যুক্তরাজ্যের সংসদ
যুক্তরাজ্যের আইনসভা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
গ্রেট ব্রিটেন ও উত্তর আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের সংসদ (ইংরেজি: Parliament of the United Kingdom of Great Britain and Northern Ireland)[lower-alpha 2] যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আইনসভা[lower-alpha 3] এবং এটি রাজশক্তির নির্ভরশীল অঞ্চল ও সমুদ্রপার অঞ্চলের জন্যও আইন প্রণয়ন করতে পারে। এর সভাস্থল লন্ডনের ওয়েস্টমিন্স্টার প্রাসাদ। যুক্তরাজ্যের সংসদের কাছে আইন প্রণয়নের সার্বভৌমত্ব রয়েছে এবং যুক্তরাজ্য ও তার বৈদেশিক অঞ্চলের উপর তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা রয়েছে। এই দ্বিকক্ষ সংসদের তিনটি অংশ রয়েছে: সার্বভৌম রাজশাসক, হাউস অফ লর্ডস (উচ্চকক্ষ) ও হাউস অফ কমন্স (নিম্নকক্ষ)।[3] ব্রিটিশ রাজশক্তি সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর আদেশ অনুযায়ী কাজ করেন, এবং উচ্চকক্ষের ক্ষমতা কেবল আইন প্রণয়নকে বিলম্ব করার মধ্যে সীমিত। সুতরাং নিম্নকক্ষের কাছে সংসদের প্রকৃত ক্ষমতা রয়েছে।[4]
গ্রেট ব্রিটেন ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্যের সংসদ Parliament of the United Kingdom of Great Britain and Northern Ireland | |
---|---|
৫৯তম সংসদ | |
ধরন | |
ধরন | |
কক্ষ | |
ইতিহাস | |
প্রতিষ্ঠিত | ১ জানুয়ারি ১৮০১ |
পূর্বসূরী | |
নেতৃত্ব | |
তৃতীয় চার্লস ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে | |
কমন্সের অধ্যক্ষ | স্যার লিন্ডসে হয়েল ৪ নভেম্বর ২০১৯ থেকে |
গঠন | |
আসন | |
কমন্স রাজনৈতিক দল | খালি আসন
|
নির্বাচন | |
কমন্স সর্বশেষ নির্বাচন | ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ |
কমন্স পরবর্তী নির্বাচন | ৪ জুলাই ২০২৪ |
সভাস্থল | |
ওয়েস্টমিন্স্টার প্রাসাদ ওয়েস্টমিনস্টার, লন্ডন, ইংল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ৫১°২৯′৫৮″ উত্তর ০°০৭′২৯″ পশ্চিম | |
ওয়েবসাইট | |
www |
নিম্নকক্ষের ৬৫০টি একক সদস্যের কেন্দ্রগুলো কমপক্ষে পাঁচ বছর অন্তর ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট ভোটদানের মাধ্যমে নির্বাচিত।[5] সাংবিধানিক প্রথা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ সমস্ত মন্ত্রিগণ নিম্নকক্ষের (বা কিছুক্ষেত্রে উচ্চকক্ষের) সদস্য এবং তাঁরা আইনসভার সংশ্লিষ্ট কক্ষের জন্য দায়বদ্ধ। বেশিরভাগ পূর্ণমন্ত্রীরা নিম্নকক্ষের সদস্য এবং প্রতিমন্ত্রীরা যেকোনো দুটি কক্ষের মধ্যে একটির সদস্য হতে পারেন।
ব্রিটিশ সংসদ বিশ্বের প্রাচীনতম আইনসভার মধ্যে অন্যতম। এর প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থায়িত্ব এবং তার পরিবর্তনকে সহ্য করার দক্ষতার জন্য এই সংসদ পরিচিত।[6] এই ওয়েস্টমিনস্টার ব্যবস্থা একদা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনস্থ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বিবর্তিত করেছে, এবং সেজন্যই ব্রিটিশ সংসদ "সংসদের জননী" (mother of parliaments) নামে পরিচিত।[7]
ইতিহাস
ইংল্যান্ডের সংসদ ও স্কটল্যান্ডের সংসদ ঐক্যের আইনসমূহ, ১৭০৭ পাস করে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড রাজ্যের মধ্যে ঐক্যের চুক্তির অনুসমর্থন করেছিল। এর ফলে ১৭০৭ সালে গ্রেট ব্রিটেনের সংসদ (Parliament of Great Britain) গড়ে উঠেছিল। ঐক্যের আইনসমূহ, ১৭০৭ অনুযায়ী, এক ও অভিন্ন সংসদ গ্রেট ব্রিটেন রাজ্যকে প্রতিনিধিত্ব করবে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে গ্রেট ব্রিটেনের সংসদ ও আয়ারল্যান্ডের সংসদ ঐক্যের আইনসমূহ, ১৮০০ পাস করেছিল, যার ফলে ব্রিটিশ সংসদ আরও প্রসারিত হয়েছিল এবং আয়ারল্যান্ডের সংসদ বিলুপ্ত হয়েছিল। ব্রিটিশ সংসদে ১০০ জন আইরিশ সংসদ সদস্য ও ৩২ জন লর্ডসের সদস্য যুক্ত হয়ে গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের সংসদ (Parliament of the United Kingdom of Great Britain and Ireland) গঠন করেছিল। আইরিশ মুক্ত রাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার পাঁচ বছর পর পাস হওয়া রাজকীয় ও সংসদীয় উপাধি আইন, ১৯২৭ অনুযায়ী সংসদটির নাম "গ্রেট ব্রিটেন ও উত্তর আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের সংসদ" (Parliament of the United Kingdom of Great Britain and Northern Ireland) রাখা হয়েছিল।
