Loading AI tools
একটি অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সার্বভৌমত্ব : কোনো রাষ্ট্র যে ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং বহির্শক্তির নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকতে পারে, তাকে সার্বভৌমত্ত্ব বলে। সার্বভৌমত্ব কোনো পরিচালনা পরিষদের বাইরের কোনো উৎস বা সংগঠনের হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করার পূর্ণ অধিকার ও ক্ষমতা।[১] রাজনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী, সার্বভৌমত্ব কোনো একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর সর্বোচ্চ ক্ষমতা নির্দেশকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা।[২] এটি রাষ্ট্রগঠনের সার্বভৌমত্বকেন্দ্রিক মতবাদের একটি মূলনীতি।এটি রাষ্ট্র গঠনের মূখ্য উপাদান।আর সার্বভৌমের আদর্শই হলো আইন।এই উপাদান ব্যতীত কোন রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না।
সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন ধারণা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এই বিতর্ক এখনো চলমান রয়েছে। এর ফলে সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা, ধারণা এবং প্রয়োগে পরিবর্তন এসেছে, বিশেষ করে আলোকায়নের সময়ে। সার্বভৌমত্বের বর্তমান ধারণায় ভূখণ্ড, জনসংখ্যা, কর্তৃপক্ষ এবং স্বীকৃতি– এই চারটি দিক রয়েছে। স্টিফেন ডি. ক্রাসনার এর মতে, এই শব্দটি চারটি ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে অনুধাবন করা যায়ঃ
আমরা প্রায়ই এই চারটি ধারণাকে একত্রে আসতে দেখি, কিন্তু এটি অপরিহার্য নয়। এই চারটি দিক একটি আরেকটির দ্বারা প্রভাবিত নয়, এবং এক দিয়ে সার্বভৌম না হয়েও অন্য দিক দিয়ে সার্বভৌম ছিল, এ ধরনের রাষ্ট্রের উদাহরণ ইতিহাসে পাওয়া যায়। ইমানুয়েল ওয়ালারস্টেইনের মতে, সার্বভৌমত্বের আরেকটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল একে অর্থবহ হতে হলে বাকিদের কাছ থেকে এর স্বীকৃতি থাকতে হবে, "সার্বভৌমত্ব একটি আইনি ব্যাপারের বাইরেও কিছু একটা, (...যার) পারস্পারিক স্বীকৃতি দরকার হয়। সার্বভৌমত্ব একটি কাল্পনিক বাণিজ্য, যাতে দুটি সম্ভাব্য বিরোধী পক্ষ বাস্তব সক্ষমতাকে সম্মান করে এই ধরনের স্বীকৃতিকে তাদের সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল কৌশল হিসাবে গ্রহণ করে।"
রোমান আইনজ্ঞ উলপিয়ান লক্ষ করেন যে
যদিও তিনি সরাসরি বলেননি, তবু সম্রাট এক ধরনের চূড়ান্ত ক্ষমতা চর্চা করতেন, যার উৎপত্তি জনতার থেকেই, এমন একটি ধারণা উলপিয়ান ব্যক্ত করেন।
উলপিয়ানের ধ্রুপদী বক্তব্য মধ্যযুগীয় ইউরোপে অজানা ছিল না, কিন্তু মধ্যযুগীয় সময়ে সার্বভৌমত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা ছিল। মধ্যযুগের রাজারা সার্বভৌম ছিলেন না, অন্ততঃ অতটা শক্তিশালী না, কারণ তাদের অভিজাত সামন্তদের সাথে ক্ষমতা ভাগ করতে হত এবং সামন্তরা তাদের কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন। উপরন্তু, দুই শ্রেণীকেই প্রথা মেনে চলতে হত।
