাসতেন, আমার শহরের নাম আজুপিরানু, যা ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত, আমার জন্মদাত্রী ধর্মযাজিকা মা, গোপনে আমার লালন পালন করেছেন, একসময় তিনি আমাকে একটি গতিশীল ঝুড়িতে বসিয়ে এর ঠাকনা আলকাতরা দিয়ে বন্ধ করে দেন, এবং ভাসিয়ে দেন সেই নদীতে যার পাশে আমি বড় হুয়েছি, সেই নদি আমাকে ভাসিয়ে আক্কি নিয়ে আসে, আক্কি আমাকে নদি থেকে টেনে নেয়, আক্কি আমাকে পুষে বড় করে, আক্কি আমাকে মালির কাজ দেয়, আমি যখন মালি ছিলাম তখন ইসতার আমাকে তার ভালবাসায় অনুগ্রাহী করে, এবং তার চার ও......... বছর আমি রাজ্য শাসন করেছি”
১৯০৯ সালে অট্ট র্যাঙ্ক নামে এক মনোবিজ্ঞানী, সরগনের জন্মের উপকথা ও প্রাচীন সাহিত্যের মুসা, কারণা, অডিফাস এর শিশুকালের ঘটনার সাদৃশ্য তুলে ধরেন। ব্রায়ান লুইস নামের এক ভদ্রলোক এই উপকথা আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করেন এবং ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক শিশু জন্মের রুপকথার উদাহরনের সাথে এর তুলনা করেন। তিনি সরগনের উপকথা ও মুসার জন্মের মিলের ব্যাপারে ইঙ্গিত প্রকাশ করেন, এরকম তুমলনামুলক ব্যাখ্যা জোসেফ ক্যাম্পবেল ও দিয়েছিলেন।
বাইবেলের নিমরুদের সত্তা বা প্রেরণার উৎসের অনেক গুলি প্রতিকৃতির মধ্যে সরগনকে ধরা হয়ে থাকে এর মধ্যে, ইউইং উইলিয়াম(১৯১০) বলেন যে সরগন আস্যারিয়ান এবং ব্যাবিলনিয়ান উপকথার সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছেন, ইয়াগাল লেভিন(২০০২) বলেন নিমরুদ, শুধুমাত্র সরগন ও তার নাতি নারাম-সিন এর এক অনুধ্যায় মাত্র, যেহেতু নিমরুদ নামটি পরে উদ্ভব হয়েছিলো।
সরগনের প্রধান স্ত্রীর নাম ছিল, রানী তাসলুলতুম, তাদের সন্তানসন্ততিদের বিবিরন পাশের চিত্রে দেয়া আছে। তাদের এক সন্তান এনহেডুয়ান্না ছিল এক ধর্মযাজিকা, যিনি ধর্মীয় সঙ্গীত সম্পাদনা করতেন। তার অনেক সৃষ্টি, বিশেষত ইনান্নার বনবাস তার মৃত্যুর পরও শতবর্ষব্যাপী ব্যবহার হয়েছিলো। সরগন তার ছেলে রিমুস কে ক্ষমতা অর্পণ করেছিলেন, রিমুসের মৃত্যুর পর তার আর এক পুত্র মানিসতুসু রাজা হন, মানিসতুসুর পর তার নিজপুত্র নারাম-সিন ক্ষমতায় বসেন, তার আরও দুটো ছেলে ছিল সু-এনলিল(ইবারুম) এবং ইলাবাইস-তাকাল(আবাইস-তাকাল)।
সরগন তার মৃত্যুর দুইশ বছর পরও একজন আদর্শ রাজা রুপে বিবেচিত হতেন, আস্যারিয়ান এবং ব্যাবলিয়ান যত রাজা তাদের সাম্রাজ্য মেসোপটেমিয়ায় স্থাপন করেছেন, তাদের সবাই নিজেকে সরগনের উত্তরসূরি হিসেবে ভাবতেন। সরগন, পরবর্তী আস্যাইরিয়ান শাসনামলের “সম্রাজ্যের” ধারণা পূর্বেই প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, নিও আস্যাইরিয়ান লিপি অনুযায়ী সরগন পরবর্তী রাজাদের “কৃষ্ণাঙ্গদের(মেসপটেমিয়ার আদিবাসি জাতি) শাসন” করার ব্যাপারে আহ্ব্বান জানান, যেমনটা তিনি করেছিলেন। সরগন ১ম ছিলেন প্রাচীন আস্যাইরিয়ান রাজা যার নাম, সম্ভবত আক্কাদীও সরগনের নামে নামকরন হয়েছিল। ‘সরগনিয় নেতা’ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে একটি হুর-হিটাট গান আছে, যা তাম্র যুগের মধ্য হিটটাইট(১৫ খৃষ্টপূর্ব) এর সময় রচিত, এটি সরগন ও তার নিকটবর্তী উত্তরসূরিদের “দৈব রাজা” হিসেবে প্রকাশ করে।
সরগন ২য়(৭২২-৭০৫ খৃষ্টপূর্ব) ছিলেন একজন নিও-আস্যাইরিয়ান রাজা, যার নামকরণ সরগনিও আক্কাদের নামে হয়েছিল, এই রাজার নামই হিব্রু বাইবেলে(আইজ্যাক ২০:১) সরগন নামে উল্লেখ আছে।
নিও ব্যাবিলনিয়ান রাজা ন্যাবনিডাস(৫৫৬-৫৩৯ খ্রিস্টপূর্ব) সরগনিক সাম্রাজ্যের ইতিহাসের প্রতি অনেক আগ্রহী ছিলেন, তিনি সরগনের প্রাসাদ ও তার উত্তরসূরিদের প্রাসাদে অনেক খননকার্য চালিয়েছিলেন।
সরগণকে ইতিহাসের সম্রাজ্যের উপর শাসনকারী প্রথম রাজা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়,(বহু-উপজাতীয় এলাকার কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে), জদিও লুগাল-আন্নে-মুন্ডু এবং লুগাল-জাগে-সি নামের তৎকালীন সুমেরিয়ান রাজারাও একই রকম দাবী করেছিলেন।
তার শাসন আমলে তিনি প্রাচীন পূর্ব সেমেটিক সম্রাজ্যের ইতিহাসের অগ্রদুত ছিলেন, যেটি নিও সুমেরিয়ান হস্তক্ষেপ(২১/২০ খ্রিস্টপূর্ব) থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত টিকে ছিল, আস্যাইরিয়ান, ব্যাবিলনিয়ান ইতিহাসের থেকে ৫৩৯ খ্রিস্টপূর্বের আকামেনিদ অভিযান এসবের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
যদিও ঐতিহাসিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ ও অস্বাভাবিক, ২০০৮ সালের একটি সিনেমা “দি স্করপিয়ন কিং; এক যোদ্ধার উত্থান” আক্কাদিও সরগণকে অত্যাচারী সামরিক শাসক ও কালোজাদু ব্যবহারকারী হিসেবে উপস্থাপন করে, সে ছিল সিনেমার প্রধান খলনায়ক যে কিনা আমেরিকান অভিনেতা ও মিশ্র মার্শাল আর্টিস্ট র্যান্ডি কোটরে দ্বারা চিত্রায়িত হয়েছিলো।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.