গঠন ও ক্ষমতা
সংসদ কর্তৃপক্ষ কিং-ইন-পার্লামেন্ট তিনটি পৃথক উপাদান নিয়ে গঠিত: রাজশাসক, হাউস অফ লর্ডস (উচ্চকক্ষ) ও হাউস অফ কমন্স (নিম্নকক্ষ)। কোনো ব্যক্তি একইসঙ্গে উভয় কক্ষের সদস্য হতে পারবেন না। আইনগতভাবে নিম্নকক্ষের সদস্যের নির্বাচনে উচ্চকক্ষের সদস্যদের ভোটদান করা নিষিদ্ধ। একদা রাজশক্তির অধীনে লাভজনক পদ গ্রহণ করে কেউই সংসদ সদস্য (এমপি) হতে পারতেন না, যার ফলে ক্ষমতার বণ্টন বজায় রাখা যেত, কিন্তু এই নীতি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। ১৯১৯ সাল পর্যন্ত মন্ত্রিপদে মনোনীত সংসদ সদস্যরা নিম্নকক্ষে তাঁদের আসন হারাতেন এবং পুনর্নির্বাচনের জন্য তাঁদের আবেদন করতে হতো। ১৯২৬ সালে এই নিয়ম রদ করা হয়েছিল। হাউস অফ কমন্স অযোগ্যতা আইন, ১৯৭৫-এর অধীনে পদাধিকারীরা সংসদ সদস্যতার অযোগ্য।
ব্রিটিশ সংসদে পাস হওয়া যেকোনো বিলকে আইনসিদ্ধ করার জন্য রাজশাসকের সম্মতির প্রয়োজন এবং রাজশাসককে অর্ডার আইন কাউন্সিলের মাধ্যমে কিছু বিশেষ আইন প্রণয়ন করতে হবে। রাজকীয় বিশেষাধিকার অনুযায়ী ব্রিটিশ রাজশক্তির কাছে কিছু নির্বাহিক ক্ষমতা রয়েছে যা সংসদের উপর নির্ভরশীল নয়, যেমন চুক্তিবদ্ধ হওয়া, যুদ্ধ ঘোষণা করা, পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা এবং আধিকারিক ও আমলাদের নিয়োগ। আদতে রাজশাসক প্রধানমন্ত্রী ও যুক্তরাজ্য সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীদের মন্ত্রণা অনুযায়ী এই ক্ষমতা ব্যবহার করেন। প্রধানমন্ত্রী ও সরকার অর্থসংস্থান নিয়ন্ত্রণ ও সংসদ সদস্যের নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদের কাছে সরাসরিভাবে দায়বদ্ধ।
এছাড়া রাজশাসক প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন করেন যিনি সংসদ সদস্যদের নিয়ে সরকার গঠন করেন। প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে নিম্নকক্ষের আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে হবে।
উচ্চকক্ষের সম্পূর্ণ নাম "দ্য রাইট অনারেবল দ্য লর্ডস স্পিরিচুয়াল অ্যান্ড টেম্পোরাল ইন পার্লামেন্ট অ্যাসেম্বলড" (The Right Honourable The Lords Spiritual and Temporal in Parliament Assembled)। এখানে "লর্ডস স্পিরিচুয়াল" হচ্ছে চার্চ অফ ইংল্যান্ডের বিশপগণ এবং "লর্ডস টেম্পোরাল" হচ্ছে অভিজাত শ্রেণিভুক্ত ব্যক্তিগণ (যেমন ডিউক, ব্যারন ও আর্ল)। লর্ড স্পিরিচুয়াল ও লর্ড টেম্পোরালদের পৃথক এস্টেট বলে চিহ্নিত করলেও তাঁরা একত্রে বসেন, বিতর্ক করেন ও ভোটদান করেন।
সংসদ আইনসমূহ, ১৯১১ ও ১৯৪৯ পাস হওয়ার পর থেকে উচ্চকক্ষের ক্ষমতা নিম্নকক্ষের চেয়ে অত্যন্ত কম।
টীকা
- ৩০ মে-তে যুক্তরাজ্যের সংসদের অবলুপ্তির পর থেকে ২০২৪-এর সাধারণ নির্বাচন অবধি কোনো সংসদ সদস্য নেই।
- কেবল সাংবিধানিক প্রথা অনুযায়ী সংসদ সার্বভৌম। যুক্তরাজ্যে অন্যান্য আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন প্রিভি কাউন্সিল। এছাড়া যুক্তরাজ্যের রাজশাসক যেকোনো সময়ে এক নতুন প্রতিষ্ঠান গঠন করতে পারেন এবং তাকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করতে পারেন। তবে সংসদ যেকোনো সময়ে রাজশাসকের সম্মতিতে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংশোধিত বা বিলুপ্ত করতে পারে, এবং রাজশাসক সর্বদাই সংসদের আইনে সম্মতি দেন।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.