মধ্যযুগে সার্বভৌমত্ব রাজন্য ও অভিজাতদের de jure অধিকার হিসাবে এবং ব্যক্তি জীবনে তাদের নিজস্ব পছন্দগুলি তৈরি করার de facto ক্ষমতা হিসাবে উপস্থিত ছিল।
১৩৮০ থেক ১৮০০ সালের কাছাকাছি সময়ে জ্যোফ্রে চৌসাটারের মিডল ইংলিশ সংগ্রহে ক্যানটারবেরী টেলস, বিশেষত দ্য ওয়াইফ অফ বাথের গল্পে নারীবাদী সার্বভৌমত্বের বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয়েছিল।
পরে ইংরেজ আর্থারিয়ান রোম্যান্স, দ্য ওয়েডিং অফ স্যার গোয়াইন ও ডাম র্যাগনিয়েল (1450 খ্রিষ্টাব্দ), দ্য ওয়াইফ অফ বাথ গল্পের অনেক উপাদান ব্যবহার করে, তবে রাজা আর্থার এবং নাইটদের আদালতের প্রেক্ষাপটে গল্পটি সাজায়। এর গল্প নাইট স্যার গোয়েনের তার নববঁধু ডাম র্যাগনিয়েলকে সার্বভৌমত্ব প্রদানকে ঘিরে আবর্তিত হয়, যাকে নারীদের চূড়ান্ত চাওয়া হিসাবে দেখানো হয়।
মধ্যযুগে সার্বভৌমত্ব অভিজাতদের 'ডেই জুরে' অধিকার হিসাবে এবং ব্যক্তির নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নেয়ার 'ডেই ফ্যাক্টো' সক্ষমতা হিসাবে বর্তমান ছিল।
একটি ধারণা হিসাবে সার্বভৌমত্বের পূণর্জাগরণ ঘটে ষোড়শ শতাব্দীতে, এমন একটি সময়ে যখন গৃহযুদ্ধ একটি কেন্দ্রীয় শক্তিশালী কর্তৃপক্ষের বাসনা তৈরি করেছিল, যখন সামন্ত রাজারা তাদের আভিজাত্যের বিনিময়ে নিজেদের হাতে ক্ষমতা পুঞ্জিভূত করছিল, এবং আধুনিক জাতিরাষ্ট্র গড়ে উঠছিল। জীন বোদিন, কিছুটা ফ্রান্সের ধর্মযুদ্ধগুলোর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসাবে পরম রাজতন্ত্রের আকারে সার্বভৌমত্বের তত্ত্ব প্রদান করেন। ১৫৭৬ সালে তিনি তার বই Les Six Livres de la République (প্রজাতন্ত্রের ছয়টি বই) এ যুক্তি দেখান, সহজাতভাবেই সার্বভৌমত্বকে হতে হবেঃ
জনগণের কাছ থেকে শাসকের কাছে (সার্বভৌম হিসাবেও পরিচিত) সার্বভৌমত্ব স্থানান্তরের ধারণা বোদিন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন; প্রাকৃতিক নিয়ম এবং ঐশ্বরিক আইন সার্বভৌম শাসন করার অধিকার প্রদান করে। এবং সার্বভৌম ব্যক্তি ঐশ্বরিক আইন বা প্রাকৃতিক নিয়মের ঊর্ধ্বে নন, বরং তিনি কেবল মানবসৃষ্ট আইনের উর্ধ্বে। তিনি ঐশ্বরিক আইন থেকে উদ্ভূত কিছু মৌলিক নিয়ম, প্রাকৃতিক নিয়ম, যুক্তি, সকল দেশের জন্য প্রযোজ্য সাধারণ আইন এবং সার্বভৌম ও তার উত্তরসুরি নির্ধারণ এবং সার্বভৌমের ক্ষমতার সীমা কী হবে এসব ব্যাপার নির্ধারণকারী রাষ্ট্রের মৌলিক আইনের প্রতি সার্বভৌমের লক্ষ রাখার ব্যাপারে জোর দেন। এইভাবে, বোদিনের সার্বভৌমের ক্ষমতা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক আইন এবং প্রতিটি মানুষের উপর আরোপিত উচ্চতর আইন দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিল। সার্বভৌমের ঐশ্বরিক ও প্রাকৃতিক আইন মেনে চলার ব্যাপারটি তার কাজকর্মে কিছু নৈতিক সীমারেখা টেনে দেয়। বোদিন lois royales বা ফরাসী রাজতন্ত্রের কিছু মৌলিক আইন যার দ্বারা উত্তরাধিকারের মত ব্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রিত হত, কেও প্রাকৃতিক নিয়ম এবং ফরাসী সার্বভৌমের অবশ্য পালনীয় হিসাবে তুলে ধরেন।
পরমত্বের ধারণায় বিশ্বাসী হওয়ার পরেও বাস্তবক্ষেত্রে সরকারের কীভাবে কাজ করা উচিত, এ ব্যাপারে বোদিনের কিছু মধ্যপন্থী মতামত ছিল। তিনি বলেন, সার্বভৌম বাধ্য না হলেও বাস্তবে উপদেশ পাওয়ার জন্য তার একটি সিনেট আহ্বান করা উচিত, আইনের মাধ্যমে বিচারকদের হাতে কিছু প্রাশাসনিক ক্ষমতা প্রদান করা উচিত এবং জনগণের সাথে যোগাযোগের উপায় হিসেবে একটি ব্যবস্থাপক সভা রাখা উচিত। বোদিন বিশ্বাস করতেন "সবচেয়ে ঐশ্বরিক, সবচেয়ে চমৎকার এবং সঠিক রাষ্ট্র" আংশিকভাবে গণতান্ত্রিক উপায়ে ও আংশিকভাবে অভিজাতদের দ্বারা শাসিত হয়।
বোদিন তার মতবাদে রাজাদের ঐশ্বরিক ক্ষমতাকে নির্ধারণ করে দেন।
আলোকায়নের যুগে সার্বভৌমত্বের ধারণা পশ্চিমা রাষ্ট্রের বর্ণনায় আইনি ও নৈতিক শক্তি হয়ে উঠে। নির্দিষ্ট করে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার উপায় হিসাবে "সামাজিক চুক্তি"র চুক্তির প্রস্তাব করা হয়, এবং ১৮০০ সালের মধ্যে ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়, যদিও ব্রিটেনেও কিছুটা কম পরিমাণে হয়।
লেভিয়াথানে থমাস হোবস বোদিনের মতই সার্বভৌমত্বের একটি ধারণায় পৌঁছান, যেটি অন্য কারণে "পিস অব ওয়েস্টফেলিয়া"য় আইনি কাঠামো লাভ করে। তিনি প্রথমবারের মত সামাজিক চুক্তির একটি আধুনিক সংস্করণ তৈরি করেন, এবং যুক্তি দেখান যে মানুষের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা ছাড়া জীবনের কদর্য, পাশবিক ও ইতর গুণগুলোকে কাটিয়ে উঠতে মানূষের অবশ্যই একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আসতে হবে এবং একটি সার্বভৌম শক্তির কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে যা তাদের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য কাজ করতে বাধ্য করবে। এই যুক্তিটি সার্বভৌমত্বের প্রথম প্রবর্তকদের আকৃষ্ট করেছিল। হোবস বোদিনের ও ওয়েস্টফেলিয়ান ধারণার বাইরেও সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞাকে আরো দৃঢ় করেন এবং বলেন একে অবশ্যই হবে হবেঃ
তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জনগণ শাসককে সার্বভৌমত্ব দেয় হোবস এই অনুমান থেকে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে শাসক কখনো ব্যর্থ হলে নিজেদের রক্ষা করার ক্ষমতা নতুন একটি সামাজিক চুক্তি করার মাধ্যমে ফিরে পায়।
হোবসের এই তত্ত্ব সামাজিক চুক্তি তত্ত্ব ব্যবহার করে সার্বভৌমত্বের ধারণাকে দৃঢ়ভাবে আকার প্রদান করে। জাঁ-জ্যাক রুশো (১৭২১-১৭৭৮ খ্রি.) জনপ্রিয় সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা প্রদান করে বলেন (ফ্রান্সিসকো সুরেজের শক্তির উত্থানের তত্ত্বের প্রথম দিকের সূত্র অনুগামী) যে জনগণই একমাত্র বৈধ সার্বভৌম। রুসো সার্বভৌমত্বকে অবিচ্ছিন্ন বলে বিবেচনা করা; তিনি উৎস এবং সার্বভৌমত্ব প্রয়োগকারী সত্ত্বার মধ্যে পার্থক্যের নিন্দা করেছেন, যার উপর ভিত্তি করে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। জন লক এবং মন্টেসকিউও সার্বভৌমত্বের ধারণার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। অবিচ্ছিন্নতার ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি রুশো এবং হোবসের সাথে চেয়ে ভিন্ন ছিল।